হুসাইন (আঃ) কে?

854 0

(পর্ব-১)
– নূরে আলম মুহাম্মাদী
———–

হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন।

হুসাইন হচ্ছে সমুদ্র, মহাসমুদ্র।
না, না,!!
হুসাইন সাগর মহাসাগরের চেয়েও বিশাল,
মহাসাগর যেখানে হারিয়ে যায়,
মহাসাগর যার মধ্যে নিজেকে ছোট্ট, হীন ও অসহায় ভাবে,
যার হৃদয়ের মাঝে মমতার কোন কুল কিনারা নেই,
যিনি অসীম, ইশ্বরের রঙ্গে রঙ্গীন।

তাহলে,
হুসাইন পাহাড়সম দৃঢ় চিত্ত ব্যক্তিত্ব।
না, না,!!
হুসাইনের দৃঢ়তার কাছে পাহাড়ও নত হয়ে আসে,
পাহাড় নড়তে পারে, কিন্তু
হুসাইনের সিদ্ধান্ত অনঢ়, অবিচল,
পর্বতমালার কাঠিন্যতা যাকে দেখে লজ্জিত হয়,
তাদের অবনত শির ঝুকে যার পদতলে,
তিনি হুসাইন, হুসাইন।

তাহলে,
হুসাইন সূর্য! হুসাইন সৌর জগতসম।
না, না,!!
হুসাইনের আলোর কাছে
সূর্যের আলো?
তা তো অন্ধকারসম।
হুসাইনের কাছ থেকে যে, আলোকিত হয় সূর্য,
হুসাইনের কাছ থেকে যে,
আলো নিয়ে ধন্য হয় সূর্য।
সৌরজগতের সব কিছু যার করতলগত।
সৌরজগত যে হুসাইনের মহত্বের কাছে বালুকণার মত।

হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন।

হুসাইন এ জগত সে জগত মহাজগত ছেড়ে জগতহীন এক অস্তিত্বের নাম।
যাঁর অস্তিত্ব আল্লাহর খেলাফত বহন করে,
যাঁর মধ্যে রাসূলের গুণাবলী জ্বলজ্বল করে,
যাঁর আদর্শে শেরে খোদা আলীর কণ্ঠস্বর বেঁজে ওঠে,
যাঁর বেদনায় জান্নাত রমনী কেপে কেপে কাঁদে।

হুসাইন!!
যার কিছুই নাই,
যা কিছু ছিল তার সব হয়েছে আল্লাহর রাহে ম্লান।
যিনি সীমাবদ্ধ নন কোন কালে,
যিনি মহাকালের সীমানা পেরিয়ে ছুটে চলেন সপ্ত আসমানে খোদায়ী আরশের দিকে।

হুসাইন!
তলোয়ারকে যে হার মানিয়েছে,
তলোয়ার যার আঘাতে ভোতা হয়ে গেছে,
অর্জন করেছেন যিনি বিজয়
তলোয়ারের উপর রক্তের,
যার বদৌলতে আজো আমরা
রাসূলের সুন্নত ধরে আছি,
পথে চলি কোরআন ও আহলে বাইতের।

_____________

হুসাইন(আ:) কে?
(পর্ব-২)
– নূরে আলম মুহাম্মাদী।
———–

হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন।

হুসাইন নূর! হুসাইন আসমানসমুহ ও যমিনের নূর!
হুসাইনের আলোতে মুছে যায় নূরের সকল খাদ।
আল্লাহু নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব।

না, না!!!
হুসাইনের আলোতে আলোকিত হয় আল্লাহর আরশ,
সেখান থেকে কিঞ্চিত আলোতে ধন্য হয়
সামাওয়াত ওয়াল আরদ্ব।

বিশ্ব জগত মহাজগত আর জগতহীন জগত যার আলোতে চলে,
ছায়াপথসমূহ, জগতসমূহ, যার ধ্বনি তোলে,
হুসাইন আমাদের, হুসাইন সকলের,
হর হামেশা যেখানে
ইয়া হুসাইন, ইয়া হুসাইন যিকির চলে।

তাইতো বলি, হুসাইন যমিনী নয়, তিনি আসমানী।
যমিন ও আসমান যার রক্তের কাছে ঋণী।

না, না,!!!
হুসাইন!!!
যমিন ও আসমানের অধিপতি তিনি,
খোদায়ী আরশ তার কাছে, আসমান যমিনের সব কিছুর চেয়ে পরিচিত বেশী।
আসমানী জগতে, খোদায়ী জগতে প্রাণ সঞ্চালন করেছেন যিনি।
তিনি গর্ব সকলের,
আসমানসমূহ ও যমিনের।

যমিন বলে, হুসাইন আমার বুকে দিয়েছে সেজদা, ঢেলেছে রক্ত,
হুসাইন আমার গর্ব।
আসমানসমূহ বলে,
হুসাইনের পথচলা ছিল আমাদের বুকে বেশী,
আমরা দেখেছি, আমরা শুনেছি, হুসাইনের কথা যমিনের চেয়ে আসমানীদের মাঝে বেশী।

আসমানী জগতের সবাই করে গুঞ্জন,
সাত আসমানের প্রতিটি আসমান,
যার নামে হয়েছে নামকরণ।
হুসাইন এক, হুসাইন দুই,
হুসাইন তিন… হুসাইন সপ্তম।
হুসাইন হয়েছে সবার,
হয়েছে সবার আপন।

কারণ, হুসাইনের কাছ থেকেই দেখেছে তারা,
এত বড় ত্যাগ!!!
এত বড় কোরবানি!!!
দিয়েছেন সব, কিছুই রাখেননি তিনি, আল্লাহ ছাড়া।

তাই, আসমানসমূহের গর্ব,
আসমানে উঠেছে রব,
রাহে আল্লাহর, রক্ষা করতে ইসলাম,
দিয়েছেন হুসাইন সব।
তাইতো, আসমানীরা করে
মিছিল, করো শোরগোল, তোলে ধ্বনি,
ইয়া হুসাইন! ইয়া হুসাইন!
______________

হুসাইন(আ:) কে?
(পর্ব-৩)
– নূরে আলম মুহাম্মাদী।
▪▪▪▪

হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন।
▪▪▪▪
হুসাইনের নাম খোদ আল্লাহ রেখেছেন,
হুসাইন থেকে খোদ রাসূল(সা.) হয়েছেন।
অবাক হচ্ছো তুমি!!!
রাসূলের হাদিস জানি,
বলেছেন তিনিঃ
“আমা থেকে হুসাইন আর
হুসাইন থেকে হয়েছি আমি।”
“ওয়া আনা মিন হুসাইন
হুসাইনুন মিন্নী।”
▪▪▪▪
হুসাইন না দিলে জীবন,
রেসালতের শত্রুরা শেষ করে দিতো রাসূলের মিশন!!
মৃতপ্রায় ছিল কলেমা ও দ্বীন,
যার বুকের তাজা রক্ত
রাসূলের সুন্নতে দিলো নব জীবন,
যেন রাসূলের কথা না হয় লীন।
সেই হুসাইন তিনি !!!
“আমা থেকে হুসাইন আর
হুসাইন থেকে হয়েছি আমি।”
“ওয়া আনা মিন হুসাইন
হুসাইনুন মিন্নী।”
▪▪▪▪
রাসূলের আদর্শ যাচ্ছিল হারিয়ে,
অগ্নি দিয়েছিল দ্বীন বৃক্ষের শিকড়ে,
হুসাইন ঢেলে দিলেন সব,
যা কিছু ছিল তাঁর।
সেই জলহীন রক্ত শক্ত করে
ঢেলে দিলেন বৃক্ষের শিকড়ে
ছড়িয়ে দিলেন পথ-মাঠ-প্রান্তর।
তাই, রাসূলের রেসালত
হুসাইনের কাছে ঋণী,
“আমা থেকে হুসাইন আর
হুসাইন থেকে হয়েছি আমি।”
“ওয়া আনা মিন হুসাইন
হুসাইনুন মিন্নী।”
▪▪▪▪
জলহীন রক্তে দ্বীনের শিকড় সিক্ত হলো,
হুসাইন ও ছোট-বড় আলীদের রক্তে ফিরে এলো,
দয়াল নবী ও তাঁর আলো।
নবজন্ম হলো রাসুলের,
রক্ত দিয়ে হুসাইনের,
পুত্র সেই জান্নাত রমনীর,
দেখে জলহীন রক্তের ঢেউ,
বলেন তিনি ক্বুর্রাতা আইনি।
“আমা থেকে হুসাইন আর
হুসাইন থেকে হয়েছি আমি।”
“ওয়া আনা মিন হুসাইন
হুসাইনুন মিন্নী।”
▪▪▪▪
হুসাইন উড়িয়েছে যে রক্তের দামান
আমরা করেছি অঙ্গিকার
রাখবো তার মান।
যতদিন আমাদের দেহে প্রাণ থাকবে
ততদিন হুসাইনের রক্তের নিশানা উড়বে।
উঠেছি আহলে বাইতের তরীতে,
নিয়েছি শপথ হুসাইনী রক্তে,
মাঝি ইমাম মাহদী,
তিনি হুসাইনী, যামানার ইমাম তিনি।
“আমা থেকে হুসাইন আর
হুসাইন থেকে হয়েছি আমি।”
“ওয়া আনা মিন হুসাইন
হুসাইনুন মিন্নী।”
▪▪▪▪

_____________

হুসাইন(আ:) কে?
(পর্ব-৪)
– নূরে আলম মুহাম্মাদী।
▪▪▪▪

হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন।

হুসাইন!!!
হুসাইন(আ:), হাসানের(আ.) সহোদর ভাই,
যারা নবীজীর(সা.) কোলে নিয়েছিলেন ঠাই।
হাসান ও হুসাইনকে দিয়েছেন নবী
বেহেশতীদের সর্দার করে,
খোদ দয়াল নবী যেখানে
আছেন বেহেশতের সদস্য হয়ে।
▪▪▪▪
হুসাইন!!!
খোদায়ী সকল বিষয়ের তারকা যে তিনি,
তাই তো,
হুসাইনের গালে, গলায়, ঠোটে চুমু খেয়ে বলতেন নবীজী,
হুসাইন! তুমি যে আমার
দু’নয়নের মনি।
▪▪▪▪
এ জগতের তারকারা মিটি মিটি জ্বলে,
কারণ, তারা যে রয়েছে আমাদের বহু বহু দূরে।
আর খোদায়ী তারকা হুসাইন!!
যত দুরেই থাক, আরশের আলো জ্বালায় অবিরাম,
প্রতিটি অসহায়, বঞ্চিতের ঘরে।
▪▪▪▪
হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? আরো বলি শোন।
▪▪▪▪
নুহের কিস্তি বলেন নবীজী
তাঁর আহলে বাইতকে,
আর এ কিস্তিই যে নাজাতের তরী
তাও বলে গেলেন অকপটে।
▪▪▪▪
কিন্তু, এর মধ্যে হুসাইন!!
আহলে বাইতের অন্যতম
ব্যতিক্রমী সদস্য যিনি।
সকলের মাঝে বেছে নিলেন
দয়াল নবী, বললেন তিনিঃ
“হুসাইন যে চেরাগ হেদায়েতের,
আর কিস্তি হলো নাজাতের!”
▪▪▪▪
কেননা, কঠিন ও ব্যতিক্রমী কাজটি করেছেন হুসাইন,
শাহাদাতের শুরা পানে খোদায়ী ভুবনে
মাতাল হয়ে সর্বস্ব দিয়েছেন
উজার করে দ্বীনের কাবণে।
তাই, এককভাবে এ গর্ব শুধু হুসাইনের,
নাজাতের তরী হয়েছেন তিনি
সব মানুষের
ইহকাল ও পরকালের।
▪▪▪▪
হাশরের ময়দানে আর বেহেশতে
যার ক্ষমতা আর মমতা সবচাইতে বেশী হবে,
তিনি সেই হুসাইন!!!
হাশরের দিন হুসাইনের আশেকদের অবস্থা দেখে,
রহমতের প্রভু অস্থির হবেন
কখন যে এ ঘোর কেটে যাবে?!!
হুসাইনও তাঁর আশেকদের আশেক হয়ে
খোদায়ী জগতের মেলা বসাবেন তাদের নিয়ে।
হাশরের ময়দান অবাক হবে সেদিন,
সকল কার্যক্রম
থমকে দাঁড়াবে সেদিন,
হুসাইনের জ্যোতি আর খোদায়ী আরশ
একাকার হবে সেদিন।
▪▪▪▪
তাই, আসবে ডাক আরশে মাওলা থেকে
এই পাগলদের টেনে নিয়ে যাও বেহেশতের দিকে।
খোদায়ী তারকা আর আশেক্বানে হুসাইন,
একই মেলায় বেহেশতে সব
ঘুরে ঘুরে দেখবেন শুধু
হুসাইন আর হুসাইন আর হুসাইন!!!
▪▪▪▪
______________

হুসাইন(আ:) কে?
(পর্ব-৫)
– নূরে আলম মুহাম্মাদী।
▪▪▪▪

হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন।

হুসাইন!!!
যে নবী মুহাম্মাদের(সা.) মহব্বতে
সৃষ্টি হলো সমগ্র জাহান,
সেই নবীর মহব্বতে পৃথিবী হর হামেশা করে হুসাইনের গুণগান।
▪▪▪
এ সেই হুসাইন!!!
সৃষ্টি জগত যাঁর ত্যাগের মহিমায় চলে
অনু পরমানু যাঁর প্রশংসা করে
দিবা-রাত্রি যাঁর বদৌলতে ঘোরে।
আকাশ বাতাস যাঁর শোকে নুয়ে নুয়ে কাঁদে,
যাঁর রক্তের স্রোতধারায় আজো,
ঘরে ঘরে হেদায়েতের আলো জ্বলে।
যার বংশের শেষ প্রদ্বীপ
হেদায়েতের চেরাগ জ্বেলে,
পথহারাদের পথ দেখাতে
আছেন সর্বদা যামানার ইমাম
সমাজের বুকে মানুষের মাঝে।
▪▪▪
তিনি, সেই হুসাইন!!
পয়গম্বরা যাঁর বেদনায় অশ্রু ঝরিয়েছেন,
ফেরেস্তারা যাঁর মহাত্যাগে হতবাক হয়েছেন।
প্রেমের নবী যাঁর জন্মেতে শোকাহত হয়েছেন,
আর…
যাঁর শাহাদাতের খবরে তিনি নয়ন ভরে কেঁদেছেন।
মহাবীর আলী যাঁর শাহাদাত স্থলে থমকে দাড়িয়েছেন,
আর…
যাঁর কথা স্মরণ করে তিনি কান্নার রোল তুলেছেন।
তিনি, সেই হুসাইন!!!
▪▪▪
হুসাইন!!!
যার নানাজান হলেন নূরনবী, মহানবী, শেষ নবী, দয়াল নবী, প্রেমের নবী,
মুহাম্মাদ মুস্তফা যিনি।
মা যার জান্নাত নেত্রী, নারীকুলের নেত্রী, নবীজীর নয়নমনি, শেরে খোদার আদরিনী,
ফাতিমাতুয্ যাহরা যিনি।
বাবা যার নবীজীর ইহকাল ও পরকালের ভাই,
দুনিয়া ও আখেরাতে
মুমিনরা যার
আশ্রয়ে নিয়েছেন ঠাই।
▪▪▪
হ্যাঁ, হুসাইনের বাবা?!!!
নবীজীর জ্ঞানের দরজা যার হাতে খোলে,
বেহেশত আর দোজখ যার বিচারে চলে,
ইমামত ও খেলাফতের মুকুট
যার মাথায় গর্ব করে থাকে,
যার কারণে জান্নাত রমনী ফাতিমা
শাহাদাতের শুরা তুলে নেন মুখে,
তিনি সেই শেরে খোদা মুর্তজা আলী
যুলফিক্বার থাকে যার কাঁধে।
▪▪▪
হুসাইনের চাচা?!!!
জেহাদের ময়দানে শেরে খোদার মত,
নবীর দুশমনেরা যার কারণে হয়েছিল নত,
যিনি বীর বিক্রমে পান করেছেন শাহাদাতের সুধা
যিনি ডানাতে ভর করে ঘুরে বেড়ান
ফেরেশতাদের সাথে সদা।
তিনি আবু তালিবের পুত্র
দয়াল নবীর অনুগত
জাফার তাইয়ার নামে খ্যাত।
▪▪▪
হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? আরো বলি শোন।
▪▪
হুসাইন!!!
হুসাইনের ভাই বেহেশতের সর্দার,
বলেন নবীজী, হুকুমে আল্লাহর,
হাসান হলো রাসূলের সিবতে আকবার।
চোখের জল মিশ্রিত ভালবাসা ছিল নবীজীর
হাসান ও হুসাইনকে আদর করে করে বলতেন তিনি,
আনা উহিব্বুল হাসান ওয়াল হুসাইনী
হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসি আমি।
এ সেই হুসাইন!!!
▪▪▪
আরো একজন ভাই ছিল হুসাইনের!!
শেরে খোদা আলীর মত গর্জে উঠেছিল কারবালা প্রান্তরের।
শত প্রলোভনও পারেনি তাঁর কাছ থেকে
হুসাইনের পথ কেড়ে নিতে।
উম্মুল বানিনের বীর সন্তান
হুসাইনের ভাই,
আশুরার দিনে আব্বাস ইবনে আলীর আর কোন জুড়ি নাই।
ইমাম তাবুর পিপাসার্ত নারী-শিশুদের বাঁচাতে সেদিন
পানির মশক তুলে নিলেন
কারবালার পতাকাবাহী সেদিন।
এক হাতে মশক, তরবারী আরেক হাতে
ফোরাত নদীর পানি নিয়ে
আসছেন ছুটে নবীপুরীর দিকে।
পানির পিপাসায় কলিজা শুকিয়ে যায়
হুসাইন তনয় আলী আসগারের,
পানি পানি করে কাতরায়
আলী আকবার ও সকিনায়।
মহাবীরের পুত্র মহাবীর আব্বাস,
নজর নাই তার যুদ্ধের দিকে,
যে করেই হোক
পৌছাতে হবে পানি,
ছুটে চলেন তাবুর দিকে।
আহ্! কী বেদনাদায়ক ঘটনা,
আব্বাস আলামদার,
বীরত্বের কোন কমতি ছিল না তাঁর।
তবু যুদ্ধের দিকে না গিয়ে
পানির মশক বাঁচাতে গিয়ে
এক এক করে দু’হাত খোয়ালেন তিনি।
মুখে কামড় দিয়ে মশক ধরে রাখলেন
তাবুর দিকে ছুটছেন তিনি।
হাজারো তীর বল্লমের আঘাত
উপেক্ষা করে
পানির মশক কামড় দিয়ে ধরে
এসেছেন কাছাকাছি চলে।
কিন্তু…….
মশক ছিদ্র করে দিল একটি তীর এসে
পানি তিনি পারলেন না ধরে রাখতে
তিনিও লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে।
আব্বাস ইবনে আলীর প্রাণ যায় যায়
ছুটে আসেন হুসাইন, বলেন হায়! হায়!
কোমড়ে হাত দিয়ে বসে পড়েন ইমাম হুসাইন,
ভাইয়ের শিয়রের পাশে চোখের পানি ছেড়ে কাঁদেন আর
মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেন,
শেষ সময়ে তুমি আমাকে ভাই বলে ডাকলে!!
বুকের জ্বালা বাড়িয়ে দিয়ে গেলে,
হে আব্বাস!
হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে😭
বলে ওঠেন হুসাইন।
প্রাণের ভাইকে হারিয়ে
শেষ ভরসা হাতছাড়া হতে দেখে
দুঃখের সাগরে ভেসে গেলেন তিনি।😭
তিনি, সেই হুসাইন! হুসাইন! হুসাইন!
😭😭😭
____________

হুসাইন(আ:) কে?
(পর্ব-৬)
– নূরে আলম মুহাম্মাদী।
▪▪▪▪

হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন।

হুসাইন!!!
শুনেছি ইউসুফ নবীর সৌন্দর্যের কথা।
অঙ্গুলি কেঁটেছিল মিশরীয় নারীরা,
ইউসুফ নবীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তারা।
তবে দয়াল নবীও ছিলেন মুগ্ধ, বিমোহিত,
হুসাইনের সৌন্দর্যে তিঁনি ছিলেন অতি অভিভুত।
তাই, জিবরাঈল এসে বলে,
ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আপনি আপনার সন্তান হুসাইনকে ভালবাসেন?
উত্তরে বলেন নবী, দেখেছো কী ভাই জিবরাঈল?
হুসাইন আর আমি
সব দিকেই রয়েছে মিল।
আমি দ্বীনের প্রতিষ্ঠাতা
আর হুসাইন দ্বীনের ত্রানকর্তা।
জিবরাঈল আনলেন কারবালার মাটি,
দিলেন রাসূলের হাতে,
সিক্ত নয়নে রাসূল
ঘ্রাণ নিলেন হুসাইনের হাতে।
কারবালার মাটি হাতে পেয়ে নবী বললেন পত্মী উম্মে সালামাকে
রেখে দিতে শিঁশিতে ভরে।
এই সেই কারবালার মাটি,
চোখের পানি ফেলেন নবীজী
যে মাটিকে দেখে,
বুকে তুলে নিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দিলেন সেই হুসাইনকে।
কি সৌন্দর্য দেখেছিলেন নবীজী হুসাইনের মাঝে!!
সেই মহা কুরবানি
আর মহা ত্যাগের বাণী ভেসে উঠেছিল হুসাইনের মাঝে।
এত সুন্দর হুসাইন!
হুসাইনের ত্যাগ ও কুরবানির
সৌন্দর্যের কাছে
হারিয়ে গেছে ইউসুফ নবীর
সকল সৌন্দর্য!
কত সুন্দর ও মহান হুসাইন!!!

বাবা আদম বিতাড়িত হয়ে বেহেশত হতে,
ক্রন্দন করে করে বলতেন তিনি
রাব্বানা যালামনা আনফুসানা
জুলুম করেছি নিজের উপর আমি।
শত হাজার বছর পার হয়ে যায়
প্রভুর মন গলে না যে
তবু রাব্বানা রাব্বানা বলে বলে যায়।
একদা গর্জে ওঠে আকাশ
শব্দ করে বাতাস
বাবা আদম শুনতে পান
রবের কিছু কালেমাত।
দয়াল প্রভু বলেন আদম!
যদি দোয়া করো এই নামগুলোর উসিলায়
কবুল হবে দোয়া
কবুল হবে তাওবা
ফিরে যাবে বেহেশতে
আবার্।
আদম পড়লেন,
উসিলা মুহাম্মাদ, আলী, ফাতেমা, হাসান আর হুসাইনের্।
আল্লাহ বলেনঃ
ইন্নাহু হুওয়াত্ তাওওয়াবুর রাহিম।
কবুল হলো তাওবা বাবা আদমের
উসিলা ছিল এই পঞ্চ তারা
মুহাম্মাদ, আলী, ফাতেমা, হাসান আর হুসাইনের্।
এই সেই হুসাইন!

দ্বীনের সত্যতা প্রমাণ করলেন
নবীজী
নাজরানের খৃষ্টান পাদ্রীদের কাছে,
তবু তারা বেকে বসলো
বুঝে শুনেও অস্বীকার করলো
দ্বীন ইসলাম ও তার ভালবাসাকে।
নবীজী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন
চলে এসো! খোলা ময়দানে
নিজের জান, নিজের মেয়ে,
নিজের ছেলেদেরকে সাথে নিয়ে।
পাদ্রীরা ঘটনার সিরিয়াসে
মেনে নিল রাসূলের কর্তৃত্বকে।
মুবাহিলার এই পঞ্চ তারার
অন্যতম বিশেষ তারকা,
নবী পুত্র হুসাইন ইবনে আলী
হয়ে গেলেন দ্বীনের ত্রানকর্তা।
ইয়া হুসাইন!! ইয়া হুসাইন!!
____________

হুসাইন(আ:) কে?

(পর্ব-৭)
– নূরে আলম মুহাম্মাদী।

▪▪▪▪

হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন।

হুসাইন!!!
যাকে মহব্বত করা
যার প্রতি আনুগত্য করা
নবীর উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে,
যার সাথে দুশমনী করা
যাকে অমান্য করা
নবীর উম্মতের উপর হারাম করা হয়েছে।
তিনি সেই হুসাইন!!
▪▪▪▪
যাদের মহব্বত ও আনুগত্যে
হয় রেসালতের পারিশ্রমিক আদায়,
যাদের হাতে হাত রাখলে,
যাদের মাওলা ও নেতা মানলে,
দুনিয়া ও আখেরাতে মুমিনেরা
দোজখের কষ্ট ও ভয় নাহি যে পায়।
তারা আহলে বাইত নবীজীর
তাদেরই অন্যতম বিশেষ জন
হুসাইন ইবনে আলী
তৃতীয় ইমাম উম্মতীর।
▪▪▪▪
হুসাইন!
জন্মেছিলেন তিঁনি
মানবতার মুক্তির বাণী নিয়ে
নবীর পথহারা উম্মতকে
পথ দেখাবেন বলে।
কিন্তু!!!!!
উম্মতের মাঝে মুসলমান নামে
দুশমনের অভাব ছিল না তাঁর,
মনে হয় যেনো……
জন্মেছেন তিঁনি
তৈরী করতে শুধু, দুশমন আল্লাহর।
▪▪▪▪
হুসাইন!!
তাঁর দুশমনেরা চেয়েছিল সদা,
আজো চায় সর্বদা,
হুসাইন যেনো না থাকে ধরায়,
নবীর খাটি আদর্শ মানুষেরা না যেনো পায়।
কেননা,
হুসাইন যে,
জুলুমের বিরোদ্ধে করেছিল সংগ্রাম!!!
হুসাইন যে,
অবিচারের বিরোদ্ধে হুংকারের নাম!!!
হুসাইন যে,
তাগুত ভেঙ্গে করে খান খান।
▪▪▪▪
তাই,
নবীর দুশমনেরা এক জোট হয়ে,
খেলাফতের নামে,
খেলাফতের ডাকে,
খেলাফতের মসনদে বসে-
নবীর গলায় ছুড়ি চালায়।
তারা যে, হুসাইনী আয়নায় মুহাম্মাদকেই দেখতে পায়।
▪▪▪▪
এই সেই হুসাইন!!
সুফিয়ানী, উমাভী, ইয়াযিদিদের যিনি ছিলেন চক্ষুশূল!
যিনি দুশমনদের আক্রমনের শিকার হয়ে
পরিবার-পরিজন আর দোস্ত-আহবাব হারিয়ে
সত্য-মিথ্যার পার্থক্য স্পষ্ট করে
শাহাদাতের পেয়ালা তুলে নেন হাতে।
যিনি হয়েছিলেন ব্যাকুল

রাসূলের সাক্ষাতে
▪▪▪▪
চেয়েছিল দুশমনেরা
মিটে যাক, নাম-নিশানা হুসাইনের।
চেয়েছিল তারা
মিটে যাক, নবীর স্মৃতি আর
চেহারা হুসাইনের।
তাই,
তারা ইমামের পবিত্র মস্তক কেঁটে
দেহ থেকে মস্তক আলাদা করে
মাথা বিহীন দেহের অবমাননা করে
রক্তাক্ত ধুলো মাখা দেহে ঘোড়া দাবড়িয়ে
ঘোড়ার ক্ষুরে পিষ্ট করে
চেয়েছিল তারা
মিটে যাক, নবীর স্মৃতি আর
চেহারা হুসাইনের।
▪▪▪▪
কিন্তু আজ,
হুসাইনী আয়না যে,
হয়েছে আরো বেশী স্বচ্ছ,
আরো বেশী পরিস্কার।
যে আয়নাতে নবী মুহাম্মাদের রেসালত
আর হুসাইনের রক্তমাখা ইমামত,
সব হয়েছে একাকার।
▪▪▪▪
হত্যা করে, শির কেঁটে,
ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে,
চেয়েছিল আবু সুফিয়ানের দলেরা,
না যেনো থাকে নাম-নিশানা হুসাইনের।
▪▪▪▪
কিন্তু আজ সেই হুসাইন!!
শত-সহস্রগুণ শক্তিশালী হয়ে
মানুষের হৃদয়ের মাঝে
স্থান করে নিয়ে
লক্ষ-কোটি জনতা হুসাইনী হয়ে
শ্লোগানে শ্লোগানে
আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে
তাগুত দলিত মথিত করে
এগিয়ে যায়
যামানার ইমামের সম্বর্ধনায়।
ইমাম সামনে
শত সহস্র কোটি জনতা তাঁর পেছনে
শ্লোগান দেয় শুধু
লাব্বাইক ইয়া হুসাইন
লাব্বাইক ইয়া হুসাইন!!

Related Post

কোথায় পেয়েছ সেই প্রেম!

Posted by - September 5, 2019 0
সালাম! হে ক্বামার-এ-বনু হাশিম তোমার বিলাশি প্রেমকে সালাম, কি করে এমন বিলাসী হতে পারলে যে, তোমার প্রেমের প্রতি হিংসা করা…

তুমি হে ইসলাম রবি

Posted by - November 15, 2019 0
তুমি হে ইসলাম রবি, হাবিবুল্লাহ শেষ নবী, নত শিরে তোমায় সেবি; মোহাম্মদ ইয়া রাসুলুল্লাহ। তুমি সত্য উদ্ধারিলে, মহা তত্ত্ব প্রকাশিলে,…

তু‌মি আছ অস্তিত্বে!!

Posted by - April 10, 2020 0
তু‌মি আছ অস্তিত্বে!! ওরা ব‌লে তু‌মি নেই ! ব‌লে তোমার জন্মই হয়‌নি ! হ‌্যাঁ,বল‌বেই তো ! ওরা তো তোমা‌কে এক…

হুসাইন(আ:) কে? (পর্ব-৪)

Posted by - September 7, 2019 0
হুসাইন(আ:) কে? (পর্ব-৪) – নূরে আলম মুহাম্মাদী। হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন। হুসাইন!!! হুসাইন(আ:), হাসানের(আ.) সহোদর ভাই,…

রাসূলের শেষ বংশপ্রদ্বীপ

Posted by - November 8, 2019 0
আল্লাহ’র শেষ প্রমান– তুমি মাহদী —— রাসূলের শেষ বংশপ্রদ্বীপ — তুমি মাহদী —— হুসাইনের শেষ রক্তধারা — তুমি মাহদী ——…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *