بِسْمِ الّٰلهِ الرَّحْمٰنِ الرَحِيْمِ
(বলো! আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রহিম (অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তির জন্যে)।
সূরা আল হুমাযাহ-এর অনুবাদ ও সামগ্রিক কিছু তথ্যঃ
অন্যের দোষ নিয়ে চর্চাকারী এবং অন্যের বদনামকারী সেই প্রতিটি ব্যক্তির জন্যে আফসোস!,(১)
যে ব্যক্তি (অনবরত) অর্থ সম্পদ যোগাড় ও তার (কম বেশী) গণনাতে ব্যতিব্যস্ত থাকে।(২)
সে মনে করেছে যে, তার অর্থ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে!(৩)
(সে যেরকম মনে করেছে) সেরকম না, নিঃসন্দেহে তাকে হুত্বামা (নামক তুষে পরিণত করার ন্যায় প্রজ্জ্বলিত আগুন)-এ নিক্ষিপ্ত করা হবে।(৪)
(হে নবী!) তুমি জানো কী, হুতামা কী?(৫)
(সেটা হচ্ছে) আল্লাহর (পক্ষ থেকে আরোপিত) জ্বলন্ত আগুন,(৬)
যে আগুন (সেই নিন্দুক ও দোষ নিয়ে চর্চাকারী) অন্তরসমূহ থেকে বের হয়ে তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে।(৭)
আর নিঃসন্দেহে তা (আগুন) সেই (নিন্দুক ও দোষ নিয়ে চর্চাকারী) লোকদের আবৃত করে রাখবে (এবং সেখান থেকে বের হবার কোন পথ থাকবে না)। (৮)
(কেননা, সেই আগুন) সুউচ্চ ও প্রশস্ত স্তম্ভসমূহের ন্যায় (সেই নিন্দুক ও
দোষ নিয়ে চর্চাকারী ব্যক্তির চারপাশ ঘেরাও করে রাখবে)।(৯)
*সূরা “আল হুমাযাহ” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য:*
১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি একশত চারতম।
২। নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি বত্রিশ নম্বরে অবস্থিত।
৩। নাযিলের স্থানটি হচ্ছে পবিত্র মক্কা নগরী।
৪। আয়াতের সংখ্যা ৯।
৫। এ সূরাটির অভ্যন্তরে অবস্থিত শব্দ সংখ্যা ৩৩।
৬। এ সূরাটির অভ্যন্তরে মোট বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে ১৩৪ টি।
৭। এ সূরাটির অভ্যন্তরে “আল্ল-হ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২ বার।
৮। সূরাটির নামের অর্থ: *“আল হুমাযাহ”* শব্দটি “মুবালিগ্বাহ”-র সিগ্বাতে অর্থ করা হয়ে থাকে যার মূল ধাতু হচ্ছে *“হিমায”*। এর অর্থ হচ্ছে *“ছিদ্রান্বেষণকারী”* বা *“অন্যের দোষ নিয়ে চর্চাকারী”*।
৯। *সূরাটির বৈশিষ্ট্য:*
•মাল ও ধন-সম্পদ পুঞ্জিভূতকারীদের নিন্দা।
•আল্লাহর পরিবর্তে ধনবান, মজুতদার ও মুনাফাখোরদের মাল ও সম্পদের পুঁজা।
১০। *এ সূরার অন্য নামঃ* “লুমাযাহ”, যার অর্থ তিরষ্কার করা বা
বদনাম ও বিদ্রুপ করা।
১১। *সামগ্রিকভাবে সূরা “আল হুমাযাহ”-এর মূল আলোচ্য বিষয়* হচ্ছে নিম্নরূপ:
অন্যের দোষ ধরার নেশা থেকে মানুষকে বিরত রাখা।
বদনামকারী ও সমালোচনাকারীরা যে, অন্যের গিবত নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
পরের অনিষ্ট সাধনার্থে মিথ্যা কাহিনী ও গুজব রটনা এবং চোখলকারী
ব্যক্তিদের ভয়াবহ পরিণতি।
ধন-সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বিদ্রুপ ও তিরস্কার।
১২। *সূরা “আল হুমাযাহ”-এর তিলাওয়াতের ফযিলত:*
হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি
আলাইহি): “যে ব্যক্তি সূরা আল হুমাযাহ ফরজ নামাজগুলোতে তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা সকল অভাব অনটন তার কাছ থেকে দূর করে দিবেন, ঐ ব্যক্তির জন্যে আয় রোজগারের বহু পথ প্রশস্থ করে দিবেন এবং তাকে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করবেন। (ফিক্বহুর রিদ্বা, পৃঃ নং ৩৪৪)।
হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “যদি কোন ব্যক্তি নামাজে সূরা আল হুমাযাহ তিলাওয়াত করে তাহলে তাকে এ দুনিয়ার সম পরিমান সাওয়াব দান করা হবে।” (আল ইহতিজাজ, খন্ড ২, পৃঃ ৩০৩)।
১৩। *সূরা “আল হুমাযাহ” -এর মাধ্যমে তদবীর:*
যে ব্যক্তি *সূরা হুমাযাহ* নফল নামাজগুলোতে বেশী বেশী করে পড়বে অল্প দিনের মধ্যেই তার আয় রোজগার বহু গুণে বেড়ে যাবে। (দারমন ব কোরআন, পৃঃ নং ১৬২)।
চোখের ব্যাথায় আক্রান্ত ব্যক্তির উপর এ সূরা তিলাওয়াত করলে আল্লাহ তায়ালা তার চোখের ব্যাথা ভাল করে দিবেন। (দারমন ব কোরআন, পৃঃ নং ১৬৩)।
হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেনঃ “কারো উপর দুষ্ট লোকদের কুদৃষ্টিজনিত কোন ক্ষত সৃষ্টি হলে তা দূর করার জন্যে সূরা আল হুমাযাহ তার উপর তিলাওয়াত করলে আল্লাহ সেই কুদৃষ্টিজনিত ক্ষত থেকে তাকে রেহাই দিবেন।” (তাফসীর আল বুরহান, খন্ড ৫, পৃঃ নং ৭৫৩)।
========================