সূরা “আত্-ত্বরিক্ব” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য

869 0

📚সূরা “আত্ব ত্বরিক্ব” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য:👇

১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি ছিয়াশিতম।
২। নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি ছত্রিশ নম্বরে অবস্থিত।
৩। নাযিলের স্থানটি হচ্ছে পবিত্র মক্কা নগরী।
৪। আয়াতের সংখ্যা ১৭।
৫। এ সূরাটির অভ্যন্তরে অবস্থিত শব্দ সংখ্যা ৬১।
৬। এ সূরাটির অভ্যন্তরে মোট বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে ২৫৪ টি।
৭। এ সূরাটির অভ্যন্তরে “আল্ল-হ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ বার।
৮। সূরাটির নামের অর্থ: “আত্ব ত্বরিক্ব” শব্দটি মূল ধাতু “ত্বুরুক্ব” থেকে গৃহিত হয়েছে, যার আভিধানিক অর্থ দলিত মথিত করা অথবা কোন কিছুকে ঝাকানো। কোন পথ বা রাস্তাকে আরাবী ভাষায় “ত্বারিক” বলার কারণ হচ্ছে যে, যেহেতু পথচারীরা তাদের পদদলনের মাধ্যমে পথকে পদদলিত করে। আবার যেহেতু রাত্রিবেলা ঘরের দুয়ার বন্ধ করে দেয়া হয়, তাই যদি কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করতে চায় তাহলে তাকে দুয়ারের কাঁড়া নাড়তে হয়। আর এজন্যে এ অর্থে, যারা রাতের বেলা প্রকাশিত হয় তাদেরকে “ত্বরিক্ব” বলা হয়।
৯। সূরাটির বৈশিষ্ট্য:
এ সূরা আসমানে ধুমকেতুর প্রকাশের ন্যায় বিষ্ময়কর ঘটনার বর্ণনা করছে, যা একজন মানুষকে এ ধরনের বিষ্ময়কর ও খোদায়ী মহত্বের সৃষ্টির ব্যাপারে গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনা করতে সাহায্য করে।
১০। সামগ্রিকভাবে এ সূরাটির আলোচ্য বিষয় হচ্ছে নিম্নরূপ:
‘ত্বরিক্ব’ নামক নক্ষত্রের বিশালত্ব ও গুরুত্বের বর্ণনা।
আমলনামাতে মানুষের সকল আমলের অন্তর্ভুক্তি।
মানবজাতির সৃষ্টি ও সৃষ্টির সর্বপ্রাথমিক উপাদান।
পুনরুত্থান ও সেদিন সকল গুপ্ত বিষয়ের উন্মোচন।
যমিন ও আসমানের পরিচয়।
কুরআনের মহত্ব বর্ণনা।
কাফেরদেরকে এ পৃথিবীতে সুযোগ প্রদান এবং তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিনের আযাব সম্পর্কে অবগতকরণ।
১১। এ সূরার লক্ষ্যনীয় বিষয়:
এ সূরার বিষয়বস্তু মূলত: দু’টি বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত:
🌴ক) পুনরুত্থান ও হাশরের হিসেব নিকেশ।
🌴খ) ক্বুরআন ও তার গুরুত্ব।
🔰তবে আল্লাহ তায়ালা প্রথমে কিছু বিষয়ের উপর শপথ করার পর মানুষের চারিদিকে পাহারাদার নিয়োগের ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। তিনি পুনরুত্থানের সম্ভাবনাকে প্রমাণ করার জন্যে জীবনের শুরুর সময়কাল এবং বীর্য থেকে মানব প্রাণীর সৃষ্টির বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। আর এসকল বর্ণনা থেকে তিনি এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, যে আল্লাহ মানুষকে মূল্যহীন এক ফোঁটা পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহ মৃত্যুর পর এই মানুষকে পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। অত:পর আল্লাহ রোজ ক্বিয়ামতের কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারপর বিভিন্ন প্রকার অর্থবহ শপথের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ক্বুরআনের গুরুত্ব বঝানোর চেষ্টা করেছেন। সর্বশেষে তিনি কাফেরদেরকে সাবধান করে দিয়ে এ সূরার আলোচনা সমাপ্ত করেছেন।
১২। এ সূরা তিলাওয়াতের ফযিলত:
হাযরাত রাসূলে আকরাম (সা.): “যে ব্যক্তি এ সূরা তিলাওয়াত করবে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে আসমানের নক্ষত্রসমূহের সংখ্যার দশ গুণ বেশী নেকী দান করবেন।” (তাফসীর মাজমাউল বায়ান, খন্ড ১০, পৃ: নং ৩২০।)
ইমাম জাফার সাদিক্ব(আ.): “যে ব্যক্তি সূরা ত্বরিক্ব ফরজ নামাজগুলোতে তিলাওয়াত করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার মূল্য ও মর্যাদা আল্লাহর নিকট সুউচ্চ অবস্থানে থাকবে এবং বেহেস্তে নবী ও মু’মিনদের বন্ধু হিসেবে বসবাস করবে।” (সাওয়াবুল আ’মাল, পৃ: নং ১২২।)
মহানবী(সা.): “সূরা ত্বরিক্ব মুখস্ত করো। কেননা, যদি তোমরা জানতে কি ধরনের গুপ্ত রহস্য, প্রভাব ও বরকত এ সূরাতে নিহিত রয়েছে তাহলে তোমরা সব কিছু ফেলে এই সূরা মুখস্ত করতে লেগে যেতে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টায় রত হতে। আল্লাহ তায়ালা এই সূরা তিলাওয়াতের মাধ্যমে সন্দেহ প্রবনতা ব্যতীত তিলাওয়াতকারীর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।” (মুসতাদরাক আল ওয়াসায়িল, খন্ড ৪, পৃ: নং ৩৬৫)।
১৩। সূরা আত্ব ত্বরিক্বের মাধ্যমে তদবীর:👇
হাযরাত রাসূল(সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: “সূরা ত্বরিক্ব লিখে সেটাকে পানি দিয়ে ধুয়ে সেই পানি দ্বারা ঘা ধুয়ে দিলে সেই ঘা দ্রুত শুকিয়ে যাবে। আর রোগীর জন্যে নির্ধারিত ঔষুধের উপর এ সূরাটি পড়ে ফু দিলে সেই ঔষুধ অবশ্যই তার রোগমুক্তির কারণ হবে। আর কোন কিছু রক্ষার জন্যে তার উপর এ সূরা তিলাওয়াত করে ফু’ দিলে তা নিরাপদে থাকে।” (তাফসীর আল বুরহান, খন্ড ৫, পৃ: নং ৬২৯)।
যদি কেউ সূরা আত্ব ত্বরিক-এর প্রথম দশ আয়াত চার টুকরা কাগজে লিখে প্রতিটি টুকরা একটি কাঠের লাঠিতে আটকে রাখে এবং প্রতিটি লাঠি পোকা-মাকড় বা পঙ্গপালের মাধ্যমে কোন ক্ষতিগ্রস্থ জমির চার কোনে পুঁতে রাখে তাহলে কোন কিছু এই যমিনের ফসল ক্ষতি করতে পারবে না। (খাওয়াসসুল ক্বুরআন ওয়া ফাওয়াইদিহি, পৃ: নং ১৬২)।
ইমাম সাদিক্ব(আ.): “স্বপ্ন দোষে আক্রান্ত রোগী যদি ঘুমানোর পূর্বে সূরা আত্ব ত্বরিক্ব তিলাওয়াত করে তাহলে সে ব্যক্তি স্বপ্ন দোষের রোগ থেকে মুক্তি পাবে।” (দারমন ব কোরআন, পৃ: নং ১৪১)।
🔔সমাপ্ত।
‎↯↻↯↻↯‎

Related Post

সূরা আল ক্বাদর-এর অনুবাদ

Posted by - April 24, 2020 0
(আমি)আল্লাহর নামে(শুরু করছি), যিনি রাহমান(পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রাহিম(অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যে)। আমরা নিশ্চিতরূপে তা ক্বদরের…

সূরা আবাসা সম্পর্কে কিছু তথ্য

Posted by - August 22, 2020 0
(আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রাহমান [=পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে], যিনি রাহিম [=অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যে]।…

সূরা “সূরা “আল ক্বামার” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য:

Posted by - December 16, 2019 0
📚✳️ সূরা “আল ক্বামার” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য: ✅১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ-এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি চুয়ান্নতম। ✅২।…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »