হুসাইন(আ:) কে?
(পর্ব-৫)
– নূরে আলম মুহাম্মাদী।




হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন।
হুসাইন!!!
যে নবী মুহাম্মাদের(সা.) মহব্বতে
সৃষ্টি হলো সমগ্র জাহান,
সেই নবীর মহব্বতে পৃথিবী হর হামেশা করে হুসাইনের গুণগান।
এ সেই হুসাইন!!!
সৃষ্টি জগত যাঁর ত্যাগের মহিমায় চলে
অনু পরমানু যাঁর প্রশংসা করে
দিবা-রাত্রি যাঁর বদৌলতে ঘোরে।
আকাশ বাতাস যাঁর শোকে নুয়ে নুয়ে কাঁদে,
যাঁর রক্তের স্রোতধারায় আজো,
ঘরে ঘরে হেদায়েতের আলো জ্বলে।
যার বংশের শেষ প্রদ্বীপ
হেদায়েতের চেরাগ জ্বেলে,
পথহারাদের পথ দেখাতে
আছেন সর্বদা যামানার ইমাম
সমাজের বুকে মানুষের মাঝে।
তিনি, সেই হুসাইন!!
পয়গম্বরা যাঁর বেদনায় অশ্রু ঝরিয়েছেন,
ফেরেস্তারা যাঁর মহাত্যাগে হতবাক হয়েছেন।
প্রেমের নবী যাঁর জন্মেতে শোকাহত হয়েছেন,
আর…
যাঁর শাহাদাতের খবরে তিনি নয়ন ভরে কেঁদেছেন।
মহাবীর আলী যাঁর শাহাদাত স্থলে থমকে দাড়িয়েছেন,
আর…
যাঁর কথা স্মরণ করে তিনি কান্নার রোল তুলেছেন।
তিনি, সেই হুসাইন!!!
হুসাইন!!!
যার নানাজান হলেন নূরনবী, মহানবী, শেষ নবী, দয়াল নবী, প্রেমের নবী,
মুহাম্মাদ মুস্তফা যিনি।
মা যার জান্নাত নেত্রী, নারীকুলের নেত্রী, নবীজীর নয়নমনি, শেরে খোদার আদরিনী,
ফাতিমাতুয্ যাহরা যিনি।
বাবা যার নবীজীর ইহকাল ও পরকালের ভাই,
দুনিয়া ও আখেরাতে
মুমিনরা যার
আশ্রয়ে নিয়েছেন ঠাই।
হ্যাঁ, হুসাইনের বাবা?!!!
নবীজীর জ্ঞানের দরজা যার হাতে খোলে,
বেহেশত আর দোজখ যার বিচারে চলে,
ইমামত ও খেলাফতের মুকুট
যার মাথায় গর্ব করে থাকে,
যার কারণে জান্নাত রমনী ফাতিমা
শাহাদাতের শুরা তুলে নেন মুখে,
তিনি সেই শেরে খোদা মুর্তজা আলী
যুলফিক্বার থাকে যার কাঁধে।
হুসাইনের চাচা?!!!
জেহাদের ময়দানে শেরে খোদার মত,
নবীর দুশমনেরা যার কারণে হয়েছিল নত,
যিনি বীর বিক্রমে পান করেছেন শাহাদাতের সুধা
যিনি ডানাতে ভর করে ঘুরে বেড়ান
ফেরেশতাদের সাথে সদা।
তিনি আবু তালিবের পুত্র
দয়াল নবীর অনুগত
জাফার তাইয়ার নামে খ্যাত।
হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? আরো বলি শোন।
হুসাইন!!!
হুসাইনের ভাই বেহেশতের সর্দার,
বলেন নবীজী, হুকুমে আল্লাহর,
হাসান হলো রাসূলের সিবতে আকবার।
চোখের জল মিশ্রিত ভালবাসা ছিল নবীজীর
হাসান ও হুসাইনকে আদর করে করে বলতেন তিনি,
আনা উহিব্বুল হাসান ওয়াল হুসাইনী
হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসি আমি।
এ সেই হুসাইন!!!
আরো একজন ভাই ছিল হুসাইনের!!
শেরে খোদা আলীর মত গর্জে উঠেছিল কারবালা প্রান্তরের।
শত প্রলোভনও পারেনি তাঁর কাছ থেকে
হুসাইনের পথ কেড়ে নিতে।
উম্মুল বানিনের বীর সন্তান
হুসাইনের ভাই,
আশুরার দিনে আব্বাস ইবনে আলীর আর কোন জুড়ি নাই।
ইমাম তাবুর পিপাসার্ত নারী-শিশুদের বাঁচাতে সেদিন
পানির মশক তুলে নিলেন
কারবালার পতাকাবাহী সেদিন।
এক হাতে মশক, তরবারী আরেক হাতে
ফোরাত নদীর পানি নিয়ে
আসছেন ছুটে নবীপুরীর দিকে।
পানির পিপাসায় কলিজা শুকিয়ে যায়
হুসাইন তনয় আলী আসগারের,
পানি পানি করে কাতরায়
আলী আকবার ও সকিনায়।
মহাবীরের পুত্র মহাবীর আব্বাস,
নজর নাই তার যুদ্ধের দিকে,
যে করেই হোক
পৌছাতে হবে পানি,
ছুটে চলেন তাবুর দিকে।
আহ্! কী বেদনাদায়ক ঘটনা,
আব্বাস আলামদার,
বীরত্বের কোন কমতি ছিল না তাঁর।
তবু যুদ্ধের দিকে না গিয়ে
পানির মশক বাঁচাতে গিয়ে
এক এক করে দু’হাত খোয়ালেন তিনি।
মুখে কামড় দিয়ে মশক ধরে রাখলেন
তাবুর দিকে ছুটছেন তিনি।
হাজারো তীর বল্লমের আঘাত
উপেক্ষা করে
পানির মশক কামড় দিয়ে ধরে
এসেছেন কাছাকাছি চলে।
কিন্তু…….
মশক ছিদ্র করে দিল একটি তীর এসে
পানি তিনি পারলেন না ধরে রাখতে
তিনিও লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে।
আব্বাস ইবনে আলীর প্রাণ যায় যায়
ছুটে আসেন হুসাইন, বলেন হায়! হায়!
কোমড়ে হাত দিয়ে বসে পড়েন ইমাম হুসাইন,
ভাইয়ের শিয়রের পাশে চোখের পানি ছেড়ে কাঁদেন আর
মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেন,
শেষ সময়ে তুমি আমাকে ভাই বলে ডাকলে!!
বুকের জ্বালা বাড়িয়ে দিয়ে গেলে,
হে আব্বাস!
হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
বলে ওঠেন হুসাইন।
প্রাণের ভাইকে হারিয়ে
শেষ ভরসা হাতছাড়া হতে দেখে
দুঃখের সাগরে ভেসে গেলেন তিনি।
তিনি, সেই হুসাইন! হুসাইন! হুসাইন!
____________