হিল্লা বিয়ে

850

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

হিল্লা বিয়ে সমন্ধে জানার জন্যে সর্বপ্রথমে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন, বিয়ে সঠিক হবার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং তালাক কার্যকরী ও বৈধ হওয়ার শর্তাবলী ভালভাবে জানা দরকার। বিয়ে জায়েয হওয়ার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আমাদের জানা দরকার, যা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের হানাফি মাঝহাবে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না অথবা বাস্তবে তা মানা হয় না, তা হলো, ছেলে মেয়ের উভয়ের পছন্দ। এ বিষয়টি সম্পন্ন না হলে মুখে যত কিছুই বলুক না কেন এ বিয়ে বৈধ হয় না। এ জন্যে ইসলামী শরীয়তে বলা আছে, বিয়ের সিগ্বার জন্যে “কাসদে ইনশা” জরুরী। অর্থাৎ যদি বিয়ের জন্যে মানুসিক সম্মতি বা মনের পছন্দ বা মন থেকে পছন্দ করে রাজী না থাকে তাহলে বিয়ের সে সিগ্বা (দুইটি বাক্য পাঠ) বাস্তবায়িত হবে না অর্থাৎ সেই বিয়ের আক্বদ মুখে মুখে হলেও প্রকৃতপক্ষে বিয়ের সম্পর্ক বৈধ হয় না। পাশাপাশি “ইকরাহ” শব্দটি ইসলামী ফিক্বাহ শাস্ত্রে বিদ্যমান, যার অর্থ হচ্ছে অপছন্দ সত্ত্বেও সম্মতি বা জোরজবরদস্তিমূলক সম্মতি। ইসলামী শরীয়তে আছে যে, এ ধরনের কোন বিয়ে বৈধ হয় না, যদিও বিয়ের সিগ্বা পাঠ করা হয়ে থাকে। এখান থেকে বুঝা যায়, যে বিয়ে আমাদের সুন্নী সমাজে হিল্লা বিয়ে নামে চালু আছে তা মোটেও বৈধ হচ্ছে না। কেননা, পুরুষ ও স্ত্রীলোকের বিয়ের আগে উভয়ের প্রতি মানুসিক পছন্দমূলক সম্মতি থাকতে হবে, তাহলেই সেই বিয়ে বৈধ হিসেবে পরিগণিত হবে। কিন্তু হিল্লা বিয়েতে মন থাকে তার আগের স্বামীর দিকে এবং নিয়ত থাকে তার আগের স্বামীর কাছে ফিরে যাবার জন্যে অন্য পুরুষকে বিয়ে করছে। এ ধরনের বিয়েতে মুখে সিগ্বা পড়লেও বিয়ে বৈধ নয়। আবার নতুন বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রীর গোপন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। অত:পর যদি স্বামী কখনো সেই স্ত্রীকে তালাক দিতে চায় তাহলে তার ন্যায্য কারণ থাকতে হবে। আর তা না হলে, সেই তালাক কার্যকরী হবে না। অর্থাৎ এমনি এমনি মন চাইলো আর তালাক দিয়ে দিলো অথবা স্ত্রীকে তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে তালাক দিবে অথবা স্ত্রী তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্যে তালাক নিবে, এ ধরনের কোন কারণই তালাক বৈধ হবার জন্যে যথেষ্ট নয়। আর যদি কোন মহিলা তার তালাকদাতা স্বামীর কাছে ফিরে যাবার নিয়ত করে কোন পুরুষকে বিয়ে করে তাহলে সেই বিয়ে প্রথম থেকে বৈধই হবে না। তাই, এ ক্ষেত্রে তালাকপ্রাপ্তা নববধুর নিয়ত হতে হবে, আমি এই পুরুষকে ভালবাসি ও পছন্দ করি এবং সংসার করতে আগ্রহী, তাই এই পুরুষকে বিয়ে করবো। এরপর যদি দাম্পত্ব জীবনে কোন বৈধ কারণে তালাক হয়ে যায় আর তখন যদি সে পূর্বের স্বামীর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তাহলে শরীয়ত মোতাবেক কোন আপত্তি থাকবে না। আর জেনে রাখা দরকার, একমাত্র তিনবার তালাকের পর অর্থাৎ দুইবার রিজয়ী’ তালাকের পর তৃতীয়বারের তালাক হচ্ছে বায়েন তালাক, শুধুমাত্র এই বায়েন তালাকের পর যদি কোন মহিলা ইদ্দত পালন করে তার পছন্দের নতুন পুরুষকে বিয়ে করে এবং সংসার করার নিয়ত করে দাম্পত্য জীবন যাপন করতে মনস্থ হয় তবেই সে বিয়ে বৈধ হবে। আরো জানা দরকার, তালাক কার্যকরী হওয়ার জন্যে যে সকল শর্ত বিদ্যমান তার মধ্যে ঠান্ডা মাথায় ও পরিপূর্ণ হুশ-জ্ঞান অবস্থায়, দুই জন ন্যায়বিচারক ব্যক্তিকে সাক্ষী রেখে মুখে নির্দিষ্ট মহিলার নাম নিয়ে তালাক শব্দ উচ্চারণ করা অন্যতম। এটাকে বলে এক বৈঠক। এই তালাকের পর তিন মাস সময়ের মধ্যে যদি স্বামী বা স্ত্রী পরস্পরের প্রতি আসক্তিমূলক কোন আচরণ করে তাহলে ধরে নেয়া হবে তাদের তালাকটি ছিল রিজয়ী তালাক। তাই এর পরও তারা বৈধ স্বামী-স্ত্রী। এরকমভাবে যদি আবারো কোন কারণে উপরোক্ত শর্ত মোতাবেক তালাক দেয় এবং এর পর আবারো তিন মাসের মধ্যে পরস্পরের দিকে রুজু করে তাহলে এবারও সেই পুরুষটির তালাককে রিজয়ী’ তালাক ধরে নেয়া হবে। অত:পর যদি আবারো কোন কারণে সেই শর্ত মেনে তালাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তখন আর রুজু বা ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না। এই তালাককে বলা হয় বায়েন তালাক। অথবা যদি পূর্ববর্তী দুই তালাকের প্রথম বা দ্বিতীয় তালাকের পর তিন মাসের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী কেউ ফিরে আসেনি অর্থাৎ উভয়ের মধ্যে শারিরীক ও মানুষিক সম্পর্ক স্থাপন হয়নি তাহলেও সেই তালাককে বায়েন তালাক বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের বায়েন তালাকের পর যদি তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী আবার পূর্বের স্বামীকে বিয়ে করতে চায় তাহলে যে কোন সময় সে বিয়ে করতে পারে। এর জন্যে অনত্র অন্য কোন পুরুষকে বিয়ে করে তারপর যদি কোন ন্যায্য কারণে তালাক হয় তাহলে পূর্বের স্বামীকে বিয়ে করতে পারবে- এরকম করার প্রয়োজন নেই। সুতরাং ইসলামী শরীয়তে হিল্লা বিয়ে নামে যে বিয়ে আছে তার প্রকৃত রূপ হচ্ছে এরকম। যেহেতু সূরা বাক্বারার ২৩০ নং আয়াতকে সম্বল করে হিল্লা বিয়ের একটা প্রচলন হানাফী মাযহাবে আছে, তাই, আয়াতটি অনুবাদ করে দেখাচ্ছি যে, তাদের বক্তব্য কতটুকু অন্ত:সারশুণ্য।

অনুবাদঃ

“যদি সেই পুরুষ (দুই তালাক ও দুই রুজুর পর তৃতীয়বার) তাকে (তার স্ত্রীকে) তালাক দেয়, তাহলে সেই মহিলা সেই পুরুষের জন্যে আর হালাল থাকবে না। তবে যদি সেই মহিলা তাকে (সেই পুরুষকে) ছাড়া (তার পছন্দমত ও ঘর-সংসার করার নিয়ত করে) অন্য কোন পুরুষকে বিয়ে করে এবং যদি (দ্বিতীয় স্বামী) তার স্ত্রীকে (দাম্পত্য জীবনের মেলামেশার ফলে কোন এক সময়ে শরীয়ত সম্মত কোন বৈধ কারণ দেখে) তালাক দিয়ে দেয় তাহলে (দ্বিতীয়বার তালাকপ্রাপ্তা) মহিলা যদি (এখন পুনরায়) তার আগের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চায় তাহলে কোন গুনাহ হবে না। এটা তখনই বৈধ হবে যখন (সেই মহিলা ও পুরুষ) আশাবাদী হবে যে, (দাম্পত্য জীবনে) তারা আল্লাহর বিধান ও নির্ধারিত সীমারেখা মেনে চলতে পারবে। এগুলো হচ্ছে আল্লাহর বিধান যা জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্যে তিনি ব্যক্ত করে থাকেন।” (সূরা বাক্বারা, সূরা নং ২, আয়াত নং ২৩০)। 

Related Post

রমযান ক্যালেন্ডার ১৪৪৪ হিজরি

Posted by - মার্চ ২৯, ২০২২
রোযা সম্পর্কে কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ আয়াত يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ…

আক্কিকা

Posted by - আগস্ট ১৪, ২০১৯
আক্কিকা হচ্ছে, শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে সকল বালা-মুসিবত থেকে তার হেফাজতের জন্যে এমন পশু জবেহ করা যার মধ্যে কুরবানির পশুর…

মাসআলা

Posted by - অক্টোবর ৩, ২০১৯
মাসআলাঃ ফরজ অথবা নফল যে কোন প্রকার নামাজের প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়ার ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই।আর…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »