সৃষ্টিকর্তার গুণাবলী

856 0

বিশ্ব বিধাতা পরিপূর্ণ ও পরম সত্তা। তাঁর জাত বা সারসত্তা সকল প্রকার গুণাবলীতে ভরপূর। কেননা,যা কিছু আমরা পরিপূর্ণতা বলে আখ্যায়িত করে থাকি তার সবকিছুই তাঁর সারসত্তায় বিরাজমান। আর যা কিছু আমাদের ধারণারও অতীত তাও তাঁর জন্যে ধারণা করা যায়। তিনি পরম পরিপূর্ণ।

তিনি সাবর্জনীন প্রভু,তাঁর প্রভূত্বের সীমারেখা টানা যায় না। তিনি চিরন্তন,চিরঞ্জীব,শাশ্বত ও অমর। আল্লাহ্ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তিনিই চূড়ান্ত সার্বভৌম ও সর্বশক্তিমান। তিনি সর্বজ্ঞ,সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কোন স্থান,কাল বা পাত্রে সীমাবদ্ধ নন। স্থান,কাল,পাত্র তাঁর জন্যে কল্পনা করারও অশোভনীয়। আমাদের চর্ম চক্ষুর মাধ্যমে তাঁকে দেখা অসম্ভব। কেননা,তিনি তো কোন বস্তুগত সত্তা নন। তিনি কোন মিশ্র বা যৌগিক সত্তা নন। যে সমস্ত ত্রুটি ও অপূর্ণাঙ্গতা একজন পরম পরিপূর্ণ সত্তার জন্যে অশোভনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় তার সকল কিছু থেকে তিনি মুক্ত।

অধিকন্তু পূর্ণতা,পরিপূর্ণতা,সব ধরনের কল্যাণ ও মঙ্গল বিষয়ক বস্তু,তাঁর-ই সৃষ্টি। তিনি সকল পরিপূর্ণতার পরিপূর্ণতাদানকারী। কেননা,পূর্বোল্লেখিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে,তিনি একজন অপরিহার্য সত্তা। কোন অপরিহার্য সত্তার জন্যে নির্ভরশীলতা ও মুখাপেক্ষিতার প্রশ্নই উত্থাপন হতে পারে না।

আল্লাহ্ ন্যায় বিচারক,সুবিচারক ও সুবিচক্ষণ। তিনি হাকিম,সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও প্রজ্ঞাবান। তাঁর প্রতিটি কার্যে সুনির্দিষ্ট কারণ নিহিত থাকে। তিনি অযথা কোন কাজ সম্পাদন করেন না।

তিনি সকল সৃষ্টির নিয়ন্তা ও রিজিক্দাতা। সকল সৃষ্টির রিজিক তিনিই প্রদান করে থাকেন। তিনি সর্বজ্ঞানী। অসম্ভব বস্তুজগত সম্পর্কেও তিনি জ্ঞাত।

তাঁর সকল গুণাবলী তাঁর জাত সত্তারই অন্তর্গত। আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলী তাঁর জাতের উপর আরোপিত নাকি তাঁর জাতের সাথে একাকার? এ নিয়ে যুগ যুগ ধরে আশআরী ও মু’তাযিলিদের মধ্যে বিতর্ক হয়ে আসছে। মু’তাযিলিরা আল্লাহর একত্বের রক্ষা এবং চিরবিদ্যমান সত্তার একাধিকত্ব ও তাঁকে বস্তুগত গুণাবলীর সাথে তুলনার বিষয়টি গুড়িয়ে দেয়ার নিমিত্তে আল্লাহর গুণাবলীকে তাঁর জাত সত্তার সাথে মিশিয়ে একক সত্তার ধ্বনি দিয়ে আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকার করেছেন। তারা আল্লাহর জাত ছাড়া অন্য কিছুকে স্বীকার করতে একেবারে নারাজ। এ প্রসঙ্গে ক্বাজী আব্দুল জাব্বার আল মু’তাযিলি বলেন :

“আমাদের শেখ,আবু আলী বিশ্বাস করেন যে আল্লাহর জাতের মধ্যে চাঁরটি গুণ (ক্ষমতা,জ্ঞান,হায়াত বা জীবন ও অস্তিত্ব) যথোযোগ্য বিদ্যমান।

তিনি আরো বলেন,আমাদের শেখ,আবু হাশিম বলেন,এই (চার প্রকার) গুণাবলী আল্লাহর জাত সত্তার অন্তর্গত।

অতএব,উপরোক্ত দুই শেখের বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে :

“আল্লাহ্ সুবহানাহু নিজ সত্তাতেই জ্ঞানী,শক্তিশালী ও জীবিত,জ্ঞান,ক্ষমতা ও হায়াতের মাধ্যমে নয়।”২০

আর আশআরীরা মু’তাযিলিদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আল্লাহর সিফাতকে তাঁর জাত থেকে আলাদা করে উল্লেখ করেছেন এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য গুণাবলীর সাথে আল্লাহর গুণাবলীর তুলনা দিয়েছেন।২১

বস্তুতঃ আল্লাহর জাত সত্তার সাথে সাথে তাঁর গুণাবলীর অবস্থানও অনস্বীকার্য। তবে তাই বলে তাঁর গুণাবলী তাঁর জাতসত্তা থেকে পৃথক কিছু নয়।

আল্লাহর গুণাবলীকে আমরা দু’ভাগে বিভক্ত করতে পারি।

এক : ইতিবাচক (ثبوتیة)

দুই : নেতিবাচক (سلبیة)

অথবা

এক : সৌন্দর্যমন্ডিত ((جمالیة

দুই : মহিমামন্ডিত (جلالیة)

অতএব যদি কোন সিফাত বা গুণ ইতিবাচক হয় আর তা আল্লাহর সারসত্তার জন্যে শোভনীয় ও সৌন্দর্যময় বলে পরিগণিত হয় তা’হলে আমরা তাকে ‘জাতগত ইতিবাচক’ বা ‘সৌন্দর্যমন্ডিত’ গুণ বলে আখ্যায়িত করে থাকি। তাই জ্ঞান,শক্তি ও হায়াত বা জীবন ইতিবাচক গুণের অন্তর্ভুক্ত যা তাঁর পবিত্র সারসত্তার পরিপূর্ণ অস্তিত্বের প্রতিই ইঙ্গিত বহন করে।

আর যখন কোন গুণ দ্বারা আল্লাহ্ থেকে ত্রুটি ও অপূর্ণাঙ্গতা এবং অন্য কিছুর প্রতি মুখোপেক্ষিতা দূরীকরণ বুঝানো হয় তখন সেই গুণকে নেতিবাচক (سلبیة) বা মহিমামন্ডিত (جلالیة) গুণ বলা হয়ে থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ “দৈহিকসত্তা”,“স্থান দখল”,“স্থান পরিবর্তন” ও “গতিশীলতা”-র অস্বীকার তাঁর নেতিবাচক গুণাবলীর মধ্যে পরিগণিত।

হিজরী একাদশ শতকের প্রাজ্ঞ দার্শনিক এবং আক্বায়েদ শাস্ত্রের সুবিখ্যাত পন্ডিত সাদরুল আফাযিল মোল্লা সাদরা (রহঃ) উপরোক্ত দু’টি গুণ তথা সৌন্দর্যমন্ডিত গুণ ও মহিমামন্ডিত গুণের বিশ্লেষণ প্রদান করতে গিয়ে নিম্নের আয়াতটি উল্লেখ করেছেন।২২

আল্লাহ্ কুরআনুল কারিমে এরশাদ করেছেন :

 تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

অর্থাৎ : তোমার প্রতিপালকের নাম মহান ও বরকতময়,যিনি মহিমান্বিত (ذِي الْجَلَالِ) এবং সম্মানিত (وَالْإِكْرَامِ)।(আর-রাহমান,আঃ নং-৭৮)

কোরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর গুণাবলী-

আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী:

আল্লাহর জ্ঞানের পরিধি সর্বত্র বিস্তৃত। অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যত তার কাছে অর্থহীন। আল্লাহর জ্ঞান তার জাত-সত্তার সাথে সম্পৃক্ত তবে বহিরাগত কিছু নয়। তিনি জ্ঞান অর্জন করে জ্ঞানী হননি। যেমনি তাঁর জাত-সত্তার কোন সূচনা লগ্ন নেই,তেমনি তাঁর জ্ঞানের আদিকালও নিরূপন করা যায় না। কেননা,তিনি তো কোন বস্তুসর্বস্ব বা শারীরিক সত্তা নন। যখন জ্ঞানের কোন পরিভাষাও সৃষ্টি হয়নি তখনও তিনি ছিলেন সর্বজ্ঞানী। তিনি আদি-অন্ত সকল কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। সকল কিছুর জ্ঞান তার করায়ত্বে,জ্ঞানের সকল দিক তাঁর সামনেই উপস্থিত। তার জ্ঞান অনন্ত,নির্ভূল,কখনো তার জ্ঞান ভুলের শিকার হয় না। পূর্ব থেকেই সঠিক তথ্য তাঁর কাছে বিদ্যমান।

তবে আল্লাহর জ্ঞান মানব-স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়। আমাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না তাঁর জ্ঞান ও উপলদ্ধি ক্ষমতা। কাল ও সময় তারই সৃষ্টি,তাই তাঁর জ্ঞান কোন কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর জ্ঞানে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র বস্তু,প্রাণী,ঘটনা ও বিষয়ে কোন পার্থক্য নেই। আমাদের কর্ম-ক্রিয়ার সুক্ষ্মাতিসূক্ষ ব্যাপারও তাঁর গোচরীভূত। তাই বলে তার এ জ্ঞান মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার স্বাধীনতাকে সীমিত করে না। আমরা আমাদের কর্ম-ক্ষমতায় সম্পূর্ণ স্বাধীন। সুতরাং সর্ববিষয়ে আল্লাহর জ্ঞানের কারণে মানুষের ভাল-মন্দ বিবেচনা ও নির্বাচনের স্বাধীনতা কোন ক্রমে খর্ব হয়ে যায় নি।

প্রশ্ন হতে পারে,‘যদি আল্লাহ্ পূর্ব থেকেই সমস্ত ব্যাপারে অবগত থাকেন তাহলে মানুষের মন্দ কাজের ব্যাপারেও নিশ্চয়ই তার জ্ঞান আছে। এমতাবস্থায় একজন অসৎ ব্যক্তি কোন অন্যায় ও অনৈতিক কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায়,স্বাধীনভাবে সে কাজটি আঞ্জাম দিতে পারে না। কেননা,আল্লাহ যা জানেন তা তো কোনক্রমে ভুল হতে পারে না। আল্লাহ যদি পূর্ব থেকেই কোন হত্যাকারীর ব্যাপারে তার অন্যায় হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে সম্যক অবগত থাকেন আর যদি সেই অন্যায় কার্যটি সম্পাদন করা না হয় তা’হলে তো আল্লাহর জ্ঞান ভুল প্রমাণিত হয়ে যাবে। তাই,আল্লাহর জ্ঞান সঠিক প্রমাণ করার জন্যে অবশ্যই উক্ত হত্যাকারীকে এ হত্যাকান্ড ঘটাতে হবে। অতএব এ অন্যায় কাজটি সেই হত্যাকারী লোকটি বাধ্য হয়েই করলো না? কেননা এক্ষেত্রে সে কাজটি করা ছাড়া হত্যাকারী ব্যক্তিটির অন্য কোন উপায় ছিল না। সুতরাং মানুষ যা কিছু করে তা আল্লাহ্-ই করিয়ে থাকেন। মানুষ স্বাধীনভাবে কোন কাজ আঞ্জাম দিতে সক্ষম নয়’’।

নিন্মলিখিত উপায়ে অত্যন্ত সহজভাবে আমরা উক্ত প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারি :

প্রথমত : আল্লাহ কোনক্রমে অন্যায় কাজ করতে পারেন না। কেননা,অন্যায় ও অসৎ কাজ সেই করেন যিনি এসব কাজের মাধ্যমে হয়ত নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত করতে চান নতুবা যিনি একজন ত্রুটিপূর্ণ সত্তা,তার দোষ-ত্রুটি ঢাকার জন্যে অন্যের উপর যুলুম-অত্যাচারের মত নিকৃষ্ট পথের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কিন্তু একজন অপরিহার্য,অমুখাপেক্ষী ও সুবিচারক সত্তার জন্যে এ ধরণের কল্পধারণা সম্পূর্ণ অশোভনীয়।

দ্বিতীয়ত : আল্লাহর জ্ঞান,মানুষের কাজ-কর্মের স্বাধীনতাকে সীমিত করে না। মানুষ তার স্বীয় বিবেক-বুদ্ধি ও বিবেচনা ক্ষমতা দিয়ে ভাল অথবা মন্দ কাজের নির্বাচন করে থাকে। এক্ষেত্রে আল্লাহ্ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। তিনি শুধু ভাল বা মন্দ কাজ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। কে কখন কি ভাবে একটা ভাল অথবা মন্দ কাজ আঞ্জাম দিবে এ ব্যাপারে তার অনন্ত জ্ঞান রয়েছে। আর এ সমস্ত কাজগুলো যে মানুষ তার স্বীয় স্বাধীনতা বলে সম্পাদন করবে -এ বিষয়েও তিনি সম্যক জ্ঞানের অধিকারী। কেননা,আল্লাহ অসীম জ্ঞানের অধিকারী,তার জ্ঞানের পরিধি নিরূপন করা অসম্ভব।

উদাহরণ স্বরূপ যদি কোন শিক্ষক তার ক্লশের কোন ছাত্রের ব্যাপারে বলেন যে,‘ঐ ছাত্রটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করবে’। তাহলে শিক্ষক কি ঐ ছাত্রের লেখাপড়া ও তার প্রথম স্থান অধিকারের ব্যাপারে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করলেন? কক্ষনো না। আল্লাহর জ্ঞানের ক্ষেত্রেও এই একই বক্তব্য প্রযোজ্য। তিনি জানেন,তাই বলে মানুষের কাজ-কর্মের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেন না মোটেও। আর যদি আল্লাহ-ই মানুষকে দিয়ে মন্দ ও অন্যায় কাজ করাবেন,সমাজে অবিচারের প্রসার ঘটাবেন তাহলে তিনি কোরআন পাকে কি করে মানবজাতিকে সৎ ও হেদায়েরেত পথে আহ্বান জানাতে পারেন? যে নিজেই অন্যায় কার্য করেন সে কিছুতেই অপর লোকদের ন্যায় পথে আহ্বান জানাতে পারেন না।

অপরদিকে,পরকালে বিশ্বাসীদের জন্যে এ ধরণের অমুলক প্রশ্ন অত্যন্ত বিষ্ময়কর। কেননা,আমরা আমাদের বিবেক প্রসূত দলীলপ্রমাণের সাহায্যে এ কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতে বাধ্য যে,মানুষকে তার ভাল-মন্দ কাজের হিসেব দিতে হবে পরকালে। আর যদি ইহজগতে কোন মানুষের অসৎ কাজের জন্যে আল্লাহ্ দায়ী হয়ে থাকেন তা’হলে তিনি কিভাবে সে ব্যক্তির অন্যায় কাজের শাস্তি দিবেন? কেননা,মন্দ কাজটি তো ঐ ব্যক্তি করেনি বরং আল্লাহ্-ই করিয়েছেন। তারপরও যদি বান্দাকেই শাস্তি ভোগ করতে হয় তাহলে বলতে হয় এক্ষেত্রে আল্লাহ্ মানুষের উপর অবিচার করেছেন (নাঊযুবিল্লাহ্)। সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ বিবেক এধরনের আবিচার আল্লাহর উপর কখনো আরোপ করতে পারে না।

পবিত্র কোরআনের পরিভাষায় :

قُلْ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّـهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ

অর্থাৎ : যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় তারা কখনো সফলকাম হতে পারে না।(ইউনুস,আঃ নং ৬৯)

তাই এ ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস,‘কোন কিছু থেকে কোন কিছু হয় না,যা কিছু হয় আল্লাহ্ থেকে হয়’। মানুষকে সত্য পথে দিক নির্দেশনার পরিবর্তে ভ্রান্ত পথে ধাবিত করে অনায়াসে। যারা এ ধরণের ভ্রান্ত আক্বিদায় বিশ্বাসী তারা মুসলমান বলে দাবী করলেও হয় তারা পরকালে অবিশ্বাসী নতুবা আল্লাহকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে নিজেদের ঈমানের অপরিপক্কতারই সাক্ষ্য দিতে সচেষ্ট। তারা ঈমানের বেশভূষা পরিধান করলেও প্রকৃত ঈমানের স্বাধ আস্বাদন করতে পারেননি।

সুতরাং যেহেতু মন্দ কাজের জন্য মানুষ স্বয়ং দায়ী তাই ঐ মন্দ কাজের শাস্তিও তাকেই ভোগ করতে হবে। আল্লাহ্ মানুষের হেদায়াতের জন্যে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। মানুষ তার প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বীয় স্বাধীনতা ও বিবেক-বিবেচনা প্রয়োগে সম্পূর্ণ সক্ষম।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ বলেন :

وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ

অর্থাৎ : তাঁর (আল্লাহর) নিকট সমস্ত অদৃশ্য বস্তুর জ্ঞানভান্ডার সংরক্ষিত,তিনি ব্যতীত ঐ সব বস্তু সম্পর্কে অন্য কেউ অবহিত নন। ভূ-তলে ও সাগরে যা কিছু আছে সে সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ অবগত এবং (বৃক্ষ থেকে) এমন কোন পত্র পতিত হয় না যা আল্লাহর অজানা এবং পৃথিবীর অন্ধকার গর্ভে এমন কোন শষ্য কণা এবং শুষ্ক ও তরল পদার্থ নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে (তাঁর অনন্ত জ্ঞান ভান্ডারে) উল্লেখ করা হয়নি।(আল্ আন্আম,আঃ নং-৫৯)

আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে অনত্র,আরো বলেন :

عَالِمِ الْغَيْبِ ۖ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَلَا أَصْغَرُ مِن ذَٰلِكَ وَلَا أَكْبَرُ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ

অর্থাৎ : সকল অদৃশ্য সম্পর্কে তিনি (আল্লাহ্) পরিজ্ঞাত,যমীন ও আসমান সমুহে এমন কোন বিন্দু কণা নেই,এমন কোন ক্ষুদ্র ও বৃহৎ বস্তু নেই যে তাঁর অসীম ও অনন্ত জ্ঞানে সংরক্ষিত হয়নি।(সাবা,আঃ নং-৩)

আল্লাহ্ ক্ষমতাবান :

পবিত্র আল্ কোরআনে উল্লেখ আছে :

اللَّـهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّـهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

অর্থাৎ : আল্লাহ্ এমন এক সত্তা যিনি সাতটি আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং সেগুলোর ন্যায় আরো আসমান,যমীন থেকে তৈরী করেছেন। তিনি সাত আসমান ও যমীনের মধ্যে তাঁর বিধি-বিধান অবতীর্ণ করেন যেন সকলেই জানতে পারে যে,অবশ্যই আল্লাহ্ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (আত্ তালাক,আঃ নং-১২)

আল্লাহ্ চিরঞ্জীব

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ ঘোষণা করেন :

وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ وَسَبِّحْ بِحَمْدِهِ ۚ وَكَفَىٰ بِهِ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيرًا

অর্থাৎ : (হে রাসুল) তুমি চিরঞ্জীব খোদার উপর ভরসা কর এবং তাঁর প্রশংসাসহ গুণকীর্তন কর। (আল্ ফুরক্বান,আঃ নং-৫৮)

তিনি অনত্র আরো বলেন :

اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ

অর্থাৎ : আল্লাহ্ এমন এক সত্তা-যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই,তিনি চিরঞ্জীব,চিরস্থায়ী। তাঁকে কখনো অলসতা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না।(আল্ বাক্বারা,আঃ নং-২৫৫)

আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা

এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন উল্লেখ করছে :

وَاللَّـهُ يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَا ۚ إِنَّ اللَّـهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ

অর্থাৎ : আল্লাহ্ তোমাদের সকল কথা-বার্তা শ্রবন করে থাকেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।(আল্ মুজাদিলাহ্,আঃ নং-১)

আল্লাহ্ প্রজ্ঞাবান

মহাগ্রন্থ আল্ কোরআনে আল্লাহ্ বলেন :

وَاللَّـهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

অর্থাৎ : আল্লাহ্ জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাবান।(আন্ নিসা,আঃ নং-২৬)

আল্লাহ্ ন্যায়বিচারক :

পবিত্র আল্ কোরআনে আল্লাহ্ বলেন,

شَهِدَ اللَّـهُ أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ

অর্থাৎ : আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে,তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং ফেরেস্তা,জ্ঞানী ও বিদ্ব্যান ব্যক্তিগণও সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে,আল্লাহ্ ছাড়া এমন কোন ইলাহ্ নেই যিনি ন্যায়বিচার করে থাকেন।(আল্ ইমরান,আঃ নং-১৮)

Related Post

আল্লাহ সর্বশক্তিমান

Posted by - December 13, 2019 0
আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অসীম ক্ষমতাধর প্রভু তিনি। তিনি যা ইচ্ছা করতে পারেন। তাঁর ক্ষমতার পরিমাপ করা সম্ভব নয় কারো…

বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অপনোদন

Posted by - December 6, 2019 0
বস্তুবাদীরা আস্তিকবাদীদের উপর জোরালো আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন এই বলে যে,“প্রকৃতিই হল সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও নির্মাতা। এ প্রকৃতির কারনেই…

বিশ্ব স্রষ্টা এক ও অদ্বিতীয়

Posted by - December 6, 2019 0
মানব জাতির সহজাত বৈশিষ্ট্য হল শক্তিশালী কোন সত্তার সম্মুখে নিজেকে অবনত রাখা। শৈশব থেকে যখন মানব বিচার-বুদ্ধি উন্নতি লাভ করতে…

মানব-প্রকৃতি ও সত্যান্বেষী স্বভাব

Posted by - December 2, 2019 0
এ বিশ্বের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের বিভিন্ন পথ রয়েছ। দার্শনিকগণ তাদের দর্শনের প্রমাণ করে থাকেন। আরেফ ও আধ্যাত্মি ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজ…

আস্তিকবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ

Posted by - December 6, 2019 0
কার্যকারণ নিঃসন্দেহে বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তুই অপর কোন সত্তার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। অন্য কথায় প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টির পেছনে নিশ্চয়ই কোন কার্যকারণ…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *