সূরা আল ক্বামার-এর অনুবাদ ও সামগ্রিক কিছু তথ্য

1064 0

সূরা আল ক্বামার-এর অনুবাদঃ
(বলো! আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রহিম (অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তির জন্যে)।

https://youtu.be/dAniQI9tUsc

ক্বিয়ামত আসন্ন, চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে(১)
তারা [=নবীর নবুয়্যতকে অস্বীকারকারী মানুষেরা] (আল্লাহর) কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটাতো সেই চিরাচরিত যাদু।(২)
তারা [=নবীর নবুয়্যতকে অস্বীকারকারী মানুষেরা] (আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে) প্রত্যাখ্যান করে এবং নফসের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, আর (মনে রেখো!) প্রতিটি বিষয়েরই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও ফলাফল রয়েছে।(৩)
নিঃসন্দেহে তাদের [=নবুয়্যত অস্বীকারকারী মানুষদের] কাছে (অতিত জাতি গোষ্ঠী সম্পর্কে) এমন সব সংবাদ এসেছে যার মধ্যে (গুনাহ, কুফুর ও শিরক থেকে) বিরত থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।(৪)
(আল্লাহর) এই (আয়াতসমূহ/নিদর্শনাবলী) হচ্ছে পর্যাপ্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান, তবে এই উপদেশবাণী তাদের [=এই গোঁড়ামীপূর্ণ মানুষদের] কোন উপকারে আসবে না।(৫)
অতএব, (হে নবী!) তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করে চলো (এবং) সেদিনকে (স্মরণ করো), যে দিন ঐ আহবানকারী [=ইসরাফিল] এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে আহবান করবে ।(৬)
সেদিন তারা ভয়-ভীতি সহকারে অবনমিত নেত্রে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায় কবর থেকে বেরিয়ে আসবে ।(৭)
তারা আহবানকারীর দিকে ছুটে আসবে ভীত-বিহবল হয়ে। আর তখন কাফেররা বলবেঃ দিনটি কত কঠিন ও কষ্টের।(৮)
এদের পূর্বে নূহের জাতিও (তাদের মাঝে অবস্থিত নবীকে) অস্বীকার করেছিল। হ্যাঁ, আমার বান্দা [=নূহ]-কে অস্বীকার করেছিল এবং বলেছিলঃ “এতো এক পাগল।” আর (এভাবে) তাকে [=নূহকে] (সঠিকভাবে তার রেসালতের কাজ করা থেকে) বিরত রাখা হয়েছিল।(৯)
তখন সে তার প্রতিপালককে ডেকেছিলঃ “আমি বড়ই অসহায় [=আর পারছি না]; অতএব তুমি আমাকে সাহায্য করো।”(১০)
ফলে, আমরা (নূহের দোয়ার কারণে) প্রবল বারি বর্ষনের মাধ্যমে আসমানের দুয়ারসমূহ উন্মুক্ত করে দিলাম(১১)
এবং মাটি হতে উৎসারিত করলাম প্রস্রবণসমূহ। অতঃপর (আসমান ও যমিনের) সকল পানি মিলিত হোল এক নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে।(১২)
তখন তাকে [=নূহকে] আরোহণ করালাম কাঠের তক্তা ও পেরেক দ্বারা নির্মিত বাহনে [=এক নৌযানে],(১৩)
যা চলত আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। এটা প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তির [=নূহের] জন্য ছিল একটি পুরস্কার।(১৪)
আমি এটাকে (পরবর্তি জাতিসমূহের জন্যে) রেখে দিয়েছি এক নিদর্শনরূপে; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?(১৫)
অতএব, কেমন ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী?(১৬)
নিশ্চয় আমরা কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ কী আছে?(১৭)
আ‘দ সম্প্রদায় (তাদের জাতির মধ্যে বিরাজমান নবীকে) প্রত্যাখ্যান করেছিল, পরিণতিতে কেমন ছিল আমার শাস্তি ও সতর্ক বাণী?(১৮)
নিশ্চয় আমরা তাদের উপর এক অমঙ্গল দুর্ভোগের দিনে তুফান ও ঝঞ্ঝাবায়ু প্রেরণ করেছিলাম যা নিরবিচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত ছিল,(১৯)
যা মানুষকে এমনভাবে (যমিন থেকে) উৎক্ষেপিত করেছিল, মনে হয়েছিল, তারা খেজুর গাছের বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন কান্ডের ন্যায়, যা শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে।(২০)
কেমন ছিল আমার শাস্তি ও সাবধান বাণী?(২১)
নিশ্চয় আমরা কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের নিমিত্তে সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ কী আছে?(২২)
সামূদ সম্প্রদায় সতর্ককারীদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল।(২৩)
তারা বলেছিলঃ “আমরা কি আমাদের মাঝ থেকে আগত একজন মানুষের অনুসরণ করবো? তাহলে তো নিশ্চিত আমরা বিপথগামী এবং উন্মাদ রূপে গণ্য হবো।”(২৪)
(তারা আরো বলেছিলঃ) “আমাদের মধ্যে কী শুধুমাত্র তার উপর-ই (প্রত্যাদেশ) অবতীর্ণ হয়েছে? না, বরং সে তো একজন মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক।”(২৫)
নিকট ভবিষ্যতে তারা জানতে পারবে, কে মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক।(২৬)
(নবী সালেহকে বলেছিলাম,) আমরা তাদের পরীক্ষার জন্য নিশ্চয় (তাদের অনুরোধকৃত) এক উষ্ট্রী পাঠাবো। অতএব, (হে সালেহ!) তুমি তাদের পরিণতি লক্ষ্য করো এবং ধৈর্যশীল হও।(২৭)
আর তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের [=জনগণ ও উষ্ট্রীর] মধ্যে পানি ভাগ করে দেয়া হয়েছে। তারা প্রত্যেকে যেন নির্ধারিত সময়ে পালাক্রমে পানির জন্য উপস্থিত হয়।(২৮)
অতঃপর তারা তাদের এক সঙ্গীকে আহবান করলো। আর সে উষ্ট্রীকে ধরে হত্যা করলো।(২৯)
কতই না কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্ক বাণী!(৩০)
আমরা তাদের উপর এক বিকট শব্দ প্রেরণ করেছিলাম। ফলে তারা চতুস্পদ প্রাণীদের খোয়াড়ে স্তুপীকৃত খড়-কুটো ও শুস্ক তরুলতার ন্যায় হয়ে গেল।(৩১)
নিশ্চয় আমরা কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের নিমিত্তে সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ কী আছে?(৩২)
আবার লূত জাতিও প্রত্যাখ্যান করেছিল সতর্ককারীদেরকে।(৩৩)
আমরা তাদের [=লূত জাতির] উপর প্রস্তর বৃষ্টি প্রেরণ করেছিলাম, কিন্তু লূত পরিবারের উপর নয়; তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম রাতের শেষাংশে,(৩৪)
এটা আমাদের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ছিল; যারা কৃতজ্ঞ থাকে আমরা এভাবেই তাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।(৩৫)
লূত তাদেরকে আমার কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। কিন্তু তারা সতর্ক বাণী নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।(৩৬)
তারা লূতের নিকট হতে তার মেহমানদের সাথে যৌন ইচ্ছার দাবী করলো, তখন আমরা তাদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম এবং (বললামঃ) এখন আমার শাস্তি ও সতর্ক বাণীর পরিণাম আস্বাদন করো।(৩৭)
আর প্রত্যুষে নির্ধারিত সময়ে বিরামহীন আযাব তাদেরকে আঘাত করলো।(৩৮)
(আমি বললাম,) আস্বাদন করো আমার শাস্তি এবং সতর্কবাণীর পরিণাম।(৩৯)
নিশ্চয় আমরা কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের নিমিত্তে সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কী?(৪০)
আলে ফেরাউনের [=ফেরউনের পরিবার ও অনুসারীদের] নিকটও সতর্ককারী এসেছিল,(৪১)
কিন্তু তারা আমার সকল নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করলো, অতঃপর পরাক্রমশালী ও সর্বশক্তিমান রূপে আমরা তাদেরকে কঠোর শাস্তিতে গ্রেফতার করলাম।(৪২)
(হে কাফেররা!) তোমাদের মধ্যকার (মক্কার) কাফেররা কী তাদের [=আলে ফেরাউনের] চেয়েও উপরে? না কি তোমাদের অভয়নামার ব্যাপারে কোন সনদ রয়েছে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে?(৪৩)
অথবা তারা কি বলে থাকে, আমরা এক সংঘবদ্ধ, অপরাজেয় ও শক্তিশালী গোষ্ঠী?(৪৪)
এই দল তো শিঘ্রী পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে।(৪৫)
তাছাড়াও কিয়ামত তাদের (শাস্তির) নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে তাদের জন্যে অত্যন্ত কঠিন ও তিক্ত।(৪৬)
নিশ্চয় অপরাধীরা বিভ্রান্ত ও বিকারগ্রস্ত।(৪৭)
যেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে, সেদিন বলা হবেঃ “জাহান্নামের আগুনের স্বাদ আস্বাদন করো।”(৪৮)
নিশ্চয় আমরা সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।(৪৯)
আমাদের হুকুম একটি নির্দেশ ব্যতিত অন্য কিছু নয়। আর তা চোখের একটি পলকের ন্যায়।(৫০)
(হে কাফেররা!) আমরা তোমাদের মত অতিতের কত দলকে ধ্বংস করে দিয়েছি। সুতরাং (হে কাফেররা! তোমাদের মাঝে) উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?(৫১)
(হে মুমিনরা! জেনে রাখো,) তাদের [=কাফেরদের] সমস্ত কার্যকলাপ (তাদের) আমলনামায় সংরক্ষিত আছে,(৫২)
আর ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সব কিছুই লিপিবদ্ধ আছে সেখানে।(৫৩)
নিশ্চয় মুত্তাকীরা অবস্থান গ্রহণ করবে জান্নাতের বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে,(৫৪)
যথাযোগ্য আসনে, (ও) সার্বভৌম মহাঅধিপতির সান্নিধ্যে।(৫৫)

📚✳️ সূরা “আল ক্বামার” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য:

✅১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ-এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি চুয়ান্নতম।
✅২। নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি সাইত্রিশ নম্বরে অবস্থিত।
✅৩। নাযিলের স্থানটি হচ্ছে পবিত্র মক্কা নগরী।
✅৪। আয়াতের সংখ্যা ৫৫।
✅৫। এ সূরাটির অভ্যন্তরে অবস্থিত শব্দ সংখ্যা ৩৪২।
✅৬। এ সূরাটির অভ্যন্তরে মোট বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে ১৪২০টি।
✅৭। সূরা “আল ক্বামার”-এর অর্থঃ চন্দ্র
✅৮। সূরা “আল ক্বামার”-এর অপর নামসমূহঃ “ইক্বতারাবুস্ সাআ’হ” «اقتربت الساعة» , “আল মাবি-দ্বাহ” «المبیضه»। (দারমন ব কোরআন, পৃঃ নং ১০৫)।
✅৯। সূরা “আল ক্বামার”-এর বৈশিষ্ট্যঃ আল্লাহর রাসূলের রেসালতের ঘোষণার ষষ্ঠ বছরে আরাবী যিলহজ্ব মাসের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাতে, যখন চাঁদ পরিপূর্ণ আলো বিবিরণ করে, তখন চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হবার মুজিযা- যা আল্লাহ্ তায়ালার অনুমতিক্রমে তাঁর রাসূলের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছিল। এ ঘটনা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুয়ত্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়।
✅১০। সামগ্রিকভাবে সূরা “আল ক্বামার”-এর আলোচ্য বিষয়ঃ
✍️একঃ চন্দ্র (شق القمر) দ্বিখণ্ডিত হবার মুজিযা।
✍️দু্ইঃ কাফেরদের পূণরুত্থান এবং আল্লাহর দ্বীনের অস্বীকারকারীদের বৈশিষ্ট।
✍️তিনঃ হযরত নূহ, হুদ ও সালেহ (আলাইহিমুস সালাম)-এর জাতিসমূহের ইতিহাস।
✍️চারঃ কোরআন বুঝা সহজ।
✍️পাঁচঃ মানুষের সকল আমল রেকর্ড ও সংরক্ষন করা হয়।
✍️ছয়ঃ সৃষ্টি জগতের সর্বত্র ভারসম্য ও ন্যায়বিচার বিরাজমান।
✅১১। সূরা “আল ক্বামার”-এ অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তুসমূহঃ
এই সূরা মক্কায় নাযিলকৃত বিধায় তাওহীদ ও ক্বিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, বিশেষত্ব অতিত জাতিসমূহের উপর শাস্তি ও আযাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনের বিরোদ্ধে ঐসব মানুষদের অনবরত শত্রুতা ও একগুয়েমিতা এবং কুফুর, জুলুম ও ফ্যাসাদের কারণে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন আযাবের সমুক্ষীণ হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
আর এ সূরায় প্রত্যেক জাতির জীবনোতিহাস বর্ণনার পর
(ولقد یسرنا القرآن للذکر فهل من مدکر)- আয়াতটি পুনরাবৃত্তি হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছেঃ “নিশ্চয় আমরা কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ কী আছে?”, যেন মুসলমান ও কাফের সবাই এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
সার্বিকভাবে এ সূরার আলোচ্য বিষয় নিম্নলিখিত কয়েকটি অংশে বিভক্ত করা যেতে পারেঃ

✍️একঃ এ সূরার শুরুতেই নিকট ভবিষ্যতে সংঘটিত ক্বিয়ামত এবং চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত (شق القمر) হওয়া ও আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকারের ব্যাপারে বিরোধীদের পীড়াপীড়ি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
✍️দু্ইঃ সীমালংঘন, বিরোধীতা ও একগুয়েমিতার দৃষ্টান্ত হিসেবে আদি জাতিসমূহের অন্যতম হযরত নূহ আলাইহিস সালামের জাতি ও আগত তুফান সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচিত হয়েছে।
✍️তিনঃ আ’দ জাতির উপর অর্পিত বেদনাদায়ক আযাবের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।
✍️চারঃ আল্লাহর নবী হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের সাথে সামুদ জাতির বিরোধীতা ও উষ্ট্রীর মুজিযা এবং অবশেষে আসমানের গর্জনের মাধ্যমে তাদের শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
✍️পাঁচঃ অতঃপর আল্লাহর নবী হযরত লুত আলাইহিস সালামের জাতির লোকদের চারিত্রিক বিচ্যুতি ও কুফুরির কারণে তাদের উপর অর্পিত বেদনাদায়ক আযাবের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
✍️ছয়ঃ খুব সংক্ষিপ্তাকারে আলে ফিরউনের শাস্তি সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে।
✍️ সাতঃ সূরার শেষাংশে অতিতের জাতিসমূহের সাথে মক্কার মুশরিক ও রাসূলের(সা.) বিরোধীদের তুলনা করা হয়েছে এবং এই বিরোধীতার পথে চলা অব্যাহত রাখলে বিপদজনক ভবিষ্যত তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। সবশেষে এ সূরা ক্বিয়ামতের দিনে অপরাধীদের শাস্তি এবং মুত্তাক্বীদের বিশাল পুরুস্কারের বর্ণনা দিয়ে আলোচনা সমাপ্ত করা করেছে।
✅১২। সূরা “আল ক্বামার”-এর বিভিন্ন আয়াতের শানে নুযুলঃ
(انشق القمر)-
এর অর্থ বর্ণনায় বিভিন্ন তফসীরের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একদা কুরাইশের কিছু কাফের হযরত রাসূল (সা.)-এর কাছে একটি মুজিযার আবেদন করে। এর ফলে আল্লাহর রাসূল (সা.) দোয়া করলেন যেন চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। আল্লাহ তাঁর হাবিবের দোয়া কবুল করলেন। চাঁদ এমনভাবে দ্বিখণ্ডিত হয় যে, কাফেরদের সবাই তা দেখতে পায়। অল্প কিছুক্ষণ পর পুনরায় চাঁদ জোড়া লেগে যায়।
আল্লামা সুয়ুতির রচিত “তাফসীরু দুররিল মানসূর”-এ বর্ণিত আছে যে, আব্দুর রাযযাক্ব, আহমাদ, আবদু ইবনে হামিদ, মুসলিম নিশাবুরী, মুহাম্মাদ ইবনে জারীর তাবারী, ইবনে মুনযির, তিরমিযি, ইবনে মুরদাউই ও বাইহাক্বী, হযরত আনাস ইবনে মালিক(রাঃ), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আর তারা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, হযরত জুবাইর ইবনে মুত্বআ’ম, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবু আব্দুর রহমান সিলমী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তারা বলেছেন, মক্কার লোকেরা রাসূল(সা.)-এর কাছে একটি মুজিযার অনুরোধ করলো। আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে চাঁদ দুই ভাগে ভাগ করে দিলেন। আর এর পরপরই সূরা আল ক্বামারের প্রথম দুটি আয়াত অবতীর্ণ হয়।
হিজরী তের শতকের বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা মাহমুদ ইবনে আব্দুল্লাহ আলুসী(রহঃ) (১২১৭হিঃ/১৮০২খৃঃ-১২৭০হিঃ/১৮৫৪খৃঃ) কর্তৃক আরবী ভায়ায় রচিত “রুহুল মাআ’নী ফি তাফসীরিল কুরআনিল আযিম ওয়া সাবয়িল মাসানী” নামক কিতাবে রাসূলের(সা.) বিভিন্ন সাহাবার বরাত দিয়ে এবং বিশেষ করে আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য শেরে খোদা মাওলা আলী(আঃ)-এর বরাত দিয়ে উক্ত ঘটনার বর্ণনা করেছেন। অতঃপর আল্লামা আলুসী(রহঃ) হযরত সাইয়েদ শারীফ রাযি(রহঃ)-এর কাছ থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, সাইয়েদ রাযি(রহঃ) তার নিজ গ্রন্থ “শারহুল মাওয়াক্বিফ”-এ হযরত ইবনে সুবকী(রহঃ)-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে সুবকী(রহঃ) তার নিজ গ্রন্থ “শারহুল মুখতাসার” নামক কিতাবে বলেছেন, উক্ত হাদিসটি একটি মুতাওয়াতির হাদিস। এ হাদিসের বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
“রুহুল মাআ’নী ফি তাফসীরিল কুরআনিল আযিম ওয়া সাবয়িল মাসানী” কিতাবে এ সূরার শেষ আয়াতের তফসীরে একটি বর্ণনা হযরত ইমাম জা’ফার আস সাদিক্ব (আঃ)-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা আলুসী(রহঃ) লিখেছেন, “হযরত জা’ফার আস সাদিক্ব (রাঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাপারে বলেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে যে আসন ও মজলিসের কথা বলেছেন তা “সিদ্-ক্ব” শব্দের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে সেই মজলিসে “সিদ্-ক্ব”-এর অধিকারী ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কেউ সমাসীন হতে পারবে না।
🔷১৩। সূরা “আল ক্বামার”-এর ফজিলতঃ
🌴• রাসূল(সা.): “যে ব্যক্তি সূরা “আল ক্বামার” একদিন অন্তর অন্তর তিলাওয়াত করবে, সে এমন অবস্থায় ক্বিয়ামতের ময়দানে প্রবেশ করবে যখন তার চেহারা মাসের চৌদ্দতম রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল থাকবে। আর যদি কোন ব্যক্তি এ সূরা প্রতি রাতে তিলাওয়াত করে সেটাই উত্তম এবং ক্বিয়ামতের ময়দানে এমন অবস্থায় প্রবেশ করবে যখন তার চেহারা চন্দ্র মাসের চৌদ্দতম রাতের চাঁদের মত ধবধবে উজ্জ্বল থাকবে।” (মাজমাউল বায়ান, খণ্ড ৯, পৃঃ নং ৩০৭)।
🌴• আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সা.) বলেছেন, “আসমানী কিতাব তাওরাতে সূরা “আল ক্বামার”-এর পাঠককে “উজ্জ্বল সাদা চেহারা” নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং যে দিন চেহারাগুলো সাদা বা কালো হয়ে যাবে সেদিন এ সূরার পাঠক “উজ্জ্বল সাদা চেহারা” সম্পন্ন হবে।” (আল্ জামিয় আস সাগ্বির, খণ্ড ২, পৃঃ নং ২৩৪)।
🌴• হযরত ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক্ব আলাইহিস সালামঃ “যে ব্যক্তি সূরা “আল ক্বামার” তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতি ঘোড়ায় সাওয়ার অবস্থায় কবর থেকে উঠাবেন।” (সাওয়াবুল আ’মাল, পৃঃ নং ১১৬)।
🔷১৪। সূরা “আল ক্বামার”-এর মাধ্যমে তদবীর:
🌴• একঃ জনগণের মধ্যে প্রিয়ভাজন হবার তদবীরঃ
হযরত রাসূল(সা.): “যদি কেউ শুক্রবারের দিনে দুপুর বেলায় সূরা “আল ক্বামার” লিখে পাগড়ীর ভিতরে রেখে দেয় অথবা তার সঙ্গে রাখে তাহলে সে ব্যক্তি জনগণের মধ্যে সম্মানিত ও প্রিয়ভাজন হয়ে যাবে।”
(আল বুরহান ফি তাফসিরিল ক্বুরআন, খণ্ড ৫, পৃঃ নং ২১৩)।
🌴• দুইঃ কঠিন কাজগুলো সহজ হবার আমলঃ
হযরত ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক্ব আলাইহিস সালামঃ
“যদি কেউ শুক্রবারের দিনে দুপুর বেলায় সূরা “আল ক্বামার” লিখে নিজের সঙ্গে রাখে তাহলে আল্লাহ তায়ালার অনুমতিক্রমে তার কঠিন কাজগুলো সহজ হয়ে যাবে।” (আল বুরহান ফি তাফসিরিল ক্বুরআন, খণ্ড ৫, পৃঃ নং ২১৩)।
==========================

Related Post

সূরা আল ফালাক্ব

Posted by - August 24, 2019 0
📚সূরা “আল ফালাক্ব” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য: ১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ-এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি একশত তেরতম। ২।…

সূরা “আল ফাজর” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য

Posted by - September 9, 2019 0
(আমি)আল্লাহর নামে(শুরু করছি), যিনি রাহমান(পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রাহিম(অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যে)। ১। কোরআনের বর্তমান উসমানী…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *