•✦✨﷽ ✨✦•
(বলো! আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রহিম (অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তির জন্যে)।
❇যখন মহা ঘটনা (ক্বিয়ামত) সংঘটিত হবে(০১)
❇তখন সেই মহা ঘটনা অস্বীকার করার কেউ থাকবে না।(০২)
❇এ ঘটনা কাউকে করবে নীচ, কাউকে করবে সমুন্নত।(০৩)
❇যখন প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে ভুমন্ডল(০৪)
❇এবং পবর্তমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে।(০৫)
❇ফলে তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে।(০৬)
❇আর তোমরা (সে সময়ে) তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে।(০৭)
❇(প্রথম দল) সৌভাগ্যবানদের দল! কতই না সৌভাগ্যবান তারা।(০৮)
❇এবং (দ্বিতীয় দল) হতভাগাদের দল! কতই না হতভাগা তারা!(০৯)
❇আর (তৃতীয় দল) অগ্রবর্তীরা, (তারা) অগ্রবর্তী।(১০)
❇তারা (আল্লাহর) নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ(১১)
❇(তারা) নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতে অবস্থান করবে।(১২)
❇(সেই জান্নাতে) বহু সংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে,(১৩)
❇এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে।(১৪)
❇(আল্লাহর ঐ নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিরা সেই জান্নাতে) সারীবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনসমূহে অবস্থান গ্রহণ করবে,(১৫)
❇তারা পরস্পর মুখোমুখী হয়ে হেলান দিয়ে বসবে।(১৬)
❇তাদের চতুর্দিকে চির কিশোরেরা প্রদক্ষিণ করবে(১৭)
❇পান-পাত্র, জগ ও পবিত্র পানীয়পূর্ণ পেয়ালা নিয়ে,(১৮)
❇যে পানীয় পানে তাদের মাথা ব্যাথা হবে না এবং মাতালও হবে না(১৯)
❇এবং এমন ফলমূল নিয়ে যা (আল্লাহর ঐ নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিরা) নিজেরাই বাছাই করে নিবে,(২০)
❇আর (আল্লাহর ঐ নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিদের) ঈস্পিত পাখীর গোশত নিয়ে (প্রদক্ষিণ করবে)।(২১)
❇আর (আল্লাহর ঐ নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিদের) জন্যে থাকবে ডাগরচোখা হুর,(২২)
❇মনে হবে যেন ঝিনুকের ভিতর মুক্তা সাজানো।(২৩)
❇এগুলো তাদের [=আল্লাহর ঐ নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিদের] কৃত কর্মের পুরস্কার স্বরূপ।(২৪)
❇সেখানে [=সেই জান্নাতে] তারা [=আল্লাহর ঐ নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিরা] শুনবে না কোন অসার ও অনর্থক কথা অথবা কোন পাপময় বাক্য,(২৫)
❇‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ব্যতীত।(২৬)
❇আর সৌভাগ্যবানদের দল! কতই না ভাগ্যবান তাঁরা!(২৭)
❇তারা অবস্থান করবে কন্টক বিহীন সিদর বৃক্ষের ছায়াতলে(২৮)
❇এবং অবস্থান করবে ত্বলহ নামক বৃক্ষের ছায়াতলে,(২৯)
❇আর সেখানে থাকবে বিস্তৃত ছায়া(৩০)
❇এবং সদ্য প্রবাহমান জলধারা(৩১)
❇ও প্রচুর ফলফলাদি,(৩২)
❇যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও হবে না।(৩৩)
❇আর তাঁদের জন্যে থাকবে সুউচ্চ মর্যাদাপূর্ণ শয্যাসঙ্গী।(৩৪)
❇আমরা তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি।(৩৫)
❇আমরা তাদেরকে কুমারী হিসেবে নির্ধারণ করেছি,(৩৬)
❇তাদের প্রেম হবে শুধু তাদের স্বামীদের জন্যে এবং তারা হবে তাদের স্বামীদের সমবয়স্কা।(৩৭)
❇(এতসব নেয়ামত) শুধু ঐ সৌভাগ্যবান দলের জন্য।(৩৮)
❇তাদের [=সৌভাগ্যবান দলের] অনেকেই হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে(৩৯)
❇এবং অনেকেই হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে।(৪০)
❇আর হতভাগাদের দল, কতই না হতভাগা তারা!(৪১)
❇তারা থাকবে অত্যুষ্ণ বায়ু ও উত্তপ্ত পানিতে,(৪২)
❇প্রচন্ড ধোঁয়ায় তৈরী কালো ছায়ার নিচে,(৪৩)
❇যা শীতলও নয়, আরামদায়কও নয়।(৪৪)
❇নিশ্চয় তারা ইতোপূর্বে [=দুনিয়াতে] ভোগ বিলাসিতায় মগ্ন ছিল(৪৫)
❇এবং তারা অবিরাম লিপ্ত ছিল ঘোরতর পাপ কর্মে। (৪৬)
❇তারা সর্বদা বলতো, যখন মৃত্যুর পর অস্থি ও মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে যাবো, এবপরও কি আমরা পুনরুত্থিত হবো?(৪৭)
❇আর আমাদের পূর্বপুরুষরাও (পুনরুত্থিত হবে)?(৪৮)
❇(হে নবী) বলে দাও, নিঃসন্দেহে পূর্ববতী ও পরবর্তীদের(৪৯)
❇সকলকে একত্রিত করা হবে এক নির্ধারিত স্থানে নির্দ্দিষ্ট সময়ে।(৫০)
❇অতঃপর তোমরা! হে পথভ্রষ্ট মিথ্যাচারীরা!(৫১)
❇তোমরা (জাহান্নামে) অবশ্যই যাক্কুম (নামক নিকৃষ্ট ও দূর্গন্ধময়) বৃক্ষ থেকে আহার করবে।(৫২)
❇অতঃপর তা দিয়ে তোমরা উদর ভর্তি করবে,(৫৩)
❇আর তার উপর আরো পান করবে অতিমাত্রায় উত্তপ্ত জল,(৫৪)
❇আর তা পান করবে তৃষ্ণার্ত উষ্ট্রের ন্যায়।(৫৫)
❇এই হবে প্রতিদান দিবসে তাদের [=পথভ্রষ্ট মিথ্যাচারীদের] প্রতি আপ্যায়ন!!(৫৬)
❇(হে পথভ্রষ্ট মিথ্যাচারীরা!) আমরাই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তাহলে কেন তোমরা (মৃত্যুর পর পুনরায় তোমাদের সৃষ্টির বিষয়টিকে) সত্য বলে বিশ্বাস করছো না?(৫৭)
❇তোমরা কি ভেবে দেখেছো (নারী গর্ভে পতিত) তোমাদের বীর্য (-এর বিভিন্ন রকম পরিবর্তন) সম্বন্ধে?(৫৮)
❇তোমরা কি তা [=ভ্রুণের অভ্যন্তরে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের মাধ্যমে] সৃষ্টি করো, নাকি আমরা তার সৃষ্টিকর্তা?(৫৯)
❇(হে মানুষ!) আমরা তোমাদের মাঝে মৃত্যু নির্ধারণ করেছি। আর (এ কাজে) আমাদের চেয়ে অন্যেরা কেউ এগিয়ে থাকতে পারবে না। (৬০)
❇(জ্বী হ্যাঁ, মৃত্যুকে নির্ধারণ করেছি) যেন আমরা তোমাদের মত অন্যদেরকে তোমাদের স্থলে স্থান দিতে এবং তোমাদেরকে (অন্য জগতে) নতুনভাবে এমন এক সৃষ্টিতে পরিণত করতে পারি, যা তোমরা জানো না।(৬১)
❇আচ্ছা, তোমরা [=পথভ্রষ্ট মিথ্যাচারীরা!] তো (তোমাদের) প্রথম সৃষ্টি [=বর্তমান জীবন] সম্বন্ধে অবগত হয়েছো, তাহলে তোমরা (মৃত্যুর পর পুনরায় তোমাদের সৃষ্টির বিষয়টিকে) অনুধাবন করো না কেন?(৬২)
❇তোমরা কি ভেবে দেখেছো যে, তোমরা (মাটির বুকে) কী রোপন করছো?(৬৩)
❇তোমরা কি তা অঙ্কুরোদগম করো, নাকি আমরা তা অঙ্কুরিত করি?(৬৪)
❇(জেনে রাখো!) আমরা ইচ্ছা করলে তা [=তোমাদের রোপিত শষ্য] খড়-কুটায় পরিণত করে দিতে পারতাম, তখন তোমরা পরিতাপের সাথে শুধু হতবাক হয়ে যেতে। (৬৫)
❇(আর তখন বলতে,) নিশ্চয় আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেলাম!(৬৬)
❇বরং (বলতে,) আমরা বঞ্চিত হয়ে গেলাম!!(৬৭)
❇তোমরা যে পানি পান করো তা সম্পর্কে কখনো ভেবে দেখেছো কি?!(৬৮)
❇তোমরা কি মেঘ হতে তা [=পানীয় জল] অবতীর্ণ করেছো নাকি আমরা তা অবতীর্ণ করে থাকি?(৬৯)
❇আমরা ইচ্ছা করলে তা [=পানীয় মিষ্টি জল] লবণাক্ত ও তিতো করে দিতে পারতাম, এরপরও কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?(৭০)
❇(আচ্ছা,) তোমরা যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করো সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছো কি?(৭১)
❇তোমরাই কি (আগুন জ্বালানোর জন্যে প্রয়োজনীয়) বৃক্ষরাজী সৃষ্টি করেছো, নাকি আমরা তা সৃষ্টি করে দিই?(৭২)
❇আমরা এ বিষয়টিকে [=গাছপালা সৃষ্টির বিষয়টিকে] (সকলের জন্যে) স্মরণীয় বিষয় হিসেবে তুলি ধরেছি এবং মরুচারীদের জন্যে উপস্থাপন করেছি পণ্য দ্রব্য রূপে।(৭৩)
❇সুতরাং (হে মানুষ!) তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।(৭৪)
❇আমি শপথ করছি নক্ষত্ররাজির অবস্থানের (এবং যেখানে উদিত হয় ও অস্ত যায়)!(৭৫)
❇(হে মানুষ!) নিশ্চয় তা এক মহাশপথ, যদি তোমরা তা জানতে!(৭৬)
❇নিশ্চয়ই তা [=আয়াতসমূহ] এক মহাসম্মানিত কুরআন,(৭৭)
❇যা একটি সুরক্ষিত কিতাবে নিহিত আছে,(৭৮)
❇যার কাছে পুতঃ পবিত্ররা ব্যতীত অন্যরা পৌছুতে পারবে না।(৭৯)
❇যা জগতসমূহের প্রতিপালকের কাছ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।(৮০)
❇(হে মানুষ! এর পরও) কী তোমরা এই বাণীগুলোকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে?(৮১)
❇এবং তোমরা তোমাদের জীবিকাকে মিথ্যারোপের মাধ্যম হিসেবে নির্ধারণ করে নিবে?!(৮২)
❇সুতরাং কেন (মৃতপ্রায় ব্যক্তির) প্রাণ যখন কন্ঠাগত হয় (তখন তোমরা জীবিতরা তা পূর্ব অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে অপারগতা পোষণ করো?!),(৮৩)
❇এবং তখন তোমাদের (মত জীবিত ব্যক্তিদের) তাকিয়ে থাকা ছাড়া অন্য কিছুই করার থাকে না!?,(৮৪)
❇আর আমরা তার [=মৃতমুখী ব্যক্তির] কাছে তোমাদের (মত জীবিতরা, যারা শয্যাশায়ী মানুষটির পাশে অবস্থান নিয়েছো) অপেক্ষা অনেক বেশী নিকটবর্তি, কিন্তু তোমরা তা দেখতে পাও না।(৮৫)
❇অতএব, তোমরা যদি কর্তৃত্বশালী হও(৮৬)
❇তাহলে তা [=কন্ঠাগত প্রাণটি] (মৃতমুখী ব্যক্তির দেহে) ফিরিয়ে আনছো না কেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো?!(৮৭)
❇সে যাই হোক, যদি সেই (মৃতপ্রায়) ব্যক্তি (আল্লাহর) নৈকট্য প্রাপ্তদের মধ্যে গণ্য হয়,(৮৮)
❇তাহলে তার জন্য রয়েছে আরাম, প্রশান্তি ও নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত;(৮৯)
❇আর যদি সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হয়,(৯০)
❇তাহলে (তাকে বলা হবেঃ) সৌভাগ্যবানদের পক্ষ থেকে তোমাকে সালাম।(৯১)
❇কিন্তু সে যদি পথভ্রষ্ট মিথ্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়,(৯২)
❇তাহলে (তার জন্যে রয়েছে) উত্তপ্ত পানির আপ্যায়ন,(৯৩)
❇এবং জাহিম (নামক জাহান্নামের) আগুন ।(৯৪)
❇(উপরোক্ত তিনটি দল সমন্ধে যা বলা হলো) তা ধ্রুব সত্য।(৯৫)
❇সুতরাং (হে মানুষ!) তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।
(সমাপ্ত)
অনুবাদক – ড. নূরে আলম মোহাম্মদী।