সূরা “আন নাসর”-এর অনুবাদঃ
(আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রাহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রাহিম (অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যে।
যখন আল্লাহর সাহায্য ও (মক্কার মুশরিকদের উপর) বিজয় এসেছিল (১)
তখন (হে নবী!) তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখেছিলে। (২)
আর এ কারণে, তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা করে (তাঁর) মহিমা প্রকাশ কর এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। (কেননা), তিনি তো সর্বাপেক্ষা অধিক, তাওবা গ্রহণকারী। (৩)
✳সূরা “আন নাসর” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্যঃ
✅১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ- এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি একশত দশতম।
✅২। নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি একশত দুই নম্বরে অবস্থিত।
✅৩। নাযিলের স্থানটি হচ্ছে পবিত্র মদিনা নগরী।
✅৪। আয়াতের সংখ্যা ৩।
✅৫। এ সূরাটির অভ্যন্তরে অবস্থিত শব্দ সংখ্যা ১৯।
✅৬। এ সূরাটির অভ্যন্তরে মোট বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে ৮০ টি।
✅৭। এ সূরাটির অভ্যন্তরে “আল্ল-হ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৩ বার।
✅৮। *সূরা “আন নাসর”*-এর অর্থ সাহায্য করা। এ সূরার নামকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে খোদায়ী সাহায্যকে বুঝানো।”
✅৯। এ সূরার কয়েকটি নামঃ “ইযা জাআ” ও “তাওদি(বিদায়)” (দারমন ব কোরআন, পৃঃ নং ১৬৯) এ সূরার অন্যতম দুটি নাম।
✳১০। *সূরা “আন নাসর”-এর বৈশিষ্ট্য:*
নাযিলকৃত সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ সূরা এটি। মক্কা বিজয়ের ব্যাপারে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে এ সূরাটিতে। আর রাসূল(সা.)-এর ওফাতের খবর এ সূরাটিতে বিদ্যমান।
✳১১। সামগ্রিকভাবে সূরা “আন নাসর”-এর আলোচ্য বিষয়ঃ
ক) মক্কা বিজয়ের ভবিষ্যতবাণী।
খ) গণহারে ঈমান আনার ব্যাপারে ভবিষ্যতবাণী।
গ) আল্লাহর রাসূল(সা.)-এর তিরোধানের ইঙ্গিত প্রদান।
ঘ) আল্লাহর নেয়ামতসমূহ প্রাপ্তির ফলে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
ঙ) আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর দয়া, রহমত ও তাওবা কবুল করার চিরন্তনতা।
✳১২। *সূরা “আন নাসর” -এর তিলাওয়াতের ফযিলত:*
☑ইমাম জাফার সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি সূরা “আন নাসর” ফরজ ও নফল নামাজে তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে সকল শত্রুর উপর বিজয় দান করবেন। আর যখন সে ব্যক্তি কবর থেকে উঠে আসবে তখন তার কাছে আযাব থেকে রক্ষার নিরাপত্তানামা থাকবে। তিনি আখেরাতে বেহেস্তে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত যেখানেই যাবেন সেখানেই তাকে সুসংবাদ দেয়া হবে। আল্লাহ দুনিয়াতে তাকে অত্যাধিক কল্যাণ দান করবেন।” (সাওয়াবুল আ’মাল, পৃঃ নং ১২৭)।
☑ রাসূল(সা.)-এর উপর নাযিলকৃত সর্বশেষ সূরা হচ্ছে সূরা আন নাসর। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার বলেন, এ সূরা আল্লাহর নবীর হজব্রত পালনের মাঝামাঝি সময়ে নাযিল হয়েছে, যে বছর ছিল নবীর জীবনের শেষ বছর। যখন সূরা আন নাসর নাযিল হলো তখন নবীজি বলেন, আমি এ বৎসর দুনিয়া থেকে বিদায় নেবো আর সে বৎসরই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। সেই বৎসরে যখন তিনি মাআয ইবনে জাবালকে ইয়েমেনে পাঠাচ্ছিলেন তখন তাকে বলেন, তুমি আমাকে আর দেখতে পাবে না।” (আল খারায়িজ ওয়াল জারায়িহ, খন্ড ১, পৃঃ নং ১০২)।
☑আল্লাহর রাসূল(সা.) এ সূরা নাযিল হবার সময় থেকে ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত “সুবহানাল্ল-হ” যিকিরটি বেশী করে উচ্চারণ করতেন আর প্রচুর ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতেন। হযরত উম্মে সালামা থেকে বর্ণিত আছে যে, “আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁর জীবনের শেষের দিকে উঠতে বসতে সর্বদা “সুবহানাল্লহি ওয়া বি-হামদিহি ওয়া আস্তাগফিরুল্লহি ওয়া আতুবু ইলাই” পড়তেন। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার প্রতি এ কাজটি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতঃপর সূরা আন নাসর তিলাওয়াত করে শুনালেন।” (তাফসীর আল মাজমাউল বায়ান, খন্ড ১০, পৃঃ নং ৫৫৪)।
☑হাযরাত রাসূল(সা.): “যে ব্যক্তি সূরা আন নাসর তিলাওয়াত করবে তাকে রাসূলের(সা.) সাথে মক্কা বিজয়ের সময় শাহাদাত বরণকারী ব্যক্তির সমান পুরুস্কার দেয়া হবে। যে কোন ব্যক্তি নামাজের মধ্যে সূরা ফাতিহার পর এ সূরা তিলাওয়াত করবে তার নামাজ সর্বোত্তমভাবে কবুল হবে।” (তাফসীর আল বুরহান, খন্ড ৫, পৃঃ নং ৭৮৩)।
✳১৩। *সূরা “আন নাসর” -এর মাধ্যমে তদবীর:
☑ যে ব্যক্তি ফরজ অথবা নফল নামাজের মধ্যে সূরা আন নাসর তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে তার শত্রুদের উপর বিজয়ী করবেন। (আল মুসতাদরাকু সাফিনাতিল বিহার, খন্ড ৮, পৃঃ নং ৪৭৯)।
☑বর্ণিত আছে যে, “যদি কোন ব্যক্তি সূরা আন নাসর নফল নামাজের মধ্যে অথবা শুক্রবার সূর্যাস্তের সময় তিলাওয়াত করে দোয়া করে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে নিবেন।” (আল মুসতাদরাকু সাফিনাতিল বিহার, খন্ড ৮, পৃঃ নং ৪৭৯)।