দীর্ঘ পথ পরিক্রমা শেষে হঠাৎ ঘরে ডুকলেন !
বড়ই ক্লান্ত, শ্রান্ত ,অবসন্ন দেহ ও মন ।
মর্ম ব্যাথায় কুঁকড়ে থাকা কাঁপা কাঁপা স্বর।
কতদিন ফেরা হয়নি সে ঘরে !
সেই তো এলেন তবে ….
একাকি ! সুকরুন বদন আর তীব্র যন্ত্রনাহত ব্যথাতুর হৃদয় নিয়ে !
নিশ্চুপ নির্বাক ! কোন সাড়া শব্দ নেই।
গৃহকর্তার হঠাৎ চোখ পড়লো সে আগন্তুকের উপর !
চমকে জিজ্ঞেস করলেন ,
কে আপনি ?
আমাকে চিনতে পারলেন না !!
না !! কে আপনি ?? ,
আমি আপনার প্রিয়তমা,
যয়নাব!!
আপনি ! একি !
একি অবস্থা আপনার!!
এই কয় দিনে সেকি হাল হয়েছে আপনার !!
একি বৃদ্ধা অবস্থায় উপনীত আপনি !
কত রুক্ষ আর এলোমেলো সব পাকা চুল !
কোটরাগত চোখ !
আর কতটা লীন ও শুষ্ক দেখাচ্ছে আপনাকে জানেনকি ?
মৃতপ্রায় আজ সে সুন্দর মুখশ্রীর কারুকার্য!!
জীর্ন শীর্নতায় দেহে একি দশা আপনার !
কেন এই হাল হয়েছে আপনার ??
চুপ কেন রাজনন্দিনী ?
কি বলবো ….!!!
ভাষা তো হারিয়ে ফেলেছি সেদিনই !
সব কিছুই যে আজ নির্বাসিত গৌণ, সেদিনকার দৃশ্যায়নের সেসব বাঁকেই তো হয়েছে জীবনের সলিল সমাধী।
কি হয়েছে ??
শুনবেন সে কাহিনী ?
তবে শুনুন ~
আমি তো মরেই গেছি সেদিন !
মরে গেছে আমার দেহ ও মন! যেদিন মরুর তীব্র তাপদাহে প্রচন্ড পানি শূণ্যতার হাহাকারে হায়নারুপি জালিমরা একে একে যেসব হিংস্রতা ও বর্বরতার দাগ মনে বিঁধে দিয়েছিল, যেদিন যমদূত রুপি পিশাচরা সত্যের গলায় প্রথম ছুরি বসিয়ে ছিল!
দাফন হয়েছি তো সেদিনই !
যেদিন কারবালায় নিজ চর্ম চক্ষুর সামনে কলিজার টুকরা পুত্রদ্বয়দের চরম পিপাসার্ত হয়ে জালিমদের হাতে কোরবানি হতে দেখেছি!!
মরেছি তো সেদিনই ,
যেদিন দেখেছি প্রিয় ইসলামের সেই নিভু নিভু প্রাণ
প্রজ্জ্বলিত করতে একে একে চরম তৃঞ্চার্ততায় প্রিয়তর ভাইপো দের বীর বেশে জীবন উৎসর্গ করতে!!
মরণ জহর তো সেদিনই পান করেছিলাম ,যেদিন ছয় মাসের কচি আসগর পানির পিপাসায় যন্ত্রনায় ছটফট করে আর পানি চাইতে গিয়ে ঘৃন্য পাপিষ্টের তীরের আঘাতে বুকে তীরবিদ্ধ হয়ে আজন্ম পানির পিয়াস মিটিয়ে ছিল !
কাফন পড়েছি তো সেদিনই ,
যেদিন সকল আত্নীয় সঙ্গীজনদেরকে অকাতরে হত্যা করে রক্ত গঙ্গা বয়ে দিয়েছিল পাপিষ্ট ইয়াজিদিরা।
প্রাণ তো সেদিনই উড়ে গিয়েছিল ,
যেদিন প্রানাধিক ভাই ,
নানার নয়নের মনি,
মায়ের কলিজার টুকরা আদরের দুলাল,
বেহেশতের সর্দার সাইয়্যেদুশ শুহাদা,
মাওলা হোসেইন হিংস্র মুনাফিকদের শতশত তীর,বর্শা, নেজা,বল্লম আর তলোয়ারের আঘাতে আঘাতে পবিত্র দেহ ঝাঝরা হয়ে শোণিতের ঘন বর্ষনে তপ্ত মরুর সিক্ততায় লালে লাল হয়ে ভেসেছিল সে কারবালা!
আকাশে বাতাসে বিষাদের ধ্বনিতে ধ্বনিতে আরশ লুটিয়ে পড়েছিল যেদিন,
পাথর কান্নারুপে ভেসেছিল সেদিন রক্তের স্রোত,
ধূলিকনার প্রবল ঝড় ভূমিকম্পের প্রকট প্রকম্পের ঝাঁকুনি দিয়েছিল যেদিন !
আরশ আসমানের শত সহস্র ফেরেসতা ও নবী রাসূলদের বুকফাটা আহাজারিতে হায় হোসেন !হায় হোসেন !রব উঠেছিল যেদিন !
যেদিন হিংস্র হায়না শাবকের দল নানার চুমু দেওয়া পবিত্র গলায় খঞ্জর চালিয়ে শির মোবারক বিচ্ছিন্ন করে পবিত্র দেহকে উস্ঠ্র খোরার আঘাতে আঘাতে হাড় মাংশ পিষ্ট করে ধূলার ধূলিতে মিশিয়ে দিয়েছিল !
মনে করেনি পাপাচারিরা সেই পবিত্র সত্ত্বা নানাজানের কথা ,নিজ সন্তান বলে যাকে বলে বেড়াতেন,যাকে তিনি নিজ পুত্র ইব্রাহিমকে কোরবানি দিয়ে প্রিয়তর হোসেইনকে বাঁচিয়ে ছিলেন,সেই প্রাণাধিক প্রিয় কতটা নির্মম নিষ্ঠুর বেরহমতায় মরুর তীব্র দাবদাহে আর ধূলার মরুতে পিষ্ট হয়ে পাপিষ্ট মুনাফিকি ইয়াজিদি জল্লাদদের হাতে নিথর দেহে পবিত্র শির বিহীন অবস্থায় পড়ে আছে ,!
যেন বৃন্তহীন টকটকে লাল গোলাপটি তার পাপড়িগুলো ছড়িয়ে সুবাস নিয়ে পড়ে আছে। কতটা অনাদরে পিষ্ট ছিল সে আমার প্রিয় গোলাপ !!
প্রানের স্পন্দন তো সেদিনই থেমে গিয়েছিল !!
শুধু বেঁচে আছি কিছু পয়গামীর সেসব আঞ্জামের প্রতিক্ষায় !
নয়তো দেহ ও মনের সলিল সমাধি তো হয়েছিল সেদিনই !!
__ মাসুদ রানা তরুন।