❇️রোযার মাসআলা নং ০১:
✍️ রমজানের পূর্ব মাস তথা শা’বান মাসের ৩০ তারিখ হচ্ছে “ইয়াওমুশ্ শাক” বা “সন্দেহের দিন”। এ দিনকে “ইয়াওমুশ্ শাক” বলার কারণ হচ্ছে যে, একজন মুকাল্লাফ বা দায়িত্ববান ব্যক্তি এই দিন রমজান মাসের ১ম রোজা নাকি শা’বান মাসের ৩০ তারিখ, এ ব্যাপারে সন্দেহ করতে পারে। তাই, সতর্কতামূলক অবস্থানে থাকার জন্যে কর্তব্য হচ্ছে, নফল রোজার নিয়ত করে এই দিনে রোজা রাখা। যদি পরে জানা যায় যে, এ দিনটি রমজান মাসের ১ম রোজা ছিল না, তাহলে তো নফল রোজার সাওয়াব সে পেয়ে গেলো। তার কোন ক্ষতি হলো না। কিন্তু যদি পরে জানা যায় যে, এ দিনটি রমজান মাসের ১ম রোজা ছিল তাহলেও সেই রোজাদারের ১ম রোজা হাতছাড়া হলো না।
❇️রোযার মাসআলা নং ০২ :
✍️ “যে কোন কাজের আগে সেই কাজের নিয়ত করা ফরজ। তবে মনে মনে অথবা কি করছে তা স্মরণ করে শুরু করলেই নিয়ত হয়ে যায়। নিয়তের জন্যে মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়। তবে কেউ যদি মুখেও বলতে চায় তাতেও কোন আপত্তি নেই। আর এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন ভাষায় নিয়ত করা ফরজ নয়।”
❇️রোযার মাসআলা নং ০৩:
✍️ “রমযান মাসের রোযার নিয়ত রমযান মাসের প্রথম রাত্রিতে অর্থাৎ ১ম রোযার পূর্ব রাত্রিতে সাহারীর সময়ে আহারের পর পুরো মাসের রোযা রাখার নিয়ত করা যেতে পারে। তবে এর সাথে প্রতি দিনের রোযার নিয়ত প্রতিদিন আলাদা আলাদাভাবেও করার মধ্যে কোন আপত্তি নেই।”
❇️রোযার মাসআলা নং ০৪:
✍️ “সূরা আল বাক্বারার ১৮৭ নং আয়াত অবলম্বনে প্রতিদিনের রোযার সময়সীমা হচ্ছে ফাজরে সাদ্বিক থেকে রাত্রি পর্যন্ত। যারা সন্ধ্যাকে রাত্রির মধ্যে গণ্য করেন তারা সন্ধ্যা ও রাত্রির দুইটি সময়কে এক করে ফেলেছেন। সন্ধ্যা দিনেরও অংশ না রাত্রিরও অংশ না। সন্ধ্যাবেলা নিজেই একটা সময়। অর্থাৎ দিনের শেষে সন্ধ্যা শুরু হয় এবং রাত শুরুর পূ্র্বে সন্ধ্যা শেষ হয়। তাই, সন্ধ্যা শেষ হয়ে গেলেই অর্থাৎ রাত শুরু হলেই একজন রোযাদার ইফতার করার অনুমতি পায়। রাত শুরুর আগে পানাহার করলে রোযা অপূর্ণ থেকে যায়। আর এ বিষয়টি জানা-বুঝার পরো যদি কোন রোযাদার রাত আগমনের পূর্বেই ইফতারী করে নেয় তাহলে গুনাহর পাশাপাশি তাকে এর জন্যে কাফফারাও দিতে হবে। আর যদি না জেনে কাজটি করে তাহলে তাকে রমযান মাসের পর একটি রোযার বদলে একটি রোযা ক্বাজা আদায় করে নিবে।”
❇️রোযার মাসআলা নং ০৫:
✍️ রোজার সময়সীমার ভিতরে রোজা ভঙ্গের যে কোন একটি কারণ সম্পাদন করলেই রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই, রোজা ভঙ্গের কারণগুলোর যে কোন একটি রাতের বেলা সম্পাদন করলেই ধরা হবে যে, সে ইফতার করেছে।
❇️রোযার মাসআলা নং ০৬:
✍️রোজা ভঙ্গের কারণসমূহঃ
✍️ একঃ পানাহার (অনিচ্ছাকৃতভাবে অথবা বাধ্য হয়ে পানাহার করলেও রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে না জেনে অথবা ভুলে পানাহার করলে রোজা ভাঙ্গবে না)।
✍️ দুইঃ স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন।
✍️ তিনঃ ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্য বের করা।
✍️ চারঃ আল্লাহ, রাসূল ও তাঁর আহলে বাইতের কারো ব্যাপারে মিথ্যা আরোপ করা।
✍️ পাঁচঃ পুকুরে অথবা নদীতে মাথা ডুবিয়ে গোসল করা।
✍️ ছয়ঃ জেনেশুনে বা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজার রাত্রিতে ফজরের সময়ের পূর্ব পর্যন্ত জানাবাতের নাপাকির হালতে থাকা।
✍️ সাতঃ ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা কোন চিকিৎসা কারণ ছাড়াই বমি করা।
❇️রোযার মাসআলা নং ০৭:
✍️ধুমপান রোযা নষ্ট করে দেয়।
❇️রোযার মাসআলা নং ০৮:
✍️শরীরের খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত অথবা পুষ্টি বৃদ্ধির জন্যে ইনজেকশন শরীরে পুশ করলে রোযা ভেঙ্গে যায়।
❇️রোযার মাসআলা নং ০৯:
✍️জেনে শুনে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা খাময়োলী করে যদি গাঢ় ধুলা-বালি গলাধঃকরণ করা হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১০:
✍️পেটের ভিতর থেকে কোন খাদ্যদানা যদি মুখের ভিতর এসে যায় তাহলে কর্তব্য হচ্ছে, সেটা বাইরে ফেলে দেয়া। আর তা না হলে যদি তা আবার গিলে ফেলা হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যায়।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১১:
✍️ দিনের বেলায় স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু দ্রুত পাক হয়ে যাওয়া রোযাদারের কর্তব্য।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১২:
✍️রোযার দিনে অতিরিক্ত গরমের কারণে মাত্রাতিরিক্ত গোসল করা রোযার সাওয়াব কম হয়ে যাওয়ার কারণ।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১৩:
✍️রোযা রাখা অবস্থায় যে কোন পেষ্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোযা নষ্ট হবে না বটে, কিন্তু সেই পেষ্টের স্বাদ ও ফেনা যদি গলাধঃকরণ হয়ে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তাই রোযা অবস্থায় পেষ্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ না করাই উত্তম।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১৪:
✍️ রোযা রাখা অবস্থায় দাঁতের ভিতর থেকে যদি কোন রক্ত বের হয় আর রোযাদার বুঝে শুনে সে রক্ত গিলে ফেলে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তাই, সেই রক্ত বাইরে ফেলে দিতে হবে।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১৫:
✍️ রোযা রাখা অবস্থায় চোখের ড্রপ ব্যবহার করার পর যদি তার কিছু মুখের ভিতর চলে আসে তাহলে কর্তব্য হচ্ছে সেই তরল বাইরে ফেলে দেয়া। আর তা না হলে পেটে চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১৬:
✍️ রোযা রেখে মাথায় তেল দেয়াতে কোন আপত্তি নেই।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১৭:
✍️ রোযা রেখে সুরমা ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে না।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১৮:
✍️ রোযার দিনে অতিরিক্ত ঘুমানো অথবা অতিরিক্ত কথা বলা, ঝগড়া-বিবাদ ও অযথা বিতর্কে লিপ্ত হওয়া অথবা কোন গুনাহর কাজ করা রোযার সাওয়াব কমিয়ে দেয়। রোযা ভেঙ্গে যাবে না।
❇️ রোযার মাসআলা নং ১৯:
✍️ রোযাদারের জন্যে ইফতারীতে ও সাহারীতে খাওয়া ফরজ নয়। প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়া-দাওয়াতে কোন আপত্তি নেই। তবে আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে ইফতারী ও সাহারীতে খাওয়ার ব্যাপারে তাঁর উম্মতের জন্যে তাগিদ এসেছে। তাই, ইফতারীতে ও সাহরীতে কিছু খাওয়া রাসূলের সুন্নত।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২০:
✍️ ইফতারীর জন্যে ইসলামী শরীয়তে রাতের কথা বলা হয়েছে। রাতের শুরুতেই যে, ইফতারী করতে হবে অথবা পানাহারের মাধ্যমেই যে শুধু ইফতারী করতে হবে এমনটি নয়। রাতের যে কোন সময় রোযাদার ইফতারী করতে পারেন। এতে করে রোযা মাকরুহ হবে না। তবে রাত হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব পানাহার করা আল্লাহর রাসূলের সুন্নত। সুন্নত তরক হয়ে গেলে কোন গুনাহ হবে না। তবে বিনা কারণে সুন্নতের অবহেলা ও অবমাননা করা যাবে না।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২১:
✍️ ওযুর মধ্যে পানি দিয়ে গড়গড়া করলে ওযু ভেঙ্গে যাবে। আর রোযা রাখা অবস্থায় গড়গড়া করলে রোযাও ভেঙ্গে যাবে।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২২:
✍️ চিকিত্সার কারণে তরল ঢুস গ্রহণ করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। রমজানের পর অন্য সময় রোযা ক্বাযা আদায় করে নিতে হবে। কিন্তু এর পরও পানাহার করা বা রোযা নষ্ট হয় এমন আর কিছু করা যাবে না। অর্থাৎ রোযাদারের মতই দিন অতিবাহিত করতে হবে। কিন্তু জ্বর কমানোর জন্যে পায়ুপথে যা প্রবেশ করানো হয়ে থাকে তাতে রোযা নষ্ট হয় না।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২৩:
✍️ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ জানাবাত অথবা নারী জানাবাত কিংবা মাষিকজানিত কারণে সুবহে সাদিক্ব পর্যন্ত নাপাক অবস্থায় থাকে তাহলে তার রোযা ইচ্ছাকৃতভাবে ভাঙ্গা হয়েছে ধরা হবে এবং এর জন্যে রমজান মাসের পর কাফফারা আদায় করতে হবে।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২৪:
✍️ যদি কেউ কোন কারণে ফজর ওয়াক্ত শুরুর আগ পর্যন্ত পানির মাধ্যমে অর্থাৎ গোসলের মাধ্যমে পাক হতে না পারে তাহলে ফজর ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই যেনো তায়াম্মুম করে নেয়। আর ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাওয়ার পর যখনি পানি গ্রহণের প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যাবে তখনি ফরজ গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হয়ে নিবে।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২৫:
✍️ যদি কেউ সময় আছে দেখে নাপাক অবস্থায় রাতে ঘুমিয়ে যায় এবং নিয়ত ছিল যে, ফজরের ওয়াক্তের আগেই গোসল সেরে নিবে, কিন্তু ঘুম থেকে জেগে দেখে ফজর হয়ে গেছে, তাহলে তার রোযা নষ্ট হবে না। তবে বিলম্ব না করে দ্রুত গোসল সেরে নিতে হবে।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২৬:
✍️ জিহ্বার সামনের অংশ দিয়ে স্বাদ নিয়ে তা সঙ্গে সঙ্গে যদি দাঁত দিয়ে ঘষে ফেলে পানি দিয়ে কুলি করে নেয় তাহলে সেই ব্যক্তির রোযা ভাঙ্গবে না।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২৭:
✍️ রোযা রাখা অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে চামড়ার নিচে ইনসুলিন নেওয়া ও রক্ত পরীক্ষা করা (গ্লুকোমিটার বা রক্ত টেনে সাধারনত যেসব পরীক্ষা করা হয়) এবং হাপানি রোগীর ক্ষত্রে ইনহেলার (শ্বাস নালীতে) ব্যবহার করা রোযার জন্যে কোন অসুবিধা সৃষ্টি করে না। অর্থাৎ তার রোযা নষ্ট হবে না।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২৮:
✍️ যদি কেউ রোযা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে। অন্যথায় না।
❇️ রোযার মাসআলা নং ২৯:
✍️ রোযা রেখে দিনের বেলায় রক্ত দান করলে রোযা ভেঙ্গে যায় না।