মাহরাম অর্থ যার সাথে বিয়ে করা হারাম এবং যার সাথে খোলামেলা দেখা সাক্ষাত করা জায়েয।
মাসআলাঃ
মাহরাম ব্যক্তির সাথে বিয়ে করা যায় না। কিন্তু যে কোন না-মাহরামের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়। তবে স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় অথবা স্ত্রী নিজের বন্ধনে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর বোন বা শালিকা না-মাহরাম হওয়া সত্তে¡ও তাকে বিয়ে করা যাবে না।
মাসআলাঃ
একজন না-মাহরাম পুরুষ অন্য না-মাহরাম নারীর চেহারা ও হাতের কব্জি থেকে আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত ছাড়া দেহের অন্য কোন অংশে চোখ দিতে পারবে না। কিন্তু মাহরাম ব্যক্তি মাহরাম নারীকে উপরোক্ত অংশ ছাড়াও জরুরী ক্ষেত্রে অন্য অঙ্গের দিকেও নজর দিতে পারে।
মাসআলাঃ
দুইজন না-মাহরাম নারী ও পুরুষের মধ্যে মুসাফাহা বা হাত মিলানো সম্পূর্ণ হারাম এবং কবিরা গুনাহ।
মাসআলাঃ
শুধুমাত্র চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিরুপায় হয়ে অথবা কাউকে মৃত্যু থেকে বাঁচানোর জন্যে অথবা এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ এমন বয়স্ক মানুষ অথবা এমন অসুস্থ ব্যক্তি যে, তার বা তাদের কোন অন্য বদ চিন্তা মাথায় আসতে পারে না, এসব ক্ষেত্রে কোন না-মাহরাম অন্য কোন না-মাহরামের গায়ে স্পর্শ করতে পারে।
মাসআলাঃ
তিনভাবে দুইজন মানুষ পরস্পরের মাহরাম হয়।
এক: নাসাব বা রক্তিয় সম্পর্কের কারণে।
দুই: বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে।
তিন: শিশুর দুধ পানের মাধ্যমে।
মাসআলাঃ
পুরুষের ক্ষেত্রে রক্তিয় সম্পর্কের মাহরাম হচ্ছে:
১। মা, নানি, দাদি এবং উপরে যত যাওয়া যায়।
২। নিজের মেয়ে, নিজের ছেলে-মেয়ের মেয়েরা এবং এভাবে যত নিচের দিকে যাওয়া যায়।
৩। নিজের বোন অর্থাৎ এমন মেয়ে যার মা অথবা বাবা অথবা উভয়েই সেই ব্যক্তির সাথে এক।
৪। বোনের মেয়ে এবং সেই মেয়ের মেয়ে আর এভাবে যত নিচে যাওয়া যায়।
৫। ভাইয়ের মেয়ে এবং সেই মেয়ের মেয়ে আর এভাবে যত নিচে যাওয়া যায়।
৬। নিজের আপন ফুফ, পিতা-মাতার ফুফু, নানা-নানি ও দাদা-দাদির ফুফু এবং এভাবে যত যাওয়া যায়।
৭। নিজের আপন খালা, পিতা-মাতার খালা, নানা-নানি ও দাদা-দাদির খালা আর এভাবে যত যাওয়া যায়।
(খালাত, মামাত, চাচাত ও ফুফাত বোন ও তাদের মেয়েরা মাহরাম নয় এবং খালাত, মামাত, চাচাত ও ফুফাত ভাইয়ের মেয়েরা মাহরাম নয়। অর্থাৎ তাদের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়)।
মাসআলাঃ
নারীর ক্ষেত্রে রক্তিয় সম্পর্কের মাহরাম হচ্ছে:
১। পিতা, নানা, দাদা এবং এভাবে যত উপরে যাওয়া যায়।
২। নিজের পুত্র এবং নিজের ছেলে-মেয়ের পুত্র সন্তানরা আর এভাবে যত নিচের দিকে যাওয়া যায়।
৩। আপন ভাই অর্থাৎ যে পুরুষের সাথে তার মা অথবা বাবা অথবা উভয়েই এক।
৪। আপন ভাই ও বোনের ছেলেরা এবং তাদের ছেলে সন্তানরা আর এভাবে যত নিচের দিকে যাওয়া যায়।
৫। নিজের আপন চাচা, পিতা-মাতার চাচা, নানা-নানি ও দাদা-দাদির চাচা এবং এভাবে যত যাওয়া যায়।
৬। নিজের আপন মামা, পিতা-মাতার মামা, নানা-নানি ও দাদা-দাদির মামা আর এভাবে যত যাওয়া যায়।
(খালাত, মামাত, চাচাত ও ফুফাত ভাই ও তাদের ছেলেরা মাহরাম নয় এবং খালাত, মামাত, চাচাত ও ফুফাত বোনের ছেলেরা মাহরাম নয়। অর্থাৎ তাদের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়)।
মাসআলাঃ
বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জন্যে শশুর-শাশুরী এবং দাদী ও নানী শাশুরীসহ যত উপরের দিকে যাওয়া যায় তারা সবাই সারা জীবনের জন্যে তাদের মাহরাম। এমনকি স্বামী অথবা স্ত্রীর তালাক হওয়া অথবা মৃত্যুর পরও তারা মাহরাম এবং তাদের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম।
মাসআলাঃ
রক্তিয় সম্পর্কের কারণে যারা মাহরাম, একটি শিশুর দুধ পানের মাধ্যমে তদ্রæপ দুধ মা ও বাবাসহ তারা সকলে মাহরাম হয়ে যায়।
মাসআলাঃ
কোন মায়ের বুকের দুধ পান করার মাধ্যমে অন্য মায়ের শিশুর সাথে যে মাহরামের বন্ধন সৃষ্টি হয় তাতে তারা রক্তিয় সম্পর্কের মাহরাম ব্যক্তিদের ন্যায় পরস্পরের সম্পত্তির ওয়ারিস হয় না।
মাসআলাঃ
নারী- পুরুষের মাহরাম ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য সবাই না-মাহরাম।