বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তার পরিচয়

1021 0

বিজ্ঞান ঈমানের অগ্রদূত

“বিশ্ব-শ্রেষ্ট পদার্থবিদদের মধ্যে ‘লর্ড কেলওয়াই’ অন্যতম। তিনি বলেন : যদি আপনি উত্তম রূপে চিন্তা-ভাবনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন,বিজ্ঞান আপনাকে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নে বাধ্য করছে”।৩

পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অনেকেই তাদের গবেষণার এক পর্যায়ে মহান আল্লাহর অস্তিত্বের সামনে আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনি একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হলেন আমেরিকান ‘ম্যাক্স প্লাংক’-যিনি এটোমের আভ্যন্তরীন গুপ্ত রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেছেন : “ধর্ম ও প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্মিলিতভাবে নাস্তিকতা,কুসংস্কার ও সন্দেহ প্রবণতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এগুলোর (ধর্ম ও প্রকৃতি বিজ্ঞান) উত্থানের পেছনে সর্বদা আল্লাহর শক্তিমত্তা ক্রিয়াশীল ছিল।”৪

“Albert Me combs Winchester” নামক একজন জীব বিজ্ঞানী বলেনঃ “বিজ্ঞান মানুষের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে দেয়,যার ফলে মানুষ ভালভাবে তার প্রভুকে চিনতে সক্ষম হয়। সাথে সাথে তার শক্তিমত্তা,মহত্ত্ব ও সৃষ্টিক্ষমতা সম্পর্কেও অধিক ওয়াকিবহাল হতে পারে। বিশ্বের প্রতিটি নব্য আবিস্কার মানুষের ঈমানের দৃঢ়তা শতগুণ বৃদ্ধি করে দেয়। আর সেই সাথে তা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা-চেতনাতে বদ্ধমূল সকল প্রকার কুমন্ত্রণা ও শেব্কের মূলৎপাটনে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে। অতঃপর তদস্থলে তাওহীদ ও আল্লাহর পরিচয়ের উন্নত চিন্তা ও আকিদা স্থাপন করে দেয়।”৫

Edwad Luter Kessel নামক এক প্রাণী বিশেষজ্ঞ বলেন : “প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীগণ তাদের জ্ঞানগর্ভ প্রমাণাদি কে যেমনিভাবে বৈজ্ঞানিক ফলাফল অর্জনের জন্যে অধ্যয়ন করে থাকেন তেমনি যদি আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ কল্পে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করতেন তা’হলে অবশ্যই তারা একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের স্বীকার বাধ্য হতেন।”

এ কাজে স্বভাবতঃই সকল ধরনের গোড়ামী পরিহার করে চলতে হবে। সকল প্রকার জ্ঞান-গর্ভ আলোচনা ও অধ্যয়ন একজন সুস্থ বিবেকবান ব্যক্তিকে সৃষ্টির একক ও প্রথম কারণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে বাধ্য করবে,যাকে আমরা আল্লাহ্ বলে সম্মোধন করে থাকি।

অতঃপর তিনি বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানের আবিস্কার সমুহকে মানব-জাতির জন্যে আল্লাহ্ তায়ালার বিশেষ রহমত ও দান বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরো বলেন : “আল্লাহর এ অসংখ্য নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা তখনি সার্থকতার রূপ ধারণ করবে যখন মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমানের দৃঢ়তাকে আরো অধিক বাড়িয়ে দিবে’’।

মানুষের জ্ঞান স্বল্প ও সীমিত

“সাধারণতঃ মানব সমজে প্রচারিত অধিকাংশ ধারণাই ভুল ও গোমরাহীতে ভরপুর থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ অধিকাংশ মানুষ মনে করে থাকে,বিজ্ঞান একজন অভিজ্ঞ জ্ঞানী ও বাগ্মীর ন্যায় সকল প্রকার সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। অথচ প্রকৃত ব্যাপারটি কিন্তু এর সম্পূর্ন বিপরীত। মুলতঃ বিজ্ঞান ঠিক একজন যুবকের ন্যায় বিভিন্ন ধরনের সমসায়িক প্রশ্ন ও সমস্যার উত্তর ও সামাধান দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। এমন কোন বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি তার অর্জিত জ্ঞানের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পেরেছেন। কেননা,তারা জানেন,তাদের অর্জিত জ্ঞানের চেয়ে অজানা বিষয়ের সংখ্যা অনেক বেশী।” -উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন পদার্থ ও গণিত বিজ্ঞানী জনাব Earl Chester Rex। প্রকৃতপক্ষে পদার্থ বিদ্যায় ঐ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব যেগুলোর প্রথমে’ কিভাবে (How) শব্দটি অবস্থিত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘কেন’ (Why) শব্দের ভিত্তিতে প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর দিতে পারে না পদার্থবিদ্যা।

উদাহরণস্বরূপ : কিভাবে দু’টি বস্তু পরস্পর আকর্ষিত হয়ে? -এ প্রশ্নে উত্তর নিউটনের মধ্যাকর্ষণ সুত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে দিয়েছ। কিন্তু কোন দুটি বস্তু পরস্পর আকর্ষিত হয়? -এর জবাব এখনও কোন বিজ্ঞানী দিতে সক্ষম হয়নি। এমনও বহু প্রশ্ন আছে যা ‘কিভাবে’ শব্দ দিয়ে শুরু করলেও সেগুলোর উত্তরে মধ্যে ‘হয়তো’,‘সম্ভবতঃ’ শব্দদ্বয় যুক্ত করা হয়। আমরা জানি,মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে আমরা ভূ-পৃষ্ঠে বায়ুমন্ডলের চাপের মঝেও নিজেদের ভারসাম্য বজায় রেখে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারি। আমরা আরো জানি,পৃথিবী তার নিজকক্ষে সূর্যের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করছে,কিন্তু কেন এমন সব ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে? এসবের উত্তর বিজ্ঞানীরা অনুমানের উপর ভিত্তি করে দিয়ে থাকেন।

এ বিশ্ব-প্রকৃতির একটি সুত্র হলো : “যদি দু’টি বস্তুর মাঝে অত্যাধিক দুরত্ব বিদ্যমান থাকে তাহলে তারা পরস্পর বিকর্ষিত হবে। কিন্তু কেন? এর কোন উত্তর অদ্যবধি কোন বিজ্ঞানী দিতে পারেন নি।

প্রকৃত সত্য এই যে,মানবজাতি তার উজ্জল বৃদ্ধিমত্তা ও বিশাল পান্ডিত্য দ্বারা এখনও সে নিজেকেই পরিপূর্ণভাবে চিনতে পারেনি। ধর্ম-বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষ,চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে,তাদের জ্ঞান ও উপলদ্ধি ক্ষমতা অত্যন্ত স্বল্প ও সীমিত। সাধারণ মানুষের মত চিন্তাবিদগনও বিশ্বাস করেন যে,বিশ্ব জগতে এমন অনেক জিনিষ আছে যা এখনও মানুষ উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয়নি। যেমন ধরুন,রুহের ব্যাপারে কোন বিজ্ঞানী,কি ব্যাখ্যা দিতে পারেন? রুহ্ হচ্ছে মানব জীবনের একমাত্র চালিকা শক্তি। আর রুহ্-ই ঐ সব অজানা বস্তুর অন্যতম। বিজ্ঞান সফলতার সাথে পরমাণুর সুক্ষ্মতিসূক্ষ্ম ব্যাপারে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং সৃষ্ট বস্তুসমুহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা প্রদান করতে পারলেও মানুষের রুহ্ ও বিবেক বুদ্ধির সংজ্ঞা দিতে একেবারেই অপারগ। বিজ্ঞানীরা ভাল করেই জানেন যে,তারা বস্তুর বৈশিষ্ট্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে পর্যালোচনা ও গবেষাণা করতে পারেন,কিন্তু বস্তুনিচয়ের অস্তিত্বও তাদের বিভিন্ন প্রকার বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন ও বর্ণনা করতে পারবেন না। বিজ্ঞান অনেক কিছুরই সংজ্ঞা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে যেমন : ‘বিশ্বাস’,‘সৌন্দর্য’,‘আনন্দ’ ইত্যাদি।

অস্বীকার করার জো নেই যে,বস্তু সম্পর্কে সব ধরনের জ্ঞান আমাদের নেই। এ ব্যাপারে আমাদের জ্ঞান ভাসমান তৃনের মত। পরমাণুর জগতে যা কিছু অত্যন্ত জটিল ও বিশৃঙ্খল বলে মনে করে থাকি বস্তুতঃ তার কোন অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে। আর সম্ভবতঃ এ ধরনের ভুল নির্দেশনা আমাদের ত্রুটিময় জ্ঞান ও পর্যাপ্ত পর্যালোচনা-গবেষণার অভাব থেকেই নিঃসৃত হয়ে থাকে।

আল্লাহর অস্তিত্ব বিজ্ঞানের পথ ধারার ঊর্দ্ধে

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্যে বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ-গবেষণার দ্বার উম্মুক্ত করা হয়নি। বরং বিজ্ঞানের কাজই হলো এ বিশ্ব-প্রকৃতি সম্বন্ধে গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো। বিজ্ঞানের আবিস্কার ও নতুন কোন সুত্রের সাথে সর্বপ্রথম বা আদি সত্তার অস্তিত্বের পর্যালোচনার কোন সম্পর্ক নেই। অন্য কথায় বিজ্ঞান মেশিন তুল্য একটি যন্ত্রের ন্যায় প্রকৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে থাকে মাত্র,প্রকৃত ও আদি প্রস্তুত কারকের ব্যাপারে কোন আলোচনাই উপস্থাপন করে না। আল্লাহ্ এমন কোন বস্তুগত সত্তা নন যে তাকে কোন বিজ্ঞানাগারে রেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো যেতে পারে। বরং তিনি হলেন পার্থিব জগতের ঊর্দ্ধে অবস্তুগত একটি সত্তা। বিজ্ঞানের সাহায্যে ‘আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের বিষয়টি প্রেম ও সৌন্দর্যের ন্যায় অপার্থিব ও অবস্তুগত বিষয়গুলোর উপর ব্যর্থ গবেষণারই নামান্তর।

“মানবতার প্রীতিপূর্ণ মনোভাবের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে প্রেম। বিজ্ঞান এর কোন সংজ্ঞা দিতে পারেনি। কিন্তু কেউ কি প্রেম ও তদ্রূপ অন্যান্য অপার্থিব বস্তুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার দুঃসাহস রাখে? আর আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণও অভৌতিক বিষয়াবলীর অন্তর্ভূক্ত অর্থাৎ প্রাকৃতিক ঘটনাবলী আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণে ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মাত্র,কিন্তু বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক কোন বক্তব্যই পেশ করে না।” -বলেছেল ‘মারলিন বুক্স ক্রেইডার’ (Marlin Books Kreider) নামক ফিজিওলজির একজন বিজ্ঞানী।৬

‘আল্লাহ্ অস্তিত্বমান কি অনস্তিত্বমান’ -এ বিষয়টি কোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও বৈষয়ীক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে,আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ কল্পে এ বিষয়টির উপর উপর্যপরি গবেষণা চলছে,তবুও এতসব প্রগাঢ় গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী কোন বস্তুগত প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। বস্তুতঃ প্রকৃতি কখনো তার ঊদ্ধ জগতের কোন সংবাদ প্রদান করতে পারেনা,যেমনিভাবে একটি অবরুদ্ধ দ্বার ও জানালা দিয়ে বর্হিঃজগত সম্পর্কে কোন খবরাখবর রাখা সম্ভব নয়। যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের জন্যে কোন পার্থিব ও বস্তুগত উপায় উপকরণের মাধ্যমে অপারগতায় পর্যবসিত হয়েছে তাই সর্বদা এ ব্যাপারে আমাদের বিবেক প্রসূত জ্ঞান বিদ্যাকেই ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়ে আসছে।

এ সম্পর্কে (George Earl Davis) নামক একজন পদার্থবিদ বলেন,“আল্লাহর অস্তিত্বকে সরাসরি বিজ্ঞানের বিভিন্ন সুত্রে ফেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়। কেননা,আমরা জানি আল্লাহ্ কোন বস্তুগতসত্তা নন। তিনি সকল পার্থিব ও বস্তুগত সীমানার ঊর্দ্ধে। তাই মানুষের সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা এ বিষয়ে কোন সংজ্ঞা দিতে পারে না”।৭

উপরোল্লেখিত বিজ্ঞানীদের অভিমত থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে,বিজ্ঞানের গবেষণার মূল বিষয় বস্তু হলো বস্তুর বৈশিষ্ট্য। এর কর্ম-ধারা হলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বস্তুসত্তাকে বিশ্লেষণ করা। আর এ কারণেই কোন অবস্তুগত সত্তা বিজ্ঞানের গবেষণার আলোচ্য বিষয় হতে পারে না। যেহেতু মহান সৃষ্টিকর্তা ব্যতিক্রম ও প্রকৃতি বহির্ভূত একটি সত্তা,তাই কখনো এ ধরনের জ্ঞানবিজ্ঞানের পরিমন্ডলের আওতাভুক্ত হতে পারেনা।

অতএব,যে বিদ্যা এ ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করতে পারে তাহলো দর্শন (Philosophy)। কেননা দর্শন শাস্ত্রের আঙ্গিনা বিভিন্ন অকাট্য দলীল ও বিশুদ্ধ চিন্তা বুদ্ধি দ্বারা সুসজ্জিত। এ বিদ্যার আলোচনার বিষয় বস্তু হলো পার্থিব শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীন সত্তা। সুতরাং যখন বলা হয় আল্লাহর অস্তিত্ব সন্বন্ধীয় আলোচনা বিজ্ঞানের বহিভর্তূ বিষয় তখন তার উদ্দেশ্য হলো :

এক : আল্লাহ্ একটি অবস্তুগত সত্তা। তার সত্তাকে কোন ইন্দ্রিয়গত মাধ্যমে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা অভিজ্ঞতার আলোকে নির্ণয় করা যায় না।

দুই : আল্লাহর অস্তিত্ব সম্বন্ধে সরাসরী পর্যালোচনা ও গবেষণা বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পন্থায় সম্ভব নয়। বলাবাহুল্য,আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণে বিজ্ঞান যে এক প্রকার অবদান রাখতে পারে তার বিবরণ আমাদের পরবর্তী আলোচনায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

এখন,আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণে বিজ্ঞানের প্রভাবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন অনুভব করছি। এ বিষয়ে বিজ্ঞানের অবদানকে আমরা দু’টি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে পারি।

এক : বিশ্ব-প্রকৃতির সূচনা কাল।

দুই : বস্তু জগতে বিরাজমান নিয়ম-শৃঙ্খলা।

যখন বিজ্ঞানের অনুসন্ধানমুখী কর্ম-ক্রিয়া উপরোক্ত দু’টি বিষয় প্রমাণ করতে সক্ষম হবে তখন প্রকৃত পক্ষে অকাট্য প্রমাণসূত্র ‘কিয়াস’*৮ -এর গৌণ বাক্যটি প্রমাণিত হবে মাত্র। আর নির্ভুল ও সর্বজন স্বীকৃত মুখ্য বাক্যটির (উদাহরণ স্বরূপ,প্রতিটি শৃঙ্খলা ব্যবস্থার জন্যে একজন শৃঙ্খলা বিধানকারী প্রয়োজন,অথবা যে বস্তুর সূচনাকাল আছে তার সূচনাকারী নিশ্চয়ই বর্তমান) সমন্বয়ে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ সুদৃঢ় হবে। এ ক্ষেত্রে উপরোক্ত দুটি বিষয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদের দৃষ্টিভঙ্গির সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছি।

বিশ্ব-প্রকৃতির সূচনাকাল বিদ্যমান

‘‘বিশ্ব প্রকৃতির সূচনাকাল বিদ্যমান’’ বাক্যটি থেকে আমাদের উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রকার প্রাণী ও জড়বস্তুর সৃষ্টি বোঝানো। কেননা,এ বিশ্বের সৃষ্টি ও তার নশ্বরতার ব্যাপারে শুধু আস্তিকবাদীরাই নন,জড় ও বস্তুবাদীরাও কোন প্রকার সন্দেহ ও দ্বিমত পোষণ করেন না। উক্ত বাক্যটি থেকে সেই মৌলিক ও আদিম সত্তাকে বোঝানো আমাদের উদ্দেশ্য,যা এ বিশ্ব প্রকৃতির প্রধান ও প্রথম উপাদান হিসেবে পরিগণিত। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীগণ প্রকৃতিকেই সবকিছুর স্রষ্টা ও সূচনাকারী বলে বিশ্বাস করেন। তারা এ প্রকৃতির আদিম উপাদানকে সনাতন বলে দাবী করেন।

Oli Carroll Karkalits নামক রসায়ন শাস্ত্রের একজন বিজ্ঞানী বাস্তবাদীদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন এভাবে,‘তারা বলেন,যদিও পৃথিবী ও সূর্য গ্রহের বয়স সীমিত এবং সুনির্দিষ্ট,তদুপরি সৃষ্টিজগতে বস্তু সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী উপাদানগুলো চীরবর্তমান। প্রাণী জগত জড় উপাদান থেকে পূর্ণাঙ্গতার সিঁড়ি বেয়ে পর্যায়ক্রমে সক্রিয় হয়েছে। আর তারই এক পর্যায়ে মানবজাতির সৃষ্টি’। অতঃপর,তাদের উপরোক্ত বক্তব্য ও ব্যাখ্যা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছেন,এ বিশ্ব প্রকৃতির উৎপত্তি ও সূচনাকাল সম্পর্কে তাদের বক্তব্য সন্তোষজনক নয়। আমাদের নিকট এমন প্রচুর অকাট্য ও পরীক্ষিত দলীল প্রমাণাদি সংরক্ষিত আছে। যা থেকে অতি সহজেই প্রমাণ হয় যে,এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আদিকাল আছে,এ পৃথিবীর কার্যক্রম ও যাত্রা কোন একটি স্থান থেকে আরম্ভ হয়েছে। ট্যারমোডিনামিক (তাপ ও শক্তি) সূত্রও বিশ্ব জগতের আদিকাল নির্ণয় করে দেখিয়েছে। আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সত্তাটিও উক্ত সূত্রের সমর্থন করে। সূত্রটি আরো বলে ‘বিশ্বের এনট্রাপি শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে’। আর এ কথার অর্থ এই দাড়ায় যে,কোন কালে বিশ্বের প্রতিটি বস্তুর তাপমাত্রা সমপর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। এ বক্তব্যটি তখনি সঠিক বলে প্রমাণিত হবে যখন অতীত ও সমসাময়িক সকল বস্তুর সদৃশ আকার ধারণ করবে। আর নিঃসন্দেহে সত্য যে,বস্তুর তাপমাত্রাও সমকক্ষ নয়। হয়তোবা পৃথিবীর সকল বস্তুর তাপমাত্রা কখনো সদৃশতায় পৌঁছাবে না। কেননা,বস্তুসমূহের তাপমাত্রা যতই পরস্পরের সন্নিকটে অবস্থান গ্রহণ করতে থাকবে ততই তাদের চালিকাশক্তি ক্ষয়লাভ হতে থাকবে। তথাপি এ ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক ফলাফলকে কোন অংশে হেয় প্রতিপন্ন করে না। কেননা,যদি বস্তু ও শক্তি অনন্ত ও শ্বাশত অস্তিত্ব নিয়ে বিরাজ করতো,আর বিশ্ব প্রকৃতির কোন আদি উদ্ভব-ই না থাকতো তা’হলে সময়গণক (এ্যানট্রোপি) সত্য ও সঠিক বলে প্রমাণিত হতো না কখনো।৯

Frank Allen হলেন একই সাথে পদার্থ ও জীব বিজ্ঞানী। তিনিও বিশ্ব প্রকৃতির আদি অন্ত প্রমাণ এবং এর শ্বাশত ও চিরন্তন অস্তিত্বের মতামতকে খণ্ডন করে বলেছেন :

‘বিশ্ব সম্পর্কে চিরন্তন অথবা সৃষ্টি বস্তু হওয়ার ধারণা উভয়েই একটি ব্যাপারে সমঝোতায় উপনীত হতে বাধ্য। আর তা হলো কোন একটি শক্তি অথবা বিশ্ব সৃষ্টিকর্তা সর্বদা অস্তিত্বমান। তবে দ্বিতীয় টারমোডিনামিক সূত্র প্রমাণ করে দিয়েছে যে,পৃথিবী সর্বদা গতিশীল,সেখানে সমস্ত বস্তু কোন এক সময়ে সমান সর্বনিন্ম তাপমাত্রায় পৌঁছে যাবে। তখন সকল শক্তি অকেজো হয়ে পড়বে এবং জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে উঠবে। যদি বিশ্ব সূচনাহীন অস্তিত্ব হতো তা হলে বহু পূর্বেই এর মৃত্যু ও স্থবিরতা আগমন করতো। উত্তপ্ত গোলাকার সূর্য,উজ্জ্বল নক্ষত্রসমূহ এবং প্রাণময় ভূপৃষ্ঠ এ সকল কিছুই একটি একক সত্যের সাক্ষ্য দিচ্ছে যে,এ বিশ্ব সৃষ্টির সূচনাকাল বিদ্যমান এবং কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে তা সৃষ্টি ও যাত্রা শুরু করেছে। অতএব,এ বিশ্ব জগত সৃষ্ট বস্তু ব্যতীত অন্য কিছু হতে পারে না’।১০

এতক্ষনে যেহেতু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা সুপ্রমাণিত হয়ে গিয়েছে যে,বিশ্ব প্রকৃতির আদি উৎপত্তি ও সূচনাকাল বিদ্যমান,তাই নিশ্চিত করে বলা যায় যে,স্বাভাবিকভাবে এর সৃষ্টির পিছনে একজন সৃষ্টিকারক কার্যকর রয়েছেন। আর জনাব ফ্রাঙ্ক এ্যালেনের স্বগোক্তি হচ্ছে নিম্নরূপঃ

‘সর্ব প্রথম ও সর্ববৃহৎ একটি কার্যকারণ অথবা একজন চিরঞ্জীব সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিরূপায় হয়েই আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে,যিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং সর্ববিষয়ে সংবিদিত। কেননা,তা না হলে বলতে হবে যে,এ বস্তুগত সত্তা (বিশ্ব) ও তার শক্তিমত্তাসহ সকল কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বের রূপ ধারণ করেছে। এ ধরণের ধারণা এতই অর্থহীন ও অমূলক যে এব্যাপারে কোন প্রকার আলোচনা ও পর্যালোচনা সময় ও শ্রমের অপব্যয় বৈ কিছু নয়’।

পদার্থবিদ Edwin Fast: বলেন : ‘পারমানবিক দেহের সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্যাদির সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান বিশ্বের সূচনা লগ্নের অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে,প্রকৃতির সমস্ত উপাদান এবং তাদের মধ্যকার সম্পৃক্ততা,মূল ও কেন্দ্রীয় অণূসমূহের প্রতিক্রিয়ার ফলে অস্তিত্ব লাভ করেছে। অবশেষে বিভিন্ন অবস্থা ও পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রোটন ও তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহের সম্মিলনের কারণে পৃথিবীর সকল বস্তু উপাদান সৃষ্টি হয়েছে’।

তবে প্রশ্ন হলো,‘এ প্রোটন কোথা থেকে এসেছে? আর তার এ সকল বৈশিষ্ট্যেরই বা কারণ কি?’ এ সকল প্রশ্নের উত্তর আজ অবধি কোন পদার্থবিদ দিতে পারেন নি। এ বিশ্ব প্রকৃতিতে সামান্য একটু দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হবো যে,এ বিশ্বজগতের জন্যে নিশ্চয়ই একজন অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ের আইন প্রণেতা বিদ্যমান,যিনি প্রকৃতির জন্যে কতক সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনশীল বিধি-বিধান ও আইন-শৃঙ্খলা নির্ধারণ করেছেন এবং সৃষ্টির শুরুতে ইলেকট্রন,নিউটন ও প্রোটনগুলোকে এক বিশেষ গুণাবলী দ্বারা সজ্জিত করেছেন,যা থেকে প্রকৃতির সকল নিয়ম-নীতি উৎসারিত হয়েছে। যদি আমাদের সীমিত চিন্তা-ধারাকে শূন্য পয়েন্ট থেকে আরো একটু পিছনে নিয়ে যাই,তাহলে খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারবো যে,এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্যে নিশ্চয়ই এমন একটি আদি পয়েন্ট (Start Point) থাকা দরকার যার মাধ্যমে মূল অণু অথবা প্রকৃতির প্রাথমিক উপাদানগুলো অস্তিত্বমান হয়েছে। এটাই যুক্তিযুক্ত ধারণা যে,যে শক্তি এ সকল অণু-পরমাণু সৃষ্টি এবং সেগুলোকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে রূপায়িত করেছে,তাকে অবশ্যই এগুলোরও পূর্বে অস্তিত্বমান থাকতে হবে। আর বস্তুনিষ্ঠ সত্য কথা হচ্ছে,বিজ্ঞানীরা বহু শতাব্দী ধরে এ সকল অণু-পরমাণুর আবিষ্কার ও উদঘাটনে অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আসছেন আর আজ তাদেরই অনেকে সেই প্রথম পরমাণুর একক স্রষ্টাকে জানার জন্যে সর্বাত্তক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।১১

রসায়ন ও গণিতবিদ John Cleveland Cithara বলেন,‘রসায়ন শাস্ত্রে এটা সুপ্রমাণিত যে বস্তু কোন এক সময় ধ্বংস হবেই। তবে বস্তুর কিছু উপাদান অত্যন্ত ধীর গতীতে আর অবশিষ্ট বস্তু তড়িৎ গতীতে ধ্বংসের দিকে ধাবমান। অতএব বস্তুর অস্তিত্ব শ্বাশত নয়,সৃষ্টি বস্তুর জন্যে অবশ্যই সূচনাকাল বিদ্যমান’।১২

প্রাকৃতিক বিশ্বে নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত

এখন আপনাদের সমক্ষে বিশ্ব প্রকৃতিতে প্রতিষ্ঠিত সুশৃঙ্খল বিধি-বিধানের উপর এক অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও হৃদয়স্পর্শী আলোচনার সুত্রপাত করবো,যা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিন্তাবিদদের মতামতে সমৃদ্ধ।

উদ্ভিদ জগতে শৃঙ্খলা:

এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্ভিদের বপন বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে নিহিত কারণসমূহে ব্যাপারে একজন উদ্ভিদ ও ভূমিবিদের মতামত পেশ করছি।

Lester John Zimmerman নামক একজন উদ্ভিদ ও ভূমিবিদ বলেন : ‘উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্যে প্রয়োজনীয় উপাদান বায়ু ও মাটি থেকে নেয়া হয়ে থাকে। তবে একটা প্রশ্ন এখানে থেকে যায়,মাটির উৎপত্তি কোত্থকে এবং কেমন করে মৃত্তিকা উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান সঞ্চয় করে রাখে? উর্বর মাটি খনিজ উপাদান থেকে গঠিত এবং সে মাটি যথেষ্ট পরিমাণ কার্বন ধারণ করে রাখতে সক্ষম। যা আদিম বৃক্ষ ও প্রাণীদেহের ধ্বংসাবশেষ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। পানি,বায়ু,আলো ও রাসায়নিক উপাদানগুলো যদিওবা উদ্ভিদের বৃদ্ধির সহায়ক তথাপি এগুলোর কোনটাই একাজের জন্যে যথেষ্ট নয়। বরং এক অদৃশ্য শক্তি এসব সূক্ষ্ম ও জটিল কাজে কার্যকর,যা প্রতিটি বীজের অভ্যন্তরে লুকায়িত। সেই শক্তিই একটি উপযোগী পরিবেশে একটি বৃক্ষের বৃদ্ধিতে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে থাকে। এ শক্তির সময়োপযগী পরিবেশে একটি বৃক্ষের বৃদ্ধিতে সর্বাত্তক সহযোগীতা করে থাকে। এ শক্তির সময়োপযগী পদক্ষেপ অত্যন্ত সূক্ষ্মতা ও নিপুণতার সাথে সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রথমে বিভিন্ন কাজে পারদর্শী উপাদানসমূহের সমন্বয়ে গঠিত ডিম্বানুর সূক্ষ্ম দুটি কোষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো পৃথক পৃথকভাবে বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণতার পথে অগ্রসর হতে থাকে। যে বীজ মাটিতে ফেলা হয়ে থাকে পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে হুবহু সে বৃক্ষেরই রূপ ধারণ করে থাকে। গমের বীজ থেকে গম গাছই উৎপন্ন হয়ে থাকে। যদি ওক বীজ বপন করা হয় তাহলে পরিণতিতে ওক বৃক্ষই পাওয়া যাবে। যদি কেউ স্বচ্ছ ধারণা ও নিরপেক্ষ অন্তঃকরণ নিয়ে এ ধরণের ক্রিয়া-কর্ম এবং বীজের বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণতার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাহলে নিঃসন্দেহে সে এ বিশ্ব জগতে বিরাজমান সৌন্দর্য ও প্রতিষ্ঠিত নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতি সাক্ষ্য প্রদান করতে বাধ্য হবে’।১৩

এটোমের অভ্যন্তরে নিয়ম-শৃঙ্খলা:

জনাব কুরেন বলেন,নিঃসংকোচে বলা যায়,বস্তুজগত এক নিয়ম-শৃঙ্খলা ও আইন-কানুনের জগত,বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার জগত নয়। এটা এমন এক জগত যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের অনুসরণ করা হয়ে থাকে। দুর্ঘটনার পথ এখানে অবরুদ্ধ।

অতঃপর তিনি এটোমের দেহে এবং সেখানে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম শৃঙ্খলার ব্যাপারে এরূপ বলেন,‘‘প্রতিটি এটোম তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।

এক : প্রোটন (পজেটিভ),

দুই : ইলেকট্রন (নেগেটিভ),

তিন : নিউট্রন (পজেটিভ ও নেগেটিভের সংমিশ্রণ বা নিউট্রাল)

প্রতিটি এটোমের সকল প্রোটন তার কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থিত। ইলেকট্রন সংখ্যার প্রোটনের সমপর্যায়ে অবস্থিত। তারা সকলে কেন্দ্র বিন্দুর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ এবং বিভিন্ন কক্ষপথে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে থাকে। তাদের সাথে কেন্দ্র বিন্দুর দূরত্ব এতই অধিক যে একজন মানুষ এ ধরণের দূরত্ব অবলোকন করে এটোমের সাথে সৌরজগতের তুলনা দিয়ে বসতে পারে। সৌরজগতের ন্যয় এটোমের আকারও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শূন্যাকাশে আবৃত থাকে। উল্লেখ্য যে,এটোমের একটি উপাদানের সাথে অন্য আরেক উপাদানের পার্থক্য শুধুমাত্র সংখ্যাগত দিক দিয়ে কেন্দ্র বিন্দুতে প্রোটন আর কেন্দ্রবিন্দুর চতুর্দিকে ইলেকট্রন ও নিউট্রনের পার্থক্য এবং অবস্থানের ভিন্নতার সমতুল্য। অতএব,কোটি কোটি মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ অবশেষে এই তিন প্রকার বৈদ্যুতিক অণু থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষে একটি বস্তুর তিনটি রূপ। সেই বস্তুটির নাম বৈদ্যুতিক শক্তি বা Electricity আর এটাও এক অদৃশ্য শক্তির বহিঃপ্রকাশ’’।১৪

অতি ক্ষুদ্রতম অণু কোষের ভিতর শৃঙ্খলা :

যদি আমরা এক ফোটা পানি পরীক্ষাগারের একটা নির্দিষ্ট কাচের উপর রেখে লক্ষ্য করি তাহলে প্রকৃতির এক অত্যাশ্চর্য প্রাণীর নড়াচড়া প্রত্যক্ষ করতে পারবো। এর ভিতর অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটা প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যাবে যাকে Amibe ধীরে ধীরে হজম করে ফেলে। ফলে শুধুমাত্র ঐ ক্ষুদ্র প্রাণীর মলমূত্র অবশিষ্ট রয়ে যায়। যদি আমরা অধিক সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে প্রত্যক্ষ করবো যে Amibe নিজেকে লম্বা করে দুটি অংশে বিভক্ত করে ফেলেছে। যার ফলে দুটি যুবক ও শিশু Amibe এর উৎপত্তি ঘটে। এ ক্ষেত্রে আমরা একটি কোষকে দেখতে পাব যে বেঁচে থাকার জন্যে সে সব ধরণের গুরুত্বপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে এসব ক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যে বৃহদাকার প্রাণীরা পর্যন্ত বহু সহস্র কোষের প্রয়োজন অনুভব করে থাকে। শুধু তাই নয়,কোন কোন ক্ষেত্রে তারা বহু সহস্র মিলিয়ন কোষেরও মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। এটা দিবালোকের ন্যয় স্পষ্ট যে এ ধরণের ক্ষুদ্র প্রাণীর জন্মদাতা কোন দুর্ঘটনা নয়। বরং সর্বপ্রকার ঘটনা প্রবাহের ঊর্দ্ধের কোন শক্তিই এ অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও বিষ্ময়কর প্রাণীর সৃষ্টিকর্তা’। বিষয়টি বলেছেন,জীব বিজ্ঞানী Cecil Boyce Hamam। তিনি প্রাণীদেহের অভ্যন্তরে ক্রিমি জাতীয় জীবাণুর বিভিন্ন ভাগে বিভক্ততে বিশেষজ্ঞ এবং তারিশিন নামক এক প্রকার জীবাণু থেকে বিভিন্ন রোগের বিষাক্ত গ্যাস নির্ণায়ক।১৫

মৌলিক পদার্থের ছকে যথার্থ হিসেব ও শৃঙ্খলা :

মৌলিক পদার্থের চক্রাকার ছক এবং ব্যবস্থা,এমন এক বিধি ব্যবস্থার সুন্দরতম চিত্র যা এ বিশ্বের জন্যে বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এ ছকটি এমন পদ্ধতিতে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়েছে যে,বিশেষ ও সমগুণসম্পন্ন উপাদানগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে ঐ ছকের চতুর্দিকে সর্বদা ঘূর্ণয়মান থাকে। এ চক্রাকার ছকে সমস্ত উপাদানগুলো ইলেকট্রোন সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রেখে সন্নিবেশিত করা হয়ছে। ইলেকট্রোন সংখ্যা তার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রোটনের সংখ্যার সমতুল্য। এভাবে হাইড্রোজেনের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি প্রোটন,দু’টি হেলয়ুম এবং তিনটি ওয়ালিটিউম ছাড়াও আরো অনেক উপাদান বিদ্যমান। যখন উপাদানসমূহ এটোমের ওজন অনুযায়ী ক্রমানুষারে সন্নিবেশিত থাকে তখন তাদের বিশেষ উপাদানগুলোর পরিবর্তন চক্রাকারে এবং বৈকল্পিকভাবে পূনরাবৃত্তি হতে থাকে। যে সমস্ত উপাদান সমান্তরাল সারীতে অবস্থিত তারা তাদের প্রতিবেশীদের সাথে শুধুমাত্র একটি প্রোটন এবং একটি ইলেকট্রোনের পার্থক্য রাখে। আর যেগুলো দৈর্ঘ্যভাবে সারীতে অবস্থিত তাদের বাইরের কক্ষগুলোতে ইলেকট্রোনের সংখ্যা পরস্পর সমান। ইলেকট্রোনের সংখ্যা সমপরিমাণ হওয়ার কারণে যে সমস্ত উপাদান দৈর্ঘ্যভাবে সারীতে অবস্থিত তারা সমগুণ সম্পন্ন। যেহেতু প্রতিটি লিটুয়্যাম,সোডিয়াম,পটাশিয়াম,রোবিডিয়াম,কাইযিয়াম ও ফ্রানসিয়ামের বহির্কক্ষে একটি করে ইলেকট্রন বিদ্যমান সেহেতু তারা সমগুণ সম্পন্ন এবং একই পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিগণিত। আর যেহেতু ছয়টি উপাদান যথা হেলিয়াম,নেউন,আরগুণ,কারিপটুন,যানুন ও রাদুন এর চতুরপার্শ্বে কতগুলো অপরিবর্তনশীল মিশ্রণবেষ্টনী দিয়ে রেখেছে তাই তারা অন্যান্য উপাদানের সাথে মিলিত হওয়ার প্রবণতা প্রদর্শন করে না। এ কারণে সেগুলোকে অকেজো গ্যাস বলা হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে অন্যান্য সকল উপাদানগুলোও তাদের সমগুণসম্পন্ন উপাদান এবং ইলেকট্রোনের সংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত হয়েছে। আমাদের সাধারণ বিবেকই বলে দিবে যে,এ ধরণের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং বিষ্ময়কর সন্নিবিষ্টতা কখনো কোন দূর্ঘটনার ফসল হতে পারে না।

 নভোপুঞ্জ এবং পৃথিবীর কল্পনাতীত বিশালতা :

কোন সুস্থ মস্তিস্ক ব্যক্তির পক্ষে ভূ-মন্ডলের অস্তিত্ব অস্বীকার করার জো নেই। তেমনি নভোপুঞ্জও কেউ অস্বীকার করতে পারে না। ভূ-মন্ডলের ওজন ও আয়তনের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেশী। পৃথিবীর ওজন আনুমানিক ৬৬০০ বর্গ বিলিয়ন টন। যেখানে এক মিলিয়ন টনের প্রকৃত অনুমাপ মানুষের জন্যে এক দুস্কর ব্যাপার সেখানে এক বিলিয়ন অথবা বর্গ বিলিয়ন তো অনেক দুরের কথা। এত বৃহৎ এ ভূ-মন্ডলের ব্যাপারে স্বভাবতঃ-ই প্রশ্ন জাগ্রত হয়,‘এ বৃহৎ গ্রহ যার নাম ভূ-মন্ডল,তা কোত্থকে এসেছে?’

বিশিষ্ট জ্যোতিষবিদগণ বলেন,আমাদের ছায়াপথের ন্যায় একলক্ষ ছায়াপথ বিশ্ব-প্রকৃতিতে বিদ্যমান। প্রশ্ন হতে পারে,এ আকাশপুঞ্জের সর্বমোট ওজন কত হবে? শুধুমাত্র এ বিষয়ে সামান্য একটু চিন্তা একজন মানুষকে বিষ্মিত করে তুলতে যথেষ্ট। তাই এ বৃহৎপুঞ্জের চির বিদ্যমানতার ধারণা একটি অর্থহীন বিশ্বাসের শিকার। কেননা,সকল বস্তু পরিবর্তনশীল অর্থাৎ বৃদ্ধি পায় এবং পর্যায়ক্রমে প্রসার লাভ করে। এমনকি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যথেষ্ট মনোযোগের মাধ্যমে প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টি-সূচনা নির্ণয় করে দিতে সক্ষম। সুতরাং সঠিক ও বিবেক সমর্থিত ধারণাটি হচ্ছে যে,এগুলো সৃষ্ট বস্তু বৈ অন্য কিছু নয়। এ ধরনের বৃহৎ ও সুশৃঙ্খল সৃষ্টি ব্যবস্থা কি কোন প্রস্তুতকারক বা শক্তিশালী স্রষ্টার প্রয়োজন অনুভব করে না?

কয়েকটি আকর্ষণীয় দৃষ্টান্ত :

প্রাণীদেহের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্যে ভূ-মন্ডলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে থাকে। তন্মোধ্যে নিম্নে কয়েকটি কার্যক্রম উল্লেখ করা হলো :

এক : ভূমির উপরিপৃষ্ঠে জীবন রক্ষী গ্যাস থেকে যে বায়ুমন্ডল গঠিত হয়ে থাকে তার ঘনত্ব ও বেধ প্রায় আটশত কিলোমিটার। এত অধিক ঘনত্ব থাকার কারনেই তা ভূ-পৃষ্ঠকে ঢাল স্বরূপ,শূন্যাকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত প্রতিদিন বিশ মিলিয়ন প্রাণহরণকারী প্রস্তর থেকে প্রতিরক্ষা করতে পারে। এসমস্ত পাথর প্রতি সেকেন্ড প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার বেগে ভূ-পৃষ্ঠে আঘাত হেনে থাকে।

দুই : বায়ুমন্ডল ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রাকে জীবন ধারণের উপযোগী করে গড়ে তোলে এবং মহাসাগর থেকে বাস্প ও প্রয়োজনীয় পানি শুস্ক এলাকায় স্থানান্তরিত করে থাকে। আর এরূপ কার্য সম্পন্ন না হলে মহাদেশগুলো বসবাসের অনুপযুক্ত এক একটি বৃহৎ শুস্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যেত।

তিন : পানির দৃষ্টি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য,দীর্ঘ শীত মৌসুমে মহাসাগর,সাগর ও নদীগুলোতে জীবন যাত্রা অব্যাহত রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তন্মোধ্যে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষন এবং স্বীয় ওজন বরফে রূপান্তরিত হওয়ার তাপমাত্রার চেয়ে চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে ধারণ অন্যতম। এ কারণেই নদী ও সাগরের তলদেশে পানি জমাট হতে বাধাগ্রস্থ হয়। অন্য আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য হচ্ছে,পানির ওজন বরফের ওজনের চেয়ে বেশী করে সংরক্ষিত রাখা। সেজন্যে বরফ পানির উপর ভেসে থাকতে সমর্থ হয়। আবার যখন পানি বরফে পরিণত হতে থাকে তখন প্রচুর পরিমাণ তাপ পানির নিম্নভাগ থেকে নিঃসৃত হয়ে বরফ গলানোর কাজে সহায়তা করে থাকে।

চার : মৃত্তিকা তার স্বগর্ভে এমন সব খনিজ পদার্থ ধারণ করে রাখে যেগুলোকে উদ্ভিদ সংগ্রহণ করে প্রাণী জগতের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যরূপে বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

পাঁচ : ভূ-মন্ডলের আয়তম যদি চন্দ্রের ন্যয় ক্ষুদ্র অথবা বর্তমান আয়তনের এক চর্তুাংশ হতো তা’হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পানি ও বায়ু ধারণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতো আর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছতো যেখানে প্রাণীর জীবনাবসান নিশ্চিত হয়ে পড়তো। অপরদিকে যদি পৃথিবী স্বীয় ওজন অপরিবর্তীত রেখে সূর্যের ন্যয় বৃহৎ আকার ধারণ করতো তা’হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একশত পঞ্চাশ গুণ অধিক বেড়ে যেতো আর বায়ুমন্ডলের উচ্চতা প্রায় দশ কিলোমিটার নিচে নেমে আস্তো। পরিণতিতে পানির বাষ্প হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তো আর বায়ুর চাপ প্রায় ১৫০ বর্গকিলোগ্রামে উপনীত হতো। তদর্থে এক কিলোগ্রাম ওজনের প্রাণী একশত পঞ্চাশ কিলোগ্রামে পরিণত হয়ে যেতো আর তখন মানুষের উচ্চতা কমে কাঠবিড়ালীর ন্যায় ক্ষুদ্রাকৃতিতে পরিণত হতো।

ছয় : যদি ভূ-মন্ডল থেকে সূর্যের দূরত্ব বর্তমান দূরত্বের দ্বিগুণ হতো তা’হলে সূর্য থেকে গৃহীত তাপমাত্রা বর্তমান তাপমাত্রার এক চর্তুাংশে অবতরণ করতো আর সূর্যের চতুর্দিকে প্রদক্ষিনরত পৃথিবীর গতিবেগ বর্তমান গতিবেগের অর্ধেকে নেমে আসতো। ফলে বিশ্বের সকল প্রাণী ঠান্ডায় জমাট বেধে যেতো। আর যদি পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব বর্তমান দূরত্বের অর্ধেক হতো তা’হলে উষ্ণতা চারগুন,সূর্যের চতুর্দিকে প্রদক্ষিনের গতিবেগ দ্বিগুন,ঋতুর সময়কাল অর্ধেক (ঋতুর সময়কাল পরিবর্তন সাপেক্ষে) হয়ে যেতো এবং ভূ-পৃষ্ঠে এতবেশী উত্তপ্ত হয়ে উঠতো যে সেখানে জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়তো।

এগুলো ছিল বিশ্ব প্রকৃতিতে প্রতিষ্ঠিত অত্যন্ত সুষ্ঠ ও সূক্ষ্ম আইন-কানুন,বিধি-বিধান এবং অত্যাশ্চর্য সু-শৃঙ্খলার তাক লাগানো প্রকান্ডতার কয়েকটি দৃষ্টান্ত। এ ‘প্রসঙ্গে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ’ শীর্ষক গ্রন্থে আরো অধিক দৃষ্টান্তের অবতারণা করা হয়েছে। বর্তমান গ্রন্থে উল্লেখিত একটি উদাহরণ-ই একজন বুদ্ধিমান ন্যয়বিচারকের সমক্ষে সৃষ্টি সূচনার পরিচয়ের এক মহাগ্রন্থ উন্মোচন করে দিতে সক্ষম।

তাই জনৈক পারস্য কবি যথার্থই বলেছেন :

“সচেতন ব্যক্তির দৃষ্টিতে সবুজ পাতা বৃক্ষলতার

প্রতিটি পাতা-ই এক একটি গ্রন্থ আল্লাহকে চেনার।”

দুর্ঘটনা নাকি কোন মহাশক্তির পরিচালনা?

সৃষ্টিজগতের বিশালতা ও তার বিষ্ময়কর শৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান প্রাথমিক নিম্নের দুটি সম্ভাবনার ফলাফল ধরে নেয়া যেতে পারে।

এক : সব কিছুই কোন একটি সংঘর্ষ এবং পারস্পরিক মিশ্রনের ফল অর্থাৎ দর্শনের পরিভাষায় সৃষ্টির অস্তিত্ব ও তার বিষ্ময়কর নিয়মশৃঙ্খলার জন্যে কোন বস্তুগত কার্যকারণ-ই যথেষ্ট,অন্য কোন ক্রিয়াশীল কার্যকারণের প্রয়োজন নেই।

দুই : বিশ্ব সৃষ্টি ও তার সূক্ষ্ম নিপুণতার যথাযথ ও অপরিবর্তনীয় বিধি-বিধান,সুউচ্চ কোন বিবেক-শক্তি ও প্রজ্ঞার পরিচালনার-ই কারণ আর তিনিই হচ্ছেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্রিয়াশীল সূচনাশক্তি ।

এখন আমাদের বিবেককে উপরোক্ত দু’টি মতামতের মধ্যে মধ্যস্থতা করার জন্যে আহ্বান জানানো উচিত। এক্ষেত্রে তো আর পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অনুসন্ধান চলে না। একটি মাত্র উপায়ে অন্বেষণ ও গবেষণা চালানো যেতে পারে,আর তা হলো সুস্থ বুদ্ধি-বিবেকের প্রয়োগ যা অকলুষিত প্রকৃতি এবং গোড়ামী ও একগুয়েমী বিবর্জিত অন্তর আত্মার সমন্বয়ে গঠিত। এ পর্যায়ে আমরা দু’জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর মতামত উপস্থাপন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছি।

পদার্থবিদ এ্যাডভিন ফ্যাষ্ট বলেন : ‘তিনটি মূল উপাদান যথা হাইড্রোজেন,অক্সিজেন ও কার্বন হচ্ছে প্রতিটি প্রাণীদেহের সর্ব প্রাথমিক সামগ্রী। আর উক্ত তিনটি উপাদানের সাথে সামান্য নাইট্রোজেন গ্যাস ও অন্যান্য উপাদানের মিশ্রন আছে। … এটা কি সম্ভব যে প্রনীদেহে তার উপাদানেরও স্বেচ্ছাকৃত মিশ্রণ কোন এক দুর্ঘটনার ফসল? কেন আমরা দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে ব্যক্ত করছি না যে,প্রাণীকুলের সৃষ্টিকর্তাই এরকম ইচ্ছা পোষন করেছেন? কেন আমরা সৃষ্টি অস্তিত্বের আলোচনায় একটি সহজ শব্দ ‘আল্লাহ্’ উচ্চারণ থেকে বিরত রয়েছি? যদিও এ শব্দটি অত্যন্ত সাধারণ ও সহজ তথাপি এর মর্যাদা ও আড়ম্বরতা গগন চুম্বী।১৬

‘জন এ্যাডওয়ালক বুহলের’ নামক একজন রসায়নবিদ বলেন : ‘যদি সম্ভবনাময়ী হিসেবের ভিত্তিতে প্রকৃতির যে কোন একটি কাজের ফলাফল অর্জনের জন্যে দুর্ঘটনাকে আমরা কারণ হিসেবে ধরে নেই তা’হলে প্রত্যক্ষ করতে পারবো যে,এ সময়কাল উক্ত কাজের জন্যে যথেষ্ট নয়,যদিও ভূ-পৃষ্ঠের বয়স তিন বিলিয়ন বৎসর ধরা হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ প্রোটনের আদি উপাদান থেকে তার কণার সৃষ্টি। শুধুমাত্র স্বাধীন ও প্রত্যয়শীল একটি পথ প্রদর্শকের অস্তিত্ব স্বীকারের মাধ্যমেই সুশৃঙ্খল ও সুসামঞ্জস্য ব্যবস্থাপনা থেকে দুর্ঘটনা বা সংঘর্ষের ধারণাকে পৃথক করা যেতে পারে।১৭

Related Post

বিশ্ব স্রষ্টা এক ও অদ্বিতীয়

Posted by - December 6, 2019 0
মানব জাতির সহজাত বৈশিষ্ট্য হল শক্তিশালী কোন সত্তার সম্মুখে নিজেকে অবনত রাখা। শৈশব থেকে যখন মানব বিচার-বুদ্ধি উন্নতি লাভ করতে…

বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি

Posted by - December 2, 2019 0
শিশু জন্মলগ্ন থেকেই তার চার পাশে অনেককে দেখতে পায়। সর্বপ্রথম যার সাথে সাক্ষাৎ ঘটে তিনি হলেন নবজাত শিশুর মা। ধীরে…

তক্বদীরে বিশ্বাস

Posted by - December 6, 2019 0
তক্বদীরে বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের সকলের জন্যে অবশ্য কর্তব্য। বিবেক প্রসূত বিষয়াদির অন্যতম এটি। কিন্তু তক্বদীরের ব্যাপারে বিভ্রান্তমূলক ব্যাখ্যা আমাদের…

এ বিশ্ব ও সৃষ্টিজগতের বিষ্ময়কর উপমা

Posted by - December 1, 2019 0
এ বিশ্ব বিশ্ব-সৃষ্টি কতই না সুন্দর! মনোরম সব কিছু। নিখুঁত ভাবে সাজানো রয়েছে এ জগতের প্রতিটি বস্তু। নভোমন্ডল,গ্রহসমূহ,নক্ষত্ররাজি,বায়ুমন্ডল,নদ-নদী,সাগর-মহাসাগর,বন-জঙ্গল ও পাহাড়-পর্বত…

আস্তিকবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ

Posted by - December 6, 2019 0
কার্যকারণ নিঃসন্দেহে বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তুই অপর কোন সত্তার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। অন্য কথায় প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টির পেছনে নিশ্চয়ই কোন কার্যকারণ…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *