নূরনবী মোস্তফা (সাঃ)

605 0

➡️( ৩১তম পর্ব, ২য় অংশ)

✍️ [তাছাড়াও পবিত্র কোরআনে বিশ্বনবী (সা.)-এর অন্য যে সব মোজেযার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে সবের মধ্যে চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করার ঘটনা অন্যতম৷ আবুজেহেল ও ওয়ালিদ বিন মুগিরাহসহ মক্কার কোরাইশ ও মুশরিকদের একদল নেতা একবার নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে আসেন৷ সে সময় রাতের বেলায় পূর্ণ চাঁদ দেখা যাচ্ছিল৷ ওরা রাসূলে পাক (সা.)-কে বললো, তোমার নবুওতের দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এই চাঁদকে দ্বিখন্ডিত হতে বলো৷ রাসূলে খোদা (সা.) বললেন, এ কাজ করলে কি তোমরা ঈমান আনবে? তারা বললো, হ্যাঁ৷ রাসূল (সা.) এ বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন৷ হঠাৎ সবাই দেখলো, চাঁদ এত স্পষ্টভাবে দুই খন্ড হয়ে গেছে যে, দ্বিখন্ডিত চাঁদের মাঝখানে হেরা পর্বত দেখা যাচ্ছে৷ এরপর দ্বিখন্ডিত চাঁদ আবার জোড়া লেগে যায় এবং তা পূর্ণ চাঁদে পরিণত হয়৷ এ সময় রাসূলে পাক (সা.) বলেছিলেন, সাক্ষী থাকো ও দেখো৷ মুশরিকরা তো এই অসাধারণ দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে হতবাক! কিন্তু তাদের কেউ কেউ ঈমান না এনে বললো, মুহাম্মাদ আমাদেরকে যাদু করেছে৷ পবিত্র কোরআনে এ ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেই সময় সমাগত এবং চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছে৷ আর যখন ওরা কোনো মোজেযা দেখেছে তখন ওরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ ওরা বলে, এ এক চিরাচরিত যাদু৷ আল্লামা ফাখরে রাজী সূরা ক্বামারের তাফসীরে লিখেছেন, সমস্ত তাফসীরকারক এ ব্যাপারে একমত যে, চাঁদে ফাটল দেখা দিয়েছিল এবং গোটা চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিল৷ এ ঘটনা সম্পর্কে হাদীসের প্রায় বিশটি বর্ণনা রয়েছে এবং এ ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই৷]💐
↯↻↯↻↯

➡️( ৩১তম পর্ব, ৩য় অংশ)

✍️ [এবার আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) ও ওয়ারাকা বিন নওফেলের মাধ্যমে বর্ণিত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর এক মোজেযার বর্ণনা দেব৷ আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) বলেছেন, একদিন আমি রাসূলে পাক (সা.)-এর সাথে থাকা অবস্থায় কোরাইশ গোত্রের একদল লোক তাঁর কাছে এসে বললো, হে মুহাম্মাদ, তুমি বেশ বড় মাপের কিছু দাবী করছো৷ এ ধরনের দাবী তোমার পূর্বপুরুষ ও আত্মীয়-স্বজন কখনও করেনি৷ তুমি যদি আমাদের একটি বিশেষ দাবী পূরণ করতে পার তাহলে আমরা তোমার রেসালাতে বিশ্বাস করবো৷ আর তুমি তা না পারলে তোমাকে স্রেফ যাদুকর ও মিথ্যাবাদী ছাড়া অন্য কিছু মনে করবো না৷ রাসূলে আকরাম (সা.) বললেন, তোমরা কি চাও? ওরা বললো, আমরা চাই তোমার নির্দেশে এই গাছটি যেন শেকড়সহ মাটি থেকে উঠে তোমার কাছে চলে আসে৷ রাসূলে পাক (সা.) বললেন, মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান৷ তিনি তোমাদের এ দাবী পূরণ করলে তোমরা কি ঈমান আনবে এবং সত্যের সাক্ষ্য দেবে? ওরা বললো, হ্যাঁ৷ রাসূলে খোদা (সা.) বললেন, তোমাদের দাবী পূরণ করবো, তবে আমি জানি যে, তোমরা ঈমান আনবে না৷ এরপর তিনি ঐ গাছকে সম্বোধন করে বললেন, যদি আল্লাহ, বিচার ও পুণরুত্থান দিবসে বিশ্বাস কর এবং আমাকে আল্লাহর রাসূল বলে মনে কর তাহলে আল্লাহর নির্দেশে আমার কাছে চলে আস৷ হযরত আলী (আ.) বলেনঃ “আল্লাহর কসম, গাছটি শেকড়সহ মাটি থেকে উঠে রাসূল (সা.)-এর দিকে এগুতে লাগলো৷ এ সময় পাখীদের উড়াল দেয়া ও পাখা ঝাপটানোর শব্দের মতো শব্দ শোনা গেল৷ গাছটি রাসূলে করিম (সা.)-এর সামনে এসে থেমে যায় এবং গাছটি তার কিছু শাখা-প্রশাখা রাসূলের পবিত্র মাথার ওপর মেলে দেয় এবং কিছু শাখা আমার কাঁধের ওপর ছড়িয়ে দেয়৷ আমি রাসূলে খোদা (সা.)-এর ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ কোরাইশরা এ ঘটনা দেখার পরও নবী(সা.)-কে বললো, এই গাছকে বলো, তার অর্ধেক যেন তোমার কাছে আসে এবং অর্ধেক নিজ অবস্থানে থেকে যায়৷ রাসূলে (সা.)-এর নির্দেশে তাও বাস্তবায়িত হয়৷ এরপরও ঐ কুরাইশরা বললো, গাছের যে অর্ধেক তোমার কাছে এসেছে তা তার বাকী অর্ধেকের কাছে ফিরে গিয়ে আবার পরিপূর্ণ গাছে পরিণত হোক৷ রাসূল (সা.)-এর নির্দেশে গাছটি আবার পরিপূর্ণ হল৷ এ ঘটনার পর আমি বললাম, এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো প্রভু নেই, হে প্রিয় রাসূল৷ আমিই প্রথম আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এই গাছের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা আল্লাহর নির্দেশে হয়েছে এবং আপনি যে আল্লাহর রাসূল তা প্রমাণের জন্যেই ঘটেছে৷কিন্তু কোরাইশ লোকগুলো বললো, তুমি তো বিস্ময়কর যাদুকর ও মিথ্যাবাদী৷ এরকম লোক (হযরত আলী আ.) ছাড়া আর কেউ কি তোমাকে আল্লাহর রাসূল মনে করে?” নবী-রাসূলগণের দাওয়াত ও সত্যের আহবান অস্বীকার বা উপেক্ষার ঘটনা শুধু অতীতকালেই সীমিত থাকেনি৷ এখনও অনেক লোক খোদায়ী বাস্তবতা ও সত্যকে বুঝতে অক্ষম৷ আজও এক শ্রেণীর দাম্ভিক ও স্বার্থান্ধ লোক নবী-রাসূলগণকে যাদুকর বলে অপবাদ দেয়৷ তারা এটা বোঝে না যে, নবী-রাসূলগণ অজুহাত উত্থাপনকারীদের কথামত চলেন না৷ নবী-রাসূলগণ দর্শকদের জন্যে বিস্ময়কর কিছু দেখাতে অভ্যস্ত, গাঁজাখোরি গল্পের অভিনেতা ও ভেলকীবাজ নন৷ বরং তাঁরা মহান এক আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে প্রাণসঞ্চারী ও জরুরী বার্তা প্রচারের জন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন ৷ মানুষকে সুপথ দেখানো ও তাদের মুক্তি ও কল্যাণের ব্যবস্থা করাই ছিল নবী-রাসূলগণের মিশনের উদ্দেশ্য৷]💐
↯↻↯↻↯

➡️(৩২তম পর্ব, ১ম অংশ)

✍️[বিশ্বের সমস্ত মুসলমান এ ব্যাপারে একমত যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং আসমানী ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলামী বিধান ও শরিয়ত পরিপূর্ণতম৷ রাসূল (সা.) যে সর্বশেষ নবী এ বিশ্বাস ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিশ্বাসগুলোর অন্যতম৷ এই বিশ্বাসের সপক্ষে পবিত্র কোরআন ও হাদীসে অনেক স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ রয়েছে৷ এ ছাড়াও ইসলামী বিধি-বিধানের প্রকৃতি থেকেও তার স্থায়ীত্ব ও সার্বজনীনতা সুস্পষ্ট৷ পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পর আর কোনো নবী আসবেন না৷ সূরা আহযাবের ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ “মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যকার কোনো পুরুষের পিতা নয়, কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী৷ আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে অবহিত৷” অন্যদিকে পবিত্র কোরআনের আয়াতে ইসলামকে চিরন্তন ও সর্বজনীন ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ ইসলামের বিধানও কোনো স্থান বা সময়সীমার গন্ডীতে সীমিত নয়৷ যেমন, সূরা ফোরক্বানের এক নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ “কত মহান তিনি, যিনি তাঁর দাসের প্রতি ফোরকান (কোরআন) নাজিল করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হতে পারে৷”
মহান আল্লাহ নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন মানুষকে শির্ক বা অংশীবাদিতা থেকে একত্ববাদ এবং অজ্ঞতা থেকে বুদ্ধিবৃত্তি ও কল্যাণকর ও সৌভাগ্যময় জীবনের দিকে আহবান জানাতে৷ যুগে যুগে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন ঘটায় ধর্ম-বিধান পরিবর্তিত হয়েছে এবং প্রত্যেক যুগেই মানব জাতির জন্যে নতুন বাণীর প্রয়োজন হয়েছে৷ অতীতে আসমানী ধর্মগ্রন্থগুলোর বাণী ও শিক্ষা বিকৃত হতো বলেও যুগে যুগে নতুন নবী-রাসূল পাঠাতে হয়েছিল৷ কিন্তু মানবজাতি যখন বিকাশের এমন এক পর্যায়ে উপনীত হল যখন সে খোদায়ী ধর্মের শিক্ষা ও নীতিগুলোকে সংরক্ষণ করতে শিখেছে তথা বিকৃতি ও পরিবর্তনের হাত থেকে সেগুলোকে মুক্ত রাখার মত সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং সেগুলো খাঁটি, অবিকৃত অবস্থায় প্রচার করতে সক্ষম তখন অতীতের মতো নতুন নবী পাঠানোর প্রয়োজন আর থাকে না৷ পরিপূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে মানব জাতিকে এমন এক কাফেলার সাথে তুলনা করা যায় যে কাফেলা তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যে রওনা দিয়েছে, কিন্তু ঐ লক্ষ্যে পৌঁছার পথ তারা ভালোভাবে চিনে না৷ পথে কারো সাথে দেখা হলে তার কাছ থেকে পথ নির্দেশনা নিয়ে কাফেলা কিছুটা পথ অগ্রসর হয়৷ এরপর নতুন ও অপরিচিত স্থানে পৌঁছার পর নতুন পথ প্রদর্শক ও নতুন দিক নির্দেশনা তার জন্যে জরুরী হয়ে পড়ে৷ এভাবে ধীরে ধীরে ঐ কাফেলা ব্যাপকতর অভিজ্ঞতা ও উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাকে পুরো পথের মানচিত্র দেয়া হয়৷ আর এই সামগ্রিক মানচিত্র ও পথনির্দেশনা পাবার পর তাদের কাছে ভবিষ্যতের পথও স্পষ্ট হয়ে যায়৷ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)ও মহান আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে মানব কাফেলার কাছে সামগ্রিক পথ নির্দেশনা ও সামগ্রিক সৌভাগ্যের পথ তথা ইসলামী আদর্শ উপহার দিয়ে গেছেন৷ আর এ সময় মানব জাতি চিন্তাগত দিক থেকে এ মহান আদর্শের সত্যতা উপলব্ধি এবং এ আদর্শের শিক্ষাগুলো রক্ষার মতো পরিপক্কতা অর্জন করেছিল৷
মানুষ চিন্তাগত ও সামাজিক দিক থেকে পরিপক্কতা অর্জন করতে পেরেছে বলেই পবিত্র ইসলাম ও কোরআন বিকৃতি বা পরিবর্তনের শিকার হয়নি৷ এটাও লক্ষ্যনীয় যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মই সর্বশেষ খোদায়ী ধর্ম হবার দাবী করেনি৷ অতীতের সমস্ত নবী তাঁর পরবর্তী নবীর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে যেতেন৷ যেমন হযরত আদম (আ.), হযরত নূহ (আ.) ও অন্যান্য নবীরা তাদের পরবর্তি নবীদের আগমনের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন৷ হযরত নূহ (আঃ) ও পরবর্তী নবীগণ তাঁদের পরে হযরত মূসা, হযরত ঈসাও নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন৷ কিন্তু পবিত্র কোরআন এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ঘোষণা থেকে স্পষ্ট যে, তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না৷]💐
↯↻↯↻↯

➡️(৩৫তম পর্ব, ২য় অংশ)

✍️[বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) গোটা মানবজাতির সম্পদ এবং তিনি মানবজাতির কাছে যা উপহার দিয়েছেন তাও গোটা মানবজাতির সম্পদ৷ তাই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অবমাননার ব্যাপারে বিশ্বের সমস্ত শিক্ষিত মানুষ ও মুক্তকামী মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত এবং তাদের উচিত এ মহামানবের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য ও পবিত্রতার সীমানা সংরক্ষণ করা আর তাঁর মহান শিক্ষাগুলোকে ছড়িয়ে দেয়া৷ যদিও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) একটি নির্দিষ্ট স্থানে ও যুগে বসবাস করেছিলেন, কিন্তু তিনি মাটির মানুষ হয়েও স্বর্গীয় সুষমার অধিকারী ছিলেন এবং তিনি ছিলেন স্থান- কালের গন্ডীর উধের্ব৷ তিঁনি আজও মানবজাতির পথপ্রদর্শক৷ আর এ জন্যেই পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবে তাঁকে সব মানুষের জন্যে আদর্শ বলা হয়েছে এবং মানুষ যদি তাঁর আদর্শের অনুসারী হয় তাহলেই তারা মুক্তি পাবে৷ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে বলা যায়, “রাসূলে পাক (সা.) সদাচরণ ও উন্নত নৈতিক গুণাবলীর দিক থেকে নজিরবিহীন, তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর নিদর্শন৷ তাঁর ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দৃঢ় ও অদম্য ইচ্ছা-শক্তি৷” ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে অজ্ঞতার আঁধারে নিমজ্জিত শক্তিগুলো রাসূলে পাক (সা.)-এর মোকাবেলায় সমস্ত সামর্থ নিয়ে সংঘবদ্ধ এবং নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল৷ কিন্তু বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছিলেন, “তোমরা যদি আমার এক হাতে সূর্য এবং অন্য হাতে চাঁদ এনে দাও তাহলেও আমি সত্য ধর্ম প্রচারের এ দায়িত্ব ত্যাগ করবো না৷ এ ধরনের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মাধ্যমেই বিশ্বনবী (সা.) ইতিহাসের গতি বদলে দিয়েছিলেন এবং পাপ-পংকিলতা ও লক্ষ্যহীনতায় মগ্ন সমাজকে সৌন্দর্য, কল্যাণ ও প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ জীবনের দিকে পরিচালিত করেন৷ আমাদের মনে রাখা উচিত, নূরনবী (সা.) সম্পর্কে সন্দেহবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল বা নেতিবাচক নীতি সেই জাহেলী যুগ থেকেই প্রচলিত ছিল৷ বিদ্বেষী এই নীতি পরবর্তিতে খৃষ্টান মিশনারীদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয় এবং এই ধারা আজও বিভিন্ন পন্থায় ও কলেবরে অব্যাহত রয়েছে৷ সেই যুগে রাসূল (সা.)-কে অস্বীকার করা হত৷ আজ তারা বলছে ইসলাম ধর্মের ভাষা সভ্যতা-বর্জিত বা সেকেলে৷ অতীতে তারা বলত, মুহাম্মাদ (সা.) যাদুকর! আজ ইসলাম ও সত্যের বিরোধীরা বলছে, নবীরা ছিলেন ক্যারিজমাটিক তথা জনগণের মধ্যে গভীর প্রভাব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব এবং তারা সমাজকে সংস্কার করতেন৷ অতীতে তারা রাসূলে খোদার (সা.) নবুওত ও রেসালাতকে অস্বীকার করত৷ বর্তমানে তারা প্রতারণামূলক শব্দের আশ্রয় নিয়ে একই অপবাদ দিচ্ছে৷ নবী-রাসূলগণ ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু বলে তারা ঠিক এখানেই আঘাত করছে৷]💐

➡️(৩৫তম পর্ব, ৩য় অংশ)

✍️[নবী-রাসূলগণ মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় সামাজিক, জ্ঞানগত ও নৈতিক বিপ্লবগুলোর উৎস৷ তাই, সামাজিক ও চিন্তাগত সমস্ত সাধনা, প্রচেষ্টা ও সংঘাত নবী-রাসূলগণের আহ্বানকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে৷ কেউ যদি নবুওতের মূল নীতি ও ধারণাকেই অগ্রাহ্য করতে পারে, কিংবা নবী-রাসূলগণের ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে বিকৃত করে তুলে ধরতে পারে যে, তাঁদের বক্তব্য ও আচার-আচরণ মানুষের জন্যে আদর্শস্থানীয় বলে বিবেচিত না হয়, তাহলে ধর্ম বলে ভাল কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে না৷ এ অবস্থায় ধর্মের অর্থ হবে অস্পষ্টতা ও কিছু ব্যক্তির খেয়ালীপনা মাত্র এবং ধর্ম হয়ে পড়বে মানুষের জীবনে প্রভাবহীন একটি বিষয়৷ কিন্তু নবী-রাসূলগণ এসেছেন অজ্ঞতা, শির্ক, জুলুম, অবিচার ও অন্যের অধিকার লংঘন প্রতিরোধ করতে এবং মানুষের আচার-আচরণের ধারায় বিপ্লব সৃষ্টি করতে৷ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন নবীগণের মধ্যেও সবচেয়ে কোমল ও দয়াদ্র হৃদয়ের অধিকারী৷ মানব-ইতিহাসে তাঁর মত পবিত্র ও উদার চিত্তের মানুষ আর কখনও আসেনি এবং ভবিষ্যতেও আসবে না। আর এসব কারণেই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর সর্বশেষ দূত ও প্রতিনিধি৷ বর্তমান ও ভবিষ্যতেও মানুষের জীবনের সব ধরনের সমস্যা সমাধানের চাবি রয়েছে তাঁরই জীবনাদর্শে৷ তিনি ইতিহাসের সব যুগের জন্যে এবং সব মানুষের জন্যেই রাসূল৷ মানুষের জীবনের সবচেয়ে ক্ষুদ্র ও খুটিনাটি দিক থেকে শুরু করে পরকালীন, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক জীবন থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন নন৷ নূরনবী (সা.) মানবতা, ন্যায়বিচার ও যুক্তির উপর জোর দিয়ে মানব জাতির জন্যে সবচেয়ে ভালো পথ প্রদর্শন করেছেন৷ তিনি ছিলেন এমন একজন মহামানব, যিনি মানুষকে ভ্রাতৃত্ব ও দয়া শিখিয়েছেন, যখন মানুষ ছিল সহিংসতা ও নৃশংসতায় অভ্যস্ত৷ ইসলামের শ্রেষ্ঠতম এই ব্যক্তিত্বের প্রতি রইলো আমাদের অসংখ্য দরুদ ও সালাম৷ পবিত্র
 
কোরআনের ভাষায়ঃ
“নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর উপর দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনরা! তোমরাও তাঁর উপর দরুদ পড় এবং পরিপূর্ণভাবে সালাম প্রেরণ করো৷” (সূরা আহযাব-৫৬)💐
(সমাপ্ত )📚🕋🌹👌
চলবে……
↯↻↯↻↯

Related Post

আমেরিকার অ্যাকিলিস হিল

Posted by - May 23, 2022 0
আমেরিকার অ্যাকিলিস হিল (Achilles Heel)! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি সাধারণ নিয়ম রয়েছে, যা মেনে চললে যুদ্ধের ময়দানে সংঘর্ষের সময়…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *