“নাজ্জালা” এবং ‘আনযালা’ ক্রিয়াপদদ্বয় বিশ্লেষণ

995

কোরআন নাযিলের মাস মাহে রমজান।

🔸মহান আল্লাহপাক আল কোরআন নাজিল হওয়া বা অবতীর্ণ হওয়া সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে দু’টি ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন। যথা- ক. নাজ্জালা এবং খ. আনযালা। এবার এই দু’টি ক্রিয়াপদের ব্যবহারিক দিকের প্রতি নজর দেয়া যাক।

✔১. ‘নাজ্জালা’ ক্রিয়াপদটির অর্থ হলো, বারে বারে নাজিল করা, অল্প অল্প করে নাজিল করা। ষোলআনা কোরআন দীর্ঘ ২৩ বছরে (মক্কায় ১৩ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর) মক্কা এবং মদিনায় অল্প অল্প করে আল্লাহপাকের পক্ষ হতে নাজিল করা হয়। দশম হিজরীর বিদায় হজের পর গ্বাদীরে খোমের মাওলার পক্ষে বাইয়াতের মাহফিলে সর্বশেষ আয়াত ‘আল ইয়াওমা আখলাকতু লাকুম দীনাকুম… নাজিল হয়। এই ‘নাজ্জালা’ ক্রিয়াটি চারটি রূপে আল কোরআনে আল্লাহপাক ব্যবহার করেছেন। যেমন- ক. ‘নাজ্জালা’ রূপে ১২ বার। খ. ‘নাজ্জালনা’ রূপে ১০ বার। গ. ‘নাজ্জালনাহু’ রূপে ২ বার। ঘ. ‘নাজ্জালাহু’ রূপে ২ বার।

✔২. আর ‘আনযালা’ ক্রিয়াপদটির অর্থ হলো একসাথে ষোলআনা কোরআন নাজিল করা, একসাথে বৃষ্টি নাজিল করা, একসাথে কিতাব নাজিল করা, একসাথে ফেরেশতা নাজিল করা ইত্যাদি। লক্ষ করলে দেখা যায় যে, আল্লাহপাক একসাথে ষোলআনা কোরআন ২ বার নাজিল করেছেন। যথা ক. আল কোরআনের ৯৭ নং সূরা আল কাদরে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইন্না আনজালনাহু ফী লাইলাতিল কাদরি’, অর্থাৎ আমি তা (আল কোরআন) মহিমান্বিত রজনীতে নাজিল করেছি। আর মহিমান্বিত রজনী সন্বন্ধে তুমি কী জানো?
মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাত্রিতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রাঈল আ.) তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়। শান্তিই শান্তি সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। মহান রাব্বুল আলামীন ‘আনযালা’ ক্রিয়াটি ৭টি রূপে আল কোরআনে ব্যবহার করেছেন। যথা- ক. ‘আনযালা’ রূপে ৬৩ বার। খ. ‘আনযালতু’ রূপে ৩ বার। গ. ‘আনযালতুমুহু রূপে ১ বার। ঘ. ‘আনযালনা’ রূপে ৪০ বার। ঙ. ‘আনযালনাহু’ রূপে ১৪ বার। চ. ‘আনযালনাহা’ রূপে ১বার। ছ. ‘আনযালাহু’ রূপে ৩ বার।

মোটকথা, কদরের রাত্রিতে কোরআনকে ‘লাওহে মাহফুজ’ হতে নবীজীর সিনা মোবারকের একসাথে নাজিল করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রামজান মাস’, যে মাসে মানুষের দিশারী এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ আমরা জানি, রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোর কোনো একটিকে লাইলাতুল কদর হিসেবে আল্লাহপাক মঞ্জুর করেছেন।
এ জন্যই দয়াল নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোতে কদর রাত তালাশ করো।’ এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনের সূরা দুখানের ৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় আমরা তা (কোরআন) এক মুবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমরা সতর্ককারী।”
এ পর্যায়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, ষোলআনা কোরআন একসাথে নাজিলের ব্যাপারে আল্লাহপাক দু’টি রজনীর কথা উল্লেখ করেছেন। এর একটি হলো ‘লাইলাতুল কদর’ মহিমান্বিত রজনী এবং দ্বিতীয়টি হলো, ‘লাইলাতুন মুবারাকাহ্’ অর্থাৎ বরকতময় রজনী। তাহলে কি এই উভয় রজনী এক ও অভিন্ন?

এ প্রশ্নের উত্তরে তত্তজ্ঞানীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন।
✔১. বর্ণিত দু’টি রাত অর্থাৎ লাইলাতুল কাদর ও লাইলাতুন মুবারাকাহ্ এক ও অভিন্ন।
✔২. দ্বিতীয় দলের অভিমত হলো এই যে, উল্লিখিত দু’টি রাত ভিন্ন ভিন্ন। লাইলাতুন মুবারাকাহ্‍ হলো শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত।

হাদিস শরীফে যে রাতটিকে শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যাকে আরবিতে লাইলাতুন মুবারাকাহ্‍ বলা হচ্ছে এবং ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় শবে বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী বলা হয়।

এই রাতে মহান আল্লাহপাক স্বীয় এলেম হতে ষোলআনা কোরআনকে ‘লাওহে মাহফুজে’ বা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ করেছেন। এ কথারই সাক্ষ্য পাওয়া যায় আল কোরআনের সূরা বুরুজের ২১ ও ২২ নং আয়াতে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘বস্তুত তা সম্মানিত কোরআন, যা সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ আছে।’ আল্লাহপাক ষোলআনা কোরআনকে সংরক্ষিত ফলকে সংরক্ষণ করেছিলেন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে অর্থাৎ ‘লাইলাতুন মুবারাকাহ্‍’-এ। যা মুক্তি লাভ ও সৌভাগ্যের রাত বলে সুপরিচিত।

উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা স্পষ্টত:ই প্রতীয়মান হয় যে, ‘লাইলাতুন মুবারাকাহ্‍’-এ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয় এলেম হতে ষোলআনা কোরআনকে একসঙ্গে ‘লাওহে মাহফুজে’ লিপিবদ্ধ করেছেন। দ্বিতীয়বার লাওহে মাহফুজ হতে মাহে রমজানের কোনো এক কদরের রাতে ষোলআনা কোরআনকে নবীজীর সিনা মোবারকে নাযিল করেছেন। অতঃপর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে কোরআনুল কারিম মক্কা এবং মদিনায় সূরা বা অল্প অল্প করে নাজিল হয়েছে। আল কোরআনে ব্যবহৃত ‘নাজ্জালা এবং ‘আনযালা’ ক্রিয়াপদদ্বয় এ কথার সাক্ষীই বহন করে।
🔸 🔸
↯↻↯↻↯

Related Post

কুরআনের পরিচয়

Posted by - এপ্রিল ১৪, ২০২২
💖 কুরআনের পরিচয় পত্র 💖 🔹নামঃ কুরআন, কুরআন একটি হিব্রু শব্দ,কু প্রধান নাম ফুরকান। 🔹কুরআনের উপাধীঃ মজিদ 🔹কুরআনের ভাষা: আরবী…

সূরা আবাসা-র অনুবাদ

Posted by - সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
(আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রাহমান [=পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে], যিনি রাহিম [=অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যে]।…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »