ধীশক্তির পরিচয়

877 0

[হযরত আবুল কাসেম জুনাইদ বিন মুহাম্মাদ বিন জুনাইদ, উপাধি : সাইয়্যেদুত্ তায়িফাহ, ইরফান ও আধ্যাত্মিক সাধনার জগতে একজন উজ্জল নক্ষত্র। তিনি শ্রেষ্ঠ বহুল পরিচিত সাধকদের অন্যতম। তিনি আসলে ইরানের নেহাভান্দের অধিবাসী কিন্তু বাগদাদে বসবাস করতেন। তিনি হযরত সারি সাক্কত্বির ভাগ্নে ছিলেন। তিনি ত্রিশ বার পদভ্রজে হজ্বব্রত পালন করেছেন। তার তরিকা ও আধ্যাত্মিক সাধনার মূল ভিত্তি ছিলো ‘সাহু’ বা সতর্কতা ও সজীবতা। এর বিপরীতে হযরত বায়েজিদ বোস্তামির অনুসারীরা ‘সুক্র’ বা অসর্তকতা ও নির্জিবতাকে তাদের তরিকার মূল ভিত্তি হিসেবে নির্দ্ধারন করেছেন।
সাইয়্যেদুত তায়িফাহ্ তার তরিকায় শরিয়াতের পাবন্দির ব্যাপারে বিশেষভাবে জোড় দিয়েছেন। অধিকাংশ তরিকার সিলসিলা তার নিকট পর্যন্ত গিয়ে পৌছায়। তিনি হিজরী ৩৯৭ সানে এ ধরণি থেকে চির বিদায় গ্রহণ করে তার মা’বুদের সান্নিধ্যে চলে যান।]
বর্ণিত আছে যে, হযরত শেখ জুনাইদের (রহঃ) একজন প্রিয় মুরীদ ছিল, যাকে তিনি সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন এবং সকলের চাইতে বেশী সম্মান করতেন। এ ব্যাপারটা অনেকের জন্যে হিংসার কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল।
শেখ ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই একদিন তিনি ঐ মুরীদ সম্পর্কে তার অন্যান্য মুরীদদের বললেন : “তার আদব ও ভদ্রতা এবং বোধশক্তি সকলের চেয়ে বেশী। আমরা সে দিকই দৃষ্টি দিয়ে থাকি। আচ্ছা পরীক্ষা করা যাক্, তোমাদের কাছে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয় কি না।”
শেখ হুকুম দিলেন বিশটি মুরগী আনতে। অতঃপর বললেনঃ “যাও, তোমরা প্রত্যেকে একটি করে মুরগী নাও। এমন নির্জন স্থানে গিয়ে মুরগীগুলোকে জবেহ করে নিয়ে আস যেখানে কেউ যেন দেখতে না পায়।” বিশজন মুরীদ বিশটি মুরগী নিয়ে চলে গেল।
সকলে মুরগী জবেহ করে শেইখের কাছে হাজির করলো। কিন্তু তার ঐ বিশেষ স্নেহভাজন মুরীদ জবেহ না করে জিবন্ত মুরগীটিই ফিরিয়ে নিয়ে আসলো।
শেখ জিজ্ঞেস করলেন : “কেন মুরগী জবেহ করনি?” মুরীদ বলো : “আমাদের শেখ বলেছিলেন যেখানে কেউ দেখতে না পায় এমন স্থানে মুরগীকে জবেহ করতে। তবে আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানেই আল্লাহকে দেখতে পেয়েছি। এমন কোন স্থান খুজে পাইনি যেখানে আল্লাহর উপস্থিতি নেই।”
এবার শেখ তার মুরীদদের সম্মোধন করে বললেন : “তোমরা দেখেছো এর ধীশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার পরিমান আর অন্যদের বোধ শক্তিও তো দেখলে।” তখন সকলে তাওবা করে ঐ মুরীদের সম্মান-মর্যাদাকে বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধাজ্ঞান করতে লাগলো। (ডঃ মুহাম্মাদ ইসতি’লামী; গুযিদেয়ে তায্কিরাতুল আওলিয়া, পৃঃ নং ৪৫; গুযিদেয়ে তায্কিরাতুল আওলিয়া, পৃঃ নং ২৯৮-২৯৯)।

Related Post

আল্লাহর আতিথেয়তা

Posted by - December 25, 2019 0
কথিত আছে যে একবার এক কাফের ব্যক্তি হযরত ইব্রাহিম (আঃ)- এর নিকট একটু খাবারের আবেদন করলো। ইব্রাহিম (আঃ) বললেন :…

লজ্জা

Posted by - December 20, 2019 0
হাবসা (ইথিওপিয়া) অধিবাসী এক ব্যক্তি রাসূলে খোদা (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললো : “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পাপ অনেক। আমার জন্যেও…

শূন্য দরগাহ্

Posted by - December 22, 2019 0
[বায়োজিদ বোস্তামী অবশ্যই হাতে গুনা কয়েকজন আল্লাহর মহান অলী ও অত্যন্ত প্রভাবশালী ইসলামী মহা আরেফ ও সাধকদের মধ্যে গণ্য। হকওয়ালার…

বাদশাহীর মূল্য

Posted by - December 29, 2019 0
[হযরত শাক্বিক বালখী (রহঃ) হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দি ও আব্বাসীয় শাষক হারুন-আর-রাশীদের সমসাময়িক কালের একজন স্বনামধন্য সুফী ও আরেফ ছিলেন। তার…

কোথাও খুজে পাবেনা আমাকে

Posted by - December 27, 2019 0
অবশেষে গ্রীসের প্রাচীন দার্শনিক সক্রেটিসের জন্যে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা করা হলো। তিনি মৃত্যুর পথযাত্রী। দিনক্ষন গুণছেন কখন তার মৃত্যুদন্ড কার্যকরী…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *