জাহান্নামী কে?

807

হযরত জা’ফর ইবনে ইউনুস) রহ (:শিবলী নামে ছিলেন সুপরিচিত। তিনি ২৪৭ হিজরীতে জন্মগ্রহন আর ৩৫৫ হিজরীতে চিরস্থায়ী আবাস পানে গমন করেন। হিজরী তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দিতে এ বিখ্যাত অধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন বহুল আলোচিত। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের মহাসাধক হযরত জুনাইদে বাগদাদী (রহ:)-এর শিষ্য। তাঁর পরবর্তী সময়ে নামকরা বহু সাধকের গুরু ও ওস্তাদও ছিলেন তিনি।হযরত শিবলী (রহ:) যে শহরে বাস করতেন সেখানে তাঁর বহু সমর্থক এবং অনেক বিরোধী লোকও ছিলো। অনেকে তাকে প্রচন্ডভাবে ভালবাসতেন আবার অনেকে তাকে শহর থেকে নিষ্ঠুরতার সাথে বহিস্কারেরও চেষ্টা করতেন। সে শহরে তাঁর অসংখ্য ভক্তদের মধ্যে এমন একজন রুটি তৈরীকারকও ছিলো যে হযরতকে কখনো চোখে দেখেনি তবে তার নাম শুনেছে মাত্র।

একদিন সাধক সেই রুটি প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে আর কোন উপায়ন্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত এক রকম বাধ্য হয়েই সেই রুটি বিক্রেতার কাছে এক টুকরো রুটির আবেদন করলেন হযরত শিবলী (রহঃ)। তিনি একটি রুটি ঋণ চাইলেন সেই রুটি বিক্রেতার কাছে। রুটি বিক্রেতা এ ধরনের আবেদন শুনে রেগে আগুন হয়ে গেল। সে এ অচেনা ব্যক্তিকে যা-তা বলে অপমান করে বিদায় দিলো। ক্ষুধার্ত সাধক সেখান থেকে চলে গেলেন।
এ রুটির দোকানে অন্য একজন লোক বসে তামাশা দেখছিল। সে হযরত শিবলীকে চিনতো। লোকটি রুটি বিক্রেতার সামনে এসে বলো : “যদি তুমি হযরত শিবলীর সাক্ষাৎ পেতে তাহলে কি করতে?” রুটি বিক্রেতা : “আমি তাকে অনেক সম্মান করতাম, তিনি যা চাইতেন তাই দু’হাতে তার পায়ে ঢেলে দিতাম।”
লোকটি তাকে বললো : “যে লোকটিকে তুমি কিছুক্ষণ পূর্বে তোমার কাছ থেকে তাড়িয়ে দিলে এবং তাকে এক টুকরো রুটি থেকে বঞ্চিত করলে, তিনি ছিলেন সে-ই শিবলী।” যেই না রুটি বিক্রেতা একথা শুনলো অমনি হায় আফসোস! হায় আফসোস! করতে লাগলো। রুটি বিক্রেতা লজ্জায় সঙ্কুচিত হয়ে গেল। মনে হলো কে যেন তার অন্তরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। পেরেশান ও বিচলিতভাবে সে ছুটে গেলো হযরত শিবলীর সন্ধানে। অবশেষে অনেক খোজাখোজির পর তাকে এক মরুভূমিতে পাওয়া গেল। রুটি প্রস্তুতকারক আর কোন বাক্য উচ্চারণ না করে হযরতের পা জড়িয়ে ধরলো। রুটি বিক্রেতা বিনীত স্বরে বলতে লাগলো, ‘হুজুর দয়া করে আপনি ফিরে আসুন। আমি আপনার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবো। হুজুর দয়া করে আপনি ফিরে আসুন। আমি আপনার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবো।’ হুজুর নিশ্চুপ! কিন্তু রুটি বিক্রেতা তাঁকে আবারো অনুরোধ করতে লাগলো, ‘হযরত! আপনি অধমের প্রতি কৃপা করুন। একরাত আপনি আমার গরীবখানায় থাকুন। আর আমি এই গৌরবময় তৌফিকের কারণে আল্লাহর শোকরগুজারস্বরূপ অনেক মানুষকে খাবারে নিমন্ত্রণ করবো। অনুগ্রহ করে আপনি আমার এই আকুতি প্রত্যাখ্যান করবেন না।’ এরকম আকুতি মিনতি দেখে এবং তাঁর কারণে অনেক মানুষ খেতে পারবে ভেবে অবশেষে হুজুর রুটিওয়ালার দাওয়াত গ্রহণ করলেন।
দিন শেষে রাত্রি ঘনিয়ে আসলো। রুটিওয়ালার গৃহে খাবারের বিশাল আয়োজন। শতশত মানুষ তার দস্তরখানার চার পাশে জমায়েত। রুটি বিক্রেতা একশত দিনার এই মেহমানদারিতে খরচ করলো। সে তার ঘরে হযরত শিবলীর অবস্থানের সংবাদ উপস্থিত জনতাকে অবহিত করতে ভুললো না।
হযরত শিবলী নৈশভোজে শরিক হলেন। সকলে আহারে ব্যস্ত। হযরত শিবলী ছাড়াও অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক সাধক। তিনি হযরতকে প্রশ্ন করেন : “ইয়া শেখ! আপনি বলে দিতে পারবেন দোযখবাসী ও বেহেস্তবাসীর আলামত কী?”
জবাবে হযরত শিবলী (রহঃ) বলেন : “জাহান্নামী ঐ ব্যক্তি, যে একখণ্ড রুটি আল্লাহর রাহে দান করে না অথচ শিবলীর মত আল্লাহর এক অপারগ ও অসহায় বান্দার জন্যে একশত দিনার খরচ করতেও দ্বিধাবোধ করে না, আর জান্নাতীরা কিন্তু এরকম নয়।”(ফারিদুদ্দীন আত্তার নিশাপুরী; ইলাহী নামা (মাসনাভী ), সংশোধনে : ফুয়াদ রুহানী,পৃঃ নং ৭১-৭২)।

Related Post

উপকারী কাজ

Posted by - ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
পীর সাহেব তাঁর মুরীদদের জিজ্ঞেস করেন : “তোমরা কি এমন কোন কাজ আঞ্জাম দিয়েছো যা থেকে অন্যেরাও উপকৃত হয়েছে? ”…

ভিতরে আসতে বাধা

Posted by - ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
এক কাফের ব্যক্তির একজন মুসলমান দাস ছিল। দাস তার নিজ ধর্মে ছিল অত্যন্ত দৃঢ় ও প্রত্যয়শীল। কাফের লোকটি তাকে ধর্মের…

কোথাও খুজে পাবেনা আমাকে

Posted by - ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
অবশেষে গ্রীসের প্রাচীন দার্শনিক সক্রেটিসের জন্যে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা করা হলো। তিনি মৃত্যুর পথযাত্রী। দিনক্ষন গুণছেন কখন তার মৃত্যুদন্ড কার্যকরী…

লজ্জা

Posted by - ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
হাবসা (ইথিওপিয়া) অধিবাসী এক ব্যক্তি রাসূলে খোদা (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললো : “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পাপ অনেক। আমার জন্যেও…

ধীশক্তির পরিচয়

Posted by - ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
[হযরত আবুল কাসেম জুনাইদ বিন মুহাম্মাদ বিন জুনাইদ, উপাধি : সাইয়্যেদুত্ তায়িফাহ, ইরফান ও আধ্যাত্মিক সাধনার জগতে একজন উজ্জল নক্ষত্র।…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »