অবশেষে গ্রীসের প্রাচীন দার্শনিক সক্রেটিসের জন্যে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা করা হলো। তিনি মৃত্যুর পথযাত্রী। দিনক্ষন গুণছেন কখন তার মৃত্যুদন্ড কার্যকরী হবে। এ সময়গুলোতে ভক্তবৃন্দরা তার চতুষ্পার্শ্বে জমায়েত হয়েছেন।
অনেকে তাকে বলছেনঃ “হে মহান দার্শনিক! আপনি আপনার বিশ্বাস থেকে ফিরে আসুন। এতে করে আদালত আপনার মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকর করতে পারবে না।” আবার অনেকে বলেন : “হে মহান! আপনি ফাঁসি থেকে মুক্তির জন্যে আপনার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কিছু বক্তব্য দিন। যখন আপনার ফাঁসির রায় বাতিল করা হবে তখন আবার আপনি আপনার পূর্ব বিশ্বাসে ফিরে যাবেন।” কিন্তু দার্শনিক অনড়, অবিচল। তিনি কোন কিছুতেই তার বিশ্বাস থেকে চুল পরিমানও পিছু হটতে রাজি নন।
তিনি বলেন : ‘‘আমি যে সত্য বুঝেছি তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমি মৃত্যুকে বরণ করতে পারি কিন্তু আমার বিশ্বাস থেকে পিছিয়ে আসতে পারি না। আমি আমার নিজের মুক্তির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারি না।”
যখন তার ভক্ত মুরীদরা দেখলেন কোন কিছুতেই তাকে মৃত্যুদন্ড থেকে বাঁচানো গেল না তখন তারা কাঁদতে লাগলেন। তাদের মধ্যে একজন অশ্রুভেজা চোখ নিয়ে এ শিক্ষককে বললেন : “এখন যেহেতু আপনাকে ফাঁসি থেকে রেহাই দেয়া গেল না সেহেতু আপনি আমাদের বলে দিন আপনার মৃত্যুর পর আমরা আপনাকে কোথায় এবং কিভাবে সমাহিত করবো?”
ভক্তদের প্রশ্নের উত্তরে দার্শনিক সক্রেটিস বলেন : “আমার মৃত্যুর পর যদি তোমরা আমার নাগাল পাও তাহলে যা মন চায় তাই করো।” শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারলেন ওস্তাদ জীবনের অন্তিম মুহুর্তেও তাদেরকে মা’রেফাত শিক্ষা দিচ্ছেন। তারা উপলব্ধি করলেন যে, মানুষের মৃত্যুর পর যা অবশিষ্ঠ থেকে যায় তা সে নিজে নয় বরং কিছু হাড্ডি-মাংশ বিশিষ্ট একটি মরদেহ -যা দ্রুত দাফন না করলে দূগর্ন্ধ ছড়াতে থাকবে। এ মর দেহ এ জগতেই ছেড়ে যেতে হয়।
সক্রেটিস তাদেরকে এ শিক্ষাই দিলেন যে, মানুষ মৃত্যুর পর এমন স্থানে গমন করে যেখানে জীবিত মানুষেরা পৌঁছুতে পারে না। মানুষের কাছ থেকে যা অবশিষ্ট রয়ে যায় তা তো শুধুমাত্র প্রাণহীন একটি মরদেহ। আর এটা সেই মানুষের (মৃত ব্যক্তির) সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না।
এ কারণে তিনি তার শিক্ষার্থীদের বলেনঃ “যদি তোমরা আমাকে নাগালে পাও তাহলে যা খুশি করো। অর্থাৎ আমার নাগাল পাবে না।” (কিকাভুস ইবনে ইসকান্দার; ক্বাবুস নামা, বাব নং ২৮, পৃঃ নং ১৪২। ক্বাফত্বি; তারিখুল হুকামাহ্, পৃঃ নং ২৮৪)।