ওয়াসিলা ধরার নির্দেশ

707 0

✍️আল্লাহ্ আল্ ক্বোরআনে এরশাদ করছেনঃ

يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اِتَّقُوْا اللهَ وَ اْبْتَغُوْا اِلَيْهِ اْلْوَسِيْلَةَ وَ جَاهِدُوْا فِيْ سَبيْلِ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ 

 ➡️ “হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের জন্যে ওয়াসিলা অবলম্বন কর। আর আল্লাহর পথে সংগ্রাম কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।”
📚সরা আল্ মায়েদা, আঃ নং ৩৫।
 
✍️ উক্ত আয়াতে আল্লাহ্ মু’মিনদেরকে ওয়াসিলা ধরার জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ আয়াত থেকে এটাও বুঝা যায় যে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্যে মু’মিনরা যেন কোন মাধ্যমের (ওয়াসিলা) শরনাপন্ন হয়। হযরত আল্লামা জাওহারী (রহ:) তাঁর লিখিত কিতাব “সিহাহ্ আল্ লুগ্বাহ্”-তে ওয়াসিলাকে নিম্নোক্তভাবে অর্থ করেছেন :
 

⬅️[ اَلْوَسِيْلَةُ مَا يَقْرَبُ بِهِ اِلَى اْلْخَيْرِ ]

 
➡️ “ওয়াসিলার অর্থ হচ্ছে যার মাধ্যমে অন্যের নিকটবর্তী হওয়া যায়।”
✍️ তাই, এই ওয়াসিলা কখনো আমাদের নেক আমল হতে পারে আবার কখনো আল্লাহর নেককার অলীরাও হতে পারেন। কেননা ইসলামের প্রাথমিক যুগে আল্লাহর রাসূলের (সা.) সাহাবীরা বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ওয়াসিলার শরনাপন্ন হতেন। আর তাদের সিরাতে বিদ্যমান তাওয়াস্-সুলের বহু ঘটনা হাদীস ও ইতিহাসের গ্রন্থাবলীতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (সুন্নী হাম্বালী মাঝহাবের ইমাম) বিভিন্ন সুত্রের বরাত দিয়ে হযরত ওসমান ইবনে হুনাইফের নিকট থেকে বর্ণনা করছেন যে তিনি বলেছেনঃ
“একদা এক অন্ধ বৃদ্ধলোক নবিজীর(সা.) কাছে এসে আরজ করলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সা.) ! আপনি আমার জন্যে দোয়া করুন যেন আমার শেষ পরিনতি মঙ্গল হয়। … মহানবী (সা.) বৃদ্ধকে বললেনঃ
হে বৃদ্ধ! সহি শুদ্ধ করে ওযু করে দু’রাকাত সালাত আদায় করে নিম্নরূপে দোয়া পাঠ কর।
[হে আমার রব! আমি তোমার কাছে তোমার নবী হযরত মুহাম্মাদের(সা.) ওয়াসিলায় প্রার্থনা ও রুজু করছি। হে মুহাম্মাদ(সা.) আমি তোমার মাধ্যমে আমার রবের দিকে মুখ ফিরিয়েছি যেন তুমি আমার হাজত পূরণ করো। হে আল্লাহ্! তাঁকে তুমি আমার শাফায়াতকারী হিসেবে গণ্য করো।] ”
📚 মুসনাদ, আহমাদ বিন হাম্বাল, খণ্ড ৪, পৃঃ ১৩৮, ওসমান ইবনে হুনাইফের রেওয়্যাতের অনুধ্যায়।
 
🌹উক্ত হাদীস আমাদেরকে এই শিক্ষা দিচ্ছে যে, আমরা আল্লাহর কাছে তাঁর প্রিয় বান্দাদের ওয়াসিলা ধরে প্রার্থনা করলে তা আল্লাহর হাবীব মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রদর্শিত পন্থায় আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে। এ হাদীসটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিভিন্ন গন্থে সহিহ্ হাদীস হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। হযরত হাকিম নিশাবুরী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “আল্ মুস্তাদরাক”, ইমাম ইবনে মাজা তাঁর স্বীয় কিতাব “আস্ সুনান” এবং ইমাম তিরমিযি “আবওয়াব আল আদয়িয়া” কিতাবে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন যে “এটা একটি সহি হাদীস”।
ইমাম আবু আবদিল্লাহ্ আল্ বুখারী তাঁর বিখ্যাত হাদীসের গ্রন্থ “সহি আল্ বুখারী”- তে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমরের নিম্নোক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করেছেনঃ
“যখনি (মদিনাতে) দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টি দেখা দিতো ওমর বিন খাত্তাব আব্বাস বিন আব্দুল মোত্তালিবের ওয়াসিলা ধরে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন “ হে আল্লাহ্! রাসূলের (সা.) আমলে আমরা তাঁর কাছে শরনাপন্ন হতাম এবং তখন তুমি তোমার রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করতে। এখন তোমার নবীর(সা.) চাচার মাধ্যম ধরে তোমার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিয়ে তুমি আমাদের তৃষ্ণা মিটাও।”
📚 সহি আল বুখারী; আবু আবদুল্লাহ্ আল্ বুখারী, খণ্ড ২, পৃঃ নং ২৭, কিতাব আল্ জুময়া’, বাব আল্ ইসতিসক্বা।
 
✍️ আমরা উপরোক্ত দু’টি বর্ণনা থেকে এটাই উপলব্ধি করতে পারি যে তাওয়াস্-সুলের বিষয়টি রাসূলের(সা.) সুন্নাহর অন্তর্ভূক্ত এবং সাহাবীদের আচরণও সে দিকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে।
✍️ অতএব মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার সময় তাঁর প্রিয় বান্দা ও অলীদেরকে মাধ্যম বা ওয়াসিলা হিসেবে গ্রহণ করা এমন একটি গ্রহণযোগ্য বিষয় যা আল্লাহর রাসূলের (সা.) আমল থেকেই সমগ্র মসলিম উম্মাহর মধ্যে চালু আছে।
 
✍️ নিশ্চিতভাবে দোয়া কবুল হওয়ার জন্যে যে সকল মহান ব্যক্তিদেরকে আমরা আল্লাহর সমনে পেশ করতে পারি তারা হলেন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মাদ(সা.) এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যবৃন্দ।
↯↻↯↻↯

🌹দৃষ্টন্তস্বরূপ,

হযরত আদম(আ.) নিজের অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্যে আল্লাহর কাছে বহু বছর কেঁদেছিলেন। তবুও তার ভুল ক্ষমা হয়নি। অতঃপর তিনি এক অদৃশ্য শব্দে মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালেন। সেখানে তিনি কয়েকটি নাম দেখতে পান। তিনি তাদের নাম ধরে আল্লাহর কাছে ওয়াসিলা হিসেবে পেশ করেন। ফলে তখন বহু বছরের ক্রন্দন ও প্রার্থনা সফল হয়। মহান আল্লাহ্ এ ঘটনাটি আল্ ক্বোরআনে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেনঃ

⬅️فتَلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ اْلْتَّوَّاْبُ اْلْرَّحِيْمُ 

➡️ “অতঃপর আদম তার রবের কাছ থেকে কিছু শব্দের সন্ধান পেলো এবং (যার মাধ্যমে) তাওবা করলো। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবুলকারী এবং অতিশয় দয়ালু।”
📚সরা আল্ বাক্বারা, আঃ নং ৩৭।
 
✍️আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রসিদ্ধ তাফসিরকারক আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি তাঁর তাফসির গ্রন্থ “আদ্ দুররুল মানসুর”-এ উক্ত আয়াতের তাফসিরে বলেছেন যে, বাবা আদম যে সকল পবিত্র নাম উচ্চারন করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, যার ফলে তাঁর তাওবা কবুল হয়, তারা হলেন হযরত মুহাম্মাদ(সা.) এবং ফাতিমা, আলী, হাসান ও হুসাইন আলাইহিমুস সালাম। আর অন্যান্য হাদীসে রাসূল(সা.) ও হযরত ফাতিমা সহ তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের বার জন ইমামের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়।
↯↻↯↻↯

Related Post

বিসমিল্লাহ সম্পর্কে জানুন

Posted by - December 30, 2019 0
বিসমিল্লাহ সম্পর্কে জানুন! ☑বিসমিল্লাহ আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও নির্ভরতার মূর্ত প্রতীক। ☑বিসমিল্লাহ শয়তানকে বিতাড়িত করার প্রতীক। ☑বিসমিল্লাহ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা…

দরুদ ও সালাম প্রসঙ্গে আল্লাহর কালাম

Posted by - September 7, 2019 0
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ আরবি উচ্চারণঃ লাক্বাদ জা-আকুম…

•✦✨ আল্লাহর কালাম ✨✦•

Posted by - January 21, 2020 0
❖✨بسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ ✨❖ 〖 *وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »