ওযুর ফরজ চারটিঃ
১। মুখমন্ডল ধৌত করা
২। হাত ধোয়া
৩। মাথা মাসেহ করা
৪। পা মাসেহ করা
মাসআলাঃ
শরীরের কোথায়ও কেটে গেলে এবং কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়লে ওযু, গোসল ও রোজা কোনটাই নষ্ট হয় না। শুধুমাত্র নামাজের জন্যে শরীর থেকে রক্ত ধুয়ে মুছে নিতে হয়। আর তা না হলে নামাজ আদায় হয় না।
মাসআলাঃ
দশটি বিষয় অযু ভঙ্গের কারণঃ ১। পেশাব ২। পায়খানা ৩। পায়খানার রাস্তা দিয়ে নির্গত হওয়া বায়ু। ৪। এমন নিদ্রা যাতে কেউ চোখে দেখে না এবং কানেও শোনে না। ৫। যে সব জিনিস মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি বিলুপ্ত করে দেয় ৬। হায়েজ বা ঋতু (মেয়েদের জন্যে) ৭। নেফাস বা প্রসূতির রক্ত (মেয়েদের জন্যে) ৮। ইসতিহাযা বা রক্তক্ষরণ(মেয়েদের জন্যে) ৯। স্বামী স্ত্রীর মিলন ১০। মৃতদেহ গোসলের পূর্বে স্পর্শ করা।
মাসআলাঃ
কোন প্রকার বমি, তা যদি ক্রিমিও হয় এবং মুখ দিয়ে যদি হাজারো ক্রিমি বের হয় তারপরো তা ওযু ভঙ্গের কারণ হবে না। তবে পায়খানার রাস্তা দিয়ে যদি একটা ক্রিমিও বের হয়, তাহলে তা অবশ্যই ওযু ভঙ্গের কারণ হবে।
মাসআলাঃ
যৌনাঙ্গ দিয়ে নির্গত যে কোন তরলই বীর্য নয়। যৌন উত্তেজনার কারণে যৌনাঙ্গ দিয়ে নির্গত তরল পানিই বীর্য ও তা নাপাক এবং তা নির্গত হলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এর কারণে পবিত্র হওয়ার জন্যে অবশ্যই গোসল করে নিতে হবে। আর এ অবস্থায় পবিত্র হওয়ার জন্যে ওযু যথেষ্ট নয়।
মাসআলাঃ
স্বামী স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে বীর্যপাত না হলেও তাদের ওযু ভেঙ্গে যায় এবং পবিত্রতা অর্জনের জন্যে গোসল ফরজ হয়ে যায়।📚
মাসআলাঃ
পাক পবিত্র তথা ওযু বা গোসল করে মৃত দেহকে গোসল দিতে হয়। অর্থাৎ মুর্দা ব্যক্তিকে গোসল দানরত অবস্থায় দেহ স্পর্শ করার পরও গোসল দাতার ওযু তথা পবিত্রতা অটুট থাকে। মুর্দাকে গোসল দেয়ার পর গোসল দাতার নিজের জন্যে গোসল ফরজ হয়ে যায়।
মাসআলাঃ
হায়েজ ও নেফাস-এ সময়কাল অতিক্রান্তকারীনি রমনীদের জন্যে অযু একটি ভাল ও সাওয়াবের বিষয় বলে গণ্য। কিন্তু ইস্তেহাযা-তে সময়কাল অতিক্রান্তকারীনি রমনীরা তাদের নামাজের জন্যে অবশ্যই অযু করে নিবেন।📢💐
মাসআলাঃ
হাতের নখে নেল পলিশ রেখে ওযু করলে যেহেতু ওযুর পানি নখে স্পর্শ করতে পারলো না, সেহেতু তার ওযু হবে না। কিন্তু নখে নেল পলিশ ছাড়া ওযু করার পর নেল পাশিল দিয়ে নামাজ আদায় করলে নামাজের কোন সমস্যা হবে না। তবে নামাজের মধ্যে নিজের সৌন্দর্য অবশ্যই না-মাহরামের কাছ থেকে ঢেকে রাখতে হবে। তা না হলে সে গুনাহগার হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ
ওযুর আগে ওযু করার উদ্দেশ্য পরিস্কার থাকতে হবে যে, আমি কি জন্যে ওযু করছি। অর্থাৎ নিয়ত করে ওযু করতে হবে। তবে ওযুর নিয়তের মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পবিত্রতা অর্জন বিষয়দ্বয় অবশ্যই থাকতে হবে।
মাসআলাঃ
মুখমন্ডল ধোয়ার জন্যে নিয়ম হলো মুখের উপর থেকে পানি ঢেলে নীচের দিকে হাত টেনে নেয়া। কপালের উপরে মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনির নীচ পর্যন্ত এবং দুই কানের মধ্যবর্তি স্থান ধোয়া ফরজ।
মাসআলাঃ
মুখমন্ডলে বড় ও ঘন দাঁড়ির গোড়াতে ওযুর পানি পৌছানো ফরজ নয়।
মাসআলাঃ
হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত ধুতে হবে। আর তা কনুই থেকে আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত ধোয়া ফরজ। এই সীমানার মধ্যে এক বিন্দু পরিমান জায়গাও যদি শুকনা থাকে তাহলে ওযু হবে না।
মাসআলাঃ
ডান হাতে অবশিষ্ট ওযুর পানি দিয়ে মাথার সামনের অংশের উপর পেছন থেকে সামনের দিকে টেনে নেয়াকে মাথা মাসেহ করা বলা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ডান হাতের তিন আঙ্গুল দিয়ে মাসেহ করতে হবে, হাতের তালু দিয়ে নয়।
মাসআলাঃ
পা মাসেহ করার ক্ষেত্রে পায়ের আঙ্গুলের মাথা থেকে কদমের পিঠের উচু জায়গা পর্যন্ত নিচ থেকে উপরের দিকে মাসেহ করা ফরজ। আর এ ক্ষেত্রে হাতের তিন আঙ্গুল দিয়ে এবং ডান হাত দিয়ে ডান পা আর বাম হাত দিয়ে বাম পা মাসেহ করা ফরজ।
মাসআলাঃ
মাথা ও পা মাসেহ করার পূর্বে মাসেহর স্থান অবশ্যই যেন শুকনা থাকে। আর যদি মাসেহর স্থান ভিজা অথবা তৈলাক্ত থাকে অথবা এমন কিছু থাকে যাতে করে পানি সেই স্থানগুলোতে স্পর্শ করতে পারে না, তাহলে তখন মাসেহ করা সম্ভর হয়ে উঠে না। এহেন অবস্থায় মাসেহ করলে সেটা মাসেহ বলে গণ্য হবে না।
মাসআলাঃ
ওযু ও তায়াম্মুমের মধ্যে যে অঙ্গ দিয়ে ধোয়া হয় শুধুমাত্র সেই অঙ্গই নড়বে। যে অঙ্গকে ধোয়া বা মাসেহ করা হবে সে অঙ্গ নড়াচড়া করলে ওযু বাতিল বলে গণ্য হবে।
মাসআলাঃ
ওযু শুদ্ধ হবাব জন্যে ওযুর পানি পবিত্র, বিশুদ্ধ ও নিজ অধিকারভুক্ত হতে হবে। অযুর জন্যে ব্যবহৃত অঙ্গসমূহ নাপাকিমুক্ত থাকতে হবে। অযুর জন্যে ব্যবহৃত পাত্র ও স্থান নিজ অধিকারভুক্ত হতে হবে। অন্যায়ভাবে জবর দখল করে যে পানি, পাত্র ও স্থান ওযুর জন্যে ব্যবহৃত হবে তাতে ওযু হবে না।
মাসআলাঃ
ওযুর পানি নিজেকেই ঢেলে সম্পন্ন করতে হবে। অন্য কেউ ঢেলে দিলে ওযু বাতিল হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ
সোনা ও রূপার পাত্রওযুর পানির জন্যে ব্যবহার করা যাবে না।
মাসআলাঃ
প্রতিটি অঙ্গ ধোয়ার জন্যে এত বেশী সময় নেয়া যাবে না যাতে করে পরের অঙ্গ ধোয়ার সময় তার পূর্বের অঙ্গ শুকিয়ে যায়।
মাসআলাঃ
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওযুর ক্রমান্বয়িক ধারা রক্ষা করতে হবে। যেমন: প্রথমে মুখমন্ডল ধোয়া, তারপর ডান হাত এবং পরে বাম হাত ধোয়া, অত:পর মাথা মাসেহ এবং সর্বশেষে ডান পা মাসেহ ও পরে বাম পা মাসেহ করা হলো ওযুর ক্রমানুবিক ধারা।
মাসআলাঃ
যদি কোন রোগীর জন্যে পেশাব ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় অর্থাৎ নামাজের মধ্যেও পেশাব চলে আসার সম্ভাবনা থেকে যায়, এমন রোগীর জন্যে প্রতিটি নামাজের পূর্বে একবার করে ওযু করে নেয়া ফরজ। এতে তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে নামাজের সময় তার জন্যে পেম্পার পড়ে রাখা অবশ্য কর্তব্য।
মাসআলাঃ
ওযুর স্থানগুলোতে অর্থাত মুখমন্ডল, হাত, পায়ের উপরিপৃষ্ঠ ও মাথার সামনের অংশে যদি কোন তৈলাক্ত পদার্থ থাকে, যা থাকলে সেই অঙ্গগুলো পানি ধারন করতে পারে না, তাহলে সেই অবস্থায় ওযু করলে ওযু হবে না।