ওমরাহ্ তামাত্তু ও হাজ্বে তামাত্তুর আমল

781 3
যে সকল হাজী মক্কা শহর থেকে ৯৬.৯৬ কি.মি. অথবা এর বেশী দূরত্বে থেকে হজ্বের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন তাদের জন্য হজ্বের আমলের পূর্বে ‘ওমরাহ তামাত্তু’ সম্পাদন করা অবশ্য কর্তব্য বা ফরজ। যারা জেদ্দা থেকে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়েছেন তারা জেদ্দা থেকে প্রথমে ‘জোহ্ফা’ যাবেন এবং ‘মাসজিদে জোহফা’-তে ইহরাম বেধে পুনরায় মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। আর যারা জেদ্দা থেকে প্রথমে মদিনা যাবেন তারা মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে মদিনা নগরী থেকে কয়েক কি.মি. দূরে এবং মক্কা যাওয়ার পথে ‘মসজিদে শাজারা’ বা ‘যুল হুলাইফা’-তে গিয়ে ইহরাম বাধবেন।অত:পর মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্র করবেন। ওমরাহ তামাত্তু আঞ্জাম দেওয়ার উদ্দেশ্য নিম্নের পাঁচটি আমল পর্যায়ক্রমে সম্পাদন করা ফরজ।

 

এক. ইহরাম বাধাঃ-

পুরুষের জন্য ইহরাম হচ্ছে দু’টুকরা সেলাই বিহীন কাপড় পরিধান করা। এক টুকরা লুঙ্গির মত কোমরে পড়বেন এবং অপর টুকরাটি কাধের উপর ঝুলিয়ে দিবেন। অতঃপর ওমরা তামাত্তু-র নিয়ত (আমি আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য এবং তার নির্দেশ পালনার্থে ওমরাহ তামাত্তুর-র ইহরাম বাধলাম) করে তালবিহ্ (নিম্নোক্ত দোয়া) পাঠ করতে করতে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। তালবিহ্ হচ্ছে নিন্মোক্ত দোয়াঃ

لَبَّيِكَ اَللّهُمَّ لَبَّيِكْ، لَبَّيِكَ لاَشَرِيْكَ لَكَ لَبَّيِكْ، اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكُ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيِكْ

উচ্চারণ: “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’য়মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক।”

 দুই. তাওয়াফঃ-

ওমরাহ তামাত্তু’ আঞ্জাম দেয়ার উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রবেশ করে তাওয়াফের নিয়তে আল্লাহর ঘর কাবার চতুর্দিকে (সাত বার) প্রদক্ষিন করা হচ্ছে তাওয়াফ।
*তাওয়াফ, কা’বার যে কোনে হাজরে আসওয়াদ অবস্থিত সেই কোন্ থেকে শুরু এবং এখানে এসে সপ্তম প্রদক্ষিন শেষ করতে হবে।
**তাওয়াফের সময় কা’বা হাজীর বাম দিকে থাকবে। অর্থাৎ তাওয়াফের সময় পিছনে ফিরে আসা অথবা কা’বার দিকে মুখ করে বাম কাধ ঘুরিয়ে ফেলা সঠিক নয়।
***পাক-পবিত্র অর্থাৎ ওযু অথবা ফরজ গোসল থাকলে ফরজ গোসল করে তাওয়াফ করা অবশ্য কর্তব্য।

 তিন. তাওয়াফের নামাজঃ-

সাতবার কা’বার চর্তুদিকে তাওয়াফ করার পর পরই মসজিদে হারামের অভ্যন্তরে মাক্বামে ইব্রাহিমের পিছনে তাওয়াফের নামাজের নিয়ত করে দু’রাত নামাজ পড়া।
*এই নামাজের সূরা আস্তে অথবা জোরে যে কোন ভাবে পড়া যেতে পারে।

 চার. সাঈঃ-

তাওয়াফের নামাজের পর পরই সাফা পাহাড় থেকে শুরু করে মারওয়া পাহাড় এবং মারওয়া থেকে সাফা -এভাবে সাত বার হাটাকে বলা হয় সাঈ। এ সময় পবিত্র আবস্থায় থাকা উত্তম। তবে ফরজ নয়। দ্বিতীয় তলায় সাঈ করা ঠিক নয়। কারণ ওটা পাহাড়ের উপরে হয়ে যায়। সাধারণত এক পাহাড় থেকে আর এক পাহাড় পর্যন্ত সায়ী করতে সময় লাগে সাত মিনিটের মত। মোট সাত বার সায়ী করতে প্রায় পঞ্চাশ মিঃ সময় লাগে। ভিড়ের জন্য এর চেয়ে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। হযরত হাজেরা পানির সন্ধানে সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড় এবং মারওয়া থেকে সাফা সাত বার অতিক্রম করেছিলেন। দুই পাহাড়ের মাঝামাঝি পুত্রকে দেখা যেত না বলে জায়গাটিতে তিনি একটু দৌড়াতেন। তাই হাজ্বীদের জন্যে সেই জায়গাটুকু দৌড়ানো মুস্তাহাব। আর যে জায়গাটুকু দৌড়াতে হয় তার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সবুজ লাইট দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।

 পাচ. তাক্বসীঃ

সাঈ-র পর নখ অথবা মাথা বা মুখের কিছু চুল কাটার নাম তাক্বসীর। তাক্বসীর করা ওমরাহ তামাত্তুর শেষ আমল।
*সাঈ-র পরপরই তাক্বসীর করা ফরজ নয়। তবে যতক্ষন না পর্যন্ত তাক্বসীর করছেন ততক্ষন ইহরাম খুলতে পারবেন না এবং নিম্নে উল্লেখিত ২১টি কাজ হালাল হবে না।
**তাক্বসীরের জন্য নিদিৃষ্ট কোন স্থান নেই। তবে আজকাল মারওয়া পাহাড়ের কাছেই তাক্বসীর করা হয়ে থাকে।
***যে নিজে তাক্বসীর করেনি সে অন্যকে তাক্বসীর করাতে পারবে না।

 ইহরাম বাধা অবস্থায় হারাম বা নিষিদ্ধ কাজঃ

১। মরুভূমির পশু শিকার
২। যৌন মিলন
৩। বিয়ে করা
৪। বির্যস্খলন করা
৫। সুগন্ধি ব্যবহার
৬। সুরমা ব্যবহার
৭। আয়নায় দৃষ্টি রাখা
৮। ফেস্ক্ব (মিথ্যা বলা, গালি দেয়া, গর্ব করা ইত্যাদি) করা
৯। মিথ্যা কসম করা
১০। নিজ শরীরে কোন পোকা-মাকড় মারা
১১। সৌন্দর্যের নিয়তে আংটি ব্যবহার করা
১২। শরীরে তেল ব্যবহার
১৩। শরীর থেকে চুল তোলা
১৪। শরীর থেকে রক্ত বের করা
১৫। নখ তোলা
১৬। হেরেমের সীমানায় কোন গাছ অথবা ঘাস তোলা
১৭। অস্ত্র সাথে রাখা
১৮। দিনের বেলায় চলন্ত অবস্থায় মাথা ঢাকা [শুধুমাত্র পুরুষের জন্য]
১৯। চলন্ত অবস্থায় মাথার উপরে ছায়ার ব্যবস্থা করা [শুধুমাত্র পুরুষের জন্য]
২০। অলংকার ব্যবহার [শুধুমাত্র নারীদের জন্য]
২১। নেকাব দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলা [শুধুমাত্র নারীদের জন্য]
২২। সেলাইকৃত পোষাক পরিধান করা [শুধুমাত্র পুরুষের জন্য]
২৩। পায়ের উপরিপৃষ্ঠ ঢাকা [শুধুমাত্র পুরুষের জন্য]
২৪। দাঁত তোলা

 স্বরণীয় যে ওমরাহ তামাত্তু-র পর হজ্বে তামাত্তু শেষ না করা পর্যন্ত তিনটি কাজ নিষেধঃ

১। মক্কা নগরী থেকে বের হওয়া।
২। ওমরাহ মুফরাদাহ (অর্থাৎ নিজের অথবা অন্য কারো জন্যে মক্কায় অবস্থিত মসজিদে তানয়িম থেকে ইহরাম বেধে যে ওমরাহ্ করা হয়) আঞ্জাম দেয়া।
৩। মাথার চুল কামানো।
 
মক্কায় পৌছে তাওয়াফ, তাওয়াফের দুই রাকআত নামাজ, সাঈ, সাফা ও মারওয়া দুই পাহাড়ের মাঝখানে পদচারণা করা এবং তাক্বসীর, হাতের যে কোন একটি আঙ্গুলের নখ কাটা অথবা মাথা অথবা দাড়ীর সামান্য চুল কাটা- (এই জন্য ছোট কাচি অথবা নখ কাটনি সাথে রাখা প্রয়োজন) শেষ করে ইহরাম খুলতে পারবেন এবং এখন থেকে যে
সকল কাজ মুহরেম হাজীর জন্য হারাম ছিল তা হালাল হয়ে যাবে। তবে উপরোক্ত তিনটি কাজ হারাম রয়ে যাবে।

 হজ্বে তামাত্তু’-র আমলঃ

একজন হাজীর জন্য ওমরাহ তামাত্তু’-র পর হজ্বে তামাত্তু’-র আমল অত্যন্ত ধ্যান ও মনযোগের সাথে আঞ্জাম দেওয়া বাঞ্চনীয়। হজ্বে তামাত্তু’-র পর্যায়ক্রমিক আমল নিম্নরুপঃ-
*মক্কাতে ইহরাম বাধা। মক্কার যে কোন স্থান থেকে ইহ্রাম বাধা যায় তবে মসজিদুল হারামে ইহ্রাম বাধা উত্তম।
*জিলহজের নবম দিনে দ্বি-প্রহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান।
*নবম জিলহজ্জের দিবাগত রাত্রে মাশআরুল হারামে অবস্থান।
*১০ই জিলহজ্বের তথা ঈদের দিনে তিনটি কাজ আঞ্জাম দেয়া (১) রামিয়ে-জামারাহ আল আক্বাবাহ অর্থাৎ বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা (২) পশু কুরবানী (৩) তাক্বসীর
*তাওয়াফ
*তাওয়াফের নামাজ
*সাঈ
*তাওয়াফে নিসা এবং তার নামাজ
* দশম, একাদশ জিলহজ্বের দিবাগত রাত্রে মিনাতে আবস্থান
*জিলহজ্বের এগার ও বার তারিখে দিনের বেলায় (প্রত্যেকদিন) পর্যায়ক্রমে ৩টি তথাছোট, মাঝারি ও বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ অর্থাৎ রামিয়ে জামারাহ উলা, জামারাহ উস্তা ও জামারাহ উক্ববার কাজ তিনটি সম্পন্ন করা।
 
স্মরণ রাখা দরকার যে, মক্কার পাঁচটি কাজ (তাওয়াফ, তাওয়াফের নামাজ, সাঈ,তাওয়াফে নিসা ও তাওয়াফে নিসার নামাজ) মিনাতে অবস্থানকালীন দিনদ্বয়ে (১০ ও ১১ই জিলহজ্জের দুপুর থেকে সূর্যস্ত পর্যন্ত) মক্কাতে গিয়ে আঞ্জাম দেয়া যায়। তবে সন্ধ্যার সময় মিনাতে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে। আবার সুবিধার জন্য মক্কার ৫টি আমল মিনার সকল আমল সেরে ১২ই জিলহজ্জের দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই মক্কাতে পৌছে অথবা ধীরে-সুস্থে আঞ্জাম দেয়া যেতে পারে। কেননা এই ৫টি আমল সম্পাদন করার জন্য জিলহজ্জ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত সময় থাকে। আর যদিও হজ্বে তামাত্তু’-র আমল শুরু হয় জিলহজ্বের নবম তারিখের দ্বি-প্রহর থেকে এবং তখন আরাফাতের ময়দানে উপস্থিতির মাধ্যমে কিন্তু বর্তমান কালে যেহেতু হাজীর সংখ্যা অনেক বেশী এবং প্রচন্ড ভীড় ও যানযটের সমুক্ষীন হতে হয় তা অষ্টম তারিখের দিবাগত রাত্রেই মক্কা শহর থেকে ইহরাম বেধে আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া উত্তম। তাহলে নিশ্চিত ভাবে নবম দিনের সঠিক সময়ের পূর্বেই আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া সম্ভব। আর এর পূর্বে মক্কা শহর থেকে অনত্র বের হওয়া সঠিক নয়।

হজ্বে তামাত্তু’-র প্রতিটি আমলের সংক্ষিপ্ত বর্নণা

এক. ইহরামঃ

এই ইহরামের মাধ্যমেই ঠিক ওমরাহ তামাত্তু’-র মত হজ্বে তামাত্তু’-র আমল শুরু হয়। আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগের পূর্বে মক্কার হেরেমের সীমানার অভ্যন্তরে ইহরাম বাধতে হবে তবে হেজ্রে ইসমাইলের ভিতরে ইহরাম বাধা উত্তম। যখন ইহরামের নিয়ত Ñ আমি আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য হজ্জে তামাত্তু’-র আমল আঞ্জাম দেয়ার নিমিত্তে ইহরাম বাধছিÑ হয়ে যাবে তখন থেকে পূর্বোল্লেখিত ২১টি কাজ মুহ্রিম ব্যক্তির জন্যে হারাম হয়ে যাবে।

 দুই. আরাফাতের ময়দানে আবস্থানঃ

জিলহজ্বের নবম দিনের দ্বি-প্রহর থেকে মাগরিব আবধি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজ্বের দ্বিতীয় আমল। যদিও এখানে অবস্থান ব্যতীত অন্য কোন আমল ফরজ নয়। তবুও বেহুদা কাজ ও তর্ক-বিতর্ক পরিহার করা এবং দোয়া, ইবাদত, নামাজ ও তস্বিহ-তাহলীলে মশগুল থাকা অতি উত্তম। এই দিনে ইমাম হুসাইনের পঠিত আরাফাতের ময়দানের দোয়া পাঠ করার ব্যাপারে ইমামদের (আ:) পক্ষ থেকে
তাগিদ রয়েছে।

 তিন. মাশআরুল হারাম অথবা মুযদালিফাতে আবস্থানঃ

জিলহজ্বের নবম তারিখের দিবাগত রাত্রে মাগরিব ও এশার নামাজ না পড়ে আরাফাত থেকে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে আর পথে যত ভীড়ই হোক না কেন মধ্যরাত্রির পূর্বেই সেখানে পৌছাতে হবে যেন সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ার সময় থাকে। আর যদি সময়ের মধ্যে পৌছুতে পারবেন না বলে মনে হয় তাহলে মাগরিব ও এশার নামাজ আরাফাতের ময়দানেই আদায় করে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ফরজ। তাই মাশআরুল হারামে ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া বাঞ্চনীয়। তবে সূর্যোদয়ের পূর্বে মিনার সীমানায় প্রবেশ করা যাবে না। কেনানা মুযদালিফায় সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করা ফরজ। এই রাত্রে ৭০টি কংকর পাথর সংগ্রহ করতে হবে।যদিও মক্কার হেরেমের সীমানার ভিতর থেকে সেগুলো সংগ্রহে কোন দোষ নেই।

 চার. দশই জিলহজ্বের সূর্যোদয় থেকে বার তারিখের দ্বি-প্রহর পর্যন্ত মিনাতে অবস্থানঃ

জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ ভোরে মুযদালিফা থেকে রওয়ানা হয়ে মিনাতে সকালেই পৌছুতে হবে। এই ১০ তারিখে মিনাতে পর্যয়ক্রমে তিনটি কাজ আঞ্জাম দিতে হবে।
 
১। জামারাহ আল আকাবাহ-তে ৭টি কংকর নিক্ষেপ। [এটা দিনের বেলায় নিক্ষেপ করতে হবে, রাত্রিতে বৈধ নয়।]
২। পশু কুরবানী
৩। তাক্সীর অথবা হালক্ব করা অর্থাৎ যিনি প্রথম বারের মত হজ্বে এসেছেন তার জন্য মাথা কামানো ফরজ আর যিনি পূর্বে হজ্ব করেছেন তার জন্য মাথা কামানো ফরজ নয়, মাথার সামান্য কিছু চুল কেটে ফেললেই ফরজ আদায় হয়ে যায়। তবে মাথা কামানোতে নিষেধ নেই। তাক্সীর বা হালক্বের পর ইহরাম মুক্ত হওয়া যায়। এতক্ষন পর্যন্ত যা হাজীর জন্য হারাম ছিল তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন এবং সুগন্ধি ব্যবহার ব্যতীত সবকিছু হালাল হয়ে যায়।
 
জিলহজ্বের একাদশ ও দ্বাদশতম দিনের আমল হচ্ছে, প্রতিদিন ‘জামারাহ্ উ’লা’ বা প্রথম শয়তান, ‘জামারাহ্ উস্তা’ বা মধ্যবর্তী শয়তান এবং ‘জামারাহ্আ ক্বাবাহ’ বা বড় শয়তানকে পর্যায়ক্রমে ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করা। কংকর এমনভাবে নিক্ষেপ করতে হবে যেন খুটি তিনটির গায়ে লাগে আর তা না হলে তা গননা করা হবে না। জিলহজ্বের দ্বাদশতম দিনের দ্বি-প্রহর থেকে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই মক্কার উদ্দেশ্যে মিনা ত্যাগ করতে হবে। যদি কোনক্রমে এই সময়ের মধ্যে মিনা ত্যাগে সমর্থ না হন তাহলে হাজীকে সে রাত্রে মিনাতে অবস্থান করতে হবে এবং ১৩তম দিনে পুনরায় তিন জামারাহ্কে ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। তাই হাজীদের সুবিধার্থে ১২তম দিবসের দ্বি-প্রহরের পর পরই মক্কার উদ্দেশ্যে মিনা ত্যাগ করা উত্তম। জিলহজ্বের ১২তম তারিখে মক্কায় পৌঁছে পর্যায়ক্রমে হজ্বের বাকী পাঁচটি আমল আঞ্জাম দিতে হবেঃ
 
এক. কা’বার চতুদিকে সাতবার তাওয়াফ।
দুই. মাক্বামে ইব্রাহিমের পেছনে দু’রাকাত তাওয়াফের নামাজ।
তিন. সাঈ করা অর্থাৎ সাফা পর্বত থেকে আরম্ভ করে মারওয়া পর্বত পর্যন্ত আবার মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত এভাবে সাতবার পদচারনা করা। এখন থেকে সুগন্ধি ব্যবহার হালাল হয়ে যায়।
চার. তাওয়াফুন্নিসা [পূর্বের তাওয়াফের ন্যায়, শুধুমাত্র নিয়ত পার্থক্য হবে। নিয়ত হবে: আমি আল্লার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তাওয়াফুন্নিসা আদায় করছি]
পাঁচ. মাক্বামে ইব্রাহীমের পেছনে তাওয়াফুন্নেসার দু’রাকাত নামাজ এখন থেকে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্য হালাল হয়ে যাবে।
* তাওয়াফুন্নিসা এবং এর নামাজ শুধুমাত্র পুরুষ হাজীদের জন্যই নয় বরং যারাই হজ্বে এসেছেন তাদের সকলের জন্যে এই দুইটি আমল ফরজ, এমনকি অবিবাহিত নারী-পুরুষ সকলের জন্যে ফরজ।
* যদিও ১০ ও ১১ই জিলহজ্বে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মক্কার পাঁচটি আমল সম্পাদন করা জায়েজ তবুও সময় থাকলে মিনার আমলগুলো শেষ করে মক্কার আমলগুলোর দিকে নজর দেয়া উত্তম।

Related Post

প্রাত্যহিক বিশেষ নফল নামাজ

Posted by - September 20, 2019 0
🌻শনিবার দিনের বিশেষ নফল নামাজ🌻 ‎🌸✨ যে ব্যক্তি নিম্ন নিয়মে চার রাকাত নামাজ শনিবারের দিনে আদায় করবে ‎আল্লাহ তায়ালা তাকে…

তাহাজ্জুদ নামাজ

Posted by - September 28, 2019 0
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। ✳️তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বমোট ১১ রাকাত= ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নফল নিয়ত করে + ২ রাকাত শাফ’-এর নিয়তে +১…

আখেরাতের ব্যাংকে ব্যালেন্স

Posted by - August 17, 2019 0
সময়ের মূল্য বুঝে আখেরাতের ব্যাংকে ব্যালেন্স বাড়ানোর কিছু উপায়ঃ ★১ বছরের মূল্য বুঝতে চান ? 🔸-তাকে জিজ্ঞেস করুন, যে পরীক্ষায় পাশ…

There are 3 comments

    1. সালামুন আলাইকুম। সাথে থাকার জন্যে আপনাকে অনেক শুকরিয়া।

      Reply
  1. আরাফাতের ময়দানে ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালামের পঠিত দোয়াটি সংযোজন করার অনুরোধ করছি। শুকরিয়া‌।
    জাযাকাল্লাহ।

    Reply

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *