ঐশী বিবাহ

680 0

হিজরী দ্বিতীয় বৎসরে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) হযরত ফাতেমাকে আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন।৬৫

আর সত্যিকার অর্থে এই বন্ধন তাদের জন্যেই উপযুক্ত ছিল। কেননা নিষ্পাপ ইমামদের বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,আলী ব্যতীত ফাতেমার সমকক্ষ ও উপযুক্ত স্বামী অন্য কেউ হতে পারতো না।৬৬

এ বিষয়টি সম্মানিত এ ব্যক্তিদ্বয়ের উচ্চ মর্যাদারই সাক্ষ্য বহন করছে। আর এ বিয়ের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে,মহানবী (সা.) আরব ও কোরাইশের অনেক শীর্ষস্থানীয় ও ধনবান ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে আসা বিয়ের প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন : “ফাতেমার বিয়ে আল্লাহর নির্দেশক্রমে সংঘটিত হবে।”৬৭

অবশেষে যখন হযরত আলী (আ.) বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেন তখন নবী করীম (সা.) তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং বললেন : হে আলী,তোমার আগমনের পূর্বে ঐশী দূতের মাধ্যমে আমি সংবাদ প্রাপ্ত হই যে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন “ফাতেমাকে আলীর সাথে বিয়ে দাও।”৬৮

অতঃপর তিনি হযরত আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলেন : বিয়ের খরচের জন্যে তোমার কাছে কি আছে? তখন হযরত আলী (আ.) জানালেন : একটি বর্ম,একটি তলোয়ার ও একটি উট (যা দিয়ে তিনি পানি আনতেন) ছাড়া আর কিছু নেই। নবী (সা.) বর্মটি বিক্রির জন্যে হযরত আলী (আ.) কে নির্দেশ দিলেন। হযরত আলী তা বিক্রি করে প্রায় পাঁচশত দেরহাম পেয়েছিলেন আর তা দিয়ে কিছু আসবাবপত্র এবং হযরত ফাতেমার জন্যে উপহার হিসেবে সাদামাটা কিছু জিনিস ক্রয় করলেন। আর বিক্রয়লব্ধ কিছু অর্থ দিয়ে মুসলিম মেহমানদের জন্যে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন। এভাবে আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে নবী (সা.)-এর দোয়ার মাধ্যমে হযরত ফাতেমার সাথে হযরত আলীর বিবাহ সম্পন্ন হয়।৬৯

এ জ্যোতির্ময় ও ঐশী বিবাহের প্রতিটি অংশই রাসূলে খোদ ও তাঁর আহলে বাইতের পদাঙ্ক অনুসরণকারীদের জন্যে ইমামত ও নবী বংশের উপর বিশেষ ঐশী সমর্থনের সপক্ষে দলিল। এর মাধ্যমে বিয়ের ক্ষেত্রে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যেই যে ইসলামের আলোকিত শিক্ষার প্রকাশ ঘটে তা প্রমাণিত হয়।

এখন আমরা এ ঐতিহাসিক ঘটনার কিছু আকর্ষণীয় অংশের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবো :
 যখন হযরত আলী (আ.) বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আগমন করেন তখন রাসূল (সা.) বলেছিলেন : “তোমার আগমনের পূর্বে অনেক পুরুষ ফাতেমার জন্যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। প্রতিটি প্রস্তাবের বিষয়ে ফাতেমার সাথে আলোচনা করেছি। তখন ফাতেমার চেহারায় স্পষ্ট অনীহা ও বিরক্তিভাব লক্ষ্য করেছি। এখন তুমি আমার ফিরে আসা পর্যন্ত এখানেই অপেক্ষা কর। তখন রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমার নিকট গমন করেন। তিনি হযরত আলীর প্রস্তাবের কথা হযরত ফাতেমাকে বলেন। প্রস্তাব শুনে হযরত ফাতেমা নিশ্চুপ রইলেন কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নিলেন না। অতঃপর রাসূল (সা.) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন : আল্লাহু আকবার,তাঁর নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।”৭০

 হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতেমা (আ.)-এর বিয়ের মোহরানা ছিল শুধুমাত্র একটি বর্ম,যা বিক্রি করা হয়েছিল। আর তার কিছু অর্থ দিয়ে উপহার হিসেবে নিম্নলিখিত কিছু জিনিস হযরত ফাতেমার জন্যে ক্রয় করেছিলেন :
একটি পোশাক।
একটি বড় স্কার্ট।
একটি খায়বরী কালো তোয়ালে।
একটি বিছানা।
দু’টি তোষক,যার একটি দুম্বার পশম আর অপরটি খেজুর গাছের আঁশ দ্বারা ভর্তি ছিল।
চারটি বালিশ।
একটি পশমের তৈরী পর্দা।
একটি পাটি এবং চাটাই।
একটি হস্তচালিত যাঁতাকল।
একটি তামার গামলা।
একটি চর্মের পাত্র।
পানি বহনের জন্যে একটি মশক।
দুধের জন্যে একটি পেয়ালা।
একটি বদনা।
সবুজ রংয়ের একটি পাত্র।
কয়েকটি মাটির জগ।৭১
 হযরত আলী (আ.)ও বিয়ের জন্যে নিম্ন বর্ণিত কিছু জিনিসের ব্যবস্থা করেছিলেন :
 গৃহের মেঝেকে সামান্য কিছু বালি দিয়ে নরম করেন।
 ঘরের দু’দেয়ালের মাঝখানে কাপড় ঝুলানোর জন্যে একটি লাঠি স্থাপন করেছিলেন।
 একটি দুম্বার চামড়া এবং হেলান দিয়ে বসার জন্যে একটি বালিশের যা খেজুর গাছের আঁশ দিয়ে ভরা ছিল-ব্যবস্থা করেছিলেন।৭২

Related Post

হযরত ফাতেমা (আ.)-এর শাহাদাত

Posted by - February 3, 2020 0
মহানবী (সা.) ইন্তেকালের পর বিভিন্ন রকম দুঃখ-কষ্ট হযরত ফাতেমার অন্তরে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ তাঁর জীবনটাকে তিক্ত…

হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালামের প্রতি যিয়ারতনামা

Posted by - January 27, 2020 0
হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালামের প্রতি যিয়ারতনামাঃ السَّلاَمُ عَلَیْکِ یَا بِنْتَ أَفْضَلِ أَنْبِیَاءِ اللَّهِ وَ رُسُلِهِ وَ مَلاَئِکَتِهِ‏ আসসালামু আলাইকি ইয়া…

মা আয়শার বিয়ের বয়স

Posted by - August 16, 2019 0
হযরত আয়েশার সাথে আল্লাহর রাসূলের বিয়ের তারিখ সমন্ধে ১। ঐতিহাসিক ও হাদিসের ইমামরা বলেছেনঃ দৃষ্টান্তস্বরূপঃ মা আয়েশা থেকে বর্ণিতঃ حدثنا…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *