পর্ব~১
পর্ব~২
প্রতিটি বিন্দু আর রন্দ্রের অনুভূতিগুলো ক্রমেই নাড়া দিয়ে ঘণ ঘোর বিষাদময়তার চাদরে ঢেকে দেয়,
আর জেগে থাকা প্রান্তিয় স্নায়ুর শিহরনে উদ্দিপ্ত প্রলয়ের গহীন শিখায়
মেলে ধরে আমায়।
কিন্তু হায়! আমি যে পারিনি সেদিন!
অসুস্থ্যতার বিষবাষ্প ঘিরে ধরেছিল আমায়,
পিতার নির্দেশ করেছিল আমায় বিমূঢ় !
ওহ ,খোদা আমার !
কেন যে সক্ষমতা ফিরিয়ে দিলেনা আমায়,
সে অশুভ বিষবাষ্পকে উড়িয়ে গর্জে উঠার!
কেন হতে পারিনি সেদিন সে কারবালার সহসঙ্গী হতে,
পারিনি বাহাত্তরের একজন হতে,
চরম দূর্যোগে প্রলয়ের বীণা কেন আমায় রিক্ত হস্ত হতে হলো !
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো বলে ?
ওহ,খোদা এ যে কত বড় যন্ত্রনার বেড়ি পড়িয়ে দিলে আমায়।
বিষাদের প্রাসাদ সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ যে আমায় শুধু ঠুকরে ঠুকরে কাঁদায়।।
কতটা নির্মমতার বলী হয়ে একে একে শহীদানের পেয়ালায় চুমুক দিয়েছিল সেদিন।
আমিও তো পারতাম!
পারতাম স্বাদ নিতে সে শহীদানে পেয়ালার!
তাহলেই তো আর এই বাঁধ ভাঙ্গা চির বিলাপের সমুদ্র স্রোতে ডুবে থাকতে হতো না।
বক্ষে বহা সে অবিরত ক্ষত বিক্ষত রক্ত প্রবাহের স্পন্দনের স্ফুলিঙ্গের বর্ষা বইয়ে দিচ্ছে অহরহ।
তন্দ্রাকে তাড়িয়ে সেসব দূর্বিষহ স্মৃতির বহর গুনে গুনে আমি ক্লান্ত ,শ্রান্ত।
কেন আমায় দেখতে হলো সে নির্মমতার মহাযজ্ঞ !
ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যাওয়া ছাড়া তো কিছুই করতে পারিনি।
শুধু দেখেছি একে একে কতটা পিপাসার্ত ও অনাহারে যুদ্ধের ময়দানে বীরের মতো লড়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে,
দেখেছি পানি শূণ্যতায়,খাবার বিহীন অবস্থায় কচি কাঁচা শিশুদের তৃঞ্চার্ততার আহাজারি ,
গগন বিদারী সে করুন আর্তনাদের ধ্বনি।
হায়েনাদের হৃদয়ে যেন মমতার অনুভূতিগুলো আজ পরিনত হয়েছে বেরহমতায় ও হিংস্রতার উচু শিখার বিন্দুতে।
তাই তো দেখি বনের পশু পাখি জীব জানোয়ারদের জন্য ফোরাতের পানি পেলেও পেলনা কেবল নবী বংশ।
কাঠফাঁটা রৌদ্রের তীব্রতা ,মরুর শুষ্কতায় প্রাণ বুঝি যায় যায়।
হায়েনাদের ক্ষমতার প্রভাবে মনুষ্য বধের মহাপরিকল্পনায় বন্দি হয়ে শুধু ঠুকরে ঠুকরে কেঁদেছি।
কতদিন পানি নেই একফোটাও।
কত মলিন সে ছোট অবুঝ মুখগুলো !
মুখের কণ্ঠ যেন স্তিমিত হয়ে আসছে।
শুধু কান্নার শব্দ,চাওয়ার একটাই আকুতি ‘দাওনা একটু পানি আমায়’।
ছোট্ট আসগর ছটফটাচ্ছে চরম পানির পিপাসায়,মৃতু্্যর দুয়ারে দঁাড়িয়ে প্রহরের সীমা রেখা গুনছে ।
পাপিষ্ট হায়েনাদের কাছে কত আকুতি ! কে আছো যে এ শিশুটিকে একফোটা পানি পান করাবে?
না ,কেউ এলো না । শিশুপুত্র চরম পিপাসার্ত জিহ্বার আহবানেও সাড়া মিললো না, অবুঝ শিশুর প্রতি মমত্ববোধ ওদের হৃদয় বিগলিত হয়না।পবিত্র কচি মুখের পিপাসার্ত চাহনি, আকুতি সবই পরাজিত !
ওরা যে পাষান,হিংস্র দানব !দয়াদ্রতা ওদের মন মগজে ঠাঁয় নেই।
মরুর তপ্ত রোদ্রের তৃঞ্চার্ত কচি গলায় হায়েনা হরমূলা তিনফলা বিশিষ্ট তীর ( যা ব্যাবহার করা হয় বড় বড় হিংস্র জন্তু শিকার করতে) ছুঁড়ে আজন্ম পিপাসার স্বাদ মিটিয়ে দিল,কচি বুকে পিঠে , বিদ্ধ করল পাপাচারির তীর।কচি রক্তে লালে লাল পিতা।
হতবাক আকাশ বাতাস স্বর্গ মর্ত্য।
বিমূর্ত দুনিয়া।
মমত্ববোধের সব সত্ত্বা ধ্বনিছে শুধু হায় আসগর! হায় আসগর!!
ওহ খোদা ! কিভাবো সইবো ! শক্তি দাও আমায় ,শক্তি দাও !
আরো দেখেছি, দেখেছি আর মূর্চ্ছা গেছি সেসব দৃশ্যায়নে।
দেখেছি চরম পিপাসার্ত হয়েও বীরের মতো লড়তে ,
ভাই আকবর ,কাসিম,আওন মোহাম্মদসহ কাফেলার সঙ্গীদের অকাতরে জীবন উৎসর্গ করতে।
বেজন্মা কাফির !!
মুনাফিকের পঙ্গপালকেরা হায়েনারুপি
যতসব জানোয়ার।
মনুষত্ব বিবর্জিত সেসব নরাধম।
নরকীটরুপি জাহান্নামের অঙ্গার।
দেখেছি চাচাজান আব্বাসের করুন চিত্রের শহীদানে পেয়ালার সে চুমুকের দৃশ্য।
দেখেছি সখিনার জন্য পানি আনতে গিয়ে শত্রুহাতে সে নৃসংশতার বলী হতে।
একে একে হাত দুটি কেঁটে নিল।
মারলো অবশেষে মশক মুখে তাবুর পানে এগিয়ে যাওয়া প্রিয় চাচার পবিত্রমুখে তীর বিদ্ধতা।
মুহুর্মুহু তীর ও বর্শাবানে চাচার জীবন অবসান।
রক্তের গঙ্গাধারায় সিক্ত কারবালা।
বেদনার্ত স্রোতের গোঙানিতে কাঁদে আজ ফোরাতকুল ।
==============================
শেষ পর্ব
আর যে পারছিনা খোদা !
আমার রক্তে বহা সে যন্ত্রনার প্রতিধ্বনিতে আমি আর পারছি না ।
পিতার সে পবিত্র দেহের উপর বিভীষিকাময় দৃশ্যায়নের চিত্র মনে করতে।
পারছিনা আর নিজেকে ধরে রাখতে !
আমি যে বিষাদের দরিয়ার উত্তাল তরঙ্গমালায় আছড়ে পড়া চেতনাহীন শোকাতুর মাজলুম।
নিজের চোখগুলোকেও অবিশ্বাস্য মনে হয় সেসব হিংস্রতার ছবি স্মৃতি পটে ভাসাতে।
আমি কি ঠিকই দেখেছিলাম !
কিভাবে পারলো ওরা !
পারলো কিভাবে !!
যে দেহে রাসুলের রক্ত প্রবাহমান ,
যে দেহে রাসুল চুমো খেতো ,
যার কান্নায় রাসুল নিজেকে ঠিক রাখতে পারতেন না।
যে দেহ রাসুলের দেহের উপর ঘোড়ার সওয়ার হতো !
রাসুলের সিজদায় যে ঘাড়ে বসে থাকতো ,
যিনি রাসুলের নয়নের মনি,
আদরের দুলাল!
যাকে ভালবাসা সয়ং রাসুলকে ভালবাসা।
যাকে ভালবাসার মধ্যে ঈমান ও জান্নাত নিহিত,
সেই জান্নাতের সর্দার ,
ফাতেমার কলিজার টুকরা হোসেইন
আজ কারবালায় শত শত তীর বিদ্ধ,
বর্শাবানে জর্জরিত !
ঝাঝড়া করা পবিত্র দেহ !
অঝোর ধারায় রক্ত বর্ষনে লালে লাল কারবালা ।
আকাশ বাতাস কান্নায় ভারী হওয়া ,
প্রবল ধূলিকনার ঝড় !
শুরু হওয়া আগ্নেয়গিরির উদগিরন।
নক্ষত্রের পতন !
আকাশ কান্নারুপে রক্তবৃস্টি।
পাথর কান্নারুপে নিচদিয়ে বয়ে যাওয়া লাল রক্তের স্রোত।
নবী পয়গম্বরদের আহাজারিতে লুটিয়ে পড়ে বেহেশতের দরজাগুলো।
প্রকম্পিত হয় আরশ আসমান ।
আজাদারিতে মুহ্যমান স্বর্গের প্রতিটি সোপান।
পবিত্র দেহের প্রতি মুনাফিকদের বেরহমতা তারপরও থেমে থাকেনি,
ক্ষ্যান্ত দেয়নি যতক্ষন নিঃশ্বাস ছিলো।
পরম সত্যের বুকে বসে ছিন্ন ভিন্ন করার মানসে মেতেছিল ইয়াজিদিরা,
হায়েনা মুনাফিকরা ।
ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঘৃনিত জল্লাদ হতে পিছপা হয়নি শিমার।
পিতার বক্ষে বসে খঞ্জর চালিয়ে পবিত্র শির বিচ্ছিন্ন করার সে চর্মচক্ষুর দৃশ্যায়ন আমার প্রাণ স্পন্দন অসাড় হয়ে শুধু বোবাকান্না হয়ে বেদনার্ত রব চলেছিল !
পিতার খন্ডিত শির শত্রুর বর্শার অগ্রে বিদ্ধ দেখে প্রাণ স্পন্দনটুকু যেন থেমে গেল !
পবিত্র দেহকে ঘোড়া দিয়ে দাবড়িয়ে ছিন্ন ভিন্ন করে ধুলার ধূলিতে মিশিয়ে দিয়েছিল জাহান্নামিরা ।
তাবুতে আগুন ধরিয়ে নারী শিশুদের উপর করেছিল যতসব হিংস্র নির্যাতন ।
কাপড় স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে নবী পরিবারের নারীদের বেআব্রু বানিয়ে খোলা আকাশের নিচে বন্দি করে ছুটে চলেছিল জারজ সন্তানগুলো !
চলেছিলো হায়েনারা তাদের পুরুস্কারের আশায় পাষানপুরির গন্তব্যে।
আর কত সইবো খোদা !
ধৈর্য্যের বাধ যে আর মানছে না খোদা।
সব প্রত্যক্ষকরনের সাক্ষি হয়ে দুলছি অসহনীয় মর্মপীড়ার যন্ত্রনা নিয়ে ,
চির বিলাপ নিয়ে অভিযোগ ও অনুযোগে সূধায় পরম মাওলায় ~
হে মাওলায়ে মাওলা !
তোমার প্রিয় সত্ত্বার যে আগমনি সূর্য ৩ রা শাবান
নবী ঘরে বেহেস্তী হাওয়ায় মদিনার পূব আকাশে উদিত হয়েছিল ,
১০ ই মহরম কারবালার পশ্চিম আকাশে চরম জুলুমতায় অস্তমিত হলো !!
হে রাজাধিরাজ !
তুমি দেখেছো কতটা মজলুম ছিল আমার পিতা ,আমার ভাইসহ স্বজনরা ! কতটা পৈশাচিকতায় তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে !
তুমি দেখেছো কতটা তৃষ্ণার্ততা নিয়ে একে একে জীবন দিয়েছিল !
হারামীরা দেয়নি একফোটা পানি !!
কতটা শুষ্কতায় পিপাসার যন্ত্রনা নিয়ে শাহাদতের পেয়ালায় চুমুক দিয়েছিলো সেদিন কারবালায়!!
হিংস্রতা ও নির্মমতার যে দাগ বসিয়ে দিয়েছিলো তার ক্ষত নিয়ে বয়ে যাওয়া তুমি লাঘব করো হে মোর খোদা !
অভিযোগ লহ , লহ সে অনুযোগ !
যন্ত্রনার চোরাবালিরতে পড়া মোর সে অভিযোগ !
লাঘব করো , করো লাঘব শত যন্ত্রনাবিদ্ধ এ বেদনা বিধুর !
সেজদা লহ ,
লহ সে সেজদায় ,লহ মোর অনুযোগ!
মম অন্তর দাহের গভীর সে শোকাচ্ছন্নতার অনুযোগ !
বিধূর বাষ্পে নিষ্পেষিত হওয়ার অভিযোগ,
বেদনার দগদগে ক্ষত হওয়া কাতরতায়
লহ মোর সে অভিযোগ!!