মাহে রমজানের পরের মাস শাওয়াল মাস। এ মাস স্মরণ করে দেয় ইসলামী ইতিহাসে নবীজীর পবিত্র আহ জোলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম আলী সালাওয়াতুল্লাহি আলাইহির বিশেষ একটি অবদানের কথা।
অষ্টম হিজরির ৩রা শাওয়াল মুসলমানরা হুনাইনের যুদ্ধের প্রথম দিকে বিপর্যস্ত হয়েও শেষ পর্যন্ত আল্লাহর অদৃশ্য মদদে জয়ী হন। ১৪৩১ চন্দ্র-বছর আগে ঘটেছিল এই যুদ্ধ।
অদৃশ্য থেকে খোদায়ী মদদ এসেছিল মহানবীর (সা.) দোয়ার বরকতে। এ দোয়ার পর ইমাম আলী (আ.)ও অতুলনীয় বীরত্ব দেখিয়ে বিজয়ের কাজ সহজ করে দেন। এ যুদ্ধে আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ.)-এর অপরাজেয় তরবারী জুলফিকারের আঘাতে নিহত হয় ভয়ানক কাফির কমান্ডার আবু জারুলসহ প্রায় ৪১ জন দুর্ধর্ষ কাফির সেনাপতিবৃন্দ।
ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের মাত্র দুই সপ্তাহ পর মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী হুনাইন নামক উপত্যকায় এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
মুসলমানরা বিশ্বনবী (সা.)-এর নেতৃত্বে বিনা যুদ্ধে মক্কা জয় করার পর হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্রের কাফিররা রাসূল (সা.)-এর প্রাণনাশের মাধ্যমে এ আলোকে চিরতরে নিভিয়ে দেয়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এই যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়।
মুসলিম মুজাহিদদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের বিপুল সংখ্যক সৈন্যবাহিনী নিয়ে গর্বিত ছিলেন, যদিও তাদের অনেকেই মাত্র দুই সপ্তাহ আগে মক্কা বিজয়ের প্রভাবে মুসলমান হয়েছিলেন। কিন্তু ইসলামের শত্রুদের হাতে হঠাৎ অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রান্ত হয়ে আনসার ও মুহাজির নির্বিশেষে নও-মুসলিম মুজাহিদদের প্রায় সবাই রাসূল (সা.)-কে ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে অল্প সংখ্যক বীর সাহাবীদের মধ্যে যারা রাসূল (সা.)-কে ছেড়ে যাননি তাদের মধ্যে মু’মিনদের নেতা হযরত ইমাম আলী (আ.) এবং তাঁর ও রাসূল (সা.)-এর চাচা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.) ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
আল্লাহর সিংহ ও মু’মিনদের নেতা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর অতুলনীয় বীরত্ব যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আর হযরত আব্বাস (রা.) উচ্চস্বরে মুজাহিদদের ফিরে আসার আহ্বান জানাতে থাকলেও একশত জনের বেশী মুজাহিদ তাতে সাড়া দেয়নি। এ অবস্থায় বিশ্বনবী(সা.) আল্লাহর সাহায্য চান এবং কাফিরদের ওপর পাল্টা হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। হযরত ইমাম আলী (আ.) শুরু করেন এক বীরত্বপূর্ণ আক্রমণ। দয়াল নবী (সা.)-এর কাছ থেকে উপহার পাওয়া তরবারী জুলফিকারের অপরাজেয় আঘাত হেনে ইমাম আলী (আ.) ভয়ানক কাফির যোদ্ধা আবু জারুলসহ প্রায় ৪১জন দুর্ধর্ষ কাফির কমান্ডারকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন। ফলে পিছু হটতে বাধ্য হয় কাফিররা এবং এভাবে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় তারা।
মহান আল্লাহ সুরা তওবায় ২৫ ও ২৬ নং আয়াতে এই ঐতিহাসিক যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন এভাবেঃ
“নিশ্চিতভাবে আল্লাহ্ তোমাদের বিভিন্ন সময়ে সাহায্য করেছেন। আর তোমরা হুনাইনের যুদ্ধ ক্ষেত্র স্মরণ করো! যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের দাম্ভিক করে তুলেছিলো। কিন্তু তা তোমাদের জন্যে কোন কাজে আসেনি এবং পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তা তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিলো। ফলে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে গিয়েছিলে। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের উপর (আত্মিক) প্রশান্তি নাযিল করেন এবং (ফেরেশতাদের) এমন এক সেনাবাহিনী পাঠান যা তোমরা দেখনি। তিনি কাফিরদের শাস্তি দিলেন। আর এটাই কাফিরদের প্রতিফল।”