হিজামার পরিচয়

1607

হিজামা হল এমন একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে মানুষের সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার নিশ্চয়তা রয়েছে।

হিজামা চিকিৎসার আরো তথ্য পেতে যোগাযোগ করুন – ০১৯২৬৭৭৪৭৭০

হিজামার পদ্ধতিঃ

শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে মেশিনের সাহায্যে রক্ত চুষে নেওয়া। উল্লেখ্য, আজকাল হিজামায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে যাতে কোন প্রকার জীবাণু সংক্রমিত হতে না পারে।

হিজামার ব্যাপারে বর্ণিত কতিপয় হাদীসঃ

১- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “জিবরাঈল আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তম্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম।” (আল-হাকিম নিশাবুরী, হাদীস নম্বর ৭৪৭০)।

২- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “কেউ হিজামা করতে চাইলে সে যেন আরবী মাসের ১৭, ১৯ কিংবা ২১ তম দিনকে নির্বাচিত করে। রক্তচাপের কারণে যেন তোমাদের কারো মৃত্যু না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।” (সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস ৩৪৮৬)।

৩- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “আমি মেরাজের রাতে যাদের মাঝখান দিয়ে গিয়েছি, তাদের সবাই আমাকে বলেছে, হে মুহাম্মদ! আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার আদেশ করবেন।” (সুনানে তিরমিযী, হাদীস ২০৫৩)।

৪- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও। কারণ, কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে।” (আল-হাকিম নিশাবুরী, হাদীছ ৭৪৮২)।

৫- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “নিশ্চয় হিজামায় শেফা রয়েছে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২০৫)।

৬- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “খালি পেটে হিজামাই সর্বোত্তম। এতে শেফা ও বরকত রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বোধ ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।” (সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস ৩৪৮৭)।

৭- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “হিজামাকারী কতই উত্তম লোক। সে দূষিত রক্ত বের করে মেরুদন্ড শক্ত করে ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।” (সুনানে তিরমিযী, হাদীস ২০৫৩)।

৮- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “আমি যখন সপ্তম আসমানে উঠলাম তখন আমার কাছ থেকে কোন ফেরেস্তা অতিক্রম করেনি। তখন শুধু একটি আওয়াজ আসে, হে মুহাম্মাদ! হিজামা করো! এবং তোমার উম্মতকে হিজামা করতে এবং কালো জিরা ও কাস্টাস এসপি (Costus sp) খেতে নির্দেশ দাও।” ( বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৬২, পৃঃ নং ৩০০, বাব নং ৮৯)।

৯- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “পাঁচটি জিনিস নবীদের সুন্নত হিসেবে বিবেচিত:
এক: লজ্জা
দুই: মেসওয়াক
তিন: সুগন্ধি ব্যবহার
চার: হিজামা
পাঁচ: সহিষ্ণুতা।” (আল কাফি, খন্ড ৬, পঃ নং ৪৮৪)।

১০- ইমাম আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.): “নি:সন্দেহে হিজামা দেহকে সুস্থ রাখে এবং আক্বল বুদ্ধিকে শক্তিশালী করে।” (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৬২, পৃঃ নং ১১৪ এবং খন্ড ১০, পৃঃ নং ৮৯)।

১১- ইমাম আলী ইবনে মুসা আর রিদ্বা (আ.): “ আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, যদি কোন কিছুতে শেফা বা আরোগ্য থেকে থাকে তাহলে তা হিজামাতে আছে অথবা মধুর শরবতে বিদ্যমান।” (ওয়াসায়িলুশ শিয়া, খন্ড ১৭, পৃঃ নং ৫৪)।

১২-রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “হিজামা করার ব্যাপারে জিবরাঈল আমাকে এতবার তাগিদ দিয়েছে যে, মনে করেছিলাম হিজামা করা ফরজ হয়ে গেছে।” (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৬২, পৃঃ নং ১২৬)।

১৩- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “আমার উম্মতের শেফা তিনটি জিনিসের মধ্যে নিহিত:
এক: আল্লাহর আয়াতের মধ্যে।
দুই: মধুর শরবতে।
তিন: হিজামা-তে।” (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৯২, পৃঃ নং ১৭৬)।

১৪- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম): “নিঃসন্দেহে হিজামা শেফা ও আরোগ্য দান করে।” (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৬২, পৃঃ নং ১৩৫)।

স্বাভাবিক অবস্থায় হিজামার সময়ঃ

১। যে কোন আরবী মাসের ১৭, ১৯ ও ২১-এর যে কোন তারিখ।
২। সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবারের যে কোন দিন। উল্লেখ্য, তারিখ ও দিনের মধ্যে বিরোধ হলে তারিখকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৩। সকালে খালি পেটে হিজামা করা উত্তম।
৪। ফজরের পর হতে দুপুর ১২টার মধ্যে হিজামা করা উত্তম।
৫। হিজামার আগের ও পরের দিন সঙ্গম না করা উত্তম।

হিজামার নির্দিষ্ট স্থানসমূহঃ

১. মাথার উপরিভাগ তথা মধ্যভাগ।
২. মাথার ঠিক মাঝখানে।
৩. ঘাড়ের উভয় পাশে।
৪. ঘাড়ের নীচে উভয় কাঁধের মাঝখানে।
৫. উভয় পায়ের উপরিভাগে।
৬. মাথার নীচে চুলের ঝুটির স্থলে।
মাসআলাঃ রোযাদার ব্যক্তি হিজামা করলে রোজা নষ্ট হবে না।
হিজামা -এর মাধ্যমে যে সব রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকেঃ
১। মাইগ্রেন জনিত দীর্ঘমেয়াদী মাথাব্যথা
২। রক্তদূষণ
৩। উচ্চ রক্তচাপ
৪। ঘুমের ব্যাঘাত (insomnia)
৫। স্মৃতিভ্রষ্টতা (perkinson’s disease)
৬। অস্থি সন্ধির ব্যাথা/ গেটে বাত
৭। ব্যাক পেইন
৮। হাঁটু ব্যাথা
৯। দীর্ঘমেয়াদী সাধারন মাথা ব্যাথা
১০। ঘাড়ে ব্যাথা
১১। কোমর ব্যাথা
১২। পায়ে ব্যাথা
১৩। মাংসপেশীর ব্যাথা (muscle strain)
১৪। দীর্ঘমেয়াদী পেট ব্যথা
১৫। হাড়ের স্থানচ্যুতি জনিত ব্যাথা
১৬। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
১৭। সাইনুসাইটিস
১৮। হাঁপানি (asthma)
১৯। হৃদরোগ (Cardiac Disease)
২০। রক্তসংবহন তন্ত্রের সংক্রমন
২১। টনসিলাইটিস
২২। দাঁত/মুখের/জিহ্বার সংক্রমন
২৩। গ্যাস্ট্রিক পেইন
২৪। মুটিয়ে যাওয়া (obesity)
২৫। দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ (Chronic Skin Diseses)
২৬। ত্বকের নিম্নস্থিত বর্জ্য নিষ্কাশন
২৭। ফোঁড়া-পাঁচড়া সহ আরো অনেক রোগ।
২৮। ডায়াবেটিস (Diabetes)

হিজামার জন্যে সময় নির্ধারণঃ

হিজামার ভাল ফলাফল লাভের জন্যে পর্যায়ক্রমিকভাবে নিচের চার্ট অনুসরণ করা যেতে পারে।
১ম পর্যায়ঃ
হাদিস অনুযায়ী হিজামার জন্যে এ বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ১৪ জুন থেকে ২৭শে জুন পর্যন্ত ছিল সবচেয়ে ভাল সময়। এর মধ্যে ২০শে জুন ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এ তারিখ প্রতি বছর আরাবী মাসের সাথে দুই এক দিন এদিক সেদিক হয়ে থাকে।
২য় পর্যায়ঃ
ইমাম রিদ্বা (আ.) থেকে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী প্রতি চন্দ্র মাসের ১২ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত হিজামা সবচেয়ে ভাল কাজ করে এবং এর মাধ্যমে সবচেয়ে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
৩য় পর্যায়ঃ
যদি এই তারিখ হাতছাড়া হয় তাহলে চন্দ্র মাসের ১০ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত যে কোন দিন হিজামা করা যায়।
হিজামার জন্যে সপ্তাহের মধ্যে রবিবার বিকাল এবং বৃহস্পতিবার সকাল খুব ভাল সময়।এর বিপরীতে বুধবার এবং শুক্রবার কোনক্রমে হিজামা করানো যাবে না। শুক্রবার দুপুর হচ্ছে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর সময়।
হিজামার জন্যে বৎসরের ঋতু অনুযায়ী সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে যখন আবহাওয়া নাতিশীতষ্ণ থাকে। অর্থাৎ বসন্তকালের প্রথম চল্লিশ দিন এবং শীতের প্রথম চল্লিশ দিন (আনুমানিক ২২শে ডিসেম্বর থেকে ১লা ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত)।
জুন মাসের ২০ ও ২৭ তারিখ বাদ দিলে উপরোক্ত সময়ের বাইরে হিজামাতে খুব অল্পই ফলাফল পাওয়া যাবে।

হিজামার পূর্বে রোগীর করণীয়ঃ

১। পেট খালী অথবা পেট ভর্তি অবস্থায় হিজামা করা যাবে না।
২।হিজামার ১২ ঘন্টা আগে থেকেই ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩। হিজামার এক ঘন্টা আগে ডালিম অথবা ডালিমের রস পান করা কর্তব্য যেনো রক্তের ঘনত্ব কমে আসে
৪। মধু, মাউশ শায়ির [=যবের রস] অথবা অন্যান্য পানীয় বেশী করে পান করা।
৫।হিজামাতের সময় হাতে আক্বিক্ব পাথরের আংটি রাখা যাবে না।
হিজামার পরে রোগীর করণীয়ঃ
১। হিজামা শেষ করার পর ১২ ঘন্টা ধমপান করা যাবে না।
২। হিজামা শেষ করার পর ২৪ ঘন্টা কোন ব্যায়াম অথবা কোন ভারী কাজ করা যাবে না।
৩।হিজামা শেষ করার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাছ, দুগ্ধজাত, লবনাক্ত, ঠান্ডা ও ঝাল জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
৪।হিজামা শেষ করার ২৪ ঘন্টা পর গোসল করবেন, এর আগে নয়।

Related Post

শহীদ লেঃ জেনারেল কাসেম সোলাইমানির সংক্ষিপ্ত বীরোচিত জীবন

Posted by - জানুয়ারি ১০, ২০২০
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র কুদস ব্রিগেডের কমান্ডার লেঃ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ১৯৫৭ সালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরমান শহরের…

সুস্থ থাকার ছয়টি সুত্রঃ

Posted by - সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯
🔴সুস্থ থাকার ছয়টি সুত্রঃ 🔺খাবারে থাকবে লবন কম < সির্কা থাকবে বেশী। 🔺খাবারের লোকমা ছোট হবে < চাবাতে হবে বেশীক্ষণ।…

সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা

Posted by - ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামঃ ✍️“সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াতকারী আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান আখ্যায়িত হয়ে থাকেন। সূরা ইয়াসিন…

ইমাম হুসাইন (আঃ) সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)-এর কিছু হাদিস

Posted by - সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
১. হযরত হুযাইফা বিন ইয়ামান রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে বর্ণনা করছেন…

মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির কিছু পথ্য

Posted by - আগস্ট ২৭, ২০১৯
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির কিছু পথ্যঃ ✨ প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকার শুকনো বাদাম ও ফল গ্রহণ। ✨নিয়মিত খাবারে মাছ, মোরগের মাংস অথবা মটরশুটি…

There are ২ comments

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »