হযরত ফাতেমার স্বর্গীয় ব্যক্তিত্ব

1020

নারীকুলের শ্রেষ্ঠ রমণী হযরত ফাতেমার স্বর্গীয় ব্যক্তিত্ব আমাদের উপলব্ধি ক্ষমতার ঊর্দ্ধে এবং আমাদের সকলের প্রশংসার চেয়ে বেশী সম্মানিত। তিনি এমনই একজন মহীয়সী রমণী যাকে বিশেষ নিষ্পাপ ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য করা হয়ে থাকে।৩২ যার ক্রোধ ও অসন্তোষকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তোষ বলে বিবেচনা করা হয়।৩৩ তিনি এবং তাঁর পরিবার ও সন্তানদের প্রতি ভালবাসা দ্বীনি ফরয বলে পরিগণিত।৩৪ তাঁর আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের বিস্ময়কর ও বিভিন্নমুখী পরিচয় আমাদের ন্যায় সীমিত জ্ঞানের মানুষের পক্ষে তুলে ধরা কিভাবে সম্ভব?

সুতরাং হযরত ফাতেমা (আ.) সম্পর্কে স্বয়ং মা’সুম ইমামদের থেকে শোনা দরকার। এখানে ইসলামের সম্মানিত নারীর মহিমার কিছু কথা মা’সুম ইমামদের পবিত্র মুখ থেকে শ্রবণ করবো :
 হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) বলেছেন যে,আল্লাহর নির্দেশে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে আমাকে বললেন,“হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের সর্দার আর ফাতিমা সকল নারীদের নেত্রী।”৩৫
 রাসূল (সা.) বলেছেন : “চারজন রমণী পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম। ইমরানের কন্যা মারিয়াম,খুওয়াইলিদের কন্যা খাদীজা,মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা এবং মুযাহিমের কন্যা আছিয়া (ফেরাউনের স্ত্রী)।”৩৬

 নবী করীম (সা.) বলেছেন : “জান্নাত চারজন নারীর জন্যে প্রতীক্ষমাণ। ইমরানের কন্যা মারিয়াম,ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া,খুওয়াইলিদের কন্যা খাদীজা এবং মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমা।”৩৭
 তিনি আরো বলেছেন : “ফাতেমা কোন ব্যাপারে রাগান্বিত হলে আল্লাহ্ও তাতে রাগান্বিত হন এবং ফাতেমার আনন্দে আল্লাহ্ও আনন্দিত হন।”৩৮
 ইমাম মুসা ইবনে জা’ফর (আ.) বলেন : রাসুল (সা.) বলেছেন,“আল্লাহ্ পৃথিবীর বুকে চারজন নারীকে মনোনীত করেছেন। তারা হলেন মারিয়াম,আছিয়া,খাদীজা ও ফাতেমা (তাদের সকলের উপর সালাম)।”৩৯
 ইমাম আলী ইবনে মুসা আর রিযা (আ.) রাসূলে খোদার নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন : “হাসান ও হুসাইন,আমি এবং তাদের পিতার পরবর্তীতে জমিনের বুকে সর্বোত্তম ব্যক্তিদ্বয় আর তাদের মা ফাতেমা নারীদের মধ্যে পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম রমণী।”৪০
 ‘সহীহ আল বুখারী’ ও ‘সহীহ মুসলিম’ গ্রন্থদ্বয় যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের নির্ভরযোগ্য পুস্তক সমূহের অন্যতম এবং উক্ত গ্রন্থদ্বয়ের লেখকদ্বয়ও আহলে সুন্নাতের সুবিখ্যাত ও মহান আলেমদের মধ্যে গণ্য। উক্ত গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণিত আছে যে নবী করীম (সা.) বলেছেন : “ফাতিমা বেহেশতবাসী নারীদের নেত্রী।”৪১
 ইমাম জা’ফর আস সাদেকের নিকট জনৈক ব্যক্তি আরজ করলো : রাসুল (সা.) যে বলেছেন,ফাতেমা বেহেশতবাসী নারীদের নেত্রী। এর অর্থ কি এটা যে তিনি তাঁর সমসাময়িক নারীদের নেত্রী? ইমাম প্রত্যুত্তরে বলেন : “উপরোক্ত কথাটি হযরত মারিয়ামের ব্যাপারে বলা হয়েছে আর ফাতিমা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নারীদের নেত্রী।”৪২
 হযরত রাসূলে আকরামকে (সা.) জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো,“ইয়া রাসূলুল্লাহ্,ফাতেমা কি শুধুমাত্র তাঁর যুগের নারীদের নেত্রী? রাসূল (সা.) প্রতি উত্তরে বলেন : “এ কথাটি ইমরানের কন্যা মারিয়ামের ব্যাপারে বলা হয়েছে আর মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নারীদের নেত্রী।”৪৩
 হযরত মুফাজ্জাল (রহ.) বলেন,আমি ইমাম জা’ফর আস সাদেক (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম,হযরত ফাতেমার ব্যাপারে রাসূলে খোদার এই যে উক্তি “ফাতেমা বেহেশতবাসী নারীদের নেত্রী”-এর অর্থ কি আমাকে বলবেন? এর অর্থ কি এই যে,ফাতেমা শুধুমাত্র তাঁর যুগের নারীদের নেত্রী ছিলেন? ইমাম জবাবে বলেন : “উক্ত কথাটি হযরত মারিয়ামের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে তিনি তাঁর সমসাময়িক নারীদের নেত্রী ছিলেন। ফাতেমা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নারীদের নেত্রী।৪৪ ইমাম আলী ইবনে মুসা আর রিযা (আ.) তাঁর পিতামহদের কাছ থেকে,আর তাঁরা আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন যে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন : “কিয়ামতের দিবসে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর আরশের নিচ থেকে ডাক আসবে,হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের চক্ষুযুগল বন্ধ কর,ফাতেমা (মুহাম্মদের কন্যা) অতিক্রম করবে।”৪৫
 হযরত আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছ থেকে বর্ণনা করছেন : “কিয়ামতের দিনে আল্লাহর আরশ থেকে ধ্বনি আসবে,হে হাশরের ময়দানের লোকেরা! তোমরা তোমাদের মাথা নিচু কর। চক্ষু বন্ধ কর। ফাতেমা এখান থেকে অতিক্রম করছে। আর সত্তর হাজার বেহেশতী হুর তাঁর সঙ্গে আছে।”৪৬
 রাসূলে আকরাম (সা.) হযরত ফাতেমাকে বলেছেন : “হে ফাতেমা! আল্লাহ তায়ালা জমিনের বুকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন এবং সেখান থেকে তোমার স্বামীকে মনোনীত করেন। তিনি আমাকে ওহীর মাধ্যমে জানালেন যে আমি যেন তোমাকে আলীর সাথে বিয়ে দেই। তুমি কি জান যে আল্লাহ্ তোমার মর্যাদা ও সম্মানের দিকে তাকিয়ে তোমাকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিলেন যিনি সবার আগে ইসলাম ধর্মের ঘোষণা দিয়েছেন এবং যার ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা সবচেয়ে বেশী আর জ্ঞান সকলের চেয়ে অধিক।”৪৭
 ইমাম জা’ফর সাদেক (আ.) বলেন : “যদি আল্লাহ্ আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-কে ফাতেমার জন্যে সৃষ্টি না করতেন তাহলে তাঁর জন্যে ভূপৃষ্ঠে কোন স্বামী-ই পাওয়া যেত না।”৪৮
 হযরত সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ্ বলেন : ইমাম সাদেক (আ.)
مَرَجَ اْلْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ
অর্থাৎ দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন যেন তারা পরস্পর মিলিত হয়।৪৯
আয়াতটির তাফসীরে বলেন : ‘উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্য হযরত আলী এবং হযরত ফাতিমা’। আর
يَخْرُجُ مِنْهُمَا اْلْلُؤْلُؤُ وَ اْلْمَرْجَانُ
অর্থাৎ তাদের দু’জন থেকে মুক্তা ও প্রবাল নির্গত হবে।৫০
আয়াতটির তাফসীরে তিনি বলেন : ‘উক্ত আয়াতটির উদ্দেশ্য ইমাম হাসান এবং ইমাম হুসাইন।’৫১
 ইমাম সাদেক (আ.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো,“কেন হযরত ফাতেমাকে যাহরা বা আলোকোজ্জ্বল বলা হয়েছে?” উত্তরে তিনি বলেন : “তার কারণ হচ্ছে,হযরত ফাতেমা যখন ইবাদতের উদ্দেশ্যে মেহরাবে দণ্ডায়মান হতেন তখন তাঁর নূর আসমানের অধিবাসীদের জন্যে প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠতো যেমনিভাবে জমিনের অধিবাসীদের জন্যে আকাশের তারকা আলোকোজ্জ্বল দৃষ্ট হয়।”৫২
 বর্ণিত আছে : “যখন হযরত ফাতেমা (আ.) নামাজে বা ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন হতেন এবং তাঁর শিশু সন্তানরা ক্রন্দন করতো,তখন তিনি দেখতে পেতেন যে কোন একজন ফেরেশতা সে-ই শিশুটির দোলনা দোলাচ্ছে।”৫৩
 ইমাম বাকের (আ.) থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন : রাসূল (সা.) কোন কাজের জন্যে হযরত সালমানকে হযরত ফাতেমার গৃহে প্রেরণ করেন। হযরত সালমান বর্ণনা করছেন : “হযরত ফাতেমার গৃহের দ্বারে দাঁড়িয়ে সালাম জানালাম। সেখান থেকেই গৃহাভ্যন্তরে ফাতেমার কোরআন তিলাওয়াতের ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল আর হস্তচালিত যাঁতাকলটি যা আটা তৈরীর জন্যে ঘরে ব্যবহার করা হতো তার থেকে কিছু দূরে নিজে নিজে ঘুরছিল।”৫৪

Related Post

ওহী ও রেসালতের নবজাতক

Posted by - জানুয়ারি ২৯, ২০২০
নামঃ ফাতেমা,সিদ্দীকা,মুবারিকাহ্,তাহিরাহ্,যাকিয়্যাহ্,রাযিয়্যাহ্,মারযিয়্যাহ্,মুহাদ্দিসাহ্,এবং যাহরা।১ ডাক নাম: উম্মুল হাসান,উম্মুল হুসাইন,উম্মুল মুহ্সিন,উম্মুল আয়েম্মা এবং উম্মে আবিহা।২ কিছু সুপরিচিত উপাধি: যাহরা,বাতুল,সিদ্দীকা,কুবরা,মুবারিকাহ্,আযরা,তাহিরা এবং সাইয়্যেদাতুন নিসা।৩…

হযরত ফাতেমা (আ.)-এর শাহাদাত

Posted by - ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০
মহানবী (সা.) ইন্তেকালের পর বিভিন্ন রকম দুঃখ-কষ্ট হযরত ফাতেমার অন্তরে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ তাঁর জীবনটাকে তিক্ত…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »