সূরা “আল মাসাদ”- এর অনুবাদঃ
(আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রাহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রাহিম (অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যে।
আবু লাহাবের (শক্তিময়) দুই হাত-ই কাঁটা যাক আর সে ধ্বংস হোক।(১)
তার উপার্জিত কোন ধন সম্পদই তার কোন কাজে আসেনি।(২)
(জেনো রাখো!) অচিরেই সে (জাহান্নামের) লেলিহান শিখাযুক্ত আগুনে প্রবেশ করবে (৩)
এবং (জাহান্নামের) জ্বালানি কাঠ বহনকারীনি তার স্ত্রীও (জাহান্নামের লেলিহান শিখাযুক্ত আগুনে প্রবেশ করবে), (৪)
যার গলায় ঝুলানো রয়েছে খেজুর গাছের আঁশ দিয়ে তৈরী (মরণ) রশি।(৫)
✳সূরা “আল মাসাদ” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্যঃ
✅১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি একশত এগারতম।
✅২। নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি ছয় নম্বরে অবস্থিত।
✅৩। নাযিলের স্থানটি হচ্ছে পবিত্র মক্কা নগরী।
✅৪। আয়াতের সংখ্যা ৫।
✅৫। এ সূরাটির অভ্যন্তরে অবস্থিত শব্দ সংখ্যা ২২।
✅৬। এ সূরাটির অভ্যন্তরে মোট বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে ৮১ টি।
✅৭। এ সূরাটির অভ্যন্তরে “আল্ল-হ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ বার।
✅৮। *“আল মাসাদ”*- শব্দের অর্থ খেজুর গাছের বাকল বা আঁশ।
৯। সূরাটির অন্য নামঃ “তাব্বাত”- যার অর্থ ধ্বংস হোক বা কর্তন হোক। (দারমন ব কোরআন, পৃঃ নং ১৭০)।
✅১০। *সূরাটির বৈশিষ্ট্য:
এ সূরা আবু লাহাবের উপর অভিশাপ দিয়ে শুরু হয়েছে এবং তার অপবিত্র স্ত্রীকে তিরস্কারের মাধ্যমে শেষে হয়েছে।
✅১১। সামগ্রিকভাবে সূরা “আল মাসাদ” ধারাবাহিক দু’টি অংশে বিভক্ত হয়েছে। একঃ প্রথম তিন আয়াত আবু লাহাব সম্পর্কে। দুইঃ শেষের দুই আয়াত আবু লাহাবের স্ত্রীকে নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে।
✅১২। সূরা আল মাসাদ-এর শানে নুযুলঃ
“যখন আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর উপর প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার হুকুম নাযিল হয় তখন তিনি মক্কার কিছু গোত্রপতিদের নিয়ে ভোজের আয়োজন করেন। তিন দিনব্যাপী এ ভোজের তৃতীয় দিনে তিনি সকলের সামনে বক্তব্য রাখার পর ইসলামের সাহায্যে তাঁর হাতে বাইয়াত হবার আহ্বান জানান। সেখানে উপস্থিত হাযরাত আলী ছাড়া আর কেউ নবীর হাতে বাইয়াত হননি। সেই মজলিসেই আল্লাহর নবী(সা.) হাযরাত আলীকে নিজের ওয়াসী ও উত্তরাধীকারী ঘোষনা দেন। এ কথা শুনে আবু লাহাব বলে উঠে: “তোমার হাত কাটা যাক, হে মুহাম্মাদ! আমাদেরকে কী এ জন্যে ডেকেছো? এ উক্তির জবাবে এবং এই পরিপ্রেক্ষীতে সূরা আল মাসাদ নাযিল হয়।” (মানাক্বিবুল ইমাম আমিরুল মুমিনীন, পৃঃ নং ৩৮০)।
✅১৩। *সূরা “আল মাসাদ”-এর তিলাওয়াতের ফযিলতঃ
☑হাযরাত রাসূল(সা.): “যে ব্যক্তি এ সূরা (সূরা আল মাসাদ) পাঠ করবে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে এবং আবু লাহাবকে এক জায়গায় সমবেত করবেন না।” (দারমন ব কোরআন, পৃঃ নং ১৭০)।
☑হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি):
“যখনি তোমরা সূরা আল মাসাদ তিলাওয়াত করবে তখনি আবু লাহাবকে লানত দিবে। কেননা, আবু লাহাব এমন একজন ব্যক্তি যে আল্লাহর রাসূল (সা.) ও আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর উপর অবতীর্ণ সকল কিছুকে অস্বীকার করেছে।” (সাওয়াবুল আ’মাল, পৃঃ নং ১২৭)।
✅১৪। *সূরা “আল মাসাদ” -এর মাধ্যমে তদবীরঃ
☑হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি):
“যে ব্যক্তি কোন ব্যাথা বেদনার জন্যে সূরা আল মাসাদ তিলাওয়াত করবে তার ব্যাথা দূর হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এ সূরা তার বিছানায় তিলাওয়াত করবে সে আল্লাহর হেফাজতে নিরাপদে সময় পার করবে।” (তাফসীর আল বুরহান, খন্ড ৫, পৃঃ নং ৭৮৭)।
☑হাযরাত ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল বাক্বির (সালামুল্লাহি আলাইহি): “সূরা আল মাসাদ নাযিলের পর রাসূলে খোদা (সা.) নামাজে মাঝে মধ্যে এ সূরা তিলাওয়াত করতেন। একদা আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিল, যে ছিল আবু সুফিয়ানের বোন, সে রাসূল(সা.)-কে অপমান করার জন্যে আসছে দেখে জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূলকে বললো, উম্মে জামিল আসছে, সম্ভবত: সে আপনাকে গালিগালাজ করবে। রাসূল (সা.) বলেন, সে আমাকে দেখবে না। উম্মে জামিল রাসূল(সা.)-কে না দেখে তাঁর পাশ দিয়ে চলে গেলো। আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা.) ও উম্মে জামিল-এর মাঝখানে একটা পর্দা টেনে দিয়েছিলেন, তাই সে দেখতে পায়নি।” (আল খারায়িজ ওয়াল জারায়িহ, খন্ড ২, পৃঃ নং ৭৭৫)।