(আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রাহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রাহিম (অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যে)।
✅১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ- এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি একশত সাততম।
✅২। নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি সতের নম্বরে অবস্থিত।
✅৩। নাযিলের স্থানটি হচ্ছে পবিত্র মক্কা নগরী।
✅৪। আয়াতের সংখ্যা ৭।
✅৫। এ সূরাটির অভ্যন্তরে অবস্থিত শব্দ সংখ্যা ২৫।
✅৬। এ সূরাটির অভ্যন্তরে মোট বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে ১১৪ টি।
✅৭। এ সূরাটির অভ্যন্তরে “আল্ল-হ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ বার।
✅৮। “আল মাউন” শব্দটির মূল ধাতু “মাআন” । যার অর্থ “ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ প্রদান করা।”
✅৯। এ সূরার আরেকটি নাম হচ্ছে “আরাইতাল্লাযি”।
✳১০। সূরাটির বৈশিষ্ট্য:
এ সূরাটিতে কাফের ও কুফুরী গুণ সম্বলিত অবিচারক, অভদ্র ও নির্দয় ব্যক্তিদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে, যারা তাদের এ ন্যাক্কারজনক কাজগুলো দ্বারা অন্যদেরকেও প্রভাবিত করে।
✳১১। সামগ্রিকভাবে সূরা “আল মাউন”-এর আলোচ্য বিষয়ঃ
“কাফের, দ্বীনহীন ও মুসলমান নামধারী কুফুরী গুণসম্পন্ন মানুষদের পরিচয় তুলে ধরা।”
✳১২। সূরা “আল মাউন”-এর তিলাওয়াতের ফযিলত:
☑হাযরাত রাসূল(সা.): “যে ব্যক্তি সূরা আল মাউন তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন যদি সে তার বাৎসরিক যাকাত আদায় করে থাকে।” (তাফসীর আল মাজমাউল বায়ান, খন্ড ১০, পৃঃ নং ৫৪৬)।
☑হাযরাত রাসূল(সা.): “যে ব্যক্তি ঈশার নামাজের পর সূরা আল মাউন তিলাওয়াত করবে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং ফজরের সময় পর্যন্ত তাকে হেফাজত করবেন।” (তাফসীর আল বুরহান, খন্ড ৫, পৃঃ ৭৬৭)।
☑হাযরাত ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল বাক্বির (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি কোন ফরজ ও নফল নামাজে সূরা আল মাউন তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে নামাজ-রোজা কবুল হয়েছে এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং সে ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিনে দুনিয়ার কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না।” (সাওয়াবুল আ’মাল, পৃঃ নং ১২৬)।
☑ইমাম জাফার সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি আসর নামাজের পর সূরা আল মাউন তিলাওয়াত করবে সে পরবর্তি দিনের আসর পর্যন্ত আল্লাহর হেফাজত ও নিরাপদে থাকবে।” (সাওয়াবুল আ’মাল, পৃঃ নং ১২৬)।
✳১৩। *সূরা “আল মাউন” -এর মাধ্যমে তদবীর:
☑ [কোন বিশাল বিজয় লাভের উদ্দেশ্যে রবিবার দিবাগত রাত থেকে পনের রাত পর্যন্ত এবং প্রতি রাতে পনের বার করে এই সূরা তিলাওয়াত করবে। আর প্রতিবার এ সূরা শেষ হলে পড়বেঃ “ইয়া আইয়্যুহা ল্লাযিনা আমানু ইরকাউ ওয়াসজুদু ওয়া’বুদু রাব্বাকুম ওয়াফ্ আ’লুল খাইর লাআল্লাকুম তুফলিহুন।” অতঃপর পনের বার দরুদ পাঠ করবে এবং সব শেষে সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের হাজত কামনা করবে।] (দারমন ব কোরআন, পৃঃ নং ১৬৬)।
সূরা আল মাউন-এর শানে নুযুল
সূরা আল মাউন-এর শানে নুযুল সম্পর্কে বহু মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে যার একটি আরেকটির বিপরীত।
হযরত মাক্বাতিল ও হযরত কালবি (রহ.)-এর মতে এ সূরা আস ইবনে ওয়ায়িল সাহমী সম্পর্কে এবং হযরত সুদাঈ (রহ.)-এর মতে ওয়ালিদ ইবনে মুগাইরা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
হযরত ইবনে জারিহ (রহ.) বলেনঃ “আবু সুফইয়ান প্রতি সপ্তাহে উট অথবা দুম্বা জবেহ করতো। একদিন এক ইয়াতিম তার কাছে কিছু চাইলে সেই ইয়াতিমকে তার লাঠি দিয়ে আঘাত করলে এ সূরা নাযিল হয়।” (আসবাবুন নুযুল, পৃঃ নং ২৪৭)।
হযরত আত্বা হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করছেন যে, এ সূরা একজন মুনাফিকের ব্যাপারে নাযিল করা হয়েছে। [মাজমাউল বায়ান ফি তাফসীরিল কুরআন (ফারসী অনুবাদ), খণ্ড ২৭, পৃঃ নং ৩০৫]।
কিছু কিছু মুফাসসিরগণ মনে করেন, এ সূরার প্রথম অর্ধেক কাফেরদের কারণে এবং শেষ অর্ধেক মুনাফিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
কিছু মুফাসসিররা বলেছেনঃ “আবু জাহল ক্বিয়ামত অস্বীকার করেছিল। সে যখনি কোন ইয়াতিমকে দেখতো লাঠিপেটা করতো এবং তাদেরকে আহার থেকে বঞ্চিত করতো। আর অন্যদেরকে দান থেকে নিরুৎসাহিত করতো। তখন আল্লাহ তায়ালা আবু জাহলের পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এ সূরা অবতীর্ণ করেন।” (খুলাসাতুল মিনহাজ, খণ্ড ৬, পৃঃ নং ৩৪০; তাফসীর আল ইসনা আশারী, খণ্ড ১৪, পৃঃ নং ৩৫৭)।
উপসংহারে বলা যায়, সূরা আল মাউন সাধারণভাবে কাফেরদের সম্পর্কে এবং বিশেষভাবে আবু জাহল, আবু সুফইয়ান, ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা ও আস ইবনে ওয়ায়িল সাহমী সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তারা যখন উট কিংবা দুম্বা জবেহ করতো ইয়াতিম ও মিসকিনদেরকে লাঠি মেরে তাড়িয়ে দিতো। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা উক্ত সূরা অবতীর্ণ করেন। (তাফসীরুল জাওয়ামিউল জামিয়’, খণ্ড ৭, পৃঃ নং ৫০৫, ৫০৬)।