📚✳সূরা “আল ইখলাস” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য:
১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি একশত বারতম।
২। নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি বাইশ নম্বরে অবস্থিত।
৩। নাযিলের স্থানটি হচ্ছে পবিত্র মক্কা নগরী।
৪। আয়াতের সংখ্যা ৪।
৫। এ সূরাটির অভ্যন্তরে অবস্থিত শব্দ সংখ্যা ১৫।
৬। এ সূরাটির অভ্যন্তরে মোট বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে ৪৭ টি।
৭। এ সূরাটির অভ্যন্তরে “আল্ল-হ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২ বার।
৮। সূরাটির নামের অর্থ: “আল ইখলাস” শব্দটির অর্থ ঐকান্তিকতা। অর্থাৎ কারো জন্যে নিজেকে সপে দেয়া। এখানে সব কিছু আল্লাহর জন্যে সপে দেয়াকে ইখলাস বলা হচ্ছে।
৯। সুরা “আল ইখলাসের” অন্যান্য নামঃ “এ সূরার আরেকটি প্রসিদ্ধ নাম “আত তাওহীদ”। এর অর্থ হচ্ছে একত্ত্ববাদ অর্থাৎ আল্লাহর একক অস্তিত্ত্ব। তাছাড়াও সামাদ, আসাস, বারাআতুন, জামাল, মারেফাত, মা-নিয়, নূর, তাফরিদ, তাজরিদ ও ওয়ালাইয়াত এ সূরার অন্যতম কয়েকটি নাম।” (দারমন ব কোরআন, পৃঃ ১৭১)।
১০। সুরা আল ইখলাসের বৈশিষ্ট্য:
ক) কোরআনের নূর সূরা ইখলাস। (আদ দাআওয়াত, পৃঃ নং ৮৪)।
খ) সূরা ইখলাস কোরআনের এক তৃতীয়াংশ। (আদ দাআওয়াত, পৃঃ নং ২১৮)।
গ) এ সূরা সংক্ষিপ্তাকারে আল্লাহর পরিচয় এবং খোদায়ী সুউচ্চ বৈশিষ্ট সম্পর্কে ইসলামের সর্বোৎকৃষ্ট, পবিত্রতম ও সুউচ্চতর মূল বিষয়ের বর্ণনা প্রদান করে।
১১। সুরা “আল ইখলাস” তিলাওয়াতের ফযিলত:
🌴• হাযরাত আলী (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি সূরা আল ইখলাস ও সূরা আল ক্বাদর দিবা-রাত্রির যে কোন সময় তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা সে ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার কবরে এবং তার সামনে ও পেছনে এমন নূর প্রদান করবেন যা তাকে বেহেস্তে পৌছানো পর্যন্ত সাথে থাকবে।” (দাআওয়াত, পৃঃ নং ২১৯)।
🍎•হাযরাত ইমাম রিদ্বা (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি সূরা আল ইখলাস পাঠ করবে এবং তার উপর ঈমান রাখবে সে তাওহীদের পরিচয় লাভ করবে।” (উয়ুনু আখবারির রিদ্বা, খন্ড ২, পৃঃ নং ১২২)।
🍎•হাযরাত ইমাম রিদ্বা (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি সূরা আল ইখলাস পাঠ করবে সেই ব্যক্তির পক্ষ থেকে প্রথম আয়াত তিলাওয়াত করার পর আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি এক হাজার দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় আয়াত পড়া শেষ হলে আল্লাহ তার হাজারটা দোয়া কবুল করবেন এবং তৃতীয় আয়াত পড়ার পর তার হাজত পূরণ করে দিবেন। আর চতুর্থ আয়াত পড়া শেষ হলে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল হাজত পূরণ করে দিবেন।” (জামিয়ুল আখবার, পৃঃ ৫২)।
🍎•ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি তিন দিন অতিবাহিত হবার পরও সূরা আল ইখলাস না পড়ে সে ব্যক্তি অপমানিত হবে এবং ঈমানের বাঁধন তার উপর থেকে তুলে নেয়া হবে। যদি সে এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে কুফুরীতে মৃত্যুবরণ করবে।” (আল মাহাসিন, খন্ড ১, পৃঃ ৯৫)।
🍎•ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি এক দিন অতিবাহিত হবার পরও কোন নামাজে সূরা আল ইখলাস না পড়ে তাকে বলা হবে, তুমি নামাজীদের মধ্যে গণ্য নও।” (আল কাফি, খন্ড ২, পৃঃ ৪৫৫)।
১২। সূরা “আল ইখলাস” -এর মাধ্যমে তদবীর:
🌴•হাযরাত রাসূল (সা.): “যখনি কোন জালেম ক্ষমতাশালী ব্যক্তির নিকট কোন কাজের জন্যে যাবে, তার চোখের দিকে তাকিয়ে তিন বার সূরা আল ইখলাস পাঠ করবে এবং তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত বাম হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাখবে, (তাহলে তোমার উপর সে জুলুম করতে পারবে না)।” (আদ্ দাআওয়াত, পৃঃ নং ২৯৩)।
🌴•হাযরাত মুহাম্মাদ (সা.): “যদি কোন ব্যক্তি সফরে যাবার প্রাক্কালে দরজার দু্ই দিক ধরে এগার বার সূরা আল ইখলাস পড়ে তাহলে আল্লাহ তায়ালা নিজে সেই ব্যক্তির ফিরে আসা পর্যন্ত সেই ঘরের রক্ষাকারী হয়ে যাবেন।” (আদ্ দাআওয়াত, পৃঃ নং ২৯৫)।
🌴•হাযরাত রাসূল (সা.): “যে ব্যক্তি শুক্রবার দিনে অথবা শুক্রবারের পূর্ব রাতে দুইশত বার সূরা আল ইখলাস চার রাকাত নামাজের মধ্যে তিলাওয়াত করে অর্থাৎ দুই দুই করে চার রাকাত নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা আল ফাতিহার পর পঞ্চাশ বার করে সূরা আল ইখলাস পাঠ করে, তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, সেই গুনাহ সমুদ্র সমান হোক না কেন।” (মিসবাহুল মুজতাহিদ, পৃঃ নং ২৬১)।
🌴•হাযরাত মুহাম্মাদ (সা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, “বৃহস্পতিবার দিনে দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত নামাজ নিচের নিয়ম অনুসারে পড়বেঃ
১। ১ম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা ইখলাস।
২। ২য় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ২১ বার সূরা ইখলাস।
৩।৩য় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৩১ বার সূরা ইখলাস।
৪। ৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৪১ বার সূরা ইখলাস।
নামাজ শেষ করে ৫১ বার সূরা ইখলাস তিলাওয়াত এবং ৫১ বার দরুদ পাঠ করবে। অতঃপর সেজদায় গিয়ে একশত বার পড়বেঃ “ইয়া আল্লাহু ইয়া আল্লাহ”। সব শেষে দোয়া করবে, যা তুমি কামনা করবে তা-ই আল্লাহ কবুল করবেন।” আল্লাহর রাসূল বলেনঃ “যদি কোন ব্যক্তি উপরের পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যে, পাহাড়গুলো মাটির সাথে মিশে যাক, তাই হবে অথবা বৃষ্টি বর্ষন চায়, তাই হবে। অথবা আল্লাহ ও সেই ব্যক্তির মাঝে অবস্থিত পর্দা উঠিয়ে নেয়া হোক, তাই হবে। আল্লাহ রাগান্বিত হন ঐ ব্যক্তির উপর যে ব্যক্তি উপরের নামাজটি আদায় করার পর তাঁর কাছে কিছু হাজত প্রার্থনা করে না।” (কাশকুল উরুমিয়্যেই, পৃঃ নং ৩১৮, বিহারুল আনওয়ার কিতাব থেকে উদ্ধৃত)।
🌴•ইমাম আমিরুল মুমিনীন আলী (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি ফজর নামাজ বাদ সূরা আল ইখলাস এগার বার তিলাওয়াত করবে সে ঐদিন কোন প্রকার গুনাহতে অপবিত্র হবে না, তা যতই শয়তানের ইচ্ছার বিপরীতে হোক না কেন।” (সাওয়াবুল আ’মাল, পৃঃ নং ৩৪১)।
🌴•ইমাম আমিরুল মু’মিনীন আলী (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি ঘুমানোর পূর্বে সূরা আর ইখলাস ক্বারাআত করবে আল্লাহ তাকে রক্ষার জন্যে পঞ্চাশ জন ফেরেস্তা নিয়োগ দিবেন।” (মাকারিমুল আখলাক্ব, পৃঃ নং ২৮৯)।
🌴•ইমাম আমিরুল মু’মিনীন আলী (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যখনি গৃহে প্রবেশ করবে সূরা আল ইখলাস তিলাওয়াত করবে। কেননা, এ কাজ (ঘর থেকে) অভাব-অনটন দূর করে দেয়।” (আল খিসাল, পৃঃ নং ৬২৬)।
🍎•“যে ব্যক্তি হাযরাত ফাতিমা আয যাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা) ও তাঁর সন্তানদের ভালবাসে, সে যদি জ্বর থেকে মুক্তি পাবার লক্ষ্যে সূরা আল ইখলাস এক হাজার বার তিলাওয়াত করে আল্লাহকে হাযরাত ফাতিমা আয যাহরার কসম দেয় তাহলে সে জ্বর থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে।” (মাকারিমুল আখলাক্ব, পৃঃ নং ৩৬৬)।
🍎•হাযরাত ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল বাক্বির (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তিকে সূরা আল ফাতিহা ও সূরা আল ইখলাস আরোগ্য দান করে না তাকে আর কোন কিছু শাফা দিতে পারবে না। কেননা, সকল রোগের চিকিৎসা এই দু’টি সূরার মাধ্যমে করা হয়।” (ওয়াসায়িলুশ শিয়া, খন্ড ৬, পৃঃ ২৩৩)।
🍎•ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল বাক্বির (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যখনি তুমি দাঁতের ব্যাথা অনুভব করবে তখনি ঐ ব্যাথার স্থানে হাত রেখে সূরা আল ফাতিহা ও সূরা আল ইখলাস পাঠ করো। অতঃপর সূরা আন নামল-এর ৮৮ নং আয়াত তিলাওয়াত করবে। দেখবে, সব ব্যাথা ভাল হয়ে গেছে।” (ত্বিব্বুল আয়িম্মা, পৃঃ নং ২৪)।
🍎•হাযরাত ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি চক্ষু ব্যাথা উপশমের জন্যে চোখের উপর সূরা আল ইখলাস তিলাওয়াত করে সেই ব্যক্তির চোখের ব্যাথা ভাল হয়ে যাবে।” (তাফসীর আল বুরহান, খন্ড ৫, পৃঃ নং ৭৯৮)।
🌴•হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি সূরা আল ইখলাস একবার তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা তার উপর বরকত নাযিল করবেন। যে ব্যক্তি দুইবার তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ও তার পরিবারকে বরকত দান করবেন। যে ব্যক্তি তিনবার তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে, তার পরিবার ও তার প্রতিবেশীকে বরকত দান করবেন। আর যে ব্যক্তি ১২ বার এ সূরা তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা বেহেস্তে তার জন্যে বারটি প্রাসাদ তৈরী করবেন। যে ব্যক্তি একশত বার সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা অন্যায়ভাবে হত্যা ও অন্যের সম্পদ ভোগের ন্যায় গুনাহ ছাড়া তার পঁচিশ বছরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি চারশত বার এ সূরা তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে চারশত শহীদের সাওয়াব দান করবেন। যে ব্যক্তি এক দিবা-রাত্রিতে এক হাজার বার এ সূরা তিলাওয়াত করবে সে বেহেস্তে তার অবস্থান অবলোকন না করে মৃত্যুবরণ করবে না।” (আল কাফি, খন্ড ২, পৃঃ নং ৬১৯)।
🌴•হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর পূর্বে একশত বার সূরা আল ইখলাস তিলাওয়াত করবে আল্লাহ সেই ব্যক্তির পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।” (আল কাফি, খন্ড ২, পৃঃ নং ৫৩৯)।
🌴•হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হবার আগে দশ বার সূরা আল ইখলাস তিলাওয়াত করে, সেই ব্যক্তির ফিরে আসা পর্যন্ত সর্বক্ষণ সেই ঘর আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকবে।” (আল কাফি, খন্ড ২, পৃঃ নং ৩৯৪)।
🌴•হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি জালেম ও শক্তিশালী ক্ষমতাবান ব্যক্তির কাছে যাবার আগে সূরা আল ইখলাস তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই জালেমের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন।” (সাওয়াবুল আ’মাল, পৃঃ নং ১২৯)।
🍎•“যদি কেউ সূরা আল ইখলাস একুশ বার তিলাওয়াত করে, আল্লাহ তায়ালা বেহেস্তে তার জন্যে একটি প্রাসাদ তৈরী করবেন এবং যে ব্যক্তি ৪১ বার এ সূরা তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তায়ালা তার অতীত ও ভবিষ্যতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।” (আল ফিক্বহুর রিদ্বা, পৃঃ নং ১৩৮)।
🍎•“অর্থশালী ও বিত্তবান হবার লক্ষ্যে তিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রের প্রতি রাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। প্রতি রাকাতে দশ বার সূরা ফাতিহা ও এগার বার সূরা ইখলাস পড়বে। নামাজের সালাম শেষ করে একশত বার দরুদ পাঠ করবে। ইনশাআল্লাহ অতি দ্রুত বিত্তবান হয়ে যাবে।” (দারমন ব কোরআন, পৃঃ নং ১৭৭)।📖📚🌷