সূরা আর রহমান-এর বঙ্গানুবাদ ও সামগ্রিক কিছু তথ্য

1493

🤲 بِسْمِ الّٰلهِ الرَّحْمٰنِ الرَحِيْمِ ⬅️

🗣️ (বলো! আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রহিম (অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তির জন্যে)।

✍️ সূরা রহমান-এর বঙ্গানুবাদ ও সামগ্রিক তথ্য ⬇️

দয়াময় (আল্লাহ)!(১)
তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন।(২)
তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ।(৩)
তিনি তাকে [=সেই মানুষকে] কথা বলা শিখিয়েছেন।(৪)
সূর্য ও চন্দ্র সুক্ষ হিসাব কিতাবের মাধ্যমে চলমান।(৫)
তারকা ও বৃক্ষরাজী উভয়ে (আল্লাহকে) সেজদা করে।(৬)
তিনি আসমানকে করেছেন সমুন্নত এবং (সকল পার্থিব ও অপার্থিব বিষয় মাপার জন্যে) স্থাপন করেছেন মানদন্ড(৭)
যেন তোমরা দাড়ীপাল্লাতে (পরিমাপের জন্যে) সীমালংঘন না করো।(৮)
পরিমাপকে ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করো এবং ওজন মাপে কম করো না।(৯)
তিনি ভুমন্ডলকে স্থাপন করেছেন সৃষ্ট জীবের জন্যে।(১০)
এতে রয়েছে ফল-মূল ও আবরণযুক্ত খেজুর বৃক্ষ(১১)
এবং খোসাবিশিষ্ট দানা ও সুগন্ধ গুল্ম।(১২)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(১৩)
তিনি [=আল্লাহ] মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুস্ক মৃত্তিকা থেকে।(১৪)
আর জ্বীনকে তিনি [=আল্লাহ] সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে।(১৫)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(১৬)
তিনিই দুই পূর্ব (উদয়াচল) ও দুই পশ্চিম (অস্তাচলের) নিয়ন্তা।(১৭)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(১৮)
তিনি (পাশাপাশি) প্রবাহিত করেন দুটি (ভিন্ন ভিন্ন মিঠা ও নোনা, উষ্ণ ও শীতল) সাগর, যদিও তারা পরস্পর মিলিত হয়,(১৯)
তাদের (দুই সাগরের) মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।(২০)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(২১)
উভয় সাগর থেকে নির্গত হয় মুক্তা ও প্রবাল।(২২)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(২৩)
সমুদ্রে বিচরণশীল পর্বত সদৃশ নৌযানসমূহ তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন।(২৪)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(২৫)
ভূপৃষ্ঠের বুকে অবস্থিত সকল প্রাণী নশ্বর(২৬)
এবং অবিনশ্বর শুধু তোমার প্রতিপালকের জাতসত্তা (এখানে وَجْهٌ শব্দের আভিধানিক অর্থ চেহারা বা মুখমণ্ডল বুঝানো হয়েছে, যা কারো সামনাসামনি হলে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু যখন وَجْهٌ শব্দ আল্লাহর ব্যাপারে ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হয় তাঁর পরিত্র জাতসত্তা), যিনি মহিমাময় ও সম্মানিত।(২৭)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(২৮)
আসমানসমূহ ও ভুমণ্ডলে যে সকল প্রাণী বিদ্যমান, তারা সকলেই তাঁর [=আল্লাহর] কাছে আবেদন করে থাকে, প্রতিনিয়ত তিঁনি [=আল্লাহ] ভিন্ন ভিন্ন শানে ও কাজে রত আছেন।(২৯)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৩০)
হে দুই ভারবাহী প্রাণী [=মানুষ ও জ্বীন]! আমি শীঘ্রি তোমাদের (হিসাবের) প্রতি মনোনিবেশ দিব।(৩১)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৩২)
হে জ্বীন ও ইনসান! যদি তোমরা আসমানসমূহ ও ভুমণ্ডলের সীমানা অতিক্রম করতে পার, তাহলে অতিক্রম করে দেখাও। কিন্তু তোমরা তা পারবে না, অসাধারণ কোন শক্তি ব্যতীত।(৩৩)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৩৪)
(ক্বিয়ামতের সময়ে) তোমাদের [=জ্বীন ও ইনসানের] প্রতি প্রেরিত হবে অগ্নিশিখা ও ধুম্রপুঞ্জ, তখন তোমরা কারো কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারবে না।(৩৫)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৩৬)
(ক্বিয়ামতের) ঐ সময়ে আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। অতঃপর তা গোলাপি-রঙ্গে রঞ্জিত গলিত তেলের মত হয়ে যাবে।(৩৭)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৩৮)
সেদিন মানুষ ও জ্বীনকে তাদের পাপ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে না (কেননা, সেদিন সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে)।(৩৯)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৪০)
(সেদিন) অপরাধীদেরকে তাদের চেহারার মাধ্যমে সনাক্ত করা হবে। আর তাদেরকে মাথার ঝুঁটি ও পা ধরে পাকড়াও করে (জাহান্নামের দিকে) নিয়ে যাওয়া হবে।(৪১)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৪২)
এটাই সেই জাহান্নাম, যা অপরাধীরা অস্বীকার করতো।(৪৩)
তারা জাহান্নামের আগুন ও ফুটন্ত পানির মাঝখানে ছুটাছুটি করবে।(৪৪)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৪৫)
আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের মাক্বাম ও পদমর্যাদাকে ভয় করে চলে, তার জন্যে রয়েছে দু’টি জান্নাত [=বাগান]।(৪৬)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৪৭)
(জান্নাতের) উভয় বাগান-ই বিভিন্ন প্রকার নেয়ামতে (ও শাখা-পল্লব বিশিষ্ট বৃক্ষে) পরিপূর্ণ।(৪৮)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৪৯)
(জান্নাতের) সেই দু’টি বাগানে থাকবে প্রবাহমান দু’টি ঝর্ণাধারা(৫০)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৫১)
(জান্নাতের) সেই দু’টি বাগানে প্রতিটি ফল, দুই রকম হবে।(৫২)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৫৩)
সেখানে তারা [=যারা দুনিয়াতে আল্লাহর মাক্বামকে ভয় করেছিল] পুরু রেশমের আস্তর বিশিষ্ট গালিচায় হেলান দিয়ে [=আরাম করে] বসবে এবং (জান্নাতের) সেই দু’টি বাগানের ফল তাদের নিকটবর্তী হবে।(৫৪)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৫৫)
সেগুলোর [=জান্নাতের সেই বাগানগুলোর] মধ্যে এমনসব রমণী থাকবে যারা তাদের স্বামী ছাড়া অন্য কোন দিকে মন দিবে না, আর তাদেরকে [=ঐসব রমণীকে] এর পূর্বে কোন মানুষ ও জ্বীন স্পর্শ পর্যন্ত করেনি।(৫৬)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৫৭)
তারা [=ঐসব রমনী] যেন পদ্মরাগ মণি ও প্রবাল(৫৮)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৫৯)
উত্তম কাজের জন্য উত্তম প্রতিদান ব্যতীত আর কি হতে পারে?(৬০)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৬১)
(জান্নাতের) ঐ দু’টি বাগান ব্যতীত আরও দু’টি বাগান রয়েছে(৬২)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৬৩)
মনোরম ও ঘন সবুজ এ বাগান দু’টি।(৬৪)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৬৫)
উভয় উদ্যানে রয়েছে উচ্ছলিত দু’টি ঝর্ণাধারা।(৬৬)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৬৭)
সেখানে রয়েছে ফলমূল, খেজুর ও ডালিম।(৬৮)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৬৯)
সেগুলোর [=জান্নাতের সেই বাগানগুলোর] মাঝে থাকবে সুশীলা সুন্দরী (রমণী)-রা।(৭০)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৭১)
(আরো থাকবে) এমনসব হুর, যারা থাকবে (জান্নাতের) তাবুগুলোতে সুরক্ষিত ও আবৃত।(৭২)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৭৩)
তাদেরকে [=ঐসব রমনীকে] ইতোপূর্বে কোন মানুষ ও জ্বীন স্পর্শ পর্যন্ত করেনি।(৭৪)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৭৫)
তারা [=সেই সকল জান্নাতীরা] সবুজ তাকিয়া ও সুন্দর গালিচার উপর হেলান দিয়ে বসবে।(৭৬)
সুতরাং তোমরা (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?(৭৭)
কত বরকতময় ও অবিনশ্বর তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহিমাময় ও মহাসম্মানিত!(৭৮)
📚✳️ সূরা “আর রহমান” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য:
✅১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ-এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি পঞ্চান্নতম।
✅২। নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি সাতানব্বই নম্বরে অবস্থিত।
✅৩। নাযিলের স্থানটি হচ্ছে পবিত্র মদীনা নগরী।
✅৪। আয়াতের সংখ্যা ৭৮।
✅৫। এ সূরাটির অভ্যন্তরে অবস্থিত শব্দ সংখ্যা ৩৫১।
✅৬। এ সূরাটির অভ্যন্তরে মোট বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে ১৬৩৬টি।
✅৭। সূরা “আর রহমান”-এর অর্থঃ পরম করুনাময় যা আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ গুণবাচক নাম ও উপাধী। এটি এমন একটি পবিত্র ও সৌন্দর্যমন্ডিত শব্দ যা রহমত, করুনা ও অনুগ্রহের বার্তা বহন করে।
✅৮। সূরা “আর রহমান”-এর অপর নামঃ “আ’রুসুল কুরআন”। এর বাংলা অর্থ হচ্ছেঃ “কুরআনের বধু।”
✅৯। সূরা “আর রহমান”-এর বৈশিষ্ট্যঃ
একঃ কুরআনের বধু সূরা “আর রহমান”।
দুইঃ এ সূরা ছোট্ট ছোট্ আয়াত দ্বারা গঠিত এবং এর প্রতিটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতসমূহের বর্ণনা করা হয়েছে।
✅১০। সামগ্রিকভাবে সূরা “আর রহমান”-এর আলোচ্য বিষয়ঃ
✍️একঃ আল্লাহ তায়ালার বিস্তৃত নেয়ামতসমূহ।
✍️দু্ইঃ মানুষের জন্যে তিনটি খোদায়ী মহা নেয়ামতের স্মরণ, কুরআন, সৃষ্টি ও বয়ান বা কথা বলা।
✍️তিনঃ পৃথিবীতে সার্বভৌমত্ব, যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও সূক্ষ্ম হিসেব বিরাজমান।
✍️চারঃ সাম্য, ন্যয়বিচার ও মাপক।
✍️পাঁচঃ আল্লাহর নেয়ামতসমূহের একটি বিশাল অংশের গণনা।
✍️ছয়ঃ মানুষের বিবেককে জাগ্রতকরণ।
✍️সাতঃ পুনরুত্থান ও তার সংঘটনের গুণগত অবস্থার বর্ণনা।
✅১১।সূরা “আর রহমান”-এ অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তুসমূহঃ
✍️একঃ সূরার শুরুর আয়াতগুলোতে ভুমিকাস্বরূপ সৃষ্টি, শিক্ষা, প্রশিক্ষন, হিসেব-নিকেশ, মাপক ও মানদন্ড, মানুষের সুবিধা ভোগের উপকরণসমূহের ন্যায় মহা নেয়ামতসমূহ এবং দেহ ও রুহের খোরাক সমন্ধে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।
✍️দু্ইঃ জ্বীন ও মানুষ সৃষ্টির গুণ বৈশিষ্ট্যের উপর যৎসামান্য বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
✍️তিনঃ আসমানসমূহ ও ভুমন্ডলে আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে।
✍️চারঃ এ পার্থিব জগতের নেয়ামতসমূহের উর্দ্ধে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ও মনযোগের সাথে পরকালের বিভিন্ন নেয়ামতসমূহ যেমন বাগানসমূহ, ঝর্ণাধারা, ফলমূল, বিশ্বস্ত ও সুন্দরী সুন্দরী স্ত্রী ও বিভিন্ন প্রকার পোশাকের বিবরণ প্রদান করা হয়েছে ।
✍️পাঁচঃ এ সূরা অপরাধীদের পরিণতি ও কিছু বেদনাদায়ক শাস্তি সম্পর্কে সামান্য ইঙ্গিত প্রদান করেছে। তবে, যেহেতু এ সূরার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় খোদায়ী রহমত, তাই এ অংশে অপরাধীদের সম্পর্কে বিশদ কোন আলোচনা করা হয়নি। উপরন্তু জান্নাতের নেয়ামতসমূহ সম্পর্কে এমনভাবে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে যেন মনে হয়, মুমিনদের অন্তরসমূহকে আনন্দ ও প্রত্যাশার সাগরে তলিয়ে দেয়া এবং তাদের অন্তরসমূহ থেকে দুঃখ বেদনার ধূলোবালি সরিয়ে দিয়ে উদ্দীপনার চারাগাছ রোপন করা হয়েছে।
✍️ছয়ঃ فَبِأَيِّ آلَاء رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (ফাবি আইয়ি আ-লা-ই রব্বিকুমা তুকাযযিবান)-আয়াতটির ঘন ঘন পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে সৃষ্টি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও চিত্তাকর্ষী সূর দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়েছে এই সূরা। আর তার সাথে যোগ হয়েছে ‍সুন্দর বিষয়বস্তু, যা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ কারণে এটা অবাক হবার কিছুই নেই যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
لِکُلِّ شَیٍّ عَرُوْسٌ وَ عَرُوْسُ الْقُرآنِ سُوْرَةُ الرَّحْمَنِ.
“প্রত্যেক বস্তুর বধূ আছে। আর কোরআনের বধূ হচ্ছে সূরা আর রহমান।” (মুসতাদরাকুল ওয়াসায়িল, খণ্ড ৪, পৃঃ নং ৩৫১)।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, عَرُوْسٌ (আরুস) শব্দের অর্থ বধু, যা বাংলা ভাষায় শুধূমাত্র একজন নারীর ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু আরবদের মধ্যে আরুস বা বধূ শব্দটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে- যতক্ষণ পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকবে ততক্ষণ, ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর এ ধরনের অনুষ্ঠানে যেহেতু বর ও কণে সুন্দরতম ও সর্বোত্তম এবং পরিপূর্ণ সম্মানের অবস্থায় থাকে, তাই এ শব্দটি কোন সুন্দরতম ও সম্মানজনক ব্যক্তি ও বিষয়ের জন্যে ব্যবহার হয়ে থাকে। এ জন্যেই সূরা “আর রহমান”-কে কুরআনের বধু বলা হয়েছে।
🔷১২। সূরা “আর রহমান”-এর ফজিলতঃ
যেহেতু এ সূরা, তিলাওয়াতকারী মানুষের অন্তরে কৃতজ্ঞতার অনুভুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত এবং দুনিয়া ও আখেরাতের পার্থিব ও আধ্যাত্মিক নেয়ামতসমূহের উল্লেখের মাধ্যমে বন্দেগী ও আনুগত্যের আগ্রহ বৃদ্ধি করে দেয়, সেহেতু এ সূরা তিলাওয়াতের ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে প্রচুর ফজিলতের বর্ণনা করা হয়েছে।
🌴• রাসূল(সা.): “যে ব্যক্তি সূরা “আর রহমান” তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ পাক তার দূর্বলতা ও অপারগতার উপর রহম করবেন। ফলে, সে আল্লাহর নেয়ামতগুলোর শোকর আদায় করার শক্তি অর্জন করবে।” (মাজমাউল বায়ান, খণ্ড ৯, পৃঃ নং ৩২৬)।
🌴• হযরত ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক্ব আলাইহিস সালামঃ “যে ব্যক্তি সূরা “আর রহমান” তিলাওয়াত করবে এবং প্রতিবার فَبِأَيِّ آلَاء رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ (ফাবি আইয়ি আ-লা-ই রব্বিকুমা তুকাযযিবান)-আয়াতটি তিলাওয়াতের পর
«لاَبِشَیْءٍ مِنْ آلاَئِکَ رَبِّ اَکْذِبُ»
[লা বিশাইয়িম্ মিন আ-লা-ইকা রব্বি আকযিব] পড়বে, সে ব্যক্তি যদি সেদিন (দিনে অথবা রাতে) মারা যায় তাহলে তার মৃত্যু শহীদী মৃত্যু হিসেবে গণ্য হবে।
(সাওয়াবুল আ’মাল, পৃঃ নং ১১৬)।
🌴• হযরত ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ আলাইহাস সালামঃ “সূরা “আর রহমান” তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি আসমানসমূহ ও যমিনের মালাকুতে জান্নাতুল ফেরদৌসে বসবাস করবে।” (কানযুল উম্মাল, খণ্ড ২, পৃঃ নং ২৬৪)।
🌴• হযরত ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক্ব আলাইহিস সালামঃ “সূরা আর রহমান ক্বারাআত ও এর উপর আমল করা থেকে বিরত থেকো না। কেননা এই সূরা মুনাফিক্বদের অন্তরে স্থায়ী হয় না। আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিনে এই সূরাকে সর্বোত্তম ছুরত ও সুগন্ধময়তার সাথে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম স্থানে উপস্থাপন করবেন। তখন আল্লাহ বলবেন, কোন্ ব্যক্তি দুনিয়াতে তোমাকে সর্বদা ক্বারাআত করেছে? সূরা আর রহমান উত্তরে বলবে, হে পরোয়ারদিগার! এই লোকগুলো, এই লোকগুলো। এর পর ঐ লোকগুলোর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আল্লাহ ঐ মানুষদেরকে বলবেন, তোমরা যাকে মন চায় শাফায়াত করতে পারো। আর জান্নাতে প্রবেশ করো এবং যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসবাসের স্থান করে নাও।”(সাওয়াবুল আ’মাল, পৃঃ নং ১১৬)।

🔷১৩। সূরা “আর রহমান”-এর মাধ্যমে তদবীর:
🌴• একঃ সকল কাজ সহজ হয়ে যাবেঃ
হযরত রাসূল(সা.): “যদি কেউ “আর রহমান” লিখে তার সঙ্গে রাখে তাহলে আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তি সকল কঠিন কাজ সহজ করে দিবেন।”
(আল বুরহান ফি তাফসিরিল ক্বুরআন, খণ্ড ৫, পৃঃ নং ২৩৭)।

🌴• দুইঃ চোখের ব্যাথা দূরীকরণঃ
হযরত ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক্ব আলাইহিস সালামঃ “যদি চোখের ব্যাথায় কষ্টপ্রপ্ত ব্যক্তি সূরা “আর রহমান” লিখে সঙ্গে রাখে তাহলে তার চোখের ব্যাথা ভাল হয়ে যাবে।” (আল বুরহান ফি তাফসিরিল ক্বুরআন, খণ্ড ৫, পৃঃ নং ২৩৮)।
🌴• তিনঃ প্লিহা ও হার্টের রোগীর সুস্থতাঃ
হযরত কাফআমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত দোয়ার কিতাব “আল মিসবাহ”-তে লিখেছেন, যদি কেউ সূরা আর রহমান লিখে তা ধুঁয়ে সেই পানি পান করে তাহলে তার প্লিহা, বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা ও হার্টের সকল রোগ ভাল হয়ে যাবে। আর যদি এই সূরা লিখে সঙ্গে রাখে তাহলে মৃগী রোগ ও চোখের ব্যাথা ভাল হয়ে যাবে।” (আল মিসবাহ লি কাফআমী, পৃঃ নং ৪৫৮)।
🌴• পাঁচঃ সহজে সন্তান প্রসবঃ
“সন্তান সহজে প্রসব করার জন্যে «سنفرغ لکم ایها الثقلان فبای الاء ربکما تکذبان» – আয়াতটিকে লিখে প্রসবকারী নারীর কোমড়ে বেধে রাখবে। সন্তান প্রসব হয়ে গেলে খুলে দিবে।” (দারমন ব কোরআন, পৃঃ নং ১০৮)।
==========================

Related Post

সূরা আল মাউন-এর অনুবাদ

Posted by - ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
 بِسْمِ الّٰلهِ الرَّحْمٰنِ الرَحِيْمِ   (বলো! আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রহিম (অসীম…

সূরা আল-ইখলাস

Posted by - আগস্ট ১৫, ২০১৯
সূরা “আল ইখলাস”-এর অনুবাদঃ (আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রাহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রাহিম (অসীম দয়াবান…

সূরা “আল ক্ব-রিআ”-এর অনুবাদ ও সামগ্রিক কিছু তথ্য

Posted by - ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০
 بِسْمِ الّٰلهِ الرَّحْمٰنِ الرَحِيْمِ  (বলো! আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রহিম (অসীম…

সূরা আল ফালাক্ব-এর বঙ্গানুবাদ

Posted by - আগস্ট ১১, ২০১৯
(আমি) আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যিনি রাহমান (পরম করুণাময় সকল সৃষ্টির জন্যে), যিনি রাহিম (অসীম দয়াবান কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যে)।…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »