📚 সূরা “আন নাস” সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্যঃ
১। কোরআনের বর্তমান উসমানী মুসহাফ এর ক্রমিক নম্বর অনুসারে এ সূরাটি একশত চৌদ্দতম।
২। নাযিল হওয়ার ধারাবাহিকতা অনুসারে এ সূরাটি একুশ নম্বরে অবস্থিত।
৩। নাযিলের স্থানটি হচ্ছে পবিত্র মক্কা নগরী।
৪। আয়াতের সংখ্যা ৬।
৫। এ সূরাটির অভ্যন্তরে অবস্থিত শব্দ সংখ্যা ২০।
৬। এ সূরাটির অভ্যন্তরে মোট বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে 79 টি।
৭। এ সূরাটির অভ্যন্তরে “আল্ল-হ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ বার।
৮। সূরাটির নামের অর্থ: “আন নাস”, যার অর্থ মানুষ।
৯। সুরাটির আরেকটি নাম হচ্ছেঃ “মুআ’ওউইযা”-যার অর্থ আশ্রয়দাতা।
১০। সূরাটির বৈশিষ্ট্য:
শয়তানী বদগুণে প্রশিক্ষিত মানুষদের হাত থেকে এবং শয়তানী ক্ষমতা ও শয়তানদের চক্রান্ত ও প্ররোচণা থেকে রক্ষার ব্যাপারে আল্লাহ যে একমাত্র আশ্রয়দাতা, তার বর্ণনা।
১১। সামগ্রিকভাবে এ সূরাটির আলোচ্য বিষয়ঃ
সূরা “আন নাস” দু’টি অংশে বিভক্তঃ
একঃ “আল্লাহ পরিচিতি”-এর ব্যাপারে এ সূরার প্রথম তিনটি আয়াত আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেয়ার কথা বর্ণনা করছে।
দুইঃ অপর তিনটি আয়াত জ্বিন ও মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রনা ও ক্ষতি সমন্ধে আলোচনা করেছে।
১২। সূরা “আন নাস” তিলাওয়াতের ফযিলত:
🌴•হাযরাত রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত যে, “যে ব্যক্তি সূরা আল ফালাক্ব ও আন নাস পাঠ করবে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় ভাগ্যবান, যে ব্যক্তি সকল নবী-রাসূলদের কিতাব পাঠ করতে সক্ষম হয়েছে।” (তাফসীর আল মাজমাউল বায়ান, খন্ড ১০, পৃঃ নং ৪৯১)।
🌴•“সূরা আল ফালাক্ব ও সূরা আন নাস-কে মুআ’ও-উইযিন নামকরণ করার কারণ সম্পর্কে বলা হয়ে থাকেঃ “আল্লাহর রাসূর (সা.) সর্বদা হাসান ও হুসাইনকে এই দুটি সূরা দিয়ে তাবিজ পড়িয়ে দিতেন এবং এ দু’টো সূরা পাঠ করে তাঁদেরকে আল্লাহর আশ্রয়ে ছেড়ে দিতেন।” (আল মানাক্বিব লি ইবনে শহরে আশুব, খন্ড ৩, পৃঃ নং ১৫৫)।
১৩। সূরা “আন নাস” -এর মাধ্যমে তদবীর:
🌴•মহানবী হাযরাত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল ইখলাস, সূরা আল ফালাক্ব ও সূরা আন নাস তিলাওয়াত করবে সে সম্পূর্ণ ক্বুরআন তিলাওয়াতকারীর ন্যায় গণ্য হবে এবং সে সকল গুনাহ থেকে এমনভাবে বের হয়ে আসবে যেন মায়ের পেট থেকে সদ্য ভুমিষ্ট হয়েছে। যদি সে সেই দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার মৃত্যু শাহাদাত বরণকারীর মৃত্যু হিসেবে গণ্য হবে।” (আল বালাদুল আমিন, পৃঃ নং ৩৩)।
🌴•হাযরাত রাসূল (সা.): “লোকজন কেন নিজেদেরকে সূরা আল ফালাক্ব ও সূরা আন নাস দিয়ে তাবিজ করে রাখে না? জানি না। তাবিজ করার জন্যে এ দু’টি সূরার চেয়ে উত্তম আর কিছু পাওয়া যাবে না।” (তাফসীর আদ দুররুল মানসুর, খন্ড ৬, পৃঃ নং ৪১৫)।) এ দু’টি সূরার মাধ্যমে নিজের জন্যে এবং নিজের পরিবারের জন্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। সাথে সাথে হিংসুক ও অমঙ্গল কামনাকারীদের সকল চক্রান্তও নস্যাৎ করা যায়।
🍎•হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, “যখনি আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর দেহের কোন অঙ্গ ব্যাথা করতো তখনি তিঁনি সূরা আল ইখলাস, আল ফালাক্ব ও আন নাস তাঁর ডান হাতের তালুতে পাঠ করে ব্যাথিত স্থানে মালিশ করে দিতেন, ব্যাথা ভাল হয়ে যেতো।” (মুসতাদরাকু সাফিনাতিল বিহার, খন্ড ৭, পৃঃ নং ৪৭৬)।
🍎•হাযরাত ইমাম জা’ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস্ সাদিক্ব (সালামুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত যে, “একবার লাবিদ ইবনে আ’সাম নামক একজন ইয়াহুদী হাযরাত মুহাম্মাদ(সা.)-কে যাদু করে। তিঁনি এ যাদুর প্রভাবে ঘর থেকে বের হবার সময় দরজা দেখতে পেতেন না, তাই তিঁনি দরজা ধরে দেখতেন। আল্লাহ এ যাদু নষ্ট করার জন্যে আল ফালাক্ব ও আন নাস সূরা দু’টি নাযিল করেন।” (ত্বিব্বুল আয়িম্মা, পৃঃ নং ১১৪)।
🍎•বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত আছে যে, “যদি কেউ সূরা আল ফালাক্ব ও আন নাস তিলাওয়াত করে তাহলে সে আরোগ্য লাভ, যাদু-টোনা থেকে নিষ্কৃতি এবং অনবরত সুস্থতার ব্যাপারে রহমত প্রাপ্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সূরা আন নাস তিলাওয়াত করবে সে শয়তানের ধোঁকা থেকে নিরাপদ থাকবে।” (মুসতাদরাক আল ওয়াসায়িল, খন্ড ৪, পৃঃ নং ৩৭০)।
🍎•ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল বাক্বির (সালামুল্লাহি আলাইহি): “যে ব্যক্তি রাতে স্বপ্নে ভীতিকর কিছু দেখে সে যেন সূরা আল ফালাক্ব, আন নাস ও আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করে ঘুমায়।” (মান লা ইহদ্বারুহুল ফাক্বিহ, খন্ড ১, পৃঃ নং ৪৬৯)।
🍎•ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল বাক্বির (সালামুল্লাহি আলাইহি): “একদা রাসূল (সা.) কঠিন ব্যাথায় যন্ত্রনা ভোগ করছিলেন। তখন হাযরাত জিবরাঈল (আ.) ও হাযরাত মিকাইল (আ.) তাঁর কাছে আসেন। হাযরাত জিবরাঈল (আ.) তাঁর মাথার কাছে বসে সূরা আল ফালাক্ব এবং হাযরাত মিকাইল (আ.) নবীজীর পায়ের কাছে বসে সূরা আন নাস পড়ে তাবিজ করে দেন।” (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৮, পৃঃ নং ৭১)।
🍎•“যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল ফালাক্ব ও সূরা আন নাস পাঠ করবে সে জ্বিনের ক্ষতি এবং শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে। আর যদি এ দু’টি সূরা লিখে তাবিজ করে কোন শিশুর গলায় পড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে সেই শিশু জ্বীনদের ক্ষতি এবং সকল বিরক্তকারীদের হাত থেকে নিস্তার লাভ করবে।” (আল মিসবাহ কাফহামী, পৃঃ নং ৪৬১)।
🍎•“যদি কোন ব্যক্তি সত্তুর বার বৃষ্টির পানিতে সূরা আল ফাতিহা, আল ইখলাস, আল ফালাক্ব, আন নাস, আল কাফিরুন, আল ক্বাদর ও আয়াতুল কুরসী এবং আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও দরুদ পড়ে ফু দেয় আর সেই পানি থেকে কেউ পর পর সাত দিন সকাল ও সন্ধ্যায় পান করে তাকে আল্লাহ আরোগ্য দান করবেন। ফলে তার যৌন রোগ সেরে যাবে এবং সে যদি পুত্র অথবা কণ্যা সন্তান কামনা করে তাহলে আল্লাহ তাকে সন্তান দান করবেন।” (যাদুল মাআ’দ, পৃঃ নং ৪৮৯)।