শূন্য দরগাহ্

798 0

[বায়োজিদ বোস্তামী অবশ্যই হাতে গুনা কয়েকজন আল্লাহর মহান অলী ও অত্যন্ত প্রভাবশালী ইসলামী মহা আরেফ ও সাধকদের মধ্যে গণ্য। হকওয়ালার রাহে মহাপুরুষদের উপর তাঁর অবিশ্বাষ্য প্রভাবের কারণে বিভিন্ন কাহিনী ও বক্তব্য অন্যান্য সকল আরেফ-অলীদের চেয়ে বেশী বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থাদিতে। হযরত শেখ ফরিদউদ্দিন আত্তার নিশাপুরী তার বিখ্যাত ‘তায্কিরাতুল আওলিয়া’ কিতাবে -যাতে আরেফ-অলীদের মাক্বাম-মর্যাদা ও অবস্থার বর্ণনা রয়েছে, সেখানে তিনি সবচেয়ে বেশী হযরত বায়োজিদ বোস্তামীর কথা বর্ণনা করেছেন।
দ্বিতীয় হিজরীর শেষাংশে বোস্তাম শহরে (যা এখন ইরানের শাহরুদ শহরের কাছাকাছি অবস্থিত) জন্ম গ্রহণ করেছেন এবং সেখানেই তিনি হিজরী দু’শত একষট্টি সনে ইহলোক ত্যাগ করেন। আজকাল তার মাযার শরীফ আধ্যাত্মিক সাধক ও শিষ্য এবং বহু ভক্তবৃন্দের মিলন কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। তাঁর সম্পর্কে অনেক কথাই লেখা যায়। এখানে এই সংক্ষিপ্ত পরিচয় পর্বে এতটুকুই বলতে পারি যে, তিনি বহু কাল ধরে মুসলিম সমাজে ইসলামী ইরফান বা ইসলামী আধ্যাত্ববাদের মডেল হিসাবে পরিগণিত হয়ে আসছেন। কারণ মা’রেফতপন্থি লোকদের মধ্যে তার খ্যাতি ও সুনাম অতুলনীয়। আর এ কারণেই মাওলানা রুমী (রহঃ) তার বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ ‘মসনাভীয়ে মা’নাভী’ (মাসনভী শরীফ)-তে তাকে হাকিকত ও মহত্ত্বের মডেল এবং পবিত্রতা ও সততার দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মরণ করেছেন।]
বর্ণিত আছে যে, একদিন এক ব্যক্তি হযরত বায়োজিদ বোস্তামীকে (রহঃ) কয়েকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন : “আপনি এই আধ্যাত্মিক উচ্চ মাক্বামে কিভাবে এবং কোন্ পথে পৌছেছেন?”
উত্তরে হযরত বায়েজিদ বলেন : “আমি শৈশবে কোন এক রাতে বোস্তাম নগরী থেকে বেরিয়ে আসি। তখন চন্দ্র আলো বিতরণ করছিল আর পৃথিবী আপন কোলে ছিল ঘুমন্ত। আমি আল্লাহর কুদরতে এমন এক জায়গা দেখতে পেলাম যেখানে আঠারো হাজার পৃথিবী তার সামনে বিন্দুর সমতুল্য মনে হচ্ছিল। তখন আমার অন্তর্জ্বালা আমাকে পীড়িত করে। আর এ কারণে সাংঘাতিকভাবে আমার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে আমি আধ্যাত্মিক সাধনার সুউচ্চ পর্যায়ে পৌছুতে সক্ষম হয়েছি।
সে সময় আমি বলেছিলাম : ‘হে আমার প্রভূ! এরকম বিরাট জায়গা আর এরকম বিশাল শূন্যতা!! এরকম বিস্ময়কর ব্যবস্থাপনা আর এভাবে আমাদের কাছে রয়েছে গোপন!!!’ তখন অদৃশ্য থেকে ধ্বনি আসলো : ‘আমার দরগাহর শূন্যতার কারণ এই নয় যে, এখানে কেউ আসে না। বস্তুতঃপক্ষে এর কারণ হলো যে, আমি চাই না কোন অনুপযুক্ত ব্যক্তি এখানে আসুক।’ কেননা সে ব্যক্তি এই দরগাহর উপযুক্ত নয়।” (প্রাগুক্ত; তায্কিরাতুল আওলিয়া, পৃঃ নং ১৮৫)।

Related Post

প্রেমের খেলা

Posted by - December 10, 2019 0
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বসে বসে তার দুম্বাগুলোর ঘাস খাওয়া দেখছিলেন। তার এই শত শত দুম্বা এই পাহাড়ী এলাকার দৃশ্যকে আরো…

শত্রুর সাথে যাত্রা

Posted by - December 27, 2019 0
[জনাব ইলিয়াস ছিলেন নিশাপুরের আমির এবং প্রধান সেনাপতি। চতুর্থ শতাব্দিতে নিশাপুর পারস্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তম নগরী হিসেবে পরিগণিত ছিল।…

ধীশক্তির পরিচয়

Posted by - December 22, 2019 0
[হযরত আবুল কাসেম জুনাইদ বিন মুহাম্মাদ বিন জুনাইদ, উপাধি : সাইয়্যেদুত্ তায়িফাহ, ইরফান ও আধ্যাত্মিক সাধনার জগতে একজন উজ্জল নক্ষত্র।…

উপকারী কাজ

Posted by - December 20, 2019 0
পীর সাহেব তাঁর মুরীদদের জিজ্ঞেস করেন : “তোমরা কি এমন কোন কাজ আঞ্জাম দিয়েছো যা থেকে অন্যেরাও উপকৃত হয়েছে? ”…

হুকুমের ব্যাপারে খেয়াল

Posted by - December 20, 2019 0
[আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইব্নে খাফিফ সিরাজী ছিলেন সোরা পীর সুপরিচিত। তিনি ছিলেন হিজরী চতুর্থ শতাব্দির আধ্যাত্মিক মহা সাধকদের অন্যতম। তিনি…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »