🌹রাসুল (সা.) নিজে তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ
“রাসুলে করীম(সা.)- এর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা আমি নবী(সা.) -এর নিকট ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আসলাম। কারণ আমি হুযুর করীম(সা.)- এর বংশ বুনিয়াদ সম্পর্কে বিরূপ কিছু মন্তব্য শুনেছি। [তা নবী(সা.)- কে অবহিত করি] তখন হুযুর(সা.) মিম্বরে আরোহণ করেন। অতঃপর তিনি সাহাবাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, “আমি কে?” উত্তরে তারা বলেন, “আপনি আল্লাহর রাসুল”। তখন হুযুর আকরাম(সা.) এরশাদ করেন, “আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র মুহাম্মদ (দরুদ)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মানব-দানব সবই সৃষ্টি করেন। এতে আমাকে উত্তম পক্ষের (অর্থাৎ মানবজাতি) মধ্যে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তাদের (মানবজাতি)-কে দু’সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেন (অর্থাৎ আরবীয় ও অনারবীয়)। এতেও আমাকে উত্তম সম্প্রদায়ে (আরবীয়) সৃষ্টি করেন। অতঃপর আরব জাতিকে অনেক গোত্রে বিভক্ত করেন আর আমাকে গোত্রের দিক দিয়ে উত্তম গোত্রে (কোরাইশ) সৃষ্টি করেন। তারপর তাদেরকে (কোরাইশ) বিভিন্ন উপগোত্রে ভাগ করেন। আর আমাকে উপগোত্রের দিক দিয়ে উত্তম উপগোত্রে (বনী হাশেম) সৃষ্টি করেন। সুতরাং আমি তাদের মধ্যে সত্তাগত, বংশগত ও গোত্রগত দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ।” (তিরমিযী, খণ্ড ২, পৃঃ নং ২০১; মেশকাত শরীফ, পৃঃ নং ৫১৩)।
[অন্য সূত্রে বর্ণিত এ সম্পর্কিত আরও হাদীসের জন্য দেখুন, জামে তীরমিযী, খণ্ড ২, পৃঃ নং ২০১; মুসনাদে ইমাম আহমদ, খণ্ড ১, পৃঃ নং ৯; দালায়িলুল নবুয়্যাত লি বায়হাকী, খণ্ড ১, পৃঃ নং ১৬৯; কানযুল উম্মাল, খণ্ড ২, পৃঃ নং ১৭৫]।
হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি নবী করীম(সা.)- কে লক্ষ্য করে বললাম- হে আল্লাহর রাসুল(দরুদ)! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কোরবান হোক। আমাকে কি আপনি অবহিত করবেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন বস্তু সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে রাসুল করীম(সা.) এরশাদ করেন- হে জাবির! সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তোমার নবীর নূরকে তার আপন নূর হতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় ঐ নূর কুদরতে যেথায় সেথায় ভ্রমণ করছিল। সে সময় লওহ-কলম, বেহেশত-দোজখ, ফেরেশতা, আসমান-জমীন, চন্দ্র-সূর্য, জিন-ইনসান কিছুই ছিল না।[এটি বিস্তারিত একটি হাদিসের অংশ বিশেষ যা ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহঃ তাঁর কিতাব মুসান্নাফ-এ ১৮ নং হাদিসে বর্ণনা করেন। আরো দেখুন মাওয়াহেবুল লাদুন্নিইয়া, শরহে যুরকানি, ১ম খণ্ড, পৃঃ নং-৮৯]।
উপরের দুটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো ঈদে মীলাদুন্নাবী(সা.) সুন্নতে রাসুল!
সাহাব কেরামরা কি ঈদে মীলাদুন্নাবী পালন করেছেন?
আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি রসূলে পাক (সা.)- এর সাথে আমির আনছারী (রাঃ)- এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তাঁর সন্তানাদি, আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ও পাড়া-প্রতিবেশীকে নিয়ে নবী (সা.) এর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, “এই দিবস, এই দিবস” (অর্থাৎ এই দিবসে রাসুল(সা.) যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। নবী(সা.) তা শ্রবণ করে অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রহমতের দরজা তোমার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন আর যে কেউ তোমার মত এরূপ করবে সেও তোমার মতো নাজাত লাভ করবে।
(মীলাদের উপর প্রথম গ্রন্থ রচনাকারী আল্লামা আবুল খাত্তাব ইবনে দেহিয়া (৬৩৩ হি:) ঈদে মীলাদুন্নবীর উপর লিখিত ‘‘আত-তানবীর ফী মাওলিদিল বাশির আন নাযীর’’ গ্রন্থে এই মতটিকেই গ্রহণ করেছেন। কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিুদ মুস্তাফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মাদী ও মীলাদে আহমাদী পৃঃ নং ৩৫৫)।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি একদা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তাঁর নিজ গৃহে সাহাবীদেরকে সমবেত করে নবী(সা.)- এর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাকের প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং রাসুল(সা.)- এর উপর দুরুদ (সালাত-সালাম) পাঠ করছিলেন। এমন সময় রাসূল(সা.) তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন: “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ফরজ হয়ে গেল।” [আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী (রহঃ)- এর বিখ্যাত কিতাব “সুবুলুল হুদা ফি মাওলিদি মুস্তাফা(সা.)”-তে শেষের এ হাদিস দুটি উল্লেখিত হয়েছে। (দুররুল মুনাযযাম, সপ্তম অধ্যায়, প্রথম পরিচ্ছদ; ইশবাউল কালাম, হাক্বীকতে মুহম্মাদী মীলাদে আহমদী, পৃঃ ৩৫৫]।
হযরত হাসসান বিন সাবিত (রাঃ) রাসুল(সা.)- এর নির্দেশে মিম্বারে দাঁড়িয়ে কবিতার মাধ্যমে মীলাদুন্নবী(সা.) পাঠ করেছেন। দীর্ঘ কবিতার একাংশ নিচে উদ্ধৃত করা হলঃ
“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি সমস্ত দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই জন্মগ্রহণ করেছেন। আপনার এই বর্তমান সুরত মনে হয় আপনার ইচ্ছানুযায়ীই সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর নাম আযানে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেছেন, যখন মুয়াজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাযের জন্য “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বলে আযান দেয়। আল্লাহ তায়ালা আপন নামের অংশ দিয়ে আপনার নাম রেখেছেন, আপনাকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে। আরশের অধিপতির নাম হল ‘মাহমুদ’ এবং আপনার নাম হল ‘মুহাম্মাদ’(সা.)। [দিওয়ানে হাসসান]
হযরত হাসসান (রাঃ)- এর এই মিলাদ শুনে নবী করীম (সা.) বলতেন, “হে আল্লাহ! তুমি তাকে জিবরাইল মারফত সাহায্য কর।” তাফসীরে কাজাইনুল ইরফানে উল্লেখ আছে, যারা নবী করিম (সা.)- এর প্রশংসাগীতি করে তাদের পিছনে জিবরাইল (আ.)- এর গায়েবী মদদ থাকে। (সূরা মুজাদালাহ, সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ৩১ ও ৩৪- এ অনেকগুলো হাদীসে এ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে)। মিলাদ কিয়ামের জন্য এটি একটি শক্ত ও উৎকৃষ্ট দলীল।🌹
ইমামিয়া পাক দরবার শরীফ