নয়টি বস্তুর উপর যাকাত আদায় করা ফরজ। এগুলোর প্রত্যেকটির পৃথক পৃথক নেসাব আছে, যা পূর্ণ হলেই মাত্র যাকাত দেয়া ফরজ।
- ১। উট
- ২।গরু
- ৩। ছাগল
- ৪। ভেড়া
- ৫। স্বর্ণ ও রৌপ্য (এখনো ব্যবহার করার জন্যে তৈরী করা হয় নাই এমন স্বর্ণ বা রৌপ্য অথবা মুদ্রা হিসেবে চালু আছে এমন)
- ৬। গম
- ৭। যব
- ৮। খোরমা
- ৯। কিশমিশ বা আঙ্গুর।
উপরোল্লেখিত নয়টি বস্তুর যাকাত ফরজ হবার একটা শর্ত হচ্ছে যে, সেটা নিছাব পরিমাণ হতে হবে।
- কোন তাগুতি সরকারের ফান্ডে যাকাত আদায় জায়েয না।
- যাকাতের আদায়কৃত মাল নিজে নিজে ব্যয় করতে পারবে না।
- এটাও খোমসের মতো কোন হক্কানী মুজতাহিদের কাছে আদায় করতে হবে।
- শাড়ী, লুঙ্গী গরীবদের মধ্যে বিতরণকে যাকাত বলা যাবে না।এগুলো সদকা বা দান।
উটের জন্যে যাকাতের নিছাব ১২টি।
১। পাঁচটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ১টি ভেড়া বা দুম্বা।
২। দশটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ২টি ভেড়া বা দুম্বা।
৩। পনেরটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ৩টি ভেড়া বা দুম্বা।
৪। বিশটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ৪টি ভেড়া বা দুম্বা।
৫। পঁচিশটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ৫টি ভেড়া বা দুম্বা।
৬। ছাব্বিশটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ১টি উট যা দ্বিতীয় বৎসরে পদার্পন করেছে।
৭। ছত্রিশটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ১টি উট যা তৃতীয় বৎসরে পদার্পন করেছে।
৮। ছেচল্লিশটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ১টি উট যা চতুর্থ বৎসরে পদার্পন করেছে।
৯। একষট্টিটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ১টি উট যা পঞ্চম বৎসরে পদার্পন করেছে।
১০। ছিয়াত্তরটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ২টি উট যা তৃতীয় বৎসরে পদার্পন করেছে।
১১। একানব্বইটি উট। এর যাকাত হচ্ছে ২টি উট যা চতুর্থ বৎসরে পদার্পন করেছে।
১২। একশত একুশ ও তা থেকে উপরে। এক্ষেত্রে চল্লিশটি চল্লিশটি করে হিসাব করতে হবে। আর প্রতি চল্লিশটি উটের জন্যে ১টি উট যা তৃতীয় বৎসরে পদার্পন করেছে, যাকাত দিতে হবে। অথবা পঞ্চাশটি পঞ্চাশটি করে করে হিসাব করতে হবে। আর প্রতি পঞ্চাশটি উটের জন্যে ১টি উট যা চতুর্থ বৎসরে পদার্পন করেছে, যাকাত দিতে হবে। অথবা চল্লিশটি পঞ্চাশটি করে করে হিসাব করতে হবে। তবে এমনভাবে হিসেব করতে হবে যেন কোন উট অবশিষ্ট না থাকে। আর যদি অবশিষ্ট থাকে তাহলে ৯টা উটের চেয়ে যেন বেশী না থাকে। মনে রাখতে হবে, উটের যাকাত মাদি উট দিয়ে আদায় করতে হবে।
গরুর জন্যে যাকাতের নিছাব দু’টি।
১। ত্রিশটি গরুর যাকাত হচ্ছে, দ্বিতীয় বৎসরে পদার্পণকারী ১টি বাছুর (নর বা মাদী)।
২। চল্লিশটি গরুর যাকাত হচ্ছে তৃতীয় বৎসরে পদার্পণকারী ১টি মাদী বাছুর।
গরুর সংখ্যা চল্লিশ অতিক্রম করলে পূর্বের দুটি নিসাবের মধ্যে যেটি ভালভাবে খাপ খায় সেই সংখ্যা অনুসারে হিসেব করে যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ ৩০টি – ৩০টি অথবা ৪০টি- ৪০টি অথবা উভয় নিসাবের অনুসরণে যাকাতের হিসেব করতে হবে। যেমনঃ ৬০টি গরুকে ২টি ৩০ সংখ্যায় হিসেব করা যায়, ৭০টি গরুকে একটি ৩০ সংখ্যা এবং একটি ৪০ সংখ্যায় হিসেব করতে হবে। আর ৮০টি গরুকে দু’টি ৪০ সংখ্যায় হিসেব করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, গরুর যাকাত তখনি পরিশোধ করা যাবে যখন গরু সম্পূর্ণ বেকার, নিষ্কর্মা ও চারণ ক্ষেত্রের তৃণভোজন করবে।
ছাগল বা ভেড়ার পাঁচটি নিছাব আছেঃ
✔️১। চল্লিশটির যাকাত একটি (চল্লিশটির কম হলে যাকাত নেই)।
✔️২। একশ একুশটির যাকাত দু’টি।
✔️৩। দু’শ একটির যাকাত তিনটি।
✔️৪। তিনশ একটি যাকাত চারটি।
✔️৫। চারশ বা তার বেশী যতো হবে প্রত্যেক শতে একটি করে যাকাত দিতে হবে।
গরু ও ভেড়া-বকরীর যাকাতে
প্রথম শর্ত হচ্ছে যে, সেগুলো সারা বছর জঙ্গল ও মরুভূমিতে চরে ঘাস খাবে। যদি এক বছরের মধ্যে এক দিন বা এক সপ্তাহ অথবা তার চেয়ে কম সময় এদেরকে ঘাস কেটে খাওয়ানো হয় অথবা চাষাবাদের জমিনে এদের চরানো হয় তাহলে সেগুলোর যাকাত নেই। কিন্তু যদি বছরে একদিন বা দু’দিন মালিকের নিকট ঘাস খেয়েছে, তাহলে কর্তব্য হচ্ছে এদের যাকাত আদায় করা।
দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে যে, এ জন্তুগুলো সারা বছর বেকার থাকবে।
তৃতীয় শর্ত হচ্ছে যে, এ জন্তুগুলো সারা বছর স্বীয় মালিকের মালিকানাধীন থাকবে।
চতুর্থ শর্ত হচ্ছে, তাদের এগারটি মাস অতিবাহিত হয়ে যাবে। অতএব, দ্বাদশ মাসে পদার্পণ করার সাথে সাথেই এদের যাকাত দেয়া ফরজ হয়ে যাবে। বার মাস পূর্ণ হওয়া জরুরী নয়।
যাকাতের জন্যে গম, যব, খেজুর ও কিসমিসের নিসাব নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
উপরোক্ত চারটি শষ্যের নিসাব হচ্ছে প্রায় ৮৪৭ কিলোগ্রাম। অর্থাৎ উপরোক্ত চারটি শষ্যের কোন শষ্য যদি জমিতে বপনকৃত বীজ ও চাষের জন্যে ব্যয়কৃত খরচাদি বাদ দিয়ে উপরোক্ত পরিমান অবশিষ্ট থাকে তাহলে সেই শষ্যের সেখান থেকে যাকাত দিতে হবে। আর এই পরিমানের কম হলে সেই শষ্যের উপর যাকাত ফরজ হবে না।
স্বর্ণের যাকাতের দুটি নিসাবঃ
প্রথম নিসাবঃ
স্বর্ণমুদ্রা (ব্যবহৃত স্বর্ণ নয়)-এর পরিমাণ ৭০.৫ গ্রামে পৌছলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে।
দ্বিতীয় নিসাবঃ
উপরোক্ত প্রথম নিসাবের সাথে আরো ১৪.১ গ্রাম যুক্ত হলে মোট চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। যদি বাড়তি অংশের পরিমান ১৪.১ গ্রামের কম হয় তাহলে প্রথম নিসাবই কার্যকরী হবে, বাড়তি অংশের উপর যাকাত ধার্য হবে না।
এভাবে পরিমাণ যতই বৃদ্ধি পেতে থাকবে, যদি বাড়তি অংশ ১৪.১ গ্রাম হয় তাহলে মোট চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর যদি বাড়তি অংশের পরিমান ১৪.১ গ্রামের কম হয় তাহলে অতিতের স্বর্ণের উপরই যাকাত দিতে হবে, বাড়তি অংশের উপর যাকাত ধার্য হবে না।
রূপার জন্যে যাকাতের দু’টি নিসাবঃ
প্রথম নিসাবঃ
প্রায় ৪৯৩.৫ গ্রাম। চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত ধার্য হবে। উক্ত পরিমান থেকে কম হলে যাকাত দিতে হবে না।
দ্বিতীয় নিসাবঃ
৪৯৩.৫ গ্রাম + ৯৮.৭ গ্রাম= ৫৯২.২ গ্রাম
এভাবে প্রতিবারই ৯৮.৭ গ্রাম করে পরিমান বাড়তে থাকলে মোট অংশ থেকে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে। কিন্তু ৯৮.৭ গ্রাম থেকে কম হলে বর্দ্ধিত অংশের যাকাত দিতে হবে না। বরং আগের পরিমানের উপরই শুধু যাকাত ধার্য হবে।
↯↻↯↻↯