মিলাদুন্নবী (সা.) এর পরিচয় ও কুরআন-হাদীসের দলীল (পর্ব নং ০৫)

630

( পর্ব নং ০৫ )

কুরআনিক দলীল:

৭নং আয়াত:
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
واذكروا نعمة الله عليكم اذ كنتم اعداء فألف بين قلوبكم
“আর তোমরা সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। তিনি (আল্লাহ) তোমাদের অন্তরগুলোকে একত্রে জুড়ে দিয়েছেন।”
√ সূরা আলে ইমরান-১০৩
এ আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন-
عن ابن عباس رضي الله عنهما {الذين بدلوا نعمة الله كفرا} قال هم والله كفار قريش قال عمرو هم قريش ومحمد صلي الله عليه وسلم نعمة الله
অর্থাৎঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- الذين بدلوا দ্বারা মক্কার কুরাইশ কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে। আর نعمة الله দ্বারা মুহাম্মদ (সা.) কে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা দুনিয়াতে যত নেয়ামত দান করেছেন তাঁর মধ্যে রাসূল (সা.) হলেন সর্বোত্তম নেয়ামত।”
√ (সহীহুল বুখারী, খন্ড ২, পৃঃ নং ৫৬৬‚ হাদিস নং ৩৯৭৭)
আর এ নেয়ামত প্রচারের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ-
واما بنعمة ربك فحدث
অর্থ: “আর তোমার প্রভূর অনুগ্রহের কথা তুমি ঘোষণা করতে থাকো।”
√ (সূরা আদ্ দ্বোহা, আয়াত নং ১১)
অতএব, বুঝা গেল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। তাঁর মিলাদ বা জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা নেয়ামতের কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।

৮নং আয়াত:
এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন-
ومن يعظم شعائر الله فانها من تقوي القلوب
অর্থ: “আর যে আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করবে, সেটা তার কলবে তাকওয়ার পরিচায়ক।”
√ (সূরা হজ্ব, আয়াত নং ৩৬)

“হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা” নামক কিতাবে বলা হয়েছে-
ومن يعظم شعائر الله أربعة : القران ؛ والكعبة ؛ والنبي ؛ والصلاة
“আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে চারটি-
১. কুরআন শরীফ
২. কা’বা শরীফ
৩. নবী মুহাম্মদ (সা.)
৪. সালাত (নামাজ)
√ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা, খন্ড ১, পৃঃ নং ১৫১, শামেলা।
সুতরাং নবী (সা.)- কে তা’যীম করা তাকওয়ার পরিচয় বাহক। আর মিলাদের মাধ্যমে নবীর মহব্বত ও তাকওয়া আরো বৃদ্ধি পায়।

৯নং আয়াত: মহানবী (সা.) এর উপর জীবনে একবার দুরুদ পড়া ফরজ:
আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন-
ان الله وملائكته يصلون علي النبي يا ايها الذين آمنوا صلوا عليه وسلموا تسليما
“নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা ও ফেরেশতাকুল নবী (সা.)- এর উপর দুরুদ পড়েন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দুরুদ পড় এবং সশ্রদ্ধভাবে সালাম প্রেরণ কর।”
√ (সূরা আহযাব-৫৬)

আর শরয়ী মূলনীতি হলো-
كل ما يبعث علي المطلوب شرعا فهو مطلوب شرعا
“যা কিছু শরীয়তের কাংখিত বিষয়ের প্রতি উৎসাহিত করে তাও শরীয়তে কাংখিত। তাই মিলাদ মাহফিল শরীয়তে কাংখিত।
উপরোক্ত আয়াতের দ্বারা বুঝা যায় যে‚ নবী করিম (সা.)- এর উপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করা আল্লাহ তা’য়ালারই নির্দেশ। আর আমরা মিলাদ শরীফে নবীর প্রতি দুরুদ ও সালাম প্রেরণ করে থাকি। ফলে তা নিঃসন্দেহে বৈধ এবং তা রাসূল (সা.)- এর মহব্বত লাভের মাধ্যম হবে। এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন সূরা ও আয়াতে নবী-রাসূলগণের জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে আমাদের নবীর আলোচনাও নিঃসন্দেহে জায়েজ।

Related Post

দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই” বলে ভ্রান্ত মতবাদের শরিয়াহ্ জবাব

Posted by - অক্টোবর ৪, ২০২২
✍️ “দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই” বলে ওহাবীদের ভ্রান্ত মতবাদের শরিয়াহ্ জবাব। 👇 🌷[ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি…

মিলাদুন্নবী (সা.)-এর পরিচয় ও হাদীস শরীফের দলীল (পর্ব নং ০২)

Posted by - নভেম্বর ১০, ২০১৯
হাদীস শরীফে:- জামে তিরমিযী শরীফে ميلاد ‘মিলাদ‘ (জন্মের সময়) শব্দটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ব্যবহার করেছেন।…

মিলাদুন্নবী (সা.)-এর পরিচয় ও কুরআনিক দলীল (পর্ব নং-০১)

Posted by - অক্টোবর ২০, ২০২০
মিলাদের শাব্দিক বিশ্লেষণ: আমরা মিলাদুন্নবীর মূল আলোচনা লিখার আগে মিলাদুন্নবীর শাব্দিক আলোচনা করব। মিলাদ + নবী দুটি শব্দ একত্রে মিলে…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »