অনেকে বলেন, কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে মিলাদের কোন অস্তিত্ব নেই। অথচ আল্লাহ কুরআনে বলছেনঃ
১নং আয়াত:-
واذ اخذ الله ميثاق النبين لما آتيتكم من كتاب وحكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال أأقررتم وأخذتم علي ذلكم اصري قالوا أقررنا قال فاشهدوا وأنا معكم من الشاهدين فمن تولي بعد ذلك فأولئك هم الفاسقون
অর্থ: “আর স্মরণ করো, আল্লাহ নবীদের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন যে, নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের কিতাব ও প্রজ্ঞাময় জ্ঞান প্রদান করেছি, তারপর তোমাদের কাছে একজন রাসূল আসবেন। তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়ন করবে। তোমরা নিশ্চয়ই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে আর নিশ্চয় তাঁকে সাহায্য করবে। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা কি স্বীকার করলে ও এই ব্যাপারে আমার শর্ত গ্রহণ করলে?” তারা বলেছিল, “আমরা স্বীকার করলাম।” তিনি বললেন, “তবে তোমরা সাক্ষী থেকো, আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষ্যদাতাদের অন্যতম।” অতএব, যারা এরপর ফিরে যায়, তারা হচ্ছে পাপাচারী।” সূরা আলে ইমরান-৮১‚৮২
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহ তা’য়ালা রুহের জগতে মুহাম্মদ (সা.)- এর জীবনী আলোচনা ও তাকে মানার ব্যাপারে নবী-রাসূলগণের নিকট থেকে অঙ্গিকার গ্রহণ করেছিলেন। তাই রাসূল (সা.)- এর জীবনী দলবদ্ধভাবে আলোচনা সুন্নাতে ইলাহীরই নামান্তর। এ ছাড়া আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বিভিন্ন মুফাচ্ছিরগণের অভিমত তুলে ধরা হলো-
✳ তাফসীরে ইবনে কাসীরে বলা হয়েছে- এ আয়াতে নবীদের থেকে এ ইঙ্গিত নেয়া হয়েছে যে, রাসূল (সা.) যখন আসবেন তখন তাঁর প্রতি ঈমান আনবেন এবং তাঁকে সাহায্য করবেন।
✳ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এ আয়াতে রাসূল দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে বুঝানো হয়েছে।
✳ তাফসীরে কাবীরে ইবনে মুনীর বলেন, আল্লাহ পাক ঐ সমস্ত জাতির লোকদের কাছ থেকে ঐ রাসূল সম্পর্কে অঙ্গিকার নিলেন যাদের নিকট তাদের নবীগণ তাঁর তা’জীম বা সম্মানের কথা বর্ণনা করতেন। আর এখানে তাঁর মর্যাদা বলতে নবী মুহাম্মদ (সা.)- এর মর্যাদাকে বুঝানো হয়েছে।
✳ আল্লামা তাকী উদ্দিন সুবুকী (রহ.) لتؤمنن به ولتنصرنه -এর অর্থের উপর ভিত্তি করে একটি সুন্দর ও চমৎকার গবেষনা প্রবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেন, “এতে কোন সন্দেহ নাই যে, এই আয়াতটি রাসূলে পাক (সা.)- এর উচ্চ প্রশংসা এবং উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।”
√ নাসিমুর রিয়াদ- ১/৩৭৮
২নং আয়াত:
আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন-
وكلا نقص عليك من انباء الرسل ما نثبت به فؤادك
“আর রাসূলগণের কাহিনী থেকে সবকিছু আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি এ জন্য যে‚ সে সবের দ্বারা আমরা তোমার চিত্তকে বলিষ্ঠ করব।”
√ সূরা হুদ- ১২০
আমরা দেখলাম উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা নবী ও রাসূলগণের আলোচনাকে মুমিনদের ঈমান ও শক্তি বর্ধক হিসাবে অভিহিত করেছেন। এ আয়াতে নবী-রাসূলগণের জীবনী আলোচনা করার বৈধতা ফুটে উঠে।
৩নং আয়াত:
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
ياايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لما في الصدور وهدي ورحمة للمؤمنين قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
“হে মানবকুল! তোমাদের কাছে নিশ্চয় তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এসেছে উপদেশ বাণী এবং অন্তরের ব্যধির নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। হে রাসূল (সা.)! তুমি বলো: আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়াতে তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। এটি তাদের সমুদয় সঞ্চিত কর্ম থেকে উত্তম।”
√ সূরা ইউনুস- ৫৭,৫৮
এ আয়াতে কারীমার তাফসীরে فضل الله ورحمة الله -এর জন্য আনন্দ প্রকাশ করতে বলা হয়েছে এবং এটি সমস্ত আমলের চেয়ে ভাল বলা হয়েছে।
📖 এসম্পর্কে হাফেজে হাদীস আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ.) তার বিশ্ব নন্দিত তাফসীর الدر المنثور -এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন-
المراد بفضل الله العلم ورحمته محمد صلي الله عليه وسلم قال تعالي وما ارسلناك الا رحمة للعلمين وأخرج أبو الشيخ عن ابن عباس رضي الله تعالي عنهما أن الفضل العلم والرحمة محمد صلي الله عليه وسلم . وأخرج الخطيب وابن عساكر عنه تفسر الفضل بالنبي عليه الصلاة والسلام والرحمة بعلي كرم الله تعالي وجهه والمشهور وصف النبي صلي الله عليه وسلم بالرحمة كما يرشد إليه قوله تعالي : وما ارسلناك الا رحمة للعلمين
“হযরত আবুশ শায়খ (রহ.) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে উক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এখানে فضل الله বলতে ইলম এবং رحمة বলতে মুহাম্মদ (সা.)- কে বুঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, হে নবী আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। সুতরাং মহানবী (সা.) নামক নেয়ামত পেয়ে সর্বদা খুশি হওয়া বৈধ। বিশেষ করে তাঁর জন্মের দিনে এবং জন্মের মাসে তা আরো বেশি তাকীদপূর্ণ হয়ে থাকে।
📖 তাফসীরে রুহুল মা’আনীতে আল্লামা শিহাবুদ্দিন মাহমুদ আলুসী (রহ.) ঐরূপ বর্ণনা করেন, তাফসীরের বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, তোমরা মহামূল্যবান সম্পদ পেয়েছ। এ জন্য ঈদ পালন কর বা খুশি উদযাপন কর।
√ তাফসীরে আলুসী (রুহুল মা’আনী) খন্ড ৬, পৃ: নং ১৩৩
📖 মুফতি শফী (রহ.) বলেন, মানুষের কর্তব্য হলো আল্লাহ তা’য়ালার রহমত বা অনুগ্রহকেই প্রকৃত আনন্দের বিষয় মনে করা এবং তাতেই আনন্দিত হওয়া উচিত।
√ মারেফুল কুরআন, পৃঃ নং-৬১১
উপরোক্ত আয়াত ও তদসংশ্লিষ্ট আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম‚ নবী (সা.) এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা এবং তাতে আনন্দিত হওয়া আল্লাহ তা’য়ালারই আদেশ।