হযরত আয়েশার সাথে আল্লাহর রাসূলের বিয়ের তারিখ সমন্ধে
১। ঐতিহাসিক ও হাদিসের ইমামরা বলেছেনঃ
দৃষ্টান্তস্বরূপঃ
মা আয়েশা থেকে বর্ণিতঃ
حدثنا قُتَيْبَةُ بن سَعِيدٍ حدثنا حُمَيْدُ بن عبد الرحمن عن هِشَامِ بن عُرْوَةَ عن أبيه عن عَائِشَةَ رضي الله عنها قالت ما غِرْتُ على امْرَأَةٍ ما غِرْتُ على خَدِيجَةَ من كَثْرَةِ ذِكْرِ رسول اللَّهِ (ص) إِيَّاهَا قالت وَتَزَوَّجَنِي بَعْدَهَا بِثَلَاثِ سِنِينَ وَأَمَرَهُ رَبُّهُ عز وجل أو جِبْرِيلُ عليه السَّلَام أَنْ يُبَشِّرَهَا بِبَيْتٍ في الْجَنَّةِ من قَصَبٍ
তিনি (হযরত আয়েশা) হযরত খাদিজার ইন্তেকালের তিন বৎসর পর অর্থাৎ নবুয়্যতের ১৩তম বছরে বিয়ে করেছেন।
(সহি বুখারী, খণ্ড ৩, হাদিস নং ৩৬০৬, কিতাবু ফাযায়িলিস সাহাবা, বাব তায্-উইজিন নাবী ওয়া খাদিজা)।
ইবনে মুলাককান আনসারী আশ শাফেয়ী তার “গ্বায়াতুস সাউল ফি খাসায়িসির রাসূল” কিতাবের খণ্ড ১, পৃঃ ২৩৬-তে সহি বুখারীর উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করার পর লিখেছেন,
وبنى بها بالمدينة في شوال في السنة الثانية
“রাসূল(সা.) হিজরী দ্বিতীয় বৎসরে হযরত আয়েশাকে ঘরে তুলে নিয়ে এসেছিলেন।”
২। ঐতিহাসিক ও হাদিসের ইমামরা বলেছেনঃ
দৃষ্টান্তস্বরূপঃ
“আনসাবুল আশরাফ” কিতাবে বর্ণিত আছেঃ
وتزوج رسولُ الله صلى الله عليه وسلم، بعد خديجة، سودة بنت زَمعة بن قيس، من بني عامر بن لؤي، قبل الهجرة بأشهر… فكانت أول امرأة وطئها بالمدينة
“হিজরী চতুর্থ সনে আল্লাহর রাসূল(সা.) হযরত আয়েশাকে বিয়ে করেন।
(আল বালাযুরী, আহমাদ বিন ইয়াহইয়া বিন জাবির (মৃত্যুঃ ২৭৯হিঃ), আনসাবুল আশরাফ, খণ্ড ১, পৃঃ নং ১৮১)।
অন্যদিকে ইমাম শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী বলেছেনঃ
وتوفيت في آخر خلافة عمر ، وقد انفردت بصحبة النبي صلى الله عليه وسلم أربع سنين لا تشاركها فيه امرأة ولا سرية ، ثم بنى بعائشة بعد
“হযরত সুদা বিনতে যামআ’ ইবনে ক্বাইস ইবনে আব্দুশ শামস একাই হিজরতের প্রথম চার বছর রাসূলের স্ত্রী ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে অন্য কেউ রাসূলের স্ত্রী ছিলেন না। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সা.) হযরত আয়েশাকে বিয়ে করেন।
(যাহাবী, শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন উসমান(মৃত্যুঃ ৭৪৮হিঃ), তারিখুল ইসলাম ওয়া ওয়াফাইয়াতিল মাশাহিরী ওয়াল আ’লাম, খণ্ড ৩, পৃঃ নং ২৮৮)।
উপসংহারঃ
দুইটি মতঃ
১। বিয়ে হয়েছে নবুয়্যত প্রাপ্তির ১৩ম বছরে। তবে তাকে নবীজীর ঘরে উঠিয়ে আনা হয়েছে ২য় হিজরীতে।
২। বিয়ে হয়েছে ৪র্থ হিজরীতে।
হযরত আয়েশার সাথে রাসূলের বিয়ের সময় হযরত আয়েশার বয়স কত ছিল?
সকল ঐতিহাসিক ও হাদিসের ইমামরা বলেছেনঃ
হযরত আয়েশার বড় বোন হযরত আসমা বিনতে আবি বাকর, হযরত আয়েশা থেকে দশ বছর বড় ছিলেন এবং নবুয়্যতের ১৩তম বছরে হযরত আসমা বিনতে আবি বাকর-এর বয়স ছিল ২৭ বৎসর।
দেখুনঃ
[১। আল ইসবাহানী; আবু নাঈম আহমাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (মৃত্যূঃ ৪৩০হিঃ), মা’রিফাতুস সাহাবা, খণ্ড ৬, পৃঃ নং ৩২৫৩, হাদিস নং ৩৭৬৯;
২। আত্ তাবারানী, আবুল ক্বাসিম সুলাইমান ইবনে আহমাদ ইবনে আইয়ুব (মৃত্যুঃ ৩৬০হিঃ), আল মু’জামুল কাবির, খণ্ড ২৪, পৃঃ নং ৭৭;
৩। ইবনুল আসাকির আদ্ দামিশক্বী আশ শাফিঈ; আবুল কাসিম আলী ইবনিল হুসাইন ইবনে হিবাতুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ(মৃত্যুঃ ৫৭১হিঃ), তারিখু মাদিনাতু দামিশ্ক ওয়া যিকরু ফাযলিহা ওয়া তাসমিয়্যাতি মি হাল্লিহা মিনাল আমাসিল, খণ্ড ৮, পৃঃ নং ৩৪৫, ৩৪৬; খণ্ড ৯, পৃঃ নং ৬৯।
৪। ইবনে আসির, আলী ইবনে মুহাম্মাদ(মৃত্যুঃ ৫৭১হিঃ), উসুদুল গ্বাবা ফি মা’রিফাতিস সাহাবা, খণ্ড ৭, পৃঃ নং ১১।
৫। আন্ না-ওয়া-উই; আবু যাকারিয়া ইয়াহিয়া ইবনে শারাফ ইবনে মারি(মৃত্যুঃ ৬৭৬হিঃ), তাহযিবুল আসমায়ি ওয়াল লুগ্বাত, খণ্ড ২, পৃঃ নং ৫৯৭-৫৯৮।
৬। আল্ হাইসামী; আবুল হাসান আলী ইবনে আবি বাকর(মৃত্যুঃ ৮০৭হিঃ), মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ ওয়া মাম্বাউল ফাওয়ায়িদ, খণ্ড ৯, পৃঃ নং ২৬০।
৭। আল্ আইনী; বাদ্রুদ্দীন আবু মুহাম্মাদ মাহমুদ ইবনে আহমাদ আল গ্বাইতাবী আল হানাফি(মৃত্যুঃ ৮৫৫হিঃ), উ’মদাতুল ক্বরী শারহু সাহিহিল বুখারী, খণ্ড ২, পৃঃ নং ৯৩।
৮। আল আসক্বালানী আশ্ শাফেয়ী’; আবুল ফাদ্বল আহমাদ ইবনে আলী ইবনে হাজার(মৃত্যুঃ ৮৫২হিঃ), আল্ ইসাবাতু ফি তামিযিস সাহাবা, খণ্ড ৭, পৃঃ নং ৪৮৭।
৯। আল্ বাইহাক্বী; আবু বাকর আহমাদ ইবনুল হুসাইন ইবনে আলী ইবনে মুসা(মৃত্যুঃ ৪৫৮হিঃ), সুনানু বাইহাক্বী আল কুবরা, খণ্ড ৬, পৃঃ নং ২০৪।
১০। যাহাবী, শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন উসমান(মৃত্যুঃ ৭৪৮হিঃ), তারিখুল ইসলাম ওয়া ওয়াফাইয়াতিল মাশাহিরী ওয়াল আ’লাম, খণ্ড ২, পৃঃ নং ২৮৯।
১১। আস সানআনী, মুহাম্মদি ইবনে ইসমাঈল(মৃত্যুঃ ৮৫২হিঃ), সুবুলস সালাম শারহু বুলুগ্বিল মারাম মিন আদিল্লাতিল আহকাম, খণ্ড ১, পৃঃ নং ৩৯।]
সুতরাং নবুয়্যতের ১৩তম বছরে হযরত আয়েশার -এর বয়স ছিল ২৭-১০= ১৭ বৎসর। আর হিজরী ২ম বৎসরে হযরত আয়েশার বয়স হবে ১৭+২=১৯ বৎসর এবং হিজরী ৪র্থ বৎসরে হযরত আয়েশার বয়স হবে ১৭+৪=২১ বৎসর।
হযরত আয়েশা যখন ইসলাম গ্রহণ করেছেন তখন তার বয়স কত ছিল?
১। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও হাদিসের ইমামরা বলেছেনঃ
হযরত আয়েশা নবুয়্যতের প্রথম বছরেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল চার বৎসর।
(আন্ না-ওয়া-উই; আবু যাকারিয়া ইয়াহিয়া ইবনে শারাফ ইবনে মারি (মৃত্যুঃ ৬৭৬হিঃ), তাহযিবুল আসমায়ি ওয়াল লুগ্বাত, খণ্ড ২, পৃঃ নং ৬১৫)।
২। আবার তাদের অনেক ঐতিহাসিক ও হাদিসের ইমামরা বলেছেনঃ
তিনি নবুয়্যতের প্রথম বছরেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তবে তখন তিনি ছিলেন শিশু। আর শিশুর শেষ বয়স হচ্ছে সাত বৎসর। তাই ধরে নেয়া যায় যে, তখন তার বয়স ছিল সাত।
দৃষ্টান্তস্বরূপঃ
ক। ঐতিহাসিক আল্ মাক্বদাসী বলেনঃ
وممن سبق إسلامه أبو عبيدة بن الجراح والزبير بن العوام وعثمان بن مظعون … ومن النساء أسماء بنت عميس الخثعمية امرأة جعفر ابن أبي طالب وفاطمة بن الخطاب امرأة سعيد بن زيد بن عمرو وأسما بنت أبي بكر وعائشة وهي صغيرة فكان إسلام هؤلاء في ثلاث سنين ورسول الله
يدعو في خفية قبل أن
يدخل دار أرقم بن أبي الأرقم
তখন তিনি ছিলেন শিশু। আর শিশুর শেষ বয়স হচ্ছে সাত বৎসর।
(আল্ মাক্বদাসী; মুতাহহার ইবনে ত্বহির (মৃত্যুঃ ৫০৭হিঃ), আল্ বিদউ ওয়াত্ তারিখ, খণ্ড ৪, পৃঃ নং ১৪৬)।
খ। ইবনে হিশাম বলেনঃ
إسلام أسماء وعائشة ابنتي أبي بكر وخباب بن الآرت وأسماء بنت أبي بكر وعائشة بنت أبي بكر وهي يؤمئذ صغيرة وخباب بن الأرت حليف بني زهرة
তখন তিনি ছিলেন শিশু। আর শিশুর শেষ বয়স হচ্ছে সাত বৎসর।
(আল্ হামিরী আল মাআ’ফিরী; আবু মুহাম্মাদ আব্দুল মালিক ইবনে হিশাম ইবনে আইয়ুব (মৃত্যুঃ ২১৩হিঃ), আস সিরাতুন নাবাউইয়া, খণ্ড ২, পৃঃ নং ৯২)।
তাহলে ১ম মতানুসারে (চার বৎসর বয়সে ঈমান এনেছিলেন):
হিজরী ২য় সনে হযরত আয়েশার বয়স হবে ৪+১৩+২= ১৯ বছর।
আর হিজরী ৪র্থ সনে হযরত আয়েশার বয়স হবে ৪+১৩+৪=২১ বছর।
এবং ২য় মতানুসারে (সাত বৎসর বয়সে ঈমান এনেছিলেন):
সুতরাং হিজরী ২য় সনে হযরত আয়েশার বয়স হবে ৭+১৩+২= ২২ বছর।
আর হিজরী ৪র্থ সনে হযরত আয়েশার বয়স হবে ৭+১৩+৪=২৪ বছর।
যাই হোক, মা আয়েশার বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ১৯ অথবা ২১ অথবা ২২ অথবা ২৪ ।
অতএব, এই যে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মুসলমানদের মধ্যে বলা হয়, হযরত আয়েশার বয়স যখন ছয় অথবা নয় বৎসর, তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) তাকে বিয়ে করেছিলেন, এটা সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা বানোয়াট কথা। মনে হয়, এই ছয় অথবা নয় বৎসরের বিষয়টা বনি উমাইয়্যাদের মাধ্যমেই তাদের শাসনামলে তৈরী ও প্রচার করা হয়। কেননা, ইতিহাসের তথ্যের সাথে ঐ কথার কোন মিল নেই।