মাসআলাঃ
ফরজ অথবা নফল যে কোন প্রকার নামাজের প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়ার ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই।আর সূরা ইখলাস ছাড়া অন্য কোন সূরা উভয় রাকাতে পড়া যাবে না।
মাসআলাঃ
যদি কোন ব্যক্তি নামাজের তৃতীয় রাকাতের দুই সেজদার পর সন্দেহ করে যে, এই নামাজ কি মাগরিব নামাজের তৃতীয় রাকাত নাকি ইশার নামাজের তৃতীয় রাকাত?, তখন নামাজ শুরুর পূর্বে যে নিয়তই থাকুক না কেন, এখন মাগরিব নামাজের নিয়ত করে এই তৃতীয় রাকাতকে মাগরিব নামাজের তৃতীয় রাকাত ধরে শেষ বৈঠকের আমল তথা তাশাহহুদ, দরুদ ও সালাম দিয়ে নামাজ সমাপ্ত করবে।
মাসআলাঃ
পরিণত বয়সে মেয়েদের হায়েজ ও নেফাসজনিত সময়কাল পরপর তিন দিনের কম হতে পারে না এবং দশ দিনের বেশীও হতে পারে না। যদি কোন মেয়ে তিন দিনের কম রক্ত দেখে অথবা দশ দিনের বেশী দেখে তাহলে সেটা হায়েজের রক্ত না ধরে এবং ইসতেহাযার রক্ত ধরে সেই অনুপাতে শরীয়তের হুকুম আহকাম পালন করতে হবে।
মাসআলাঃ
হায়েজ ও নেফাসজনিত সময়ে নারীদের নিচের কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে:
নামায, রোযা, তাওয়াফ ও ই’তিকাফ-এর ন্যায় যে সমস্ত ইবাদাত ওযু, গোসল বা তায়াম্মুম ছাড়া বাতিল বলে গণ্য হয় সেসব ইবাদত তাদের উপর থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে যে চারটি সূরাতে ফরজ সেজদার আয়াত আছে সেই সূরাগুলো ছাড়া অন্য যে কোন সূরা এ সময়ে তিলাওয়াতে কোন নিষেধ নেই। তাছাড়া, যে কোন দোয়া-দরুদ ও তসবিহ-তাহলিল এ সময়ে পড়া যেতে পারে। আর জুনুব ব্যক্তির জন্য যেসব কাজ হারাম ছিল তার প্রত্যেকটি কাজ এ সময়কালে হারাম বলে গণ্য হবে।
মাসআলাঃ
হায়েজ ও নেফাসজনিত সময়কালে সঙ্গম করা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম। তবে স্বামী-স্ত্রীর অন্যান্য প্রকার সম্ভোগে শরীয়তের কোন বাঁধা নেই।
মাসআলাঃ
হায়েজ ও নেফাসজনিত নারীকে তালাক দেয়া হলে সেই তালাক বাতিল বলে গণ্য হবে।
মাসআলাঃ
হায়েজ ও নেফাসের সময়কাল অতিবাহিত হয়ে গেলে নামায, রোযা, তাওয়াফ ও ই’তিকাফ-এর ন্যায় যে সমস্ত ইবাদাতে ওযু, গোসল বা তায়াম্মুম আবশ্যকীয় শর্ত, সেসব ইবাদতের জন্যে গোসল করা ফরজ।
মাসআলাঃ
হায়েজ ও নেফাসের সময়কালে অনাদায়কৃত নামাজের কোন ক্বাজা নেই। তবে অনাদায়কৃত ফরজ রোজা হায়েজ ও নেফাসের সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর আদায় করা নেয়া ফরজ।
মাসআলাঃ
যদি কোন প্রাণীকে কোন বিবেকপ্রসূত লাভজনক কাজে ব্যবহার করার নিমিত্তে কোন প্রকার অযথা কষ্ট ও বিরক্ত না করা হয় তখন সেই প্রাণীকে খাঁচায় বন্দি করে রাখলে কোন গুনাহ হবে না।
মাসআলাঃ
নিদর্শনাদির নামাজের মধ্যেও সূরা ফাতিহার পর শুধুমাত্র সূরা ইখলাসের ক্ষেত্রে উভয় রাকাকাতে পুনরাবৃত্তি হতে পারে অন্য সূরা নয়।
মাসআলাঃ
নামাজ সহি শুদ্ধ হওয়ার জন্যে নামাজের স্থান পাক পবিত্র হওয়ার পাশাপাশি সেই স্থানটি নিজের হতে হবে অথবা মালিকের অনুমতি নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সকল ঘর-বাড়ি, জায়গা-জমি ও দোকানপাট জবরদখল করে বসবাস অথবা ব্যবসা করা হয় সেখানে কোন নামাজীর নামাজ শুদ্ধ ও কবুল হবে না। পোশাকের ক্ষেত্রেও একই হুকুম আরোপিত হবে।
মাসআলাঃ
মুখ যেমন গুনাহ করতে পারে, তেমনি চোখ, কান, হাত ও পা-সহ অন্যান্য অঙ্গও গুনাহ করতে পারে। এ সকল গুনাহ, ইবাদত বন্দেগীর স্বাদ ও কবুলিয়্যাতের প্রতিবন্ধক। তাই, যে কোন অশ্লীল নাটক, সিনেমা, থিয়েটার দেখা অথবা যে কোন প্রকার খারাপ ও অবৈধ গান শ্রবন করা অথবা যে কোন খারাপ কথা যেমন গিবত ও পরনিন্দা করা বা শুনা অথবা হাত ও পা দিয়ে যে কোন অন্যায় কাজ করা বা অন্যায় পথে চলা অথবা যে কোন প্রকার অবৈধ যৌন মেলামেশা সম্পূর্ণ হারাম এবং কবিরা গুনাহ। এতে করে ইবাদতের স্বাদ চলে যায়, ইবাদতের মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌছানো যায় না এবং তার কোন দোয়াও কবুল হয় না।
মাসআলাঃ
কোন মুসলমানের বিরোদ্ধে যে কোন ধরনের অপবাদ দেয়া কবিরা গুনাহ। আর সেই অপবাদের বিষয়টি প্রচার করা আরো বড় গুনাহ।
মাসআলাঃ
ধারনা করে কোন মুমিনের ব্যাপারে নেতিবাচক কিছু মাথায় রাখা অশোভনীয় আর সেই ধারনার উপর ভিত্তি করে সেই বিষয়ে অন্য কারো সাথে আলাপ করা সম্পুর্ণ হারাম। এতে করে সমাজে অশোভনীয়, অবৈধ ও হারাম কাজের প্রসার ঘটে।
মাসআলাঃ
মাহরাম অথবা না-মাহরাম দুইটি ফলাফলের মাধ্যমে চিহিৃত করা যায়:
ফলাফল নং এক: মাহরাম ব্যক্তির সাথে বিয়ে করা যায় না। কিন্তু যে কোন না-মাহরামের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়। তবে স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় অথবা স্ত্রী নিজের বন্ধনে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর বোন বা শালিকা না-মাহরাম হওয়া সত্ত্বেও তাকে বিয়ে করা যাবে না।
ফলাফল নং দুই: একজন না-মাহরাম পুরুষ অন্য না-মাহরাম নারীর চেহারা ও হাতের কব্জি থেকে আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত ছাড়া দেহের অন্য কোন অংশে চোখ দিতে পারবে না। কিন্তু মাহরাম ব্যক্তি মাহরাম নারীকে উপরোক্ত অংশ ছাড়াও জরুরী ক্ষেত্রে অন্য অঙ্গের দিকেও নজর দিতে পারে।
মাসআলাঃ
চলচ্চিত্র জগতে পুরুষ মহিলাদের যে অবৈধ মেলামেশা এবং একে অপরের গা স্পর্শ করা হয় তা সম্পূর্ণ হারাম কাজ। আর হারাম কাজ সম্পাদন করলে ঘর ও সমাজ থেকে বরকত ও রহমত উঠে যায়।
মাসআলাঃ
দুইজন না-মাহরাম নারী ও পুরুষের মধ্যে মুসাফাহা বা হাত মিলানো সম্পূর্ণ হারাম এবং কবিরা গুনাহ।
মাসআলাঃ
শুধুমাত্র চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিরুপায় হয়ে অথবা কাউকে মৃত্যু থেকে বাঁচানোর জন্যে অথবা এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ এমন বয়স্ক মানুষ অথবা এমন অসুস্থ ব্যক্তি যে, তার বা তাদের কোন অন্য বদ চিন্তা মাথায় আসতে পারে না, এসব ক্ষেত্রে কোন না-মাহরাম অন্য কোন না-মাহরামের গায়ে স্পর্শ করতে পারে।
মাসআলাঃ
তিনভাবে দুইজন মানুষ পরস্পরের মাহরাম হয়।
এক: নাসাব বা রক্তিয় সম্পর্কের কারণে।
দুই: বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে।
তিন: শিশুর দুধ পানের মাধ্যমে।
মাসআলাঃ
পুরুষের ক্ষেত্রে রক্তিয় সম্পর্কের মাহরাম হচ্ছে:
১। মা, নানি, দাদি এবং উপরে যত যাওয়া যায়।
২। নিজের মেয়ে, নিজের ছেলে-মেয়ের মেয়েরা এবং এভাবে যত নিচের দিকে যাওয়া যায়।
৩। নিজের বোন অর্থাৎ এমন মেয়ে যার মা অথবা বাবা অথবা উভয়েই সেই ব্যক্তির সাথে এক।
৪। বোনের মেয়ে এবং সেই মেয়ের মেয়ে আর এভাবে যত নিচে যাওয়া যায়।
৫। ভাইয়ের মেয়ে এবং সেই মেয়ের মেয়ে আর এভাবে যত নিচে যাওয়া যায়।
৬। নিজের আপন ফুফ, পিতা-মাতার ফুফু, নানা-নানি ও দাদা-দাদির ফুফু এবং এভাবে যত যাওয়া যায়।
৭। নিজের আপন খালা, পিতা-মাতার খালা, নানা-নানি ও দাদা-দাদির খালা আর এভাবে যত যাওয়া যায়। (খালাত, মামাত, চাচাত ও ফুফাত বোন ও তাদের মেয়েরা মাহরাম নয় এবং খালাত, মামাত, চাচাত ও ফুফাত ভাইয়ের মেয়েরা মাহরাম নয়। অর্থাৎ তাদের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়)।
মাসআলাঃ
নারীর ক্ষেত্রে রক্তিয় সম্পর্কের মাহরাম হচ্ছে:
১। পিতা, নানা, দাদা এবং এভাবে যত উপরে যাওয়া যায়।
২। নিজের পুত্র এবং নিজের ছেলে-মেয়ের পুত্র সন্তানরা আর এভাবে যত নিচের দিকে যাওয়া যায়।
৩। আপন ভাই অর্থাৎ যে পুরুষের সাথে তার মা অথবা বাবা অথবা উভয়েই এক।
৪। আপন ভাই ও বোনের ছেলেরা এবং তাদের ছেলে সন্তানরা আর এভাবে যত নিচের
দিকে যাওয়া যায়।
৫। নিজের আপন চাচা, পিতা-মাতার চাচা, নানা-নানি ও দাদা-দাদির চাচা এবং এভাবে যত যাওয়া যায়।
৬। নিজের আপন মামা, পিতা-মাতার মামা, নানা-নানি ও দাদা-দাদির মামা আর এভাবে যত যাওয়া যায়। (খালাত, মামাত, চাচাত ও ফুফাত ভাই ও তাদের ছেলেরা মাহরাম নয় এবং খালাত, মামাত, চাচাত ও ফুফাত বোনের ছেলেরা মাহরাম নয়। অর্থাৎ তাদের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়)।
মাসআলাঃ
কোন মুসলমান ব্যক্তির ব্যক্তিগত ত্রুটি যা সে সমাজের মানুষের কাছে লুকিয়ে রেখেছে বা কেউ জানে না যে, তার এই ত্রুটি আছে, তার এহেন ত্রুটি সমাজ ও রাষ্ট্রকে কুলষিতও করছে না, এহেন অবস্থায় সেই ব্যক্তির পিছনে লোক সমক্ষে তার ত্রুটি প্রকাশ করে দেয়া বা অন্য কোন লোকজনদেরকে জানিয়ে দেয়া একটি মহাঅন্যায় কাজ যার নাম ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় গিবত। গিবত করা মহাপাপ যা নিজের মরা ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সমতুল্য। এটি একটি কবিরা গুনাহ। এর কারণে গিবতকৃত ব্যক্তি সমাজে বসবাস করা সত্ত্বেও সে হয়ে যায় মৃত। সেই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়নি, বরং তার ব্যক্তিত্বকে হত্যা করা হয়েছে। এ কাজটি ইসলামী শিষ্টাচার শাস্ত্রে মানুষ হত্যার চেয়েও বড় পাপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মাসআলাঃ
বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জন্যে শশুর-শাশুরী এবং দাদী ও নানী শাশুরীসহ যত উপরের দিকে যাওয়া যায় তারা সবাই সারা জীবনের জন্যে তাদের মাহরাম। এমনকি স্বামী অথবা স্ত্রীর তালাক হওয়া অথবা মৃত্যুর পরও তারা মাহরাম এবং তাদের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম।
মাসআলাঃ
রক্তিয় সম্পর্কের কারণে যারা মাহরাম, একটি শিশুর দুধ পানের মাধ্যমে তদ্রুপ দুধ মা ও বাবাসহ তারা সকলে মাহরাম হয়ে যায়।
মাসআলাঃ
কোন মায়ের বুকের দুধ পান করার মাধ্যমে অন্য মায়ের শিশুর সাথে যে মাহরামের বন্ধন সৃষ্টি হয় তাতে তারা রক্তিয় সম্পর্কের মাহরাম ব্যক্তিদের ন্যায় পরস্পরের সম্পত্তির ওয়ারিস হয় না।
মাসআলাঃ
“সুদ” ফারসী শব্দ, যার অর্থ লাভ। লাভের আরাবী শব্দ হচ্ছে “রেবা”। সুতরাং লাভ ও সুদ শব্দদ্বয়ের অর্থ একই। সুদ বা রেবা বা লাভ একটি সামগ্রিক শব্দ যা দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
এক: হালাল সুদ বা রেবা বা লাভ।
দুই: হারাম সুদ বা রেবা বা লাভ। শব্দের ভিন্নতার কারণে অর্থ ও হুকুম ভিন্ন হয়ে যায় না।
মাসআলাঃ
ব্যাংকে সংগ্রহিত গ্রাহকদের অর্থের উপর সুদ বা লাভ গ্রহণ হারাম নয়।
মাসআলাঃ
খোমস, মাসুম ইমামের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে সরাসরি ইমামের কাছে পৌছাতে হবে, যা প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানের উপর ফরজ। আর মাসুম ইমামের প্রত্যক্ষ অনুপস্থিতিতে ইমামের আম প্রতিনিধি তথা মুজতাহিদের কাছে পৌছানো ফরজ।
মাসআলাঃ
মুজতাহিদ ব্যক্তি ইমামতের মিশনের কাজে খোমস ব্যবহার করবেন। কোন অমুজতাহিদ মুসলমানের জন্যে নিজের পক্ষ থেকে পরিশোধযোগ্য খোমস ব্যবহার করার অনুমতি নেই।
মাসআলাঃ
মাহে রমজানের ফেতরাও ব্যক্তিগতভাবে আদায়ের অনুমতি নেই। অবশ্যই মুজতাহিদের কাছে পৌছাতে হবে।
মাসআলাঃ
প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত অথবা অন্যান্য যে কোন জায়েয কাজ বা ব্যবসা, যেমন ঠিকাদারী ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয় বা লাভের শতকরা ২০ ভাগ খোমস হিসেবে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।
মাসআলাঃ
নিজ অঞ্চলে কোন ন্যায়বিদ মুজতাহিদ না পাওয়া গেলে তখন সবচেয়ে নিকটতম অঞ্চল বা জাতি বা তুলনামূলকভাবে নিজ জাতির মানুষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশী অবহিত এমন কোন মুজতাহিদের দিকে রুজু করতে হবে। আর পাশাপাশি নিজ জাতির মধ্য থেকে মুজতাহিদ তৈরী করা নিজ জাতির লোকদের জন্যে ফরজে কিফায়ী।
মাসআলাঃ
খোমস হচ্ছে আয় থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করার পর অবশিষ্ট অর্থের এক পঞ্চমাংশ ইমামকে দেয়া।
মাসআলাঃ
খোমস আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথম বারের জন্যে বছরের শুরুটা প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের সুবিধা অনুযায়ী নির্ধারণ করতে পারে। এতে কোন আপত্তি নেই।
মাসআলাঃ
যে কোন ইবাদতের জন্যে নিয়ত করা ফরজ এবং প্রতিটি ইবাদতের শুরুতেই সেই ইবাদতের নিয়ত করা উচিত। আর খোমসও ইবাদতসমূহের অন্যতম।
মাসআলাঃ
মুকাল্লিফ মুসলমান খোমস আদায়ের নিয়ত করার পর যদি বছর শেষে তার কোন সঞ্চয় না থাকে তাহলে তার উপর ঐ খোমসী বছরের শেষে খোমস আদায় ফরজ নয়।
মাসআলাঃ
নিত্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয়ের অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের সামাজিক মর্যাদা অনুপাতে নিজ পরিবারের জন্যে ব্যয়। মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় যে কোন খরচ গুনাহের শামিল এবং তার উপর খোমস ধার্য হবে।
মাসআলাঃ
যে সম্পদের উপর খোমস আদায় হয়ে গেছে সেই সম্পদের উপর পুনরায় খোমস ধার্য হবে না।
মাসআলাঃ
ব্যাংকিং সিসটেমে সুদ বা লাভ বা রেবা দুইভাবে বিভক্ত।
এক: একাউন্ট হোল্ডারদের পক্ষ থেকে গচ্ছিত অর্থের বিনিময়ে ব্যাংক যে লাভ বা সুদ বা রেবা প্রদান করে। একাউন্ট হোল্ডাররা যে অর্থ ব্যাংকে গচ্ছিত রাখে দেশ ও সরকার তা ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন অর্থনৈতিক লাভজনক কর্মকান্ডে ব্যবহার করে এবং তা থেকে যে লাভ ব্যাংকের কাছে ফিরে আসে সেখান থেকে একাউন্ট হোল্ডারদের একটা খুবই স্বল্প অংশ প্রদান করে থাকে। একাউন্ট হোল্ডাররা যে অর্থ ব্যাকে রাখে তা আমানত ও লাভ নেয়ার নিয়ত করেই রাখে, আর তা না হলে ব্যাংকে না রেখে অন্য কোথায়ও রাখতো!! অর্থাত আমানত ও লাভ নেয়া এই দুইটা বিষয়ই একাউন্ট হোল্ডারদের নিয়তে কাজ করে। কারো কাছে অর্থ আমানত রাখার অর্থ এই নয় যে, এই অর্থ অলস পড়ে থাকবে। এই অর্থ দিয়ে আমানত গ্রহণকারী সংস্থা লাভজনক কাজেব্যবহার করে অর্থ বাড়াবে এটাই তো স্বাভাবিক। আর সেই অর্থের নিরাপত্তাও রক্ষা করার দায়িত্ব নিচ্ছে ব্যাংক নামে এই আমানত গ্রহণকারী সংস্থা। তাই, একাউন্ট হোল্ডারদের গচ্ছিত এই অর্থের মোকাবেলায় সামান্য কিছু লাভ গ্রহণ কোন মতেই বিবেক ও শরীয়ত বিরোধী হতে পারে না। এই লাভ বা সুদ বা রেবা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম নয়। বরং একাউন্ট হোল্ডারদের প্রাপ্য এর চেয়েও অনেক বেশী।
দুই: ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ দানের বিনিময়ে যে সুদ বা লাভ বা রেবা গ্রহণ করা হয়। কোন সম্পত্তি বা প্রজেক্ট বা ব্যবসা বা মূল্যবান কিছু ব্যাংকের কাছে জামানত হিসেবে রেখে সেই ব্যাংক থেকে সেই সম্পত্তির মালিক যে লোন বা ঋণ নেয়, সেই ঋণের মোকাবেলায় যে সুদ বা লাভ বা রেবা ধার্য করা হয় তার মধ্যে অর্থের মুদ্রাস্ফৃতি, নিরাপত্তা, কর্মচারীর বেতন ইত্যাদিসহ আরো অনেক কিছু সংযোগ করে একটা রেট ধরা হয়। এই সুদ, ঋণ গৃহীতাকে মূল ঋণের সাথে পরিশোধ করতে হয়। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই সুদ বা রেবা গ্রহণ হারাম নয়। এটা ব্যাংকের প্রাপ্য। হ্যাঁ, ব্যাংক যদি ঋণ গ্রহীতার দেউলিয়া হবার প্রমাণ পাবার পরো তার উপর পুরো সুদ চাপিয়ে দেয় অথবা চক্রবৃদ্ধি সুদ গ্রহণে বাধ্য করে তাহলে সে ঋণ গ্রহীতার উপর জুলুম করলো বিধায় তখন ব্যাংকের জন্যে এই সুদ বা লাভ বা রেবা গ্রহণ হালাল হবে না।
মাসআলাঃ
জিহ্বার সামনের অংশ দিয়ে স্বাদ নিয়ে তা সঙ্গে সঙ্গে যদি দাঁত দিয়ে ঘষে ফেলে পানি দিয়ে কুলি করে নেয় তাহলে সেই ব্যক্তির রোজা ভাঙ্গবে না।
মাসআলাঃ
রোজা রাখা অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে চামড়ার নিচে ইনসুলিন নেওয়া ও রক্ত পরীক্ষা করা (গ্লুকোমিটার বা রক্ত টেনে সাধারনত যেসব পরীক্ষা করা হয়) এবং হাপানি রোগীর ক্ষত্রে ইনহেলার (শ্বাস নালীতে) ব্যবহার করা রোজার জন্যে কোন অসুবিধা সৃষ্টি করে না। অর্থাৎ তার রোজা নষ্ট হবে না।
মাসআলাঃ
যদি কেউ রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তাহলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। অন্যথায় না।
মাসআলাঃ
রোজা রেখে দিনের বেলায় রক্ত দান করলে রোজা ভেঙ্গে যায় না।
মাসআলাঃ
শরীরের কোথায়ও কেটে গেলে এবং কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়লে ওযু, গোসল ও রোজা কোনটাই নষ্ট হয় না। শুধুমাত্র নামাজের জন্যে শরীর থেকে রক্ত ধুয়ে মুছে নিতে হয়। আর তা না হলে নামাজ আদায় হয় না।
মাসআলাঃ
দুই ঈদের নামাজ ইমামের বৃহৎ অদৃশ্যকালে ফরজ নয়। তবে যদি কোন এলাকায় কোন নায়েবে ইমামের অবস্থান বর্তমান থাকে তাহলে সতর্কতামূলক ফয়সালা হলো যে, সামর্থবান ব্যক্তি যেন সেই জামাতে শরীক হয়ে যামানার ইমামের হাতকে শক্তিশালী করে।
মাসআলাঃ
দুই ঈদের নামাজ দুই দুই রাকাত করে সম্পন্ন করতে হবে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পাঠ করে পাঁচটি তকবির আর প্রতিটি তকবিরের পর একটি করে কুনুত এবং অবশেষে অপর একটি তকবির দিয়ে রুকুতে গমন করা কর্তব্য। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা তিলাওয়াতের পর চারটি তকবিরের প্রতিটি তকবিরের পর কুনুত করে পঞ্চম তকবির দিয়ে রুকুতে গমন করা উচিত। অবশেষে দুই সেজদা ও তাশাহহুদ, দরুদ ও সালাম পাঠ করে নামাজ সম্পন্ন করা উচিত।
মাসআলাঃ
দশটি বিষয় অযু ভঙ্গের কারণঃ
১। পেশাব
২। পায়খানা
৩। পায়খানার রাস্তা দিয়ে নির্গত হওয়া বায়ু।
৪। এমন নিদ্রা যাতে কেউ চোখে দেখে না এবং কানেও শোনে না। ৫। যে সব জিনিস মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি বিলুপ্ত করে দেয়
৬। হায়েজ বা ঋতু (মেয়েদের জন্যে)
৭। নেফাস বা প্রসূতির রক্তস্রাব (মেয়েদের জন্যে)
৮। ইসতিহাযা বা রক্তক্ষরণ(মেয়েদের জন্যে)
৯। স্বামী স্ত্রীর মিলন
১০। মৃতদেহ গোসলের পূর্বে স্পর্শ করা।
মাসআলাঃ
কোন প্রকার বমি, তা যদি ক্রিমিও হয় এবং মুখ দিয়ে যদি হাজারো ক্রিমি বের হয় তারপরো তা ওযু ভঙ্গের কারণ হবে না। তবে পায়খানার রাস্তা দিয়ে যদি একটা ক্রিমিও বের হয়, তাহলে তা অবশ্যই ওযু ভঙ্গের কারণ হবে।
মাসআলাঃ
যদি যৌন উত্তেজনার কারণে যৌনাঙ্গ দিয়ে নির্গত যে কোন তরলই বীর্য নয়। শুধুমাত্র বীর্যই নাপাক এবং তা নির্গত হলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এর কারণে পবিত্র হওয়ার জন্যে গোসল করতে হয়। ওযু যথেষ্ট নয়।
মাসআলাঃ
স্বামী স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে বীর্যপাত না হলেও তাদের ওযু ভেঙ্গে যায় এবং পবিত্রতা অর্জনের জন্যে গোসল ফরজ হয়ে যায়।
মাসআলাঃ
পাক পবিত্র তথা ওযু বা গোসল করে মৃত দেহকে গোসল দিতে হয়। অর্থাৎ মুর্দা ব্যক্তিকে গোসল দানরত অবস্থায় দেহ স্পর্শ করার পরও গোসল দাতার ওযু তথা পবিত্রতা অটুট থাকে। মুর্দাকে গোসল দেয়ার পর গোসল দাতার নিজের জন্যে গোসল ফরজ হয়ে যায়।
মাসআলাঃ
হায়েজ ও নেফাস-এ সময়কাল অতিক্রান্তকারীনি রমনীদের জন্যে অযু একটি ভাল ও সাওয়াবের বিষয় বলে গণ্য। কিন্তু ইস্তেহাযা-তে সময়কাল অতিক্রান্তকারীনি রমনীরা তাদের নামাজের জন্যে অবশ্যই অযু করে নিবেন।
মাসআলাঃ
হজ্বের সময় যে হাজী মিনাতে উপস্থিত আছেন তার জন্যে পশু ক্বুরবানী করা হজ্বের অংশ ও আহকাম হিসেবে একটি ফরজ কাজ। আর যারা হজ্বের উদ্দেশ্যে মিনাতে যান নাই অথবা নিজ বাসস্থানে আছেন তাদের জন্যে ঈদুল আযহার দিনে ক্বুরবানী করা ফরজ নয়। তবে তা একটি নফল ইবাদত এবং সুন্নাতে মুআক্কাদাহ।
অর্থাৎ এই ক্বুরবানীর ব্যাপারে রাসূল(সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। আর জেনে রাখা দরকার! যে কোন ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে করলেই তা কবুল হয়। মানুষ, সমাজ ও অন্যকে দেখানোর জন্যে যে ইবাদত করা হয় তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না এবং তা আল্লাহ পছন্দও করেন না।
মাসআলাঃ
জীবিত ও মৃত যে কোন মুসলমানের পক্ষ থেকে পশু ক্বুরবানী দেয়া যায়।
মাসআলাঃ
ঈদুল আযহার দিন ছাড়াও অন্য যে কোন দিনে যে কোন হাজত পূরণের লক্ষ্যে পশু ক্বুরবানীর নিয়ত করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ফযিলতের বিষয়টি হচ্ছে, যে কোন অসুস্থ রোগীর তড়িৎৎ সুস্থতার জন্যে পশু ক্বুরবানী করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি আমল যা ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
মাসআলাঃ
বিয়ের পর স্ত্রী তার স্বামীর নাম নিজের নামের সাথে যুক্ত করে নিজ বংশ পরিচয় পরিবর্তন করতে চাইলে এটা হবে একটি হারাম কাজ। কিন্তু যদি কোন স্ত্রী বংশ পরিচয় পরিবর্তন করার ইচ্ছা ব্যতীরকে অতি মহব্বততের কারণে স্বামীর নাম তার নামের পাশে সংযুক্ত করে তাতে কোন দোষ নেই। তবে স্বামীর বংশের পরিচয়ে স্ত্রীর বংশ পরিচয়-এর বিষয়টি শরীয়তের দৃষ্টিতে দোষনীয়।
মাসআলাঃ
ইসলামী শরীয়তে নারী পুরুষের বিয়ে বন্ধনের জন্যে আক্বদের যে সীগাহর প্রচলন আছে তাতে দেন মোহরানার বিষয়টি উল্লেখ থাকায় অনেকে মনে করেন ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের অর্থ হচ্ছে নারী পুরুষের কেনা বেচা। এটা উক্ত বিষয়টিতে গভীর ও সঠিক দৃষ্টি না দেয়ার কারণে অথবা ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সৃষ্টি হয়েছে। বরং ইসলামী শরীয়তে মেয়েকে সম্মানী স্বরূপ ও মেয়ের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে যে দেন মোহরানার কথা উল্লেখ করা হয় তা মোটেই কেনা-বেচা অথবা বিবেকের দৃষ্টিতে অযৌক্তিক নয়। এমনটি অন্য ধর্মে না করে থাকলে তা নারীর প্রতি এক প্রকার অসম্মান ও অবিচার বলেই গণ্য হবে।
মাসআলাঃ
জুম্মা নামাজ ও দুই ঈদের নামাজের অংশ হচ্ছে খুতবা। অর্থাৎ খুতবা ছাড়া এই তিনটি নামাজ অসম্পূর্ণ রায়ে যায়। জুম্মা নামাজের আগে এবং ঈদের নামাজের পর খুতবা পাঠ করতে হয়।