হযরত ফাদ্বল ইবনে শাযান বলেছেনঃ
“আমি ইমাম রিদ্বা (আঃ)-এর কাছ থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ
যখন সর্বশক্তিমান আল্লাহ ইব্রাহীম (আ.)-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর পুত্র ইসমাঈলের পরিবর্তে আল্লাহর প্রেরিত ভেড়া যবাই করতে, তখন হযরত ইব্রাহীম (আ.) মনে মনে কামনা করেছিলেনঃ
“হায়! যদি আমি আমার পুত্র ইসমাঈল(আ.)-কে নিজ হাতে আল্লাহর রাহে যবাই করতে পারতাম আর পুত্রের পরিবর্তে ভেড়া যবাই করার নির্দেশ দেওয়া না হতো, যেন এ পূণ্য কাজের মাধ্যমে এমন একজন পিতার অনুভূতি ধারন করতে পারতাম যিনি তার সবচেয়ে প্রিয় সন্তানকে নিজ হাতে যবাই করে কুরবানী দিয়েছেন। ফলে তিনি দুঃখ-কষ্টের বিরুদ্ধে ধৈর্য ধারন করে সর্বোচ্চ পুরষ্কারের প্রাপ্ত হতেন!”
সর্বশক্তিমান আল্লাহ তখন তাঁর কাছে ওহী করলেনঃ
“হে ইব্রাহিম! তোমার কাছে আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি কে?
হযরত ইব্রাহিম (আ.) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি এমন কোন প্রাণী সৃষ্টি করো নাই যিনি হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়ে বেশী প্রিয় হবেন।”
আল্লাহ তাঁর কাছে ওহী করলেনঃ
“হে ইব্রাহিম! তুমি কি তাঁকে বেশী ভালোবাসো নাকি নিজেকে?”
তিনি বললেনঃ “আমি তাঁকে বেশী ভালোবাসি।”
আল্লাহ বললেনঃ “তুমি কি তাঁর সন্তানকে বেশী ভালোবাসো নাকি তোমার নিজের সন্তানকে?”
তিনি বললেনঃ তাঁর সন্তানকে।
আল্লাহ বললেনঃ “শত্রুদের দ্বারা যুলুম-অত্যাচারের মাধ্যমে তাঁর সন্তানের শির কাঁটা যাওয়ার বিষয়টা কি তোমাকে বেশী কষ্ট দেয়, নাকি আমার আদেশ পালন করার জন্য তোমার নিজের হাতে তোমার ছেলের শির কাঁটার বিষয়টি?”
তিনি বলেনঃ “শত্রুদের দ্বারা তাঁর সন্তানের শিরচ্ছেদ হওয়াটা আমার হৃদয়কে বেশী যন্ত্রনা দান করে।”
তখন আল্লাহ বলেনঃ “যারা নিজেদেরকে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত মনে করবে, তারা যুলুম ও অত্যাচার করে তাঁর পুত্র হুসাইন (আ.)-কে ভেড়ার মতো যবাই করবে এবং এ কাজের মাধ্যমে তারা আমার গজব ও ক্রোধের মুখোমুখি হবে।”
হযরত ইব্রাহীম (আ.) এই কথা শ্রবন করে দুঃখ ও বেদনায় মর্মাহত হয়ে বিলাপ ও আর্তনাদ করেন, তাঁর হৃদয় ব্যাথিত হয়ে উঠে এবং তিনি কাঁদতে থাকেন।
পরম শক্তিশালী আল্লাহ তখন তাঁর কাছে এই ওহী নাযিল করেছিলেনঃ
“হে ইব্রাহিম! ইমাম হুসাইন (আঃ) এবং তাঁর শাহাদাতের জন্য এই কান্না, দুঃখ ও মর্ম বেদনার কারণে, ইসমাঈলকে যদি তুমি যবাই করতে পারতে আর সে কারণে তোমার মধ্যে যে ব্যাথা ও যন্ত্রনা অনুভুত হতো, আমি ইসমাঈলের ব্যাপারে তোমার সেই দুঃখ-বেদনাকে কবুল করে নিয়েছি। মুসিবতের মোকাবেলায় ধৈর্যের কারণে পুরস্কারের সর্বোচ্চ স্তর আমি তোমাকে দান করেছি।”
এ বিষয়টি সেই আয়াতের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছেঃ
«وَ فَدَيْناهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ»
“এবং আমরা তাকে (=ঈসমাইলকে) একটি মহান ত্যাগ ও বৃহৎ কুরবানীর মোকাবেলায় উৎসর্গ করেছি।”
বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ১২, পৃঃ নং ১২৪।