মহররম

1615
কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের নানা দিক, বিশেষ করে এ বিপ্লবের মহানায়ক ইমাম হুসাইন (আ.), তাঁর পরিবারবর্গ এবং মহান সঙ্গীদের শাহাদাতসহ তাঁদের নানা ত্যাগ-তিতিক্ষা নিয়ে রচিত হয়েছে বাংলা ভাষায় অনেক শোক-গাঁথা বা মর্সিয়া, কবিতা ও শোক সঙ্গীত। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও কারবালার আত্মত্যাগ নিয়ে লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত মহররম কবিতা। নিচে সে কবিতাটি উদ্ধৃত করা হলোঃ

মহররম

-কাজী নজরুল ইসলাম
 
নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া
আম্মা, লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া,
 
কাঁদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে
সে কাঁদনে আঁসু আনে সীমারেরও ছোরাতে,
 
রুদ্র মাতম ওঠে দুনিয়া দামেশকে
জয়নালে পরাল এ খুনিয়ারা বেশ কে?
 
হায় হায় হোসেন ওঠে রোল ঝনঝায়
তলওয়ার কেপে ওঠে এযিদেরো পান্জায়,
 
উনমাদ দুলদুল ছুটে ফেরে মদিনায়
আলি জাদা হোসেনের দেখা হেথা যদি পায়,
 
মা ফাতেমা আসমানে কাঁদে খুলি কেশপাশ
বেটাদের লাশ নিয়ে বধূদের শ্বেতবাস,
 
রণে যায় কাসিম ঐ দু ঘড়ির নওশা
মেহেদির রঙটুকু মুছে গেল সহসা,
 
হায় হায় কাঁদে বায় পূরবী ও দখিনা
কঙ্কা পঁইচি খুলে ফেলো সখিনা,
 
কাঁদে কে রে কোলে করে কাসিমের কাটা শির?
খানখান খুন হয়ে ক্ষরে বুক ফাটা নীর,
 
কেঁদে গেছে থামি হেথা মৃত্যু ও রুদ্র
বিশ্বের ব্যথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্র,
 
গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতেমা
আম্মা গো পানি দাও ফেটে গেলো ছাতি মা,
 
নিয়ে তৃষ্না সাহারার দুনিয়ার হাহাকার
কারবালার প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহা কার,
 
দুই হাত কাটা তবু শের নর আব্বাস
পানি আনে মুখে হাঁকে দুশমন ও সাব্বাস,
 
দ্রিম দ্রিম বাজে ঘন দুন্দুভি দাম্মা
হাঁকে বীর শির দেগা, নেহি দেগা আম্মা,
 
মা র থনে দুধ নাই বাচ্চারা তর্ডপায়
জিভ চুষে কচি জান থাকে কি রে ধর্ডটায়,
 
দাউদাউ জ্বলে শিরে কারবালা ভাস্কর
কাঁদে বানু পানি দাও, মরে জাদু আসগর,
 
কলিজা কাবাব সম ভুনে মেরু রোদ্দর
খাঁ খাঁ করে কারবালা, নাই পানি খর্জুর,
 
পেল না ত পানি শিশু পিয়ে গেল কাঁচা খুন
ডাকে মাতা, পানি দেবো ফিরে আয় বাছা শুন,
 
পুত্রহীনার আর বিধবার কাঁদনে
ছিঁরে আনে মর্মের বত্রিশ বাঁধনে,
 
তাম্ভুতে শয্যায় কাঁদে একা জয়নাল
দাদা,তেরি হর কিয়া বরবাদ পয়মাল,
 
হাইদরি হাঁক হাঁকি দুলদুল আসওয়ার
শমশের চমকায় দশমনে ত্রাসবার,
 
খসে পড়ে হাত হতে শত্রুর তরবার
ভাসে চোখে কিয়ামতে আল্লার দরবার,
 
নিঃশেষে দুশমন ওকে রণ শ্রান্ত
ফোরাতের নীরে নেমে মুছে আঁখি প্রান্ত?
 
পানি দেখে হোসেনের ফেটে যায় পাঁজরা
ধুঁকে ম লো আহা তবু পানি এক কাৎরা,
 
দেয়নি রে বাছাদের মুখে কমজাতরা
অঙলি হতে পানি পড়ে গেল ঝর ঝর
লুটে ভূমে মহাবাহু খন্জর জর্জর,
 
হলকুমে হানে তেগ ও কে বসে ছাতিতে?
আফতাব ছেয়ে নিল আঁধিয়ারা রাতিতে,
 
আসমান ভরে গেল গোধূলিতে দুপরে
লাল নীল খুন ঝরে কুফরের উপরে,
 
বেটাদের লোহু রাঙা পিরাহান হাতে আহ
আরশের পায়া ধরে কাঁদে মাতা ফাতেমা,
 
এয় খোদা বদলাতে বেটাদের রক্তের
মার্জনা কর গোনা পাপী কমবখতের,
 
কত মহররম এল গেলো চলে বহুকাল
ভূলিনি গো আজো সেই শহীদের লোহু লাল,
 
মুসলিম,তোরা আজ জয়নাল আবেদিন
ওয়া হোসেন ওয়া হোসেন কেঁদে তাই যাবে দিন,
 
ফিরে এলো আজ সেই মোহররম মহিনা
ত্যাগ চাই, মর্সিয়া, ক্রন্দন চাহিনা,
 
উষ্ণীষ কোরানের হাতে তেগ আরবির
দুনিয়াতে নত নয় মুসলিম কারো শির,
 
তবে শোনো ঐ শোনো বাজে কোথা দাম্মা
শমশের হাতে নাও বাঁধো শিরে আম্মা,
 
বেজেছে নাকাড়া হাঁকে নকিবের তূর্য
হুশিয়ার ইসলাম, ডুবে তব সূর্য,
 
জাগো ওঠো মুসলিম হাঁকো হাইদরি হাঁক
শহীদের দিনে সব লালে লাল হয়ে যাক,
 
নওশার সাজ নাও খুন খচা আস্তিন
ময়দানে লুটাতে রে লাশ এই খাশ দিন,
 
হাসানের মতো পি ব পিয়ালা সে জহরের
হোসেনের মতো নিব বুকে ছুরি কহরের,
 
আসগর সম দিবো বাচ্চারে কোরবান
জালিমের দাদ নেবো, দেবো আজ গোর জান,
 
সকিনার শ্বেতবাস দেব মাতা কন্যায়
কাসিমের মতো দেব জান রুধি অন্যায়,
 
মোহররম কারবালা কাঁদো হায় হোসেনা
দেখো মরু সূর্যে এ খুন যেন শোষে না।

Related Post

শাম-এ-গারিবা

Posted by - আগস্ট ৩, ২০২৩
পশ্চিম আকাশে লালিমা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, এইতো কিছু, পূর্বে ছিল কোলাহল ছিল মৃত্যুধ্বনি, তরবারির ঝনঝনানি আরও কতো শব্দ ছিল আকাশে…

অব‌রুদ্ধ ফোরাত !!

Posted by - সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯
৭ মহররম ! দূ‌র্যো‌গের ঘণঘটার ডাক ! প্রকৃ‌তির বিলা‌পের সুর বে‌জে উঠার প্রস্তু‌তি ! ব‌য়ে যাওয়া ফোরা‌তের আর্তনাদ! সে আর্তনাদ…

হুসাইন(আ:) কে? (পর্ব-৫)

Posted by - সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯
হুসাইন(আ:) কে? (পর্ব-৫) – নূরে আলম মুহাম্মাদী। হুসাইন(আ:) কে? তা কি জানো? তাহলে বলি শোন। হুসাইন!!! যে নবী মুহাম্মাদের(সা.) মহব্বতে…

বিজয়ের চেতনায়

Posted by - আগস্ট ২৯, ২০২০
আজ থেকে হাজার বছর পূর্বের ঘটনা। এক পিতার সম্মুখেই তাঁর যুবক পুত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। সেখানে পিতা ছিলেন অসহায়।…

কালো রাতের মুসাফির

Posted by - আগস্ট ৬, ২০১৯
কালো রাতের মুসাফির __মোস্তফা কামাল সুমন একটি বিদঘুটে কালো রাত দির্ঘ প্রহর নিয়ে যেন এসেছে, পেঁচাদের লোমহর্ষক প্রতিধ্বনিত ডাক, আর…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »