ফাদাক সম্পর্কে –
ফাদাক মদিনার নিকটবর্তী হিজাজের একটা সবুজ ,উর্বর গ্রাম এবং এটা শামরুখ নামক দুর্গ দ্বারা সংরক্ষিত স্থান ছিল (হামাবি ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৩৮ ;বুখারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১০১৫ ;সামহুদী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১২৮০) ।
ফাদাক ইহুদিদের দখলে ছিল। ৭ম হিজরিতে এক শান্তিচুক্তির ফলে ফাদাকের মালিকানা রাসূলের (সা.) কাছে চলে যায়। এ চুক্তির মূল কারণ হলো খায়বার দুর্গের পতনের পর ইহুদিরা মুসলিম শক্তি অনুধাবন করতে পেরেছিল এবং তাদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাছাড়া কিছু সংখ্যক ইহুদি আশ্রয় প্রার্থনা করায় রাসূল (সা.) তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তারা একটা শান্তি প্রস্তাব পেশ করেছিল যে ,ফাদাক নিয়ে তাদের অবশিষ্ট এলাকায় কোন যুদ্ধ না করার জন্য। ফলে রাসূল (সা.) তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। এ ফাদাক তার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হলো এবং এতে অন্য কারো কোন স্বার্থ – স্বামীত্ব ছিল না। এতে কারো কোন স্বার্থ থাকতেও পারে না। কারণ জিহাদে অর্জিত গণিমতের মালে মুসিলিমদের অংশ ছিল। যেহেতু এ সম্পত্তি বিনা জিহাদে পাওয়া গেছে তাই এটাকে‘ ফায় ’ বলা হতো এবং রাসূল (সা.) একাই এর মালিক ছিলেন। এতে অন্য কারো কোন অংশ ছিল না। তাই আল্লাহ বলেনঃআল্লাহ ইহুদিদের কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে যে ফায় দিয়েছেন তার জন্য তোমারা অশ্ব কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি। আল্লাহু যার ওপর ইচ্ছা তাঁর রাসূলের কর্তৃত্ব দান করেন।(কুরআন – ৫৯:৬)কোন প্রকার যুদ্ধ ছাড়া ফাদাক অর্জিত হয়েছে। এ বিষয়ে কারো কোন দ্বীমত নেই। সুতরাং এটা রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল এবং এতে কারো কোন অধিকার ছিল না। ঐতিহাসিকগণ লিখেছনঃযেহেতু মুসলিমগণ তাদের ঘোড়া ও উট ব্যবহার করেনি। সেহেতু ফাদাক রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল (তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫৮২ – ১৫৮৩ আছীর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২২৪ – ২২৫ ;হিশাম ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৬৮ খালদুন ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪০ ;বাকরী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৫৮ শাফী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৫০ ;বালাজুরী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৩) ৷
উমর ইবনে খাত্তাবও মনে করতেন যে ফাদাক রাসূলের (সা.) অংশীদারবিহীন সম্পত্তি। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে ,আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যা দিয়েছিলেন বনি নজিরের সম্পত্তিও তার অন্তর্ভুক্ত। এতে কারো ঘোড়া বা উট ব্যবহৃত হয়নি। তাই এটা আল্লাহর রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পদ (বুখারী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৬ ;৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৮২: ৯ম খণ্ড ,পৃঃ ১২১ – ১২২ ;নিশাবুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫১ ;আশাছ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৩৯ – ১৪১ ;নাসাঈ ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩২ ;হাম্বল ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৫ ,৪৮ ,৬০ ,২০৮ ;শাফী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ২৯৬ – ২৯৯) ।
বিশ্বস্ত সূত্রে এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে ,রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশাতেই উক্ত ফাদাক তাঁর প্রাণপ্রিয় কন্যা ফাতিমাকে দান করেছিলেন। আল বাজ্জার , আবু ইয়ালা , ইবনে আবি হাতিম , ইবনে মারদুওয়াই ও অন্যান্য অনেকে আবু সাইদ খুদরী ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে ,যখন কুরআনের আয়াত -“ নিকটবর্তী আত্মীয় পরিজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও ” (১৭:২৬) – নাজিল হয়েছিল তখন রাসূল (সা.) ফাতিমাকে ডেকে এনে তাঁকে ফাদাক দান করে দিয়েছিলেন। (শাফী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭৭ ;শাফী ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৬ ;হিন্দি ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৯৩ ;শাফী ,১৫শ খণ্ড ,পৃঃ ৬২) ।
আবু বকর যখন ক্ষমতা দখল করেছিল তখন ফাতিমাকে বঞ্চিত ও দখলচ্যুত করে ফাদাক রাষ্ট্রায়ত্ব করেছিলেন। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেনঃনিশ্চয়ই ,আবু বকর ফাতিমার কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নিয়েছেন ( হাদীদ ,১৬শ খণ্ড ,পৃঃ ২১৯ সামহুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১০০০ ;হায়তামী ,পৃঃ ৩২) ।
আবু বকরের এহেন কাজে ফাতিমা সোচ্চার হয়ে উঠলেন এবং তিনি প্রতিবাদ করে বললেন ,“ রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় আমাকে ফাদাক দান করে গিয়েছিলেন। অথচ আপনি তার দখল নিয়ে নিয়েছেন। ” এতে আবু বকর সাক্ষী উপস্থাপন করার জন্য বললেন। ফলে ,আমিরুল মোমেনিন ও উন্মে আয়মন ফাতিমার পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে ,উম্মে আয়মন রাসূলের (সা.) একজন মুক্তিপ্রাপ্ত দাসী ছিলেন। তিনি উসামা ইবনে জায়েদ ইবনে আল – হারিছাহর মাতা ছিলেন। রাসূল করিম (সা.) প্রায়ই বলতেন ,“ আমার মাতার মৃত্যুর পরে উন্মে আয়মন আমার মাতা। ” রাসূল (সা.) তাকে বেহেশতবাসীদের একজন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। (নিশাবুরী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৬৩ ;তাবারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৪৬০ ;বার ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭৯৩ ;আছীর ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৫৬৭ ;সাদ ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৯২ ;হাজর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৩২) ।
কিন্তু আবু বকর এ সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে ফাতিমার দাবী নাকচ করে দিয়েছিলেন। এ সম্বন্ধে বালাজুরী লিখেছেনঃ ফাতিমা আবু বকরকে বলেছিলেন ,আল্লাহর রাসূল ফাদাক আলাদা করে আমাকে দিয়েছিলেন। সুতরাং আপনি আমাকে তা ফেরত দিন। এতে আবু বকর তাকে বললেন তিনি যেন উম্মে আয়মন ছাড়া আরো একজন সাক্ষী হাজির করেন। আবু বকর আরো বললেন ,হে রাসূলের কন্যা ,আপনি জানেন যে ,দুজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা ছাড়া সাক্ষ্য গ্রহণীয় হয় না।এ সব ঘটনার পর একথা অস্বীকার করার কোন উপায় থাকে না যে ,ফাদাক রাসূলের (সা.) ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি এর দখল ফাতিমার হাতে তুলে দিয়ে তাঁকে তা দান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আবু বকর তাকে বেদখল করে ফাদাক নিয়েছিলেন । এ ব্যাপারে তিনি আলী ও উন্মে আয়মনের সাক্ষ্য বাতিল করে দিয়েছিলেন। এ বাতিলের ক্ষেত্র হিসাবে তিনি উল্লেখ করলেন যে ,একজন পুরুষ ও একজন মহিলার সাক্ষ্য পরিপূর্ণ সাক্ষ্য হয় না। এছাড়াও ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ফাতিমার বক্তব্যের সপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু পিতামাতার পক্ষে সন্তানের সাক্ষ্য এবং নাবালকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। উল্লেখ করে আবু বকর তা বাতিল করে দিয়েছিলেন। তারপর রাসূলের (সা.) গোলাম রাবাহকে সাক্ষী হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল কিন্তু তাকেও প্রত্যাখান করা হলো (বালাজুরী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৫ ;ইয়াকুবী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৯৫ ;মাসুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ২৩৭ ;আশকারী ;পৃঃ ২০৯ ;সামহুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৯৯৯ – ১০০১ ;রাজী ,২৯তম খণ্ড ,পৃঃ ২৮৪) ।
এ পর্যায়ে একটা বিষয় বিবেচনার দাবী রাখে তা হলো এটা স্পষ্ট হয়েছে যে ,ফাদাক ফাতিমার দখলে ছিল এবং আমিরুল মোমেনিন ও তার পত্রে উল্লেখ করেছেন ,“ ফাদাক আমাদের দখলে ছিল। ” এ ক্ষেত্রে সাক্ষী উপস্থাপন করতে বলাটা কোন অর্থবহ কথা নয় ;এটা জুলুম করে অন্যের সম্পত্তি দখল করার তালবাহানা মাত্র। কারণ যার দখলে আছে তার সাক্ষী উপস্থাপন করার কোন প্রয়োজন নেই বরং যে দখলকারীকে উচ্ছেদ করতে চায় তার দাবীর জন্যই সাক্ষীর প্রয়োজন। কাজেই ফাতিমার সম্পত্তি দখল করার জন্য আবু বকরের সাক্ষী উপস্থাপন করা আইন সিদ্ধ ছিল। যেহেতু আবু বকর এমন কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নি সেহেতু ফাদাকে ফাতিমার মালিকানাই আইনের দৃষ্টিতে সঠিক। কাজেই আরো সাক্ষী বা প্রমাণ হাজির করার জন্য তাকে বলাটা অন্যায় বৈ কিছু নয়।এটা একটা অবাক করা বিষয় যে ,আবু বকরের কাছে অনেকেই একই ধরণের অনেক দাবী পেশ করেছিল। তিনি কোন সাক্ষী প্রমাণের প্রশ্ন না তুলেই দাবীদারকে তাদের দাবীকৃত সম্পত্তি দিয়েছিলেন। অথচ ফাতিমার বেলায় তিনি এসব তালবাহানা করে তাদেরকে দুঃখ – কষ্টে নিপতিত করেছিলেন। এ বিষয়ে হাদিসবেত্তাগণ লিখেছেনঃজাবির ইবনে আবদিল্লাহ আনসারী থেকে বর্ণিত আছে যে ,আল্লাহর রাসূল বলেছেন যে ,যখন বাহরাইন হতে যুদ্ধলব্ধ মাল পৌছবে তখন জাবির অমুক অমুক জিনিসগুলো পাবে । কিন্তু রাসূলের ওফাতের পূর্বে সে মাল এসে পৌছায়নি। আবু বকরের খেলাফত কালে তা মদিনীয় পৌছালে জাবির আবু বকরের কাছে গিয়েছিল । তখন আবু বকর ঘোষণা করলো যে ,রাসূলের বিরুদ্ধে যাদের কোন দাবী – দাওয়া আছে অথবা রাসূল যদি কাউকে কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন সে যেন তার দাবী নিয়ে আসে । এতে জাবির বললো ,রাসূল (সা.) আমাকে অমুক অমুক মালগুলো দেয়ার কথা বলেছিলেন । আবু বকর বাহরাইনের যুদ্ধলব্ধ মাল হতে জাবিরকে তা দিয়েছিলেন (বুখারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১৯ ,২০৯ ,২৩৬ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১১০: ৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২১৮. নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৭৫ – ৭৬: তিরমিজী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১২৯ ,হাম্বল ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩০৭ – ৩০৮ সাদ ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৮৮ – ৮৯) ।এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আসকালানী ( হিঃ ৭৭৩/ ১৩৭২ – ৮৫২/১৪৪৯) এবং হানাফী (৭৬২/ ১৩৬১ – ৮৮৫/ ১৪৫১) লিখেছেনঃএ হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে ,শুধুমাত্র একজন সাহাবির সাক্ষ্য পূর্ণ সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা জায়েজ – এমনকি যদি সে সাক্ষ্য তার নিজের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যও হয় । কারণ আবু বকর জাবিরকে তার দাবীর স্বপক্ষে কোন সাক্ষী হাজির করতে বলেন নি (আসকালানী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৮০ ;হানাফী ,১২শ খণ্ড ,পৃঃ ১২১) ।
এখন প্রশ্ন হলো কোন সাক্ষ্য – প্রমাণ উপস্থিত না করেই যখন জাবিরের দাবীকৃত সম্পদ তাকে দেয়া হয়েছে তখন ফাতিমার দাবীকৃত সম্পত্তি একইভাবে ফেরত দিতে কিসে আবু বকরকে বাধা দিয়েছিল ? জাবিরের প্রতি তার যদি এমন ধারণা হয়ে থাকে যে ,সে মিথ্যা বলে স্বীয় স্বার্থ উদ্ধার করবে না ;তবে ফাতিমার প্রতি তার এ ধারণা গ্রহণে কিসে তাকে বাধাগ্রস্থ করেছে যে ,ফাতিমা এক টুকরা জমির জন্য রাসূল করিম (সা.) সম্বন্ধে মিথ্যা বলতে পারে না। ফাতিমার সর্বজন স্বীকৃত সত্যবাদীতা ও সততাই তো তাঁর দাবীর সত্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট ছিল। তবু আবু বকরের সন্তুষ্টির জন্য তিনি আলী ও উম্মে আয়মনের মতো সম্মানিত সাক্ষী উপস্থিত করেছিলেন। একথা বলা হয়ে থাকে কুরআনের নিম্নের আয়াতের নীতির অনুসরণে ফাতিমার দাবী প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলঃদুজন পুরুষ সাক্ষী রাখবে ;দুজন পুরুষ সাক্ষী পাওয়া না গেলে একজন পুরুষ ও দুজন নারী সাক্ষী রাখবো । (কুরআন ২: ২৮২)কুরআনের উক্ত নীতি যদি সর্বক্ষেত্রে সার্বজনীন হয়ে থাকে। তবে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ থাকবে। কিন্তু একদিন একজন আরববাসী রাসূলের সাথে একটি উটি নিয়ে বিরোধ করে। এতে খুজায়মা ইবনে ছবিত আনসারী রাসূলের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করলেন। এই একজনের সাক্ষকে দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল। কারণ তার সততা ও সত্যবাদীতা সম্পর্কে কারো কোন প্রকার সংশয় ছিল না। এ কারণেই রাসূল (সা.) তাকে“ জুশ শাহাদাতাইন ” (দুজন সাক্ষীর সমান) উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন (বুখারী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৪ ;৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ১৪৬ ;তায়ালিসী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩০৮ ;নাসাঈ ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩০২ ;হাম্বল ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১৮৮ ,১৮৯ ,২১৬ ;বার ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৪৮ ;আছীর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১১৪ ;সানানী ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৬৬ – ৩৬৮) ।
ফলতঃ এ ব্যবস্থার কারণে আয়াতটির সাধারণত্ব প্রভাবিত হয়নি বা এটা সাক্ষ্য সংক্রান্ত বিধানের বিপরীত কিছু নয়। সুতরাং রাসূলের মতানুসারে সত্যবাদিতা গুণের জন্য একজন সাক্ষীকে দুজন সাক্ষীর সমান ধরে নেয়া হয়ে থাকে। তাহলে ফাতিমার পক্ষে আলী ও উন্মে আয়মনের সাক্ষ্য কি তাদের নৈতিক মহত্ত্ব ও সত্যবাদিতার জন্য যথেষ্ট ছিল না ? এছাড়া ,উক্ত আয়াতে এ দুপথ ছাড়া দাবী প্রতিষ্ঠিত করার আর কোন পথ উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে কাজী নুরুল্লা মারআশী (৯৫৬/১৫৪৯– ১০১৯ / ১৬১০) লিখেছেনঃউম্মে আয়মনের সাক্ষ্য অসম্পূর্ণ বলে যারা প্রত্যাখ্যান করেছে তারা প্রকৃতপক্ষে ভুল করেছে। কারণ কোন কোন হাদিসে দেখা যায়। একজন সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রদান করা বৈধ এবং তাতে কুরআনের নির্দেশ ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করা হয়নি । কারণ এ আয়াতের গুঢ়ার্থ হলো দুজন পুরুষ সাক্ষী অথবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে এবং তাদের সাক্ষ্যই যথেষ্ট । এ কথা দ্বারা এটা বুঝায় না যে ,যদি সাক্ষীর সাক্ষ্য ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্র থেকে থাকে তা গ্রহণীয়া হবে না এবং সে ভিত্তিতে রায় দেয়া যাবে না এটাই হচ্ছে আয়াতটির মূলভাব । কোন কিছুর ভাবার্থ চূড়ান্ত যুক্তি নয় । তাই এ ভাবার্থও গ্রাহ্য করা যায় না । বিশেষ করে হাদিস এর বিপরীত ভাব ব্যক্ত করেছে । এ ভাবার্থকে এড়িয়ে গেলে তা আয়াত অমান্য করা বুঝায় না । দ্বিতীয়তঃ আয়াতটি দুটি বিষয়ের যে কোনটি বেছে নেয়ার অনুমতি দিয়েছে । তা হলো দুজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী । যদি হাদিস দ্বারা তৃতীয় একটি বিষয় বেছে নেয়ার জন্য যোগ করা হয় তবে তাতে কি করে কুরআনের আয়াত লঙ্ঘিত হয়েছে বলা যাবে ? যাহোক এতে বুঝা যাচ্ছে যে ,দাবীদার দুজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করতে বাধ্য নয়। কারণ যদি কোন দাবীতে কোন সাক্ষী না থেকে থাকে তাহলে আল্লাহর নামে শপথ করে। বললেই তার দাবী আইনসিদ্ধ হবে এবং তার অনুকূলে সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে। এতদসংক্রাক্ত বিষয়ে ১২ জনের অধিক সাহাবা বর্ণনা করেছেন যে ,আল্লাহর রাসূল শপথ গ্রহণ পূর্বক একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন ।রাসূলের (সা.) কতিপয় সাহাবা ও জুরিসপ্রুডেন্সের কতিপয় পণ্ডিত ব্যক্তি ব্যাখ্যা করেছেন যে ,এ সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে অধিকার ,সম্পদ ও লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত এবং এ সিদ্ধান্ত আবু বকর ,উমর ,উসমান খলিফাত্রয়ও মেনে চলতেন (নিশাবুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১২৮ ;তায়ালিসী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩০৮ – ৩০৯ ;তিরমিজী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৬২৭ – ৬২৯ ;মাযাহ ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৭৯৩ ;হাম্বল ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৪৮ ,৩১৫ ,৩২৩ ;৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩০৫ ;৫ম খণ্ড ২৮৫ ;আনাস ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৭২১ – ৭২৫ ;শাফী ,১০ম খণ্ড ,পৃঃ ১৬৭ – ১৭৬ ;কুন্তি ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২১২ – ২১৫ ;শাফী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২০২ ;হিন্দি ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩) ।
যেখানে শপথ করে সাক্ষ্য দিলে একজন সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয়ার বিধান রয়েছে সেক্ষেত্রে যেহেতু আবু বকরের দৃষ্টিতে ফাতিমার উপস্থাপিত সাক্ষী অসম্পূর্ণ ছিল ,সেহেতু তিনি ফাতিমার শপথ নিয়ে তাঁর অনুকূলে রায় দিতে পারতেন। কিন্তু এখানে মূল উদ্দেশ্যই ছিল ফাতিমাকে বঞ্চিত করে আলী পরিবারকে অভাব অনটনে নিপতিত করা এবং ফাতিমার সত্যবাদিতাকে কলঙ্কিত করা যাতে করে ভবিষ্যতে তার প্রশংসা চাপা পড়ে যায়।যাহোক যখন রাসূলের দানের ভিত্তিতে ফাতিমার দাবী এসব তালবাহানা করে বাতিল করে দেয়া হয়েছিল তখন তিনি দাবী করলেন যে ,রাসূলের উত্তরাধিকারিণী হিসাবে তিনিই ফাদাকের মালিক। এ বিষয়ে ফাতিমা বলেছিলেন ?যদিও আপনি রাসূলের দানকে অস্বীকার করছেন ,কিন্তু ফাদাক ও খাইবারের রাজস্ব এবং মদিনার কাছে কিছু জমি যে রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পত্তি একথা অস্বীকার করতে পারবেন না । কাজেই আমিই রাসূলের একমাত্র উত্তরাধিকারিণী । কিন্তু আবু বকর নিজেই একটি হাদিস ব্যক্ত করে ফাতিমার উত্তরাধিকারিত্ব অস্বীকার করলেন । তিনি বললেন রাসূল বলেছেন ,“ আমরা নবীগণের কোন উত্তরাধিকারী নেই ;আমরা যা কিছু রেখে যাই তার সবই জাকাত হিসাবে বায়তুল মাল ।বুখারী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৯৬ ;৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২৫ ,২৬ ,১১৫ ,১১৭ ;৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৮৫ ; নিশাবুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫৩ – ১৫৫ তিরমিজী ,৪র্থ খণ্ড পৃঃ ১৫৭ – ১৫৮ ;তায়ালিসী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৪২ – ১৪৩: নাসাঈ ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩২ ;হাম্বল ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪ ,৬ ,৯ ,১০: শাফী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ৩০০ ;সাদ , ২য় খণ্ড ,পৃঃ ৮৬ – ৮৭ ;তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৮২৫ বাকরী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৭৩ – ১৭৪) |
আবু বকর ছাড়া রাসূলের এহেন উক্তি আর কারো জানা ছিল না। এমনকি সাহাবাদের মধ্যে আর কেউ এমন কথা শোনেনি। জালালুদ্দিন আবদুর রহমান সুয়ুতী (৮৪৯/১৪৪৫ – ৯১১/১৫০৫) এবং শিহাবুদ্দিন ইবনে হাজর হায়তামী (৯০৯/১৫০৪ – ৯৭৪/১৫৬৭) লিখেছেনঃরাসূলের (সা.) মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল । আৰু বকর বলেছিলেন যে ,রাসূল (সা.) নাকি তাকে বলেছিলেন ,“ আমরা অর্থাৎ নবীদের কোন উত্তরাধিকারী নেই এবং আমরা যা কিছু রেখে যাই সবই যাকাত হয়ে যায়৷ ৷ ” এ বিষয়ে অন্য কেউ কোন কিছুই জ্ঞাত ছিলেন না (সুয়ুতী ,পৃঃ ৭৩ হায়তামী ,পৃঃ ১৯১১) ।
কোন বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন হৃদয় এ কথা বিশ্বাস করতে পারবে না যে ,যারা রাসূলের ওয়ারিশ ছিলেন তাদের কাউকে কিছু না বলে তৃতীয় ব্যক্তির নিকট বলে গেছেন যে তাঁর কোন উত্তরাধিকারী নেই এবং সব চাইতে বিস্ময়কর হলো এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্বন্ধে সাহাবাগণ অবহিত ছিলেন না। আর এটা তখনই প্রকাশ করা হলো যখন ফাতিমা ফাদাক ফেরত দেয়ার জন্য দাবী করলেন যাতে আবু বকর ছিলেন বিরোধী পক্ষ। এ অবস্থায় তার নিজের অনুকূলে এমন এক হাদিস বর্ণনা করলেন যা আর কারো জানা ছিল না। কিভাবে এ হাদিসটি গ্রহণীয় হতে পারে। যদি একথা বলা হয় যে ,আবু বকরের মহৎ মর্যাদার কারণে এ হাদিসটি নির্ভরযোগ্য তাহলে ফাতিমার সত্যবাদীতা ,সততা ও মহৎ মর্যাদার কারণে কেন রাসূলের দান সংক্রান্ত তাঁর দাবী বিশ্বাস করা হলো না ? তাছাড়া আমিরুল মোমেনিন ও উন্মে আয়মনের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। যদি ফাতিমার দাবীর জন্য আরো সাক্ষীর প্রয়োজনীয়তা থেকে থাকে তা হলে এ হাদিসটি প্রমাণের জন্যও অবশ্যই সাক্ষীর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এ হাদিস উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কুরআনের সাধারণ নির্দেশের পরিপন্থী। নবীদের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে কুরআনে বর্ণিত হয়েছেঃএবং সোলায়মান ছিল দাউদের উত্তরাধিকারী (২৭:১৬) । সুতরাং তোমরা নিজের থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দাও যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুবের পরিবারের উত্তরাধিকারী হবে – বললেন জাকারিয়া (১৯:৫ – ৬) ।
উপরোক্ত আয়তগুলোতে ভৌত সম্পদের উত্তরাধিকারকেই বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন এসব আয়াতে নবুয়তের জ্ঞানের উত্তরাধিকারকে বুঝানো হয়েছে। এটা একটা অসাড় যুক্তি এবং বাস্তব বিবর্জিত কথা। কারণ নবীদের জ্ঞান উত্তরাধিকারের বস্তু হতে পারে না এবং এটা উত্তরাধিকারের মাধ্যমে হস্তান্তরযোগ্য নয়। এমনটি হলে সকল নবীর বংশধরগণ নবী হতেন। সেক্ষেত্রে কোন কোন নবীর পুত্র নবী হয়েছিলেন এবং অন্যরা এটা থেকে বঞ্চিত হয়েছে – এরূপ ব্যবধানের কোন অর্থ থাকতো না। নূরুদ্দিন ইবনে ইব্রাহিম হালাবি (৯৭৫/ ১৫৬৭ – ১০৪৪/ ১৬৩৫) তাঁর গ্রন্থে শামসুদ্দিন ইউছুফ হানাফীর (৫৮১/ ১১৮৫ – ৬৫৪/ ১২৫৬) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেনঃআবু বকর একদিন মিম্বারে বসা ছিলেন । এমন সময় ফাতিমা তার কাছে এসে বললেন ,“ হে আবু বকর ,কুরআন আপনার কন্যাকে আপনার উত্তরাধিকারী করেছে অথচ আপনি আমাকে আমার পিতার উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত করেছেন। ” একথা শোনামাত্রই আবু বকর কাঁদতে কাঁদতে মিম্বার থেকে নেমে পড়লেন । তারপর তিনি ফাতিমার অনুকূলে ফাদাক লিখে দিলেন । এ সময় উমর সেখানে উপস্থিত হয়ে ওটা কী জানতে চাইলেন । প্রত্যুত্তরে আবু বকর বললেন ,“ এটা একটা দলিল যাতে আমি লিখে দিয়েছি যে ,ফাতিমা তাঁর পিতার উত্তরাধিকারিণী ” উমর বললো ,“ তুমি দেখছো আরবগণ তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে যাচ্ছে ,সেক্ষেত্রে এ দলিল দিলে মুসলিমদের জন্য কোথা থেকে তুমি ব্যয় করবে । ” তারপর উমর ফাতিমার হাত থেকে দলিল খানা নিয়ে ছিড়ে ফেললেন (শাফী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ৩৬১ – ৩৬২) |
একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় হাদিসটি ছিল ভুল এবং ফাতিমাকে ফাদাক ও রাসূলের (সা.) অন্যান্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্যই এ হাদিস উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে ফাতিমা এসব তালবাহানার জন্য আবু বকর ও উমরের উপর তার রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে আছিয়াত করে দিলেন যে ,এ দুজন যেন তার জানাযায় অংশ গ্রহণ না করে। আয়শা বর্ণনা করেছেনঃরাসূলের (সা.) দেহত্যাগের পর আবু বকর যখন খলিফা হলেন তখন ফাতিমা রাসূল (সা.) কর্তৃক তাজ্যবৃত্ত – ফাদাক এবং মদিনা ও খাইবারের এক পঞ্চমাংশ বার্ষিক আয়ের উত্তরাধিকার দাবী করলেন । আবু বকর ফাতিমাকে এর কোন কিছু দিতে রাজি হলেন না । তখন থেকে ফাতিমা আবু বকরের ওপর রাগান্বিত ছিলেন এবং তাকে পরিত্যাগ করলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত কখনো আবু বকরের সাথে কথা বলেননি । যখন তিনি ইনতিকাল করলেন তখন তাঁর স্বামী আলী ইবনে আবি তালিব রাত্রিকালে তাঁকে দাফন করলেন । তিনি আবু বকরকে ফাতিমার মৃত্যুর খবর দেননি এবং জানাযা করার জন্যও ডাকেননি। (বুখারী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১৭৭ ;৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৮৫: নিশাবুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫৩ – ১৫৫. শাফী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৯ ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ৩০০ – ৩০১: সাদ , ২য় খণ্ড ,পৃঃ ৮৬ হাম্বল ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৯ ;সামহুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৯৯৫)
এ সম্পর্কে মুহাম্মদ ইবনে জাফরের কন্যা উন্মে জাফর থেকে বর্ণিত আছে যে ,ফাতিমা আসমা বিনতে উমায়েসকে অনুরোধ করেছিলেন ,“ আমি মৃত্যুবরণ করলে তুমি ও আলী আমাকে গোসল করাবে এবং আমার ঘরে প্রবেশ করে কাউকে আমার কাছে যেতে দিয়ো না। ” যখন ফাতিমা মৃত্যুবরণ করলেন তখন আয়শা তার ঘরে ঢুকতে চাইলো কিন্তু আসমা বললেন ,“ ঘরে ঢুকবেন না। ” এতে আয়শা রাগান্বিত হয়ে তার পিতা আবু বকরের নিকট অভিযোগ করে বললেন ,“ এ খাছামিয়্যা (কাছাম গোত্রের মহিলা অর্থাৎ আসমা) আমাদের ও আল্লাহর রাসূলের কন্যার মধ্যে নাক গলায়। ” এতে আবু বকর এসে দুয়ারে দাঁড়িয়ে বললেন ,“ হে আসমা ,রাসূলের স্ত্রীকে তাঁর কন্যার ঘরে প্রবেশ করতে কী কারণে তুমি বাধা দিলে ?” প্রত্যুত্তরে আসমা বললেন ,“ তিনি নিজেই আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন যেন কাউকে তার কাছে যেতে না দেই। ” তখন আবু বকর বললেন ,“ তিনি তোমাকে যা করতে বলেছেন তা – ই কর (ইসফাহানী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৩ ;শাফী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৯৬ ;৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩৩৪ ;বালাজুরী ,১ম খণ্ড ,পৃ: ৪০৫ ;বার ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৮৯৭ – ১৮৯৮ ;অছীর ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৫২৪) ।
ফাতিমা আমিরুল মোমেনিনকে আরো অনুরোধ করেছিলেন যে ,তাকে যেন রাত্রিকালে দাফন করা হয় ,কেউ যেন তাঁর কাছে না আসে ,আবু বকর ও উমরকে তাঁর মৃত্যু ও দাফন সম্পর্কে কিছুই যেন অবহিত করা না হয় এবং আবু বকর যেন তাঁর জানাযায় না যায়। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন আলী তাকে গোসল করালেন ,রাতের অন্ধকারে দাফন করলেন এবং আবু বকর ও উমরকে এ বিষয়ে কিছু জানালেন না। মুহাম্মদ ইবনে উমর ওয়াকিদি বলেছেনঃআমাদের কাছে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে ,আলী নিজেই ফাতিমার জানাজা করেছিলেন এবং আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও তার পুত্র ফজলকে সঙ্গে করে রাত্রিকালে তাঁকে দাফন করেছিলেন । এ বিষয়ে তিনি কাউকে কিছু জানান নি ।এ কারণে ফাতিমার মাজার শরিফ অজ্ঞাত ও গুপ্ত রয়ে গেছে তার মাজার শরিফ সম্পর্কে কেউ কোন সুনিশ্চিত স্থান বলতে পারে না (নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৬২ – ১৬৩ ;সানানী , ৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২১৪১ ;বালাজুরী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৪০২ – ৪০৫ ;বার ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৮৯৮ ;আছীর ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৫২৪ – ৫২৫ ;হাজর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩৭৯ – ৩৮০ ;তাবারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ২৪৩৫ – ২৪৩৬ ;সাদ ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৯ – ২০ ;সামহুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৯০১ – ৯০৫ ;হাদীদ ,১৬শ খণ্ড ,পৃঃ ২৭৯ – ২৮১) ।
ফাতিমার এ অসন্তোষ নেহায়েত ব্যক্তিগত আবেগ বলে কেউ কেউ মনে করেন। তারা প্রকৃত পক্ষে এ অসন্তোষের গৃঢ় রহস্য অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি এটা ব্যক্তিগত আবেগ হতো তাহলে আমিরুল মোমেনিন এটা থেকে তাঁকে নিবৃত্ত করতেন। কিন্তু কোন ইতিহাসে দেখা যায় না যে ,আমিরুল মোমেনিন ফাতিমার অসন্তোষকে ব্যক্তিগত আবেগ বলে মনে করেছেন।তদুপরি ,কী করে ফাতিমার অসন্তোষ ব্যক্তিগত আবেগ প্রবণতা হতে পারে ? তাঁর সকল সন্তোষ বা অসন্তোষই আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত। রাসূলের নিন্মোক্ত বাণীই এর প্রমাণঃহে ফাতিমা ,নিশ্চয়ই তোমার ক্রোধে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন এবং তোমার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট (নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৫৩. আছীর ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৫২২ ,হাজর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩৬৬ ,১২শ খণ্ড ,পৃঃ ৪৪১ ;সুয়ন্তী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২৬৫: হিন্দি ,১৩শ খণ্ড ,পৃঃ ৯৬ ;১৬শ খণ্ড ,পৃঃ ২৮০: শাফী ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ২০৩) |
ফাতিমার মৃত্যুর পর ফাদাকের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে ফাঁদকের তিনশত বছরের ইতিহাস বর্ণনা করার পেছনে মুলতঃ তিনটি প্রশ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করাই উদ্দেশ্য -(ক) আবু বকর বলেছেন রাসূল (সা.) নাকি তাকে বলেছেন ,“ নবীদের পরিত্যক্ত সম্পদ তাদের ওয়ারিশগণ প্রাপ্য হন না। ” এহেন অযৌক্তিক উক্তি রাসূলের নামে চালিয়ে দিয়ে যে বিধির প্রচলন করতে চেয়েছেন তা বাতিল করা। আবু বকরের এ বক্তব্য তার পরবর্তী দুজন খলিফা উমর ও উসমান কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং উমাইয়া ও আব্বাসীয় অন্য বাদশাগণ কর্তৃকও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। একথা মনে রাখতে হবে যে ,আবু বকরের খেলাফতের বৈধতা ও সঠিকতা এবং তার কর্মকাণ্ডের ওপরই পরবর্তীগণের খেলাফতের বৈধতা ও ন্যায্যতা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে।(খ) আমিরুল মোমেনিন ও ফাতিমার বংশধরগণ কখনো তাদের দাবীর ন্যায্যতা ,বৈধতা ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে কোনরূপ দ্বিধাবোধ করেননি। তাঁরা সব সময়ই সুনিশ্চিত ছিলেন যে ,ফাতিমার ন্যায়সঙ্গত অধিকার আবু বকর কেড়ে নিয়েছে এবং তার বৈধ দাবী আবু বকর প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ ফাতিমা কখনো কোন কিছুর জন্যই মিথ্যা দাবী উত্থাপন করতে পারেন না। যদি কেউ এমনটি বলে যে ,ফাতিমার দাবী মিথ্যা তবে নিশ্চয়ই মনে করতে হবে সে (যে এমন মনে করে) মিথ্যাবাদী।(গ) যখনই কোন খলিফা আল্লাহর আদেশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ন্যায় বিচার করার চিন্তা করেছে এবং ইসলামিক বিধানকে সমুন্নত করার চিন্তা করেছে ,তারা ফাতিমার বংশধরকে ফাদাক ফিরিয়ে দিয়েছে।১ । উমর ইবনে খাত্তাব ছিলেন তাদের মধ্যে প্রথম সারির লোক যারা ফাতিমাকে তার উত্তরাধিকার ও ফাদাক থেকে বঞ্চিত করার কাজে লিপ্ত ছিলেন। উমর নিজেই স্বীকার করেছেনঃযখন আল্লাহর রাসূল ইনতিকাল করলেন তখন আমি আবু বকরকে সঙ্গে করে আলীর কাছে ভেবেছেন ?” আলী বললেন ,“ রাসূলের সব কিছুরই একমাত্র উত্তরাধিকারী আমরা । ” তখন আমি (উমর) বললাম ,“ খাইবারের সম্পত্তিতেও ?” তিনি বললেন ,“ হা ,খাইবারের সম্পত্তিতেও |” আমি বললাম ,“ ফাদাকেও ?” তিনি বললেন ,“ হা ,ফাদাকেও । ” তখন আমি বললাম ,“ আল্লাহর কসম ,আমরা তা হতে দেব না। আপনি যদি করাত দিয়েও আমাদের কেটে ফেলেন। তবুও আমরা এসব আপনাকে দেব না ” (শাফী ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৯ – ৪০) ।পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ,আবু বকর কর্তৃক প্রদত্ত ফাদাকের দলিল উমর ফাতিমার হাত থেকে টেনে নিয়ে ছিড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু উমর যখন খলিফা হলেন (১৩/৬৩৪ – ২৩/ ৬৪৪) তখন তিনি রাসূলের উত্তরাধিকারীদেরকে ফাদাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক ইয়াকুত হামাবি (৫৭৪/১১৭৮ – ৬২৬/১২২৯) লিখেছেনঃউমর ইবনে খাত্তাব খলিফা হবার পর যখন বিজয় লাভ করলেন এবং মুসলিমগণ মোটামুটি সম্পদশালী হয়ে উঠলো এবং বায়তুল মালে জনগণের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হলো তখন তিনি তাঁর পূর্ববর্তী খলিফা আবু বকরের সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায় দিলেন যে ,ফাদাক রাসূলের (সা.) উত্তরাধিকারীদের হাতে ফেরত দেয়া হলো । এবার আলীর সঙ্গে আব্বাস ইবনে আবদুল মৃত্তালিব ফাদাক নিয়ে বিরোধ করলো । আলী বললেন যে ,রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশাতেই ফাতিমাকে ফাদাক দান করে দিয়েছেন | আব্বাস তা অস্বীকার করে বললেন ফাদাক রাসূলের (সা.) দখলে ছিল এবং আমি তাঁর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে একজন । তারা বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উমরের শরনাপন্ন হলো । কিন্তু উমর বিচার করতে অপারগতা প্রকাশ করে বললেন ,“ আপনারা উভয়েই আমার চেয়ে আপনাদের সমস্যা সম্পর্কে অনেক বেশি। ওয়াকিফহাল । আমি শুধু আপনাদেরকে ফাদাক দিলাম । আপনাদের সমস্যা আপনারা নিষ্পত্তি করুন। ” (হামাবি ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৩৮ – ২৩৯ ;সামহুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৯৯৯ ;আজহারী ,১০ম খণ্ড ,পৃঃ ১২৪ ;মনজুর ,১০ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৭৩: জাবিদী ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ১৬৬) ।
ওপরের বর্ণিত ইতিহাস থেকে বুঝা যায় যে ,আবু বকর ও উমর কোন ধর্মীয় কারণে ফাদাক থেকে ফাতিমাকে বঞ্চিত করে তা আত্মসাৎ করেননি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তারা এটা করেছেন। যখন খেলাফতে তাদের আসন শক্তিশালী হয়েছে তখনই উমর তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফাদাক ফেরত দেয়ার রায় দিয়েছিল। আমিরুল মোমেনিনকে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতায় রাখতে পারলে খেলাফত দখল কিছুটা নির্বিঘ্ন থাকবে বলে তারা এমনটি করেছেন। প্রকৃত পক্ষে হয়েছেও তাই।
২। উমরের পর যখন উসমান ইবনে আফফান (২৩/ ৬৪৪ – ৩৫/৬৫৬) খলিফা হলেন ,তিনি তার চাচাত ভাই মারওয়ান ইবনে হাকামকে ফাদাক দিয়েছিলেন (শাফী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ৩০১ ;সামহুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১০০০ ;হাদীদ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৯৮) । উসমানের এহেন স্বজন প্রীতিই তার প্রতি জনগণের কঠোর মনোভাবের অন্যতম কারণ যা তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয় (কুতায়বা ,পৃঃ ১৯৫ ;রাব্বিহ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৮৩ ও ৪৩৫ ;ফিদা ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৬৮ ;ওয়ারদী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২০৪) । এভাবে ফাদাক মারওয়ানের দখলে চলে যায়। সে তার ফসল ও উৎপন্ন দ্রব্য বার্ষিক দশ হাজার দিনার ঠিকা চুক্তিতে বিক্রি করতো। উমর ইবনে আবদুল আজিজের খেলাফতের (হিঃ ১০০/৭১৮ খৃঃ) পূর্ব পর্যন্ত এটাই ছিল ফাদাকের স্বাভাবিক আয় (সা ’ দ ’ ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২৮৬ – ২৮৭ ;কালকাশন্দি ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৯৯) ।
৩। যখন মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান খেলাফত দখল করলো। (৪১/ ৬৬১ – ৬০/ ৬৮০) তখন সে মারওয়ান ও অন্যান্যদের সাথে ফাদাকের অংশীদার হলো। সে এক তৃতীয়াংশ মারওয়ানকে দিতো ,এক তৃতীয়াংশ আমর ইবনে উসমান ইবনে আফফানকে দিতো এবং এক তৃতীয়াংশ তার পুত্র ইয়াজিদকে দিতো। হাসান ইবনে আলীকে হত্যা করানোর পর থেকেই সে এ ব্যবস্থা নেয় (ইয়াকুবী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৯৯) । রাসূলের (সা.) আহলুল বাইতের এ প্রধান তিন বিরোধীর দখলে মারওয়ান খলিফা হবার (৬৪/ ৬৮৪ – ৬৫ / ৬৮৫) পূর্ব পর্যন্ত ফাদাক ছিল। তারপর মারওয়ান তার পুত্র আবদুল মালিক ও আবদুল আজিজকে ফাদাক দান করে দিয়েছিলো। আবদুল আজিজ তার অংশ তার পুত্র উমর ইবনে আবদুল আজিজকে দান করে দিয়েছিলো।
৪ । যখন উমর ইবনে আবদুল আজিজ খলিফা হলেন (৯৯/ ৭১৭ – ১০১/ ৭২০) তিনি একটা বক্তৃতা দিয়ে বললেন ,“ নিশ্চয়ই ,ফাদাক ওই সব জিনিসের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ তাঁর রাসূলকে দান করেছিলেন। ফাদাকের জন্য কোন লোককে যুদ্ধ করতে হয়নি ,কোন ঘোড়া বা উট পরিচালিত হয়নি। ” তিনি ফাদাকের অতীত ইতিহাস বর্ণনা করলেন। তারপর বললেন ,মারওয়ান আমার পিতা ও আবদুল মালিককে ফাদাক দিয়েছে। ফলে এটা আমার এবং ওয়ালিদ ও সুলায়মানের হয়েছে। যখন ওয়ালিদ খলিফা হলো (৮৬/৭০৫ – ৯৬/৭১৫) তখন সে তার অংশ আমাকে দিয়েছিল এবং সুলায়মানও তার অংশ আমাকে দিয়েছে। ফলে আমি সম্পূর্ণ ফাদাকের মালিক হয়েছি। আমার কাছে ফাদাক অপেক্ষা পছন্দীয় আর কোন সম্পদ নেই। তবুও তোমারা সাক্ষী থাক ,আমি প্রকৃত মালিককে ফাদাক ফিরিয়ে দিলাম। ” অতঃপর তিনি মদিনার গভর্ণর আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাজমকে লিখিতভাবে আদেশ দিলেন ফাদাক যেন ফাতিমার বংশধরগণকে হস্তান্তর করা হয়। এটাই ছিল আলীর সন্তানদের দখলে প্রথমবারের মতো ফাদাক ছেড়ে দেয়া (আসকারী ,পৃঃ ২০৯) ।
৫ । যখন ইয়াজিদ ইবনে আবদুল মালিক খলিফা হল (১০১/৭২০– ১০৫/ ৭২৪) সে আলীর সন্তানদেরকে বেদখল করে পুনরায় ফাদাক আত্মসাৎ করলো। এরপর হতেই ফাদাক বনি মারওয়ানের দখলে রয়ে গেল যে পর্যন্ত না বনি আব্বাস ক্ষমতা দখল করলো।
৬ । যখন আবুল আব্বাস আবদুল্লাহ সাফফা প্রথম আব্বাসীয় খলিফা হল (১৩২/৭৪৯ – ১৩৬/৭৫৪) তখন তিনি ফাতিমার বংশধরদের ফাদাক ফিরিয়ে দিলেন এবং আবদুল্লাহ ইবনে হাসান ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিবের হাতে ফাদাক ন্যস্ত করলেন।
৭ । যখন আবু জাফর আবদুল্লাহ আল – মনসুর আদ দাওয়ানিকি (১৩৬/৭৫৪ – ১৫৮/৭৭৫) খলিফা হলেন তিনি হাসানের সন্তানদের কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নিয়ে গেলেন।
৮। যখন মুহাম্মদ মাহদী ইবনে মনসুর খলিফা হলেন (১৫৮/ ৭৭৫ – ১৬৯/৭৮৫) তিনি ফাতিমার সন্তানদের কাছে ফাদাক ফেরত দিলেন ।
৯। তারপর মুসা হাদী ইবনে মাহদী (১৬৯/৭৮৬) এবং তাঁর ভ্রাতা হারুন অর – রশিদ (১৭০/ ৭৮৬ – ১৯৩/ ৮০৯) ফাতিমার বংশধরদের কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নিয়ে যায়। মামুন খলিফা হওয়া পর্যন্ত (১৯৩/ ৮০৩– ২১৮ / ৮৩৩) ফাদাক আব্বাসীয়দের দখলে ছিল।
১০। মামুন খলিফা হবার পর ফাতিমার বংশধরদের হাতে (২১০/৮২৬ সনে) ফাদাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মাহদী ইবনে আস – সাবিক লিখেছেনঃএকদিন মামুন জনগণের নালিশ শুনতে এবং মামলার রায় প্রদান করতে বসেছিলেন । তাঁর কাছে উপস্থাপিত প্রথম নালিশটির প্রতি তাকিয়ে তিনি কেঁদে ফেললেন । তিনি জিজ্ঞেস করলেন রাসূলের (সা.) কন্যা ফাতিমার এ্যাটার্নি কোথায় ? একজন বৃদ্ধ দাড়িয়ে এগিয়ে এলেন এবং ফাদাক সম্পর্কে যুক্তিতর্ক পেশ করলেন । মামুনও তাঁর যুক্তিতর্ক ব্যক্ত করলেন কিন্তু বৃদ্ধের যুক্তি অনেক জোরালো ছিল (আসকারী ,পৃঃ ২০৯) ।মামুন তখন ইসলামিক ফকীদের তলব করলেন এবং ফাতিমী বংশের দাবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তারা বর্ণনা দিল যে ,রাসূল (সা.) ফাতিমাকে ফাদাক দান করেছিলেন। রাসূলের দেহত্যাগের পর ফাতিমা ফাদাক ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আবু বকরের কাছে দাবী করেছিলেন। আবু বকর তার দাবীর স্বপক্ষে সাক্ষী হাজির করার জন্য বললে আলী ,হাসান ,হুসাইন ও উন্মে আয়মন ফাতিমার দাবীর সত্যতা স্বীকার করে সাক্ষ্য প্রদান করেছিলেন। আবু বকর তাদের সাক্ষ্য বাতিল করে দিয়েছিলেন। মামুম ফকীহদেরকে জিজ্ঞেস করলেন ,“ উম্মে আয়মন সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী ?” তারা সকলে এক বাক্যে বললো ,“ তিনি এমন মহিলা ছিলেন যার বেহেশতবাসী হবার নিশ্চয়তার ঘোষণা রাসূল (সা.) দিয়েছিলেন। ” তখন মামুন ফকিদের বললেন ,“ আলী ,হাসান ,হুসাইন ও উন্মে আয়মনের সাক্ষ্য শুধু সত্য ছাড়া অন্য কিছু এমন প্রমাণ কি তোমাদের মধ্যে কেউ উপস্থাপন করতে পারবো ?” তারা সকলে সর্বসম্মতিক্রমে বললো“ এমন কোন প্রমাণ উপস্থাপন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ” এরপর তিনি ফাতিমার বংশধরগণকে ফাদাক ফিরিয়ে দিলেন। (ইয়াকুবী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৯৫ – ১৯৬) ।
এরপর মামুন ফাতিমার বংশধরগণকে ফাদাক রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন এবং তিনি নিজেই দলিলে স্বক্ষর করলেন। এরপর তিনি মদিনার গভর্ণর কুছাম ইবনে জাফরকে লিখলেনঃজেনে রাখো ,আল্লাহর দ্বীনের খলিফা হিসাবে আমাকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সে ক্ষমতা বলে এবং রাসূলের স্বজন ও উত্তরাধিকারী হিসাবে সুন্নাতুন্নবি অনুসরণ করা ও তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করা আমার পরম দায়িত্ব । রাসূলের (সা.) কোন দান প্রাপককে ফেরত দেয়া আমার পরম দায়িত্ব। আমার কৃতকার্যতা ও নিরাপত্তা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল এবং আমি সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উদ্বীগ্ন । আমি সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি ,নিশ্চয়ই ,রাসূল (সা.) তাঁর প্রাণপ্রিয় কন্যাকে ফাদাক দান করেছিলেন এবং ফাদাকের মালিকানা ফাতিমার নিকট হস্তান্তর করেছিলেন। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য | রাসূলের জ্ঞাতিবর্গের কেউ এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করো না। ফাতিমা সর্বদা ফাদাক দাবী করেছিলেন । তাঁর দাবী আবু বকরের বক্তব্য অপেক্ষা অধিক যুক্তিগ্রাহ্য । খলিফা হিসাবে আমি ফাতেমা বংশের হাতে ফাদাক ফিরিয়ে দেয়াই ন্যায় সঙ্গত ও যথাযথ মনে করি । ন্যায় বিচার ও সত্য প্রতিষ্ঠিত করে খলিফা আল্লাহর নৈকট্য পাবার আশা রাখে । রাসূলের আদেশ কার্যকর করে তাঁর প্রশংসা পাবার আশা রাখে । কাজেই আমি ফাদাক রেজিষ্ট্রি করে ফাতেমী বংশকে ফেরত দিলাম । আমার এ আদেশ সকল কর্মচারীকে জানিয়ে দিয়ো ।হজ্জের সময় জনগণ যখন মক্কায় জমায়েত হয় তখন প্রচার করে দিয়ো যদি রাসূল (সা.) কাউকে কিছু দান অথবা উপহার দেয়ার কথা বলে থাকেন তবে সে যেন আমার কাছে আসে । তার বক্তব্য গ্রহণ করা হবে এবং তাকে প্রতিশ্রুত বস্তু দেয়া হবে ।নিশ্চয়ই ,রাসূল (সা.) কর্তৃক ফাতিমাকে ফাদাক দানের বিষয়ে ফাতিমার বক্তব্য সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য ৷ নিশ্চয়ই ,আমি ফাতিমার বংশধরকে ফাদাক বুঝিয়ে দেয়ার জন্য মুবারক আত – তাবারীকে আদেশসহ পাঠালাম । সে ফাদাকের সকল সীমানা ,সকল স্বত্ব ,সকল কর্মচারী ,সকল শস্য ও অন্য সব কিছুসহ তা মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবনে হাসান ইবনে জায়েদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিবকে বুঝিয়ে দেবে । আমি ,খলিফা ,এ দুজনকে ফাতিমার বংশধরের সকল স্বত্বাধিকারীগণের এজেন্ট নিয়োগ করলাম । জেনে রাখো ,এটাই খলিফার আদেশ । আল্লাহর আদেশ পালন করে তাঁর ও রাসূলের (সা.) সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আল্লাহই তাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন । তোমার অধীনস্থগণকেও একথা জানিয়ে দিয়ো । মুবারক আত – তাবারীর সাথে যেরূপ ব্যবহার করবে অনুরূপ ব্যবহার মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া ও মুহাম্মদ ইবনে আবদিল্লাহর সাথেও করবে । আল্লাহর ইচ্ছায় ফাদাকের সমৃদ্ধি ও শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তাদের দুজনকে সহায়তা করো । বিষয়টি এখানে শেষ করলাম । এ পত্রখানা ২১০ হিজরির জ্বিলকাদ মাসের ২৮ তারিখ বুধবার মোতাবেক ১৫ – ২ – ৮২৬ খৃষ্টাব্দে লেখা হয়েছিল ।
১১ । এভাবে মামুনের খিলাফত থেকে মুনতাসিম (২১৮/৮৩৩ – ২২৭/৮৪২) ও ওয়াসিকের (২২৭/৮৪২ ২৩২/৮৪৭) খেলাফত পর্যন্ত ফাদাক ফাতেমি বংশের দখলে ছিল।১২। এরপর জাফর আল – মুতাওয়াক্কিল যখন খলিফা হলো (২৩২/৮৪৭ – ২৪৭/৮৬১) তখন সে ফাতিমার বংশধর থেকে ফাদাক ছিনিয়ে নিয়ে গেল। আহলুল বাইতের জীবিত ও মৃত শক্রদের মধ্যে মুতাওয়াক্কিল ছিল সব চাইতে শয়তানি – ভরা শত্রু। সে হারমালাহ আল – হাজ্জামকে ফাদাক দিয়ে দিল এবং হাজ্জামের মৃত্যুর পর তাবারিস্তানের বাজায়রকে ফাদাক দিয়েছিল। আবু হিলাল আসকারী লিখেছেন যে ,এ লোকটির প্রকৃত নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবনে উমর বাজায়র। তিনি আরো লিখেছেন ,” ফাদাকে ১১টি খেজুর গাছ ছিল যা রাসূল (সা.) নিজ হাতে রোপণ করেছিলেন। এ ১১টি খেজুর গাছের খেজুর আবি তালিবের বংশধরগণ সংগ্রহ করে রাখতেন এবং হজ্জের সময় হাজিগণ মদিনা গেলে এ খেজুর তাদের দান করতেন। বিনিময়ে হাজিগণ তাদেরকে অনেক কিছু দিতেন। মুতাওয়াক্কিল এ সংবাদ জানতে পেরে আবদুল্লাহ ইবনে উমরকে হুকুম করলো সে যেন উক্ত গাছগুলোর ফল কেটে তার রস বের করে নেয়। ফলে আবদুল্লাহ ইবনে উমর বিশর ইবনে উমাইয়া ছাকাকী নামক একজন লোককে উক্ত ১১টি গাছের খেজুরের রস বের করে মদ তৈরি করার জন্য নিয়োজিত করলো। কিন্তু এ মদ বসরার পথে থাকা কালেই মুতাওয়াক্কিল নিহত হলো। ”
১৩। মুতাওয়াক্কিলের পর তার পুত্র মুনতাসির খলিফা হলো (২৪৭/৮৬১ – ২৪৮/৮৬২) । তিনি হাসান ও হুসাইনের বংশধরগণকে ফাদাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।(উপরের ক্রমিক ৩ – ১৩ – এর সূত্র হলো – ইরবিলি ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১২১ – ১২২ ;মজলিসী ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১০৭ – ১০৮: কুম্মী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৫১ ;আশকারী ,পৃঃ ২০৯ ;বালাজুরী ১ম খণ্ড ,পৃ:৩৩ – ৩৮ ;হামাবি ,৪র্থ খণ্ড ,২৩৩ – ২৪০ ;ইয়াকুবী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৯৯ ;৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৮ ,১৯৫ – ১৯৬ ;আছীর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২২৪ – ২২৫ ;৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৫৭ ,৪৯৭ ;৫ম খণ্ড ,পৃ. ৬৩ ;৭ম খণ্ড ,পৃঃ ১১৬ ;রাব্বিহ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২১৬ ,২৮৩ ,৪৩৫ ;সামহুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৯৯৯ – ১০০০ ;সাদ ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২৮৬ – ২৮৭ ;সূয়ুতী ,পৃঃ ২৩১২৩২ ,৩৫৬ ;মাসুদী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৮২ ;হাম্বলী ,পৃঃ ১১০ ;কালকাশান্দি ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৯১ সাফাওয়াত ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৩১ – ৩৩২ ;৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৫০৯ – ৫১০ ;কাহহালাহ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১২১১ – ১২১২ ;হাদীদ ,১৬শ খণ্ড ,পৃঃ ২৭৭ – ২৭৮) ।
১৪। মুনতাসিরের করুণ মৃত্যুর পর ফাদাক ফাতিমার বংশধর থেকে পুনরায় কেড়ে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু আল – মুতাদিদ (২৭৯/৮৯২ – ২৮৯/৯০২) আবার তা ফাতেমী বংশকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তারপর মুকতাফি (২৮৯/৯০২ – ২৯৫/৯০৮ আবার ফাতেমী বংশের কাছ থেকে তা নিয়ে গেল। এরপর মুখতাদির (২৯৫/৯০৮৩২০/৯৩৩) পুনরায় “ফাদাক ফাতেমী বংশকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। এরপর হতে ফাদাকের আর কোন উল্লেখ ইতিহাসে পাওয়া যায় না।তবে কি তারা জাহেলি যুগের বিধিবিধান কামনা করে ? বিশ্বাসীদের জন্য বিধান দানে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর ” (কুরআন ,৫: ৫০)*ফাদাক সম্পত্তি বর্তমানে আলে সৌদ সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রিত।*[4/20, 4:11 PM] Roky AB: পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ তিন ওয়াক্তে —পবিত্র কোরআন এবং সহীহ হাদিসের আলোকে ।
এ প্রবন্ধে আমরা পবিত্র কোরআন, রাসূল (সাঃ) এবং মাসুম ইমামগন (আঃ) থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েতের আলোকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে দু’টি নামায এক সাথে আদায় প্রসঙ্গে তথ্য-সমৃদ্ধ আলাচনা ও পর্যালোচনা করব —
দুটি নামায এক সাথে আদায় প্রসঙ্গে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহ —সুন্নী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ও প্রথম শ্রেণীর হাদীস গ্রন্থাবলী যেমন , সহীহ মুসলিম , সহীহ বোখারী , সহীহ তিরমিযী , মুয়াত্তা , মুসনাদে আহমাদ , সুনানে নাসায়ী এবং মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক প্রভৃতিতে দুটি নামায একত্রে আদায় তথা যোহর-আসর এবং মাগরিব-এশার নামায অনিবার্য কোন কারন যেমন , সফরে থাকা, বৃষ্টি, ভয় কিংবা অনিষ্টের সম্ভাবনা ছাড়াই একত্রে আদায় সম্পর্কে ত্রিশটির চেয়েও অধিক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।আর এগুলো মূলত: পাঁচজন প্রথম সারির রাবীদের থেকে বর্ণিত, যথা:১-হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)২-হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ)৩-হযরত আবু আইয়ুব (রাঃ)৪-হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রঃ) এবং৫-হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) ।
আমরা সম্মানিত পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উক্ত রেওয়ায়েতগুলোর কিয়দাংশ এখানে তুলে ধরছি-
এক -আবুজ্ জুবাইর ; সাঈদ ইবনে জুবাইর এবং তিনি হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন ,صلّی رسول الله (ص) الظهر و العصر جمیعاً بالمدینة فی غیر خوف و لا سفر.“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় অবস্থানকালীন সময়ে কোনরূপ ভীত ও সফরের কারণ ছাড়াই যোহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করেছেন ।”আবুজ্ জুবাইর বলেন যে , আমি সা’দ বিন জুবাইরের নিকট প্রশ্ন করলাম , কেন রাসূল (সঃ) এমনটি করলেন ?জবাবে তিনি বলেন , আমিও অনুরূপ প্রশ্নটি ইবনে আব্বাসের নিকট জিজ্ঞাসা করেছি । উত্তরে তিনি বলেছেন ,أراد أن لا یحرج أحدا من أمّته.“রাসূলের (সাঃ) উদ্দেশ্য ছিল যে , তার উম্মতের মধ্যে কেউ যেন বাড়তি চাপের শিকার না হয় ।”সূত্র – সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫১।
দুই-হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে ,جمع رسول الله (ص) بین الظهر و العصر و المغرب و العشاء فی المدینة فی غیر خوف و لا مطر.“মহানবী (সাঃ) মদীনাতে কোনরূপ ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছাড়াই যোহর-আসর এবং মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করতেন ।”হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) নিকট জিজ্ঞাসা করা হয় । এক্ষেত্রে রাসূলের (সাঃ) উদ্দেশ্য কি ছিল ?জবাবে তিনি বলেন , রাসূল (সাঃ) চেয়েছিলেন যে , কোন মুসলমান যেন নামায আদায়ের ক্ষেত্রে কষ্টের শিকার না হয় ।সূত্র – সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫২ ।
তিন-আব্দুল্লাহ বিন শাকিক বলেন ,خطبنا ابن عبّاس یوما بعد العصر حتّی غربت الشمس و بدت النجوم و جعل الناس یقولون الصلاة الصلاة! قال فجائه رجل من بنی تمیم لا یفتر و لا یتنی :الصلاة،الصلاة فقال :ابن عبّاس أتعملنی بالسنّة ،لا أمّ لک ثمّ قال: رأیت رسول الله (ص) جمع بین الظهر و العصر و المغرب و العشاء قال عبد الله بن شقیق :فحاک فی صدری من ذلک شیء فأتیت اباهریرة فسألته، فصدّق مقالته.
“একদা ইবনে আব্বাস আসরের নামায়ের পর আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন । এমন সময় সূর্য অস্তমিত হয় এবং আকাশে নক্ষত্র পরিদৃষ্ট হয় । উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ কেউ ‘নামায’ ‘নামায’ বলে আওয়াজ তুলেন । অতঃপর বনী তামিম গোত্রের জনৈক ব্যক্তি সামনে এসে একাধারে ‘নামায’ ‘নামায’ বলে চীৎকার করতে থাকে । তখন ইবনে আব্বাস বলেন , হে অজ্ঞ ! তুমি কী আমাকে রাসূলের (সাঃ) সুন্নাতের শিক্ষা দিতে চাও ?রাসূল (সাঃ) যোহর-আসর এবং মাগরিব-এশার নামায একত্রে আদায় করেছেন ।আব্দুল্লাহ ইবনে শাকিক বলেন , আমার মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয় । এ কারণে আমি আবু হুরাইরার নিকট এসে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলাম ।তিনি ইবনে আব্বাসের কথার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।”সূত্র – সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫১ , ১৫২ ।
চার-জাবের ইবনে জায়েদ বলেন: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে ,صلّی النبی (ص) سبعاً جمیعاً و ثمانیاً جمیعاً.“রাসূল (সাঃ) সাত রাকাত (মাগরিব ও এশা’র) নামায একই সময়ে এবং আট রাকাত (যোহর ও আসরে’র) নামায একই সময়ে আদায় করেছেন ।”সূত্র – সহীহ বোখারী , ১ম খণ্ড , পৃ. ১৪০ ।
পাঁচ-সাঈদ ইবনে জুবাইর হযরত ইবনে আব্বাসের (রা.) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন ,جمع رسول الله (ص) بین الظهر و العصر و بین المغرب و العشاء بالمدینة من غیر خوف و لا مطر قال: فقیل لابن عبّاس :ما أراد بذلک؟ قال: أراد أن لا یحرج أمّته.
“মহানবী (সাঃ) যোহর-আসর এবং মাগরিব-এশার নামায একত্রে আদায় করেছেন । অথচ তখন কোন ধরনের ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছিল না । ইবনে আব্বাসের নিকট জিজ্ঞাসা করা হয় যে , এক্ষেত্রে রাসূলের (সাঃ) উদ্দেশ্য কি ছিল ?জবাবে তিনি বলেন , তিনি চেয়েছিলেন যে , তাঁর উম্মত যেন কোনরূপ কষ্টের শিকার না হয় ।”সূত্র – সুনানে তিরমিযী, ১ম খণ্ড , পৃ. ১২১, হাদীস নং ১৮৭ ।
ছয়-আহমাদ ইবনে হাম্বালও স্বীয় হাদীস গ্রন্থে অনুরূপ একটি হাদীস হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন ।সূত্র – মুসনাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড, পৃ.২২৩ ।
সাত-সুন্নী মাযহাবের অন্যতম মনীষী ইমাম মালেক (রহঃ) স্বীয় ‘আল মুয়াত্তা’ গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন ,صلّی رسول الله (ص) الظهر و العصر جمیعا و المغرب و العشاء جمیعا فی غیر خوف و لا سفر. “রাসূল (সাঃ) যোহর-আসর এবং মাগরিব-এশার নামায একত্রে আদায় করেছেন । অথচ তখন কোনরূপ ভয় কিংবা বৃষ্টির আশংকা ছিল না ।”সূত্র – আল মুয়াত্তা, ১ম খণ্ড , পৃ. ১৪৪ ।
আট -মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে
ফাদাক সম্পর্কে আরো পড়ুনঃ
নাহজুল বালাগ্বা, বাংলা অনুবাদঃ জেহাদুল ইসলাম, পত্র নং 45, পৃঃ নং 363-375।[3/31,