প্রজ্ঞাবিদ কবি ফেরদৌসীআবুল কাসেম ফেরদৌসি তুসি ইরানী মহাকাব্য শাহনামার রচয়িতা এবং ইরানের সর্বশ্রেষ্ঠ ফার্সিভাষী কবি, যিনি বিশ্ব বিখ্যাত। তার ডাক নাম “আবুল কাসেম” এবং কবিতায় তার খ্যাতি “ফেরদৌসি” নামে। ফারসী পঞ্জিকার ২৫শে ওরদিবেহেশ্ত-কে ফেরদৌসি স্মরণ দিবস হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ফারসী ৩১৯ সনে খোরাসানের তুস অঞ্চলে জন্ম গ্রহণ করেন।
শাহনামা হলো ফেরদৌসীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য কর্ম এবং প্রাচীন ফার্সি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কর্ম, যাতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার শ্লোক রয়েছে, যেখানে ইরানের প্রাচীন রাজাদের জাতীয় কাহিনী, প্রাচীন রাজা বাদশাহ এবং ইরানের মহান বীরদের ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে।
হাকিম আবুল কাসেম ফেরদৌসি পঁয়ত্রিশ বছর শাহনামা রচনায় সময় ব্যয় করেছিলেন এবং এটি গজনীর সুলতান মাহমুদের কাছে পুরস্কারের জন্য উপস্থাপন করেছিলেন, যিনি সদ্য সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন।
শাহনামা গ্রন্থের তিনটি সাধারণ অধ্যায় রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি পৌরাণিক, বীরত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক সময়কাল রয়েছে। তাই, শাহনামার গুরুত্ব শুধুমাত্র সাহিত্য কর্মের কারণেই নয়; বরং এ কর্মটিকে প্রাচীন ইরানের লিখিত ইতিহাসও বলা যেতে পারে।
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী কবি ফেরদৌসী সম্পর্কে বলেছেনঃ
“তিনি একজন ইসলামী হাকিম ও প্রজ্ঞাবিদ ব্যক্তি ছিলেন। কয়েকশ বছর ধরে ফেরদৌসীকে হাকিম বলা হয়। ফেরদৌসীর প্রজ্ঞাবিদ্যা বলতে কি বোঝায়? এটা হচ্ছে ইসলামী ঐশ্বরিক জ্ঞান। এটা মনে করবেন না যে, কবি ফেরদৌসীর প্রজ্ঞার মধ্যে সামান্য একটু জরথুষ্ট্রীয় প্রজ্ঞা জড়িত আছে। এরকম নয়। ফেরদৌসি যখন এসফান্দিয়ারের প্রশংসা করেন, তখন তিনি তার দ্বীনদারীতার পক্ষে কথা বলেছেন। এসফান্দিয়ার ছিলেন একজন ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি, যিনি ধর্ম প্রচার করতেন এবং সমগ্র ইরানে পবিত্রতা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এসফান্দিয়ার ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, নির্ভীক ও ধার্মিক মানুষ। তিনি যে নীতিতে বিশ্বাস করতেন এবং যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন তা বজায় রাখার জন্য, এমনকি রুস্তমের সাথে কুস্তি করার জন্য হাফত খান অতিক্রম করার ঝুঁকি নিতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। আপনি যখন “শাহনামা” পড়বেন, আপনি দেখতে পাবেন যে, ফেরদৌসি এসফান্দিয়ারের দ্বীনদারীতা ও নৈতিক বিশুদ্ধতার বিষয়টির উপর নির্ভর করেছেন।
যদিও কোন রাজা বাদশাহর ব্যাপারে খারাপ কিছু বলার উদ্দেশ্য ফেরদৌসীর ছিল না, তদুপরি দেখুন! বাদশাহ্ গোশতসব শাহনামাতে কী রূপে আছে আর ইসফান্দিয়ার কী রূপে আছে। এরা দুইজন বাবা ও ছেলে। ফেরদৌসী ইসলামী মানদণ্ড অনুযায়ী গুণাবলীর প্রতি মনোযোগ দেন। যদিও রাজকীয় ও রাজতান্ত্রিক মানদণ্ড অনুসারে গোশতসব এবং এসফান্দিয়ারের মধ্যে বিবাদে, রাজা সঠিক। অর্থাৎ গোশতসব সঠিক; কিন্তু আপনি যদি শাহনামার দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন যে, এসফান্দিয়ার ও গোশতসবের বিবাদে হাকিম ফেরদৌসী, এসফান্দিয়ার-এর পক্ষে রায় দিয়েছেন; যেহেতু এসফান্দিয়ার একজন ঐশ্বরিক হাকিম ছিলেন।
ফেরদৌসি শাহনামার শুরুতে আল্লাহ্র নাম দিয়ে এভাবে শুরু করেন,
«به نام خداوند جان و خرد
کزین برتر اندیشه بر نگذرد»
“আত্মা ও প্রজ্ঞার মালিকের নামে
এর থেকে উচ্চতর চিন্তার কোন অবকাশ নেই।”
শাহনামাতে শেষ অবধি এভাবেই চলেছে। এই দৃষ্টিতে ফেরদৌসীর দিকে তাকান। ফেরদৌসী কথার দেবতা; তার দৃঢ় ও শক্তিশালী একটি ভাষা আছে এবং সত্যিই বর্তমান ফার্সির জনক হচ্ছেন তিনি; তিনি ইসলামী প্রজ্ঞা বিদ্যার আলোচনাসমূহে বিমুগ্ধ ছিলেন। আপনারা শাহনামাকে এই দৃষ্টিতে দেখুন।” (03/08/1991-এ তাঁর বক্তব্য)