✍️ “দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই” বলে ওহাবীদের ভ্রান্ত মতবাদের শরিয়াহ্ জবাব। 👇
🌷[ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম অস্বীকার করতে গিয়ে অনেকে বলে থাকে, “দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই।” বরং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম নিজেই দুই ঈদ ছাড়া আরো অনেক ঈদের কথা উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন: “পবিত্র জুমুয়ার দিন মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন।” হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে:
عن حضرت عبيد بن السباق رضي الله عنه مرسلا قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم في جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يوم جعله الله عيدا
অর্থাৎ: “হযরত ওবায়িদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ননা করেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুয়ার দিন বলেন, হে মুসলমানরা! এটি এমন একটি দিন যাকে আল্লাহ ঈদ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন!” (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১১৯৮; মুয়াত্তা ইবনে মালিক, কিতাবুত ত্বহারাত, হাদীস নং ১৪৪; বায়হাক্বী, হাদীস নং ১৩০৩; মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী, হাদীস নং ১৮০২; মুসনাদে শাফেয়ী, হাদীস নং ২৬৮; মুজামুল আওসাত লিত তাবরানী, হাদিস নং ৩৪৩৩)।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ “ إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ جَعَلَهُ اللَّهُ لِلْمُسْلِمِينَ فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ
অর্থাৎ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলমানদের জন্যে ঈদ রূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি জুমুআর সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১০৯৮, আল মুজামু লি আওসাত তাবরানী, হাদিস নং ৭৩৫৫)।
আল্লাহর রাসূল (সা.) আরো বলেছেনঃ
قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الـجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر
“নবী(সা.) ইরশাদ করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং তা সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাকের নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি আল্লাহর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।” (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১১৩৭; মুজামুল কবীর লি তাবরানী, হাদিস নং ৪৫১১; শুয়াইবুল ঈমান লি বায়হাকী, হাদীস নং ২৯৭৩)।
জুমুয়ার দিন, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বেশী শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত হবার কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
ان من افضل ايامكم يوم الـجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থাৎ: “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি হযরত হাওয়ার সাথে সাক্ষাত লাভ করেছেন।” (সুনানে নাসায়ী, কিতাবুল জুমুয়া, হাদীস নং ১৩৮৫; সহি মুসলিম, কিতাবুল জুমুয়া, হাদীস নং ৮৫৫; সহি তিরমিযী, হাদীস নং ৪৯১; সুনান মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৮৯৫৪; সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদীস নং ১০৪৭; ইবনে খুযায়মা, হাদীস নং ১৬৩২)।
আবার সহীহ হাদীসে আছে যে, আরাফার দিন হচ্ছে ঈদের দিনঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، أَخْبَرَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ عَمَّارِ بْنِ أَبِي عَمَّارٍ، قَالَ قَرَأَ ابْنُ عَبَّاسٍ : ( الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا ) وَعِنْدَهُ يَهُودِيٌّ فَقَالَ لَوْ أُنْزِلَتْ هَذِهِ عَلَيْنَا لاَتَّخَذْنَا يَوْمَهَا عِيدًا . قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَإِنَّهَا نَزَلَتْ فِي يَوْمِ عِيدٍ فِي يَوْمِ جُمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَهُوَ صَحِيحٌ
অর্থাৎ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত আছে যে, তিনি একদা “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম” ( সূরা মায়েদা, আয়াত নং ৩) আয়াতটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলে তার কাছে উপস্থিত এক ইহুদী বলে উঠে, যদি এমন আয়াত আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের জন্যে নাযিল হতো, তাহলে আমরা উক্ত আয়াত নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষনা করতাম! এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ আয়াত সেই দিন নাযিল হয়েছে যে দিন এক সাথে দুই ঈদ ছিলো, (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন!” (সহি তিরমীযি, কিতাবুত তাফসীর, হাদীস নং ৩৩১৮)।
সহীহ হাদীস শরীফে আইয়ামে তাশরীকের দিনটিকেও ঈদের দিন বলা হয়েছেঃ
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَ وَيَوْمَ النَّحْرِ وَأَيَّامَ التَّشْرِيقِعِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ
অর্থাৎ: “আল্লাহর রাসূল(সা.) বলেন, আরাফার দিন, নহর বা কুরবানীর দিন
এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থাৎ ১১, ১২ ও ১৩-ই জিলহজ্জ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন।” (সুনানে নাসাঈ, কিতাবুল হজ্জ, হাদীস নং ৩০০৪; সহি আবি দাউদ, কিতাবুছ সিয়াম, হাদীস নং ২৪১৯; সহি তিরমিযী, কিতাবুছ ছিয়াম, হাদীস নং ৭৭৩)।
উক্ত হাদীসে জুমুয়ার দিন ছাড়াও আরাফার দিনকে ঈদের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে আছে যে, মুসলমানদের জন্য প্রতি মাসে চারদিন বা পাঁচদিন ঈদের দিনঃ
لكل مؤمن في كل شهر اربعة اعياد اوخمسة اعياد
অর্থাৎ: “মু’মিনদের প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে।” (কিফায়া শরহে হিদায়া, খন্ড ২, বাবু ছালাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া)।
অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রোজাদারদের জন্য ইফতারের সময় ঈদের মুহুর্ত:
لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ
ٌঅর্থাৎ: “রোযাদারের জন্য দুটি খুশী বা ঈদ। একটি হলো তার প্রতিদিন ইফতারের সময়। আর অন্যটি হলো তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়।” (সহি আল বুখারী, কিতাবুস সাওম; সহি মুসলিম, কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১১৫৩; সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ২২১৫, রোজা অধ্যায়)।
আসুন! আমারা ঈদের মোট সংখ্যা হিসাব করি:
“বছরে ৫২টি শুক্রবার + ৫২টি সোমবার + আরাফার দিন+ আইয়ামে তাশরীক তিন দিন+ রমজানের ৩০টি + বাকি ১১ মাসে ৩ করে ৩৩টি + যিলহজ্জ মাসে ৯টি + পহেলা রজব ১টি + ২৭শে রজব ১টি + ১৫ শাবান ১টি = ( ৫২+৫২+১+৩+৩০+৩৩+৯+১+১+১)= ১৮৩ টি ঈদ ! সুবহানাল্লাহ্ !
সূতরাং হাদীস শরীফ থেকেই ১৮৩ টা ঈদ প্রমাণিত হলো।
*বিশেষ কোন নিয়ামত নাযিলের দিন ঈদের দিন:*
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
অর্থঃ “ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন। এ দিন আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্যও তা হবে ঈদের দিন।” (সূরা মায়িদা, আয়াত নং ১১৪)।
“লাইলাতুর বরাত ও লাইলাতুল কদর ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামদের ঈদের দিন।”
(গুনিয়াতুত ত্বলেবীণ, পৃ: নং ৩৬৫)।
দুইয়ের অধিক ঈদের কথা একসাথে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে:*
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وُهَيْبٍ الْغَزِّيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي السَّرِيِّ الْعَسْقَلانِيُّ، حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ رَاشِدٍ الْيَمَامِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو كَثِيرٍ يَزِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: ” زَيِّنُوا أَعْيَادَكُمْ بِالتَّكْبِيرِ
অর্থ: “তোমরা তোমাদের ঈদগুলোকে তাকবীর ধ্বণী দ্বারা সৌন্দর্য্যমন্ডিত করো।” (মুজামুল আওছাত. লিতু তাবরানী, হাদিস নং ৪৫০৯)।
হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য হাদীসে اعياد (আইয়াদ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর اعياد (আইয়াদ) শব্দ ঈদ عيد শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ একটি ঈদকে আরবীতে বলা হয় عيد (ঈদ), দু’টি হলেعيدان (ঈদাইন) আর দু’য়ের অধিক ঈদকে বলে اعياد (আইয়াদ)। সূতরাং হাদীস শরীফে আইয়াদ শব্দ দ্বারা প্রমাণিত হলো, দুই ঈদের বেশি ঈদ রয়েছে। অতএব, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম-এর এ ধরনের শব্দ চয়নই প্রমাণ করে ঈদ দু’য়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অনেক হতে পারে।
সুতরাং যারা বলে, দুই ঈদ ব্যতীত আর ঈদ নাই, তাদের কথা যে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কুরআন ও সুন্নাহ বিপরীত তা সহজেই প্রমাণিত হয়ে যায়।]💡📚