গ্বাদীর শব্দের অন্যতম আভিধানিক অর্থ হচ্ছেঃ “এমন কোন নিচু স্থান ও ঢালু গর্ত, যেখানে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে থাকে এবং তা সাধারণত: গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে।” ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরব দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের বহু নিচু স্থান ছিল যেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকতো। আর এভাবে ধীরে ধীরে তা একটি জলাশয়ের আকার ধারন করতো, যা থেকে জনসাধারণ ও পথচারী মুসাফিররা পানি সংগ্রহ করতো। এ ধরনের জলাশয়গুলোকে আরবরা গ্বাদীর হিসেবে আখ্যায়িত করতো।
আর খুম শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পবিত্র ও হিংসা-বিদ্বেষবিহীন অন্তর। কেননা, সেই জলাশয়গুলোতে যে পানি জমা হতো প্রকৃতপক্ষে তা ছিল পবিত্র ও পানের উপযুক্ত। এ ধরনের জলাশয়গুলো ছিল হজ্ব থেকে হাজীদের ফেরার পথে সমবেত হওয়ার একটি চৌরাস্তা। হজ্বের পরে হাজীরা যেহেতু পবিত্র, পরিষ্কার ও স্বচ্ছ অন্তর নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলের দিকে প্রত্যাবর্তন করতো সেহেতু এসব জলাশয়গুলোতে অবস্থিত পানিকে আরবরা খুম হিসেবে নামকরণ করেছিল।
গ্বাদীরে খুমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, সেখানের পানি কখনও শুকায় না। আর এর পানির কারণে সেই জলাশয়ের আশেপাশে জন্মে উঠে বিভিন্ন প্রকার গাছপালা। সে যুগে পথচারী মুসাফিররা তাদের ক্লান্তি দূর করা এবং কিছুক্ষণ বিশ্রামের জন্যে এ ধরনের স্থানগুলো বাছাই করে নিতো।
অভিধানবেত্তা, ভূগোলবিদ ও ঐতিহাসিকদের মতে, মক্কা থেকে ২০০ কি:মি: এবং মদিনা থেকে ৩০০ কি:মি: দূরে মক্কা ও মদিনার একটি মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত এই গ্বাদীরে খুম। এ অঞ্চলের নাম জোহফা। তৎকালীন সময়ে আরব দেশে বন্যা ও বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার পথে এ ধরনের অনেক জলাশয় তৈরী হতো। কিন্তু আরবদের মাঝে এই একটিমাত্র জলাশয়-ই খুম নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছিল।
হজ্ব থেকে মদীনা ফেরার পথে আল্লাহর নবীর (সা.) পক্ষ থেকে এ স্থানটিকে ইমামত ও বেলায়েতের ঘোষণার জন্যে বাছাই করার পেছনে নিম্নলিখিত কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারেঃ
১. হজ্ব শেষে হাজীদের বাড়ী ফেরার পথে এ স্থানটি ছিল সকলের জন্যে এমন একটি কেন্দ্রস্থল যেখানে সব দিকের মানুষ সমবেত হতে পারতো। এটা এমন এক চৌরাস্তা যার পূর্বদিকে মদিনা, উত্তর দিকে সমুদ্র উপকূল ও সিরিয়া, পশ্চিম দিকে লোহিত সাগর, যে পথ দিয়ে জাহাজে করে মিশরসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করা যায়।
২. ঐতিহাসিকদের মতে গ্বাদীরে খুমের এই জলাশয়ের আশেপাশে সামুর নামক পাঁচটি লম্বা পত্রযুক্ত গাছ ছিল যা শুধুমাত্র এ ধরনের স্থানেই উৎপন্ন হতো। উক্ত গাছগুলো পথচারী মুসফিরদের জন্যে ছিল বিশ্রামের উত্তম স্থান।
৩- হজের পর হাজীরা সবাই এ স্থানেই সমবেত হয় এবং এ স্থান থেকেই তারা নিজ নিজ পথে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাই, এ স্থানটি ছিল রাসূলের পরবর্তি নেতার নাম ঘোষণা দেয়ার উত্তম স্থান।
বর্তমানে গ্বাদীরকে একটি পরিত্যক্ত এলাকাতে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র একটি পানির উৎস রয়েছে। উক্ত স্থানটি বর্তমানে মক্কা থেকে ২০০ কি:মি: এবং জোহফার নিকট রাবেগ নামক নগরী থেকে ২৬ কি:মি: দূরে অবস্থিত। আর গ্বাদীরে খুম থেকে জোহফা-এর দূরত্ব হচ্ছে দুই অথবা তিন মাইল।
আলে সৌদ-এর সরকারের পক্ষ থেকে ভুত্বত্তবিদ আতিক বিন গাইস বালাদিকে (বালাদি হচ্ছে গ্বাদীরের কাছের শহর) রাসুল (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পথ নির্ধারণ করার দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। সে উক্ত কাজে গ্বাদীরে খুমের স্থানকেও সঠিকভাবে সনাক্ত করেন এবং উক্ত স্থানের ছোটখাট সকল বিষয়কে উল্লেখ করেন। তাছাড়াও আল্লামা ডক্টর শেইখ আব্দুল হাদি ফাযলি গ্বাদীরে খুমের স্থানকে সনাক্ত করেছেন।
যদিও ইসলামের শত্রুদের মাধ্যমে গ্বাদীরে খুম অন্যান্য নামে নামকরণের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তদুপরি আজও সেখানে পানির ঝর্ণা রয়েছে যা আকারে রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি এবং আজও গ্বাদীরে খুম নিজের বুকে রাসুল (সা.)-এর স্মৃতি ধারন করে রেখেছে। তবে ইতিহাসে গ্বাদীরে খুম নাম ছাড়াও তা আরো কিছু নামে পরিচিতি অর্জন করেছে। তন্মোধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ ওয়াদিয়ে খুম, জোহফা, হাররা ও গুরাবা।
আল-হামদুলিল্লহ্ গুরুত্বপূর্ণ তধ্যের জন্যে !
সালামুন আলাইকুম। সাথে থাকার জন্যে আপনাকে অনেক শুকরিয়া।