কোরআন ও হাদিসে ইমাম মাহদীর সঙ্গীদের বিশেষ গুণাবলী

491

কোরআনে এমন কিছু আয়াত রয়েছে যার মধ্যে বর্ণিত গুণাবলী হযরত মাহদী (আ.)-এর বিশেষ সাহাবীদের ওপর প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং কিছু হাদিসের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, এ ধরনের আয়াতগুলোর বর্ণনা ইমাম মাহদী (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। নিচের আয়াতটি এরই অন্তর্ভুক্তঃ
«‏یا أَیُّهَا الَّذِینَ آمَنُوا مَنْ یَرْتَدَّ مِنْکُمْ عَنْ دِینِهِ فَسَوْفَ یَأْتِی اللَّهُ بِقَوْمٍ یُحِبُّهُمْ وَ یُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِینَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْکافِرِینَ یُجاهِدُونَ فِی سَبِیلِ اللَّهِ وَ لا یَخافُونَ لَوْمَةَ لائِمٍ ذلِکَ فَضْلُ اللَّهِ یُؤْتِیهِ مَنْ یَشاءُ وَ اللَّهُ واسِعٌ عَلِیمٌ»
“হে মু’মিনরা! তোমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, (এতে ইসলামের কোন ক্ষতি নেই) আল্লাহ দূর ভবিষ্যতে তাদের স্থলে এমন এক গোষ্ঠী আনয়ন করবেন যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি দয়ালু হবে, কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ বিস্তর ও তিনি মহাজ্ঞানী।”
(সূরা আল মায়িদা, আয়াত নং ৫৪)।

উপরোক্ত আয়াত থেকে আমরা যে বৈশিষ্ট্যগুলো পাই তা হচ্ছেঃ
১. তারা আল্লাহকে ভালবাসে এবং শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির কথা চিন্তা করে। আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন এবং তারা আল্লাহকে ভালবাসে।
২. তারা মুমিনদের প্রতি বিনয়ী ও নম্র।
৩. তারা যালেমদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী।
৪. আল্লাহর পথে জিহাদ তাদের নিরন্তর পরিকল্পনা।
৫. তারা অবিচল এবং দোষারোপকারী কর্তৃক আরোপিত দোষকে ভয় পায় না।

আর হাদিসের বর্ণনায় ইমাম মাহদীর (আ.) সাহাবীদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ
১. আল্লাহ পরিচিতির ব্যাপারে গভীর জ্ঞানঃ
ইমাম জা’ফার আস সাদিক্ব (আ.) বলেন: “তাদের (মাহদীর সাথীদের) অন্তরে আল্লাহর জাতসত্বা সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩১৭)।
এবং “তারা আল্লাহর একত্বে এমনভাবে বিশ্বাস করে যা তাঁর একত্বের প্রাপ্য।”
(বাশারাতুল ইসলাম, পৃঃ নং ২২০)।
ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেন: “তারা এমন ব্যক্তিবর্গ যারা মাহদী (আ.)-এর নেতৃত্বে (ইমামতিতে) বিশ্বাসী।”
(কামালুদ্দীন, হাদিস নং ১, বাব নং ৩১)

২. ইখলাস বা ঐকান্তিকতাঃ
ইমাম জাওয়াদ (আ.) বলেছেন, “যখন ৩১৩ জন মুখলিস ব্যক্তি ইমাম মাহদির জন্য একত্রিত হবে, তখন আল্লাহ তার নির্দেশ প্রকাশিত করবেন।”
(কামালুদ্দীন, হাদিস নং ২, বাব নং ৩১, পৃঃ নং ৩৭৭, ৩৭৮)।
৩. আনুগত্যঃ
ইমাম জা’ফার আস সাদিক্ব (আ.) বলেন, “ইমামের প্রতি তাদের আনুগত্য নিজ মালিকের প্রতি একজন দাসীর আনুগত্যের চেয়ে অনেক বেশী।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩০৮)।
৪. দৃঢ়তাঃ
তিনি আরো বলেছেনঃ “… মনে হয় তাদের হৃদয় লোহার টুকরোর ন্যায়… এটি পাথরের চেয়েও শক্তিশালী।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩০৭, হাদিস নং ৮২)।
৫. আত্মত্যাগঃ
ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “তারা প্রজাপতিদের ন্যায় ইমামের অস্তিত্বের মোমবাতির চতুর্দিকে আবর্তিত হয় এবং তাদের জীবন দিয়ে তাঁকে রক্ষা করে।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩০৮)।
৬. ঐশ্বরিক অনুমোদনের অধিকারীঃ
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন, “… আল্লাহ এ পৃথিবীর শেষ সময়ে একজন মানুষকে (মাহদী) উঠাবেন… আল্লাহ তাকে তার ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্য করবেন এবং তার আনসারদের রক্ষা করবেন।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ২৮০)।
৭. শাহাদাত পিয়াসীঃ
ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: “মাহদীর সঙ্গীরা আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা করে।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩০৭)।
৮. ধৈর্যঃ
ইমাম আলী (আ.) বলেছেনঃ “আল-মাহদীর সঙ্গীরা এমন একটি দল যারা আল্লাহর পথে তাদের ধৈর্য ও সহনশীলতার জন্য তাঁকে খোঁটা দেয় না এবং আল্লাহর জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করার কারণে অহংকারী হয় না।”
(ইয়াওমুল খালাস, পৃঃ নং ২২৪)।
৯. দিনে সিংহের ন্যায় এবং রাতে দুনিয়াত্যাগী অল্প তুষ্ট যাহেদঃ
ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন, “মনে হচ্ছে আমি নাজাফ ও কুফায় কায়েম এবং তার সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে আছি, সিজদা তাদের কপালে প্রভাব ফেলেছে; দিনে সিংহের ন্যায় এবং রাতে দুনিয়াত্যাগী অল্প তুষ্ট যাহেদ।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩৮৬)।
১০. সহমর্মিতাঃ
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: “তারা ঐক্যবদ্ধ এবং সহযোগী।”
(ইয়াওমুল খালাস, পৃঃ নং ২২৪)।
১১. বরকত প্রার্থীঃ
ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে “তারা ঘোড়ার উপরে ইমামের জিনের উপর হাত রাখে এবং তাবাররুক নেয়।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩০৮)।
১২. ইবাদতকারীঃ
ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন, “মাঝরাতে তারা মৃত ছেলের জন্য একজন মায়ের বিলাপের ন্যায় আল্লাহর আযাবের ভয়ে বিলাপ করে রাত কাটায় এবং দিনে রোজা রেখে অতিবাহিত করে।”
(ইয়াওমুল খালাস, পৃঃ নং ২২৪)।
১৩. সাহসীকতাঃ
ইমাম আলী (আ.) বলেন, “তারা সবাই সিংহের ন্যায়, যারা বন থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং যদি তারা চায় তবে তারা পাহাড়কেও সরিয়ে দিতে পারে।”
(ইয়াওমুল খালাস, পৃঃ নং ২২৪)।
১৪. জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্নঃ
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন, “সুতরাং সেই ফিৎনার মধ্যে একটি ঘষা মাজা করা হয়, যেমন কামার তলোয়ার ঘষা দেয়। তাদের দৃষ্টি কোরানের আলোয় আলোকিত করা হয় এবং তাফসীর তাদের কানে গেঁথে যায়। “তাদেরকে রাতে প্রজ্ঞার পেয়ালা থেকে পান করানো হয়, সকালেও তারা তা পান করে।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩৩৪)।
১৫. সত্য বিশ্বাসীঃ
ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেন, “আল্লাহ তাদের মাধ্যমে সত্যের ইমামকে সাহায্য করবেন।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩০৮)।
১৬. আলোকিত প্রজ্ঞাঃ
ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: “যেন তাদের হৃদয় আলোর মশাল।”
(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃঃ নং ৩০৮)।

Related Post

ক্বোরআনের মুজিযা ও বার ইমাম

Posted by - মে ৫, ২০২০
📘 ক্বোরআনের মুজিযা ও বার ইমাম👇 🔴 মিশরের অধিবাসী ড. মাজদী ক্বোরআনের মাধ্যমে আহলে বাইতের বারজন ইমামের প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তিনি…

আল্লাহর রশ্মি আহলে বাইত

Posted by - এপ্রিল ৩, ২০২০
মূলতঃ নবী করিম (সা.) এর ইন্তেকালের পর প্রায় দুই শতাব্দি কোন মাযহাবের অস্তিত্ব ছিল না । কেননা হযরত আবু হানিফার…

আহলে বাইতের প্রতি আনুগত্যপূর্ণ ভালবাসা

Posted by - ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২
আল্লামা যামাখশারী ও আল্লামা ফাখরে রাযী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রখ্যাত দু’ জন তাফসীরকারক ও বিজ্ঞ আলেম । তারা তাদের…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »