ইয়াযিদ মুয়াবিয়া কি দায়মূক্ত !?

1136

অনেকে ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের পেছনে কুফার শীয়াদেরকে দায়ী করছেন। একথা ছোটবেলা থেকে আমিও শুনে এসেছি। কিন্তু যখন ইতিহাস গভীরভাবে ও নিরপেক্ষ মাইন্ড থেকে অধ্যয়ন করেছি তখন এর সত্যতা খুব কমই খুজে পেয়েছি। আসলে তৎকালীন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, যারা চিঠি লিখেছিল তারা ছিল বিভিন্ন কিসিমের মুসলমান। তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন দুনিয়াবী কারণে ইমাম হুসাইনকে চিঠি দেয়। আবার অনেক ঈমানদার মুসলমান পত্রপ্রেরককে কুফতে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল ইবনে যিয়াদ। অনেককে আবার বন্দি করে রাখা হয়েছিল। অনেকে আবার পালিয়ে কোনমতে ইমামের কাফেলাতে যোগদান করেন। অনেকে আবার হুজুগে সুযোগে চিঠি লিখেছিল। তারা ইবনে যিয়াদের ভয়-ভীতি ও লোভের মুখে ঈমান হারিয়ে ফেলে।

সর্বোপরী, পরিস্থিতি অনেক ঘোলাটে ছিল। ইতিহাসের ভিত্তিতে একচেটিয়া শিয়াদেরকে দায়ী করা যাবে না। যদিও বহুকাল যাবত অনেক সুন্নী শীয়াদের বিরোদ্ধে এ কথাই বলে এসেছে। কিন্তু নিরপেক্ষ বিবেচনায় বলা যায়, শীয়া মানে অনুসারী। কেউ যদি তার ইমামের অনুসারী হয় তাহলে সে কখনো তার ইমামকে এত কষ্ট দিয়ে হত্যা করে জাহান্নাম খরিদ করতে পারে না। ধরুন, যদি বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সুন্নীরা হত্যা করেছে তাহলে আপনি কী বলবেন? আপনি নিশ্চয় বলবেন, আরে ভাই, হত্যাকারীদের কোন ধর্ম নেই। যেমনটি এখনকার অনেক মানুষ বলে সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই।

তাই, ইমাম হুসাইনের সামনে কুফাবাসী হত্যাকারীদেরকে আপনি শীয়া বললে ঐসব সুন্নী ঐতিহাসিকদের সঙ্গে আপনার তাল মিলানো হয়ে যায় যারা মাযহাবী বিদ্বেষ থেকে এ ধরনের উক্তি করেছিল। আর বলুন তো, ইমাম হুসাইনের কুফার দিকে আসা ছাড়া আর কোন পথ ছিল? মক্কা ও মদিনাতে তাঁর প্রাণ রক্ষা হচ্ছিল না। আবার ইয়াযিদের মত কাফের বেঈমানকে সমর্থনও দেয়া যাবে না। ইয়াযিদও ইমামের অনুগত্যের বাইয়াত অথবা কল্লা চায়। এখন, বলুন তো আপনি থাকলে কী করতেন? ইয়াযিদ কোনমতে ইমামের পিছু ছাড়ছিল না। ইমাম কুফার দিকে রওয়ানা হয়েছেন, এ খবর পেয়ে ইয়াযিদ তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও বিচক্ষণ ব্যক্তি উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে বসরার গভর্ণরের পদ বহাল রেখেই কুফার আন্দোলন দমন এবং ইমাম হুসাইনের কাফেলার সবাইকে হত্যার জন্যে কুফার গভর্ণর পদে নিয়োগ দেয়। তাহলে হত্যার জন্যে আপনি ইয়াযিদকে মূল ভিলেনের অবস্থান থেকে কোন মতেই সরাতে পারবেন না। আর মনে রাখবেন, তার বাবা, নবীজী ও তাঁর আহলে বাইতের দুশমন কুখ্যাত মুয়াবিয়াই কিন্তু ইয়াযিদকে ছলে বলে কৌশলে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। আবার এই মুয়াবিয়াকে ক্ষমতার মসনদে পাকা পোক্ত করেছিল তৃতীয় খলিফা। আবার দ্বিতীয় খলিফা মুয়াবিয়াকে নিয়োগ দিয়েছিল। মুয়াবিয়ার দুর্নিতি ও খেলাফতকে রাজকীয় রূপ দেয়ার সংবাদ পাবার পরো দ্বিতীয় খলিফা কোন এক অজ্ঞাত কারণে তাকে পদ থেকে অপসারিত করেননি। এ জন্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে কারবালার মহা হত্যাকান্ডের পেছনে ইয়াযিদসহ তার পূর্বসূরীদেরও হাত দেখা যায়। ইবনে যিয়াদ এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী মাত্র। ওয়াসসালাম।

Related Post

মহররমের শোক-কথা (৩য় পর্ব)

Posted by - আগস্ট ২, ২০২২
ইমাম হুসাইন যখন নিজের সঙ্গী সাথীদেরকে বলেছিলেন, “তোমরা সবাই চলে যাও অন্যথায় আগামীকাল কতল হয়ে যাবে।” তখন যদি ইমাম হুসাইনের…

হে প্রশ্নকারী!

Posted by - সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের পুত্র ইমাম যাইনুল আবিদিন আলাইহিস সালাম-এর শানে রচিত তৎকালীন বিখ্যাত কবি ফারাযদাক -এর একটি কবিতা নিম্নে…

আশুরার দিনে ইমাম হুসাইন (আঃ)- এর হৃদয়স্পর্শী বক্তৃতা

Posted by - আগস্ট ২৯, ২০২০
ঈমাম হুসাইন (আঃ)- শাহাদাতবরণ করার পূর্বে ইয়াজিদ বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক হূদয়স্পর্শী আবেগধর্মী ভাষণ প্রদান করেছিলেন। যে ভাষণটি প্রত্যেক মুমিন…

ইয়াজিদ কি চেয়েছিল?

Posted by - আগস্ট ২, ২০২৩
মহররমের শোক-কথা (পর্ব-এক) সে তো সব কিছুই নিতে চেয়েছিল। ‘তাজ’ অর্থাৎ মুকুট পাওয়ার পর সে বলল, “এবার সিংহাসন চাই।” সিংহাসন…

কুফা থে‌কে দা‌মে‌স্কে কা‌ফেলা !!

Posted by - আগস্ট ৩০, ২০২০
কত ক্লা‌ন্তি নি‌য়ে ছু‌টে চলা মরুর বু‌কে ! সাগরসম বিরহ ,ব্যাথাতুর হৃদয় নি‌য়ে ! প্রচন্ড দাবদা‌হে না‌ভিশ্বাস হ‌য়ে উঠ‌ছে কা‌ফেলাবাসী…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »