মুয়াবিয়ার এক খ্রিস্টান উপপত্নীর গর্ভে জন্ম নিয়েছিল ইয়াযিদ। ইয়াযিদের মায়ের নাম ছিল মাইসুন বিনতে বাইদাল আল কুলাইবি আন-নাসরানিয়া। সে ছিল এক সিরিয় বেদুইন। সিরিয়ার গভর্নর থাকাকালে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান এই নারীকে অপহরণ করে এবং পরে পরিত্যাগ করে। অনেকের মতে ইয়াযিদ ছিল এক অবৈধ বা জারজ সন্তান।
ইয়াযিদেকে দুধ পান করিয়েছিল বেশ কয়েকজন চরিত্রহীনা মহিলা। মুয়াবিয়ার কোন ছেলে বা পুত্র সন্তান না থাকায় বহু বছর পর ইয়াযিদেকে দামেস্কে নিয়ে আসে। মুয়াবিয়া বিশ্বনবী (সা.)-র বড় নাতি ইমাম হাসান মুজতাবা (আ:)-র সঙ্গে সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন করে ইয়াযিদেকে নিজের উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করেছিল।
ইয়াযিদ কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতো না, যদিও তার গলায় ঝুলত মায়ের দেয়া একটি ক্রুশের লকেট। সে মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করে মাতাল হয়ে থাকত এবং তার সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হতে নিজের চাকরদের আহ্বান জানাত। ইয়াযিদের মৃত্যুর ৫৮ বছর পর ১৩২ হিজরীতে আব্বাসীয় খলিফা আবুল আব্বাস আস সাফ্ফাহ উমাইয়া খলিফাদের কবর খুঁড়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে মুয়াবিয়াসহ তার পরের সব উমাইয়া রাজাদের কবর খুঁড়ে ফেলা হয়। ইয়াযিদের কবরে কেবল তার পায়ের একটি হাড় পাওয়া যায়, আর সবই ছিল কয়লার মত কালো হয়ে যাওয়া ছাইতুল্য মাটি। অর্থাৎ কবরের আজাবে তার পুরো শরীর ও হাঁড় পুড়ে গিয়েছিল।
সুন্নি ও শিয়া মুসলিম আলেমদের মতে ইয়াযিদ ছিল কাফের। কারণ, সে প্রকাশ্যেই বলেছিল নবী ও ওহী বলতে কখনও কিছু ছিল না। অভিশপ্ত ইয়াযিদের সামনে যখন ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পবিত্র শির মুবারক আনা হয় তখন সে বলেছিল, আহা! আমার (কাফের) পূর্বপুরুষরা যদি আজ বেঁচে থাকত তাহলে তারা দেখতে পেতেন যে, কিভাবে আমি বদর এবং ওহুদ যুদ্ধে (মুসলমানদের হাতে) নিহত আমার (দাদা আবু সুফিয়ানের) আত্মীয়-স্বজনদের রক্তের বদলা নিয়েছি মুহাম্মদের কাছ থেকে! এই নরাধম (ইয়াযিদ) আরো বলেছিল, হুসাইনকে হত্যার মাধ্যমে আমরা মুহাম্মদকেই হত্যা করেছি!
উল্লেখ্য, আহলে বাইতকে তথা হযরত আলী (আ.) ও নবী নন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (সা.)- এর পুত্র বেহেশতী যুবকদের সর্দার ইমাম হুসাইন(আ:)-এর বংশধরদের কাছে ইসলামী খেলাফত ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে আব্বাসীয়রা জনগণের সমর্থন নিয়ে উমাইয়া রাজবংশকে উৎখাত করলেও আব্বাসীয়রাও নবী-বংশের কোন ইমামের কাছে কখনও ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়নি। বরং আব্বাসীয়রা নবীবংশের ওপর জুলুম অত্যাচারের ব্যাপারে উমাইয়াদেরকেও ছাড়িয়ে যায় এবং তাদের হাতে নবী-বংশের ৬ জন মাসূম ইমাম শাহাদত বরণ করেছেন।