ইয়াজিদ কর্তৃক ইমাম হুসাইনকে (আ.) হত্যার প্রমান

1289 0
১. কুখ্যাত ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসেই মদিনার গভর্নর ওলিদকে চিঠি লেখে তাতেই ইমাম হুসাইন(আ:)-কে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ইয়াজিদের চিঠির অংশ তুলে ধরা হলঃ
فكتب إلى الوليد يخبره بموت معاوية، وكتاباً آخر صغيراً فيه: أما بعد فخذ حسيناً وعبد الله بن عمر وابن الزبير بالبيعة أخذاً ليس فيه رخصة حتى يبايعوا، والسلام.
 
“… হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে বাইয়াত নিতে বাধ্য করো এবং বাইয়াত ছাড়া তাদের অন্য কোন পথ নেই।”
 
তারিখ তাবারি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিল ফি তারিখ, আনসাব আল আশরাফ, মকাতিল এ হুসাইন, আল খরাযমি।
 
উপরের চিঠিতেই ইমাম হুসাইন আঃ সহ অন্যদের হত্যার নির্দেশ আছে যা সব রাজনীতিবিদ ও অফিসিয়াল চিঠি লেখকগন পড়লেই বুঝতে পারবেন। যেমন ওলিদ এই চিঠি পেয়ে মারোয়ান ইবনে হাকামকে ডেকে পাঠায় এই বিষয় আলোচনা করার জন্য। মারোয়ান চিঠির ভাব সম্প্রাশন করে।
আল বেদায়া ওয়া আন নেহায়া খন্ড ৮, পাতা ২৭৮: “আমার মত হল তারা মুয়াবিয়ার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার আগেই তুমি তাদের বায়াতের জন্য ডেকে পাঠাও, যদি অস্বীকার করে তাদের গর্দান উড়িয়ে দাও”।
সুতারং এই চিঠিতে যে কথা বলা ছিল তা মারোয়ান বলে দিয়েছে। আর যদি ইমাম হুসাইন আঃ কে হত্যার নির্দেশ না থাকত তবে ইমাম হুসাইন আঃ-কে রাতের অন্ধকারে মক্কা ত্যাগ করতে হত না।
#আহমাদ বিন দাউদ আবু হানিফা দিনওয়ারি তার কিতাব, “আখবার আত তাউল”-এর পৃষ্ঠা নং ২৭৯ (মিশর প্রিন্ট) উবায়দুল্লা ইবনে যিয়াদের স্বীকারোক্তি উল্লেখ করেছেনঃ
 
ما قتلي الحسين فإنه خرج على إمام وأمه مجتمعة، وكتب إلى الإمام يأمرني بقتله، فإن كان ذلك خطأ كان لازما ليزيد، وأما بنائي القصر الأبيض، فما فكرتي
 
“আমি হুসাইনকে হত্যা করেছি এই কারনে যে, সে আমাদের ইমামের (ইয়াজিদ) বিরুদ্ধে ক্বিয়াম করেছে আর ঐ ইমাম (ইয়াজিদ) আমাকে লিখেছে, হুসাইনকে হত্যা করতে। এখন এটা যদি গোনাহ হয় তবে ইয়াজিদ এই জন্য দায়ি।”
#ইবনে জিয়াদের স্বীকারোক্তি ও রাজ সাক্ষীঃ
ইবনে আসির তার “আল কামিল ফিত তারিখ” কিতাব-এর তৃতীয় খণ্ডে ১৯০ নম্বর পৃষ্ঠায় (দারুল কিতাব, বৈরুত) লিখেছেনঃ
 
أما قتلي الحسين فإنه أشار إلي يزيد بقتله أو قتلي فاخترت قتله
 
“আমি হুসাইনকে হত্যা করেছি ইয়াজিদের কথায় অন্যথায় সে আমাকে হত্যা করে ফেলবে। সুতরাং আমি হুসাইকে হত্যা করার বিষয়টিকে বেছে নিয়েছি।”
 
#আল্লামা জালালুদ্দিন সুউতি তার “তারিখে খুলাফা” কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ
 
فكتب يزيد إلى واليه بالعراق عبيد الله بن زياد بقتاله، فوجه إليهم جيشًا أربعة آلاف عليهم عمر بن سعد بن أبي وقاص
“ইয়াজিদ ইরাকের গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের কাছে তার (হুসাইনের) সাথে যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে লেখে। সেই জন্য সে ( ইবনে যিয়াদ) চার হাজার লোকের একটা সেনাবাহিনী পাঠায় উমার বিন সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে।”
#আল্লামা যাহাবি তার “সিয়ারু আ’লামিন নুবালা” কিতাবের খন্ড ৩ পাতা ৩০৫-এ উল্লেখ করেছেনঃ
[মুহাম্মাদ বিন যাহাক বর্ননা করেছে তার পিতা থেকে যে, যখন হুসাইন ক্বিয়াম করে, ইয়াজিদ তার গভর্নর ইবনে যিয়াদকে লেখে, “হুসাইন কুফার দিকে যাচ্ছে আর সে তোমার সময়ের সমস্যা অন্য সময়ের নয়, তোমার এলাকার সমস্যা অন্য এলাকার নয় এবং তোমার জন্য সমস্যা অন্য কোন গভর্নরের জন্য নয়। আর এখন তুমি মুক্ত হতে পার অথবা দাস (বন্দি) হতে পারো।”
তাই ইবনে যিয়াদ তাকে হত্যা করে ও তার মাথা ইয়াজিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।”]
#ইবনে যিয়াদের আবারো স্বীকারোক্তি যে সে ইয়াজিদের নির্দেশে হুসাইন আঃ কে হত্যা করেছে।
 
وَقَدْ كَانَ يزيد كتب إلى عبد الله بن زياد أن يسير إلى ابن الزُّبَيْرِ فَيُحَاصِرَهُ بِمَكَّةَ، فَأَبَى عَلَيْهِ وَقَالَ: وَاللَّهِ لَا أَجْمَعُهُمَا لِلْفَاسِقِ أَبَدًا، أَقْتُلُ ابْنَ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَغْزُو الْبَيْتَ الْحَرَامَ؟
 
“(এর আগে) ইয়াযিদ উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে চিঠি লেখে যে, সে যেন মক্কায় গিয়ে (আব্দুল্লাহ) ইবনে যুবাইরকে অবরোধ করে অথবা তার সাথে যুদ্ধ করে। ইবনে যিয়াদ আদেশ অমান্য করে এবং বলে, ‘আল্লাহের কসম এই (ইয়াযিদ এর মত) ফাসিকের জন্য আমি দুটি বাজে কাজ একত্রে করতে পারবো না। তার একটা রাসুল আল্লাহর নবীর মেয়ের পুত্রকে হত্যা আরেকটা বাইতুল্লাহিল হারাম (মক্কা) এ যুদ্ধ করা”।
 ইবনে কাসির তার ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ (বাংলা) খন্ড ৮, পাতা ৪০৪,
 ইবনে আসির তার বিখ্যাত কেতাব ‘আল কামিল ফিত তারিখ’ খন্ড ৪, পাতা ২১২ (দারুল কেতাব আরাবি, বৈরুত)
##ইবনে আব্বাস এর সাক্ষী যে, ইয়াজিদের হুমুকে হুসাইন আঃ-কে হত্যা করা হয়েছে। “আল কামিল ফিত তারিখ” খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২২৪:
 
فَكَتَبَ إِلَيْهِ ابْنُ عَبَّاسٍ: أَمَّا بَعْدُ فَقَدْ جَاءَنِي كِتَابُكَ، فَأَمَّا تَرْكِي بَيْعَةَ ابْنِ الزُّبَيْرِ فَوَاللَّهِ مَا أَرْجُو بِذَلِكَ بِرَّكَ وَلَا حَمْدَكَ، وَلَكِنَّ اللَّهَ بِالَّذِي أَنْوِي عَلِيمٌ، وَزَعَمْتَ أَنَّكَ لَسْتَ بِنَاسٍ بِرِّي، فَاحْبِسْ أَيُّهَا الْإِنْسَانُ بِرَّكَ عَنِّي فَإِنِّي حَابِسٌ عَنْكَ بِرِّي، وَسَأَلْتَ أَنْ أُحَبِّبَ النَّاسَ إِلَيْكَ وَأُبَغِّضَهُمْ وَأُخَذِّلَهُمْ لِابْنِ الزُّبَيْر، فَلَا وَلَا سُرُورَ وَلَا كَرَامَةَ، كَيْفَ وَقَدْ قَتَلْتَ حُسَيْنًا وَفِتْيَانَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ مَصَابِيحَ الْهُدَى وَنُجُومَ الْأَعْلَامِ غَادَرَتْهُمْ خُيُولُكَ بِأَمْرِكَ
 
“ইবনে আব্বাস লিখল (ইয়াজিদের উত্তরে) ……তুমি হুসাইনকে হত্যা করেছো আর সাথে বনি আব্দুল মোত্তালিবের যুবকদের হত্যা করেছো যারা হেদায়াতের রশ্মি ও পরিচিত তারকার মত ছিল, তোমার হুকুমে তোমার সেনারা তাঁদের উপরে আক্রমন করেছে।”
#দ্বিতীয় মুয়াবিয়া, ইয়াজিদের নিজের ছেলের বক্তব্য তার বাবা ইয়াজিদ, হুসাইন আঃ কে কতল করেছেন।
হায়াত আল হাইয়ান, খন্ড ১, পৃঃ নং ৮৮।
“যখন ইয়াজিদের উত্তরসূরী হয়ে তার পুত্র মুয়াবিয়া সিংহাসনে বসল, তার প্রথম খুৎবায় বলল ‘আমরা ইয়াজিদের খারাব কাজের ব্যাপারে সম্যক জানি, সে রাসুলের (সাঃ) পরিবারকে হত্যা করেছে, মদকে হালাল মনে করত এবং কাবাকে ব্যাথিত করেছিল।”
ইয়াজিদের ছেলে নিজেই তার বাবার কৃতকর্মকে তুলে ধরেছে।
#সালাফিদের ওস্তাদের ওস্তাদ ইবনে হজমের সাক্ষী ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন আঃ-কে কতল করেছেঃ
“ইয়াজিদ ও উমাইয়্যাদের ভক্ত এবং সালাফিদের প্রিয় পাত্র ইবনে হজম যে ইয়াজিদেকে আমিরুল মোমিনিন বলে ডাকে তার কিতাব “জামহারাত আন্সাব আল আরব’ এর ১১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেঃ
 
ويزيد أمير المؤمنين؛ وكان قبيح الآثار في الإسلام؛ قتل أهل المدينة، وأفاضل الناس، وبقية الصحابة -رضي الله عنهم- يوم الحرة، في آخر دولته؛ وقتل الحسين -رضي الله عنه- وأهل بيته في أول دولته؛ وحاصر ابن الزبير -رضي الله عنه- في المسجد الحرام، واستخف بحرمة الكعبة والإسلام؛ فأماته الله في تلك الأيام
“ইয়াজিদ আমিরুল মোমিনিন, ইসলামে অনেক খারাব কাজ করেছে। তার শাসন কালের শেষ দিকে হাররা এর ঘটনায় সে আহলে মদিনাকে হত্যা করেছে, সে সর্বোত্তম লোকেদের ও অবশিষ্ট সাহাবীদের হত্যা করেছে। তার শাসনের প্রথম দিকে #হুসাইনকে ও তার আহলে বাইতেদেরকে হত্যা করে। সে মসজিদে হারামে ইবনে যুবাইরকে ঘেরাও করে। সে কাবা ও ইসলামের পবিত্রতা নষ্ট করে আর এই সময় আল্লাহ তাকে মউত দেয়।”
#যাহবী, সালাফিদের আর এক প্রিয় মুহাদ্দেস এর সাক্ষী যে, ইয়াজিদ ইয়াম হুসাইন আঃ কে হত্যা করেছেঃ
তার তারিখে খুলাফার কিতাব খন্ড ৫, পাতা ৩০- এ উল্লেখ করেছেনঃ
قلت: ولما فعل يزيد بأهل المدينة ما فعل، وقتل الحسين وإخوته وآله، وشرب يزيد الخمر، وارتكب أشياء منكرة، بغضه الناس، وخرج عليه غير واحد، ولم يبارك الله في عمره، فخرج عليه أبو بلال مرداس بن أدية الحنظلي
 
“ আমি বলিঃ ‘যখন ইয়াজিদ আহলে মদিনার সাথে যা করেছিল তা করেছিল, আর সে #হুসাইনকে #হত্যা করেছিল আরো তার ভাই ও বংশধরদের হত্যা করেছিল। ইয়াজিদ মদ্য পান করত এবং ঘৃনিত কাজ করত, তার পরে লোকজন তাকে ঘৃনা করত ও তার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল একের অধিক বার। আল্লাহ তার জীবনকে বরকতময় করেনি।”
#যাহাবি ইয়াজিদকে নাসেবী বলে উল্লেখ করেছেনঃ
“সে ( ইয়াযীদ) ছিল অন্যতম নাসিবি (যারা নবীজীর আহলে বাইত আঃ কে ঘৃ্না করে), সে মদ্যপায়ী ছিল আর অন্যায় কাজ করেছিল। সে তার রাজত্ব শুরু করেছিল শহীদ হুসাইনকে হত্যার মাধ্যমে আর শেষ হয়েছিল হাররা এর ঘটনার মাধ্যমে (মদিনা শরীফ-এর আক্রমণ আর ধংসলিলাকে হাররা বলা হয়)। জনগণ সেই জন্য তাকে ঘৃনা করত, তার জীবনে বরকত ছিল না, আর অনেকেই হুসাইনের পর তার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল- তারা আল্লাহের জন্য জেগে উঠেছিল”। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খণ্ড ৪, পৃঃ নং ৩৭-৩৮)
#প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নাম করা ঐতিহাসিক ইবনে খলদুন এর স্বীকারোক্তিঃ
ইবনে খলদুন ও তার কিতাব ‘আল মুকাদ্দামা’-কে জানে না এমন কোন মুসলমান এবং অমুসলিম ওরিয়েন্টাল ঐতিহাসিক নেই। ইবনে খালদুন নিজে একজন নাসেবী ছিল তা সত্বেও তার স্বীকারোক্তিঃ
فلا يجوز نصرة يزيد بقتال الحسين ، بل قتله من فعلات يزيد المؤكدة لفسقه ، والحسين فيها شهيد
 
“হুসাইনের হত্যার ব্যাপারে ইয়াজিদেকে সমর্থন করা অসম্ভব। বরং হুসাইনের হত্যা ইয়াজিদের কাজ এবং এটা তাকে ফাসেক প্রমাণিত করে এবং হুসাইনকে শাহিদ।” ( মুকাদ্দামাহ, পৃঃ নং ২৫৪)
#ইবনে কাসীরের স্বীকারোক্তি, ইয়াজিদ হত্যা করেছে ইমাম হুসাইনকেঃ
ইবনে কাসীর বরাবরই ইয়াজিদকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে কিন্তু আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া কিতাবে ৬৩ হিজরির ঘটনায় তিনি লিখেছেনঃ
وقد تقدم أنه قتل الحسين وأصحابه على يدي عبيد الله بن زياد
 
“এটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে (ইয়াজিদ) হুসাইন ও তার সাথীদের কতল করেছিল ইবনে যিয়াদের দ্বারা।”
#দেওবন্দিদের হুজুরদের হুজুর কাজী সানাউল্লাহ পানিপথীঃ
কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী তার তাফসীর মাজহারীতে সুরা মুহাম্মাদের ৫৫ নং আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেছেন।
“এই আয়াত ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়াকে লক্ষ্য করে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ইয়াজিদ, রাসুল সাঃ- এর নাতীকে ও তার সাথীদের হত্যা করেছে, ঐ সাথীরা আসলে রাসুল সাঃ-এর পরিবার ছিল।”
আহলে সুন্নার মুহাদ্দেস ও রিজাল শাস্ত্রের আলেম, বুখারির বিখ্যাত শারাহ লেখক ইবনে হাজর আস্কালানীর লেখা আল ইমতা বিল আরবাইনের পৃষ্ঠা নং ৯৬ থেকে তুলে ধরা হলঃ
وأما المحبة فيه والرفع من شأنه فلا تقع إلا من مبتدع فاسد الاعتقاد فإنه كان فيه من الصفات ما يقتضي سلب الإيمان عمن يحبه لأن الحب في الله والبغض في الله من الإيمان والله المستعان
 
#ইয়াজিদের প্রতি লানতঃ
“………তাকে (ইয়াজিদকে) ভালবাসা ও তার বড়ত্ব একজন অধার্মিক ও ইমানশূন্য ব্যক্তি ছাড়া কেউ প্রকাশ করে না, কারণ ইয়াজিদ এমন চরিত্রের লোক যে, তার প্রেমীকরা ইমানশুন্য হতে বাধ্য, কারণ আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও ঘৃনা ইমানের লক্ষন।”
আহলে সুন্নার প্রপাগন্ডা লাইব্রেরির অনলাইন লিঙ্ক এই বইয়ের
http://islamport.com/d/1/ajz/1/58/123.html
সুতরাং এই ফতোয়া অনুযায়ী যে কেউ #ইয়াজিদকে #ভালোবাসে সে #ইমানহীন
 
 
=====================
একটি সংশয়ের নিরসনঃ
 
ইয়াজিদ পন্থীরা বলে থাকে যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহুকে হত্যার আদেশ দেয়নি এবং না সে এই
কাজে সন্তুষ্ট ছিল। (যারা এমনটা বলে) তারাও ভ্রান্ত।
“এবং কতেক বলে থাকে যে,ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু’র হত্যা ছিল কবীরা গুনাহ, কুফরী নয় এবং লা’নত
যে কাফিরের জন্য নির্ধারিত, এটাও ভূল।”
তোমরা কি জান না যে, দো’জাহানের নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামা’কে কষ্ট দেওয়াটাও যে অন্যতম কুফরী।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
 
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻟَﻌَﻨَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ
ﻣُﻬِﻴﻨًﺎ
অর্থাৎ নিশ্চয় যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের
উপর দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর অভিশম্পাত। এবং তাদের জন্য
প্রস্তুত রাখা হয়েছে অপমানজনক শাস্তি। আপত্তিঃ কিছু লোক বলে থাকে যে, ইয়াজিদের শেষ অবস্থাটা জানা যায়নি। হয়ত সে কুফর ও গুনাহের পর তাওবা করে থাকতেও পারে। তাওবাকারী হয়ে সে মৃত্যূ বরণ করেছে। ইমাম গাজ্জালী তারঁ “এহয়াউল উলুম” এর মধ্যে এ দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
 
জবাবঃ তাওবার সম্ভাবনা সম্ভাবনাই । আহ ! এই অভাগা তাদেরই
অন্তর্ভুক্ত যারা এমন কিছু করেছে যা অন্য কেউই করেনি। ইমাম হুসাইন এবং আহলে বাইতকে শহীদের পর সে মদিনা মুনাওয়ারাকে অপবিত্র করতে এবং মদীনাবাসীকে হত্যা এবং শহীদ করার জন্যে সেখানে সৈন্য প্রেরণ করে। তিন দিন পর্যন্ত মসজিদে নববী আযান ও নামাযহীন থাকে। তারপরে কাবা শরীফে আক্রমণ করা এবং স্বয়ং কাবার অভ্যন্তরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে শহীদ করা এবং তাঁদের দুর্নাম বর্ণনা করা;
 
সবই তার কাজ ছিল। [আল্লাহই ভালো জানেন] আপত্তিঃ বুখারী শরীফ প্রথম খন্ডে কিতাবুল জিহাদে হযরত উম্মে হেরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বর্ণনা করেন যে,আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হতে শুনেছি। তিনি ইরশাদ করেন যে,
আমার উম্মতের মধ্যে থেকে প্রথম সৈন্যবাহিনী যারা কিনা রোম সম্রাটের এর শহর কুস্তন্তুনিয়ায় জিহাদ করবে, তাদেরকে ক্ষমা করা হবে।
 
আমি আরয করলাম,
ইয়া রাসূলাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমিও
কি সেখানে যাব ?
 
হুজুর বললেন ‘না’।
 
এই জিহাদ ৫০ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল। তাতে সেনাপতি ছিল
ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া। এবং এই যুদ্ধে অনেক সাহাবায়ে কিরামও অংশ
নিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম। এই মুজাহিদদেরকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ক্ষমাকৃত বলে ঘোষণা করেছেন।
এজন্যই ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ছিল এবং সে জান্নাতী।
 
এটা ছিল ইয়াজিদ পন্থী খারেজীদের সবচেয়ে বড় দলীল, যা কিনা তাদের পক্ষ হতে বলা হয়ে থাকে। এবং এই হাদীস দ্বারা অনেকে কারণ বের করেছে যে, ইয়াজিদের খিলাফত সহীহ ছিল এবং সে জান্নাতী।
জবাবঃ এই হাদীস দ্বারা এটা কিভাবে হৃদয়াঙ্গম হলো যে, ইয়াজিদের খিলাফত সঠিক ! কেননা যখন ইয়াজিদ কুসতুন্তুনিয়াতে আক্রমন করতে গিয়েছিল সে সময়ে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জীবিত ছিলেন। তখন তাঁর খিলাফতকাল ছিল। তাঁর আমরণ খিলাফত ওলামায়ে কিরামের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সহিহ ছিল। কারণ ইমামে বরহক্ব হযরত ইমাম হাসান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ইসলামী সম্রাজ্যের খিলাফত হযরতে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র নিকট অর্পণ করেছিলেন। এখন যোদ্ধাদের ক্ষমাকৃত হওয়ার দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে,তার প্রত্যেককে মাফ করা হবে এবং সে বেহেশতী হবে। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার সাথে স্বয়ং এক ব্যক্তি বীরত্বের সাথে লড়াই করছিল। হুজুর ইরশাদ করেন, সে দোযখী। বেহেশতী আর দোযখী হওয়াটা সর্বশেষ অবস্থার
উপর নির্ভর করে। ইয়াজিদ প্রথমে অনেক ভাল কাজ করেছে যে, কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমন করা। কিন্তু খলীফা হওয়ার পর সে এমন হীন কর্মের দ্বারা নিজ বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে যে, নাউজুবিল্লাহ ! ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে হত্যা এবং আহলে বাইতকে অপমান করিয়েছে। যখন ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র
মাথা মুবারক আনা হল তখন অভিশপ্ত ইয়াজিদ বলতে লাগল, “আমি বদরের প্রতিশোধ নিলাম”।
 
মদীনা মুনাওয়ারায় সে হামলা চালালো, হেরেমের পবিত্র
স্থানে ঘোড়া বাধলো,মসজিদে নববী এবং রওযা শরীফকে অপমান
করলো। এসকল গুনাহের পরও কি ইয়াজিদকে ক্ষমাকৃত
এবং জান্নাতী বলা যেতে পারে !!
 
সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে, এ কথা তো সবারই জানা যে, ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যায় এবং আহলে বাইতের অপমানে খুশি ও রাজী ছিল। এজন্যই আমরা তার বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করি না। বরং তার ঈমানের ব্যাপারেই আমাদের আপত্তি। আল্লাহর অভিশম্পাত ইয়াজিদ ও তার সহযোগীদের উপর।
 
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ফয়সালা সকল মুফাসসীরিন, মুহাদ্দীসীন, আইম্মায়ে কিরাম, ওলামায়ে রাব্বানী এবং আল্লাহর ওলীগণ এই কথার উপর ঐক্যমত যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হক্বের উপর ছিলেন। অপরদিকে ইয়াজিদ ফাসিক ও ফাজির ছিল। হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে,আমার উম্মতের ঐক্যমত কখনোই গোমরাহীর উপর হতে পারে না। ইমামে রাব্বানী হযরত মুজাদ্দীদ আলফে সানী সহ
অন্যান্য আওলিয়ায়ে কিরাম এবং ওলামায়ে ইসলামগণ বলেন,
ইয়াজিদ পাপীষ্ঠ ও ফাসিকদের দলের অন্তর্ভূক্ত। তার পাপীষ্ঠতার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নাই। যে হীন কর্ম এই দূর্ভাগা করেছে, কোন কাফির ফিরিঙ্গিও তা করতো না।
[মাকতুবাত শরীফ-৫৪,২৫১]

Related Post

ইয়াজিদের কিছু নিকৃষ্টতম পাপ

Posted by - August 24, 2020 0
✅✏ কারবালার হত্যাকান্ডের মহানায়ক, ইসলাম ধ্বংসকারী, নবীর কলিজায় ছুরি চালনাকারী কুখ্যাত ইয়াজিদের কিছু নিকৃষ্টতম পাপ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ  …

কারবালা থে‌কে কুফায় কা‌ফেলা !!

Posted by - August 30, 2020 0
‌বিদঘূ‌টে অন্ধকারাচ্ছন্ন রা‌ত্রি ! সারারাত খোলা আকা‌শের নি‌চে ! পা‌য়ে বে‌ড়ি পড়া ,হা‌তে হাতকড়া ! কখ‌নো হে‌টে কখ‌নো বা ঘোড়ার…

আশুরার দিনে ইমাম হুসাইন (আঃ)- এর হৃদয়স্পর্শী বক্তৃতা

Posted by - August 29, 2020 0
ঈমাম হুসাইন (আঃ)- শাহাদাতবরণ করার পূর্বে ইয়াজিদ বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক হূদয়স্পর্শী আবেগধর্মী ভাষণ প্রদান করেছিলেন। যে ভাষণটি প্রত্যেক মুমিন…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *