আলাইহিস সালাম ও রাদিআল্লাহু আনহু প্রসঙ্গ

1455 0

আলাইহিস সালাম-এর অর্থ তার উপর সালাম। এ শব্দটা যে শুধুমাত্র নবী-রাসূলদের জন্যে নির্দিষ্ট এর কোন দলীল-প্রমাণ নেই। আমরা সকল ফেরেস্তাদের নামের পর আলাইহিস সালাম বলে থাকি। তারা কী নবী নাকি রাসূল?!!

 আবার নবী ঈসার মা, হযরত মারইয়াম-এর বেলায়ও আলাইহাস সালাম ব্যবহার করে থাকি। অর্থাৎ তার উপর সালাম। পু:লিঙ্গের ক্ষেত্রে আলাইহি আর স্ত্রী:লিঙ্গের ক্ষেত্রে আলাইহা ব্যবহার হবে। আরাবী ভাষায় তৃতীয় ও অনুপস্থিত একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সর্বনাম (হু, হি, বা হা) ব্যবহৃত হয়।
 
আর দ্বিতীয় ও উপস্থিত একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে (কা, কি) আর দুইজনের বেলায় (কুমা) এবং দুইয়ের অধিক উপস্থিত ব্যক্তিদের বেলায় সর্বনাম (কুম বা কুন্না) ব্যবহার হয়ে থাকে। আর সেই জন্যেই তো আমরা পরস্পরের সাক্ষাতে আসসালামু আলাইকুম বা আসসালামু আলাইকা উচ্চারণ করে থাকি। যেহেতু আপনি আমার সামনে উপস্থিত, তাই বলছি আসসালামু আলাইকা বা আসসালামু আলাইকুম”।
যেহেতু কোন নবী, রাসূল, বা কোন সাহাবী বা ইমাম ও শহীদ-এর বেলায় আমরা দেখি যে, তারা অতিতে এ পৃথিবীতে স্ব-শরীরে অবস্থান করেছেন কিন্তু এখন আমাদের সামনে সেরকম অবস্থানে নেই, তাই আমরা তাদেরকে গায়েব বা অনুপস্থিত ও তৃতীয় ব্যক্তি ধরে তাদের নামের পরে “আলাইহিস সালাম” অথবা “আলাইহাস সালাম” উচ্চারণ করে থাকি। এতে শরীয়ত ও আরাবী ব্যাকরণ অনুযায়ী কোন প্রকার আপত্তি নেই। তাছাড়াও আমরা নামাজের তাশাহহুদের এক পর্যায়ে “আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন” পড়ে থাকি। এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের উপর সালাম এবং নেক বান্দাদের উপর সালাম”। যদি নামাজে আমরা আমাদের উপর সালাম দিতে পারি তাহলে কোন সাহাবী, তাবেয়ী, ইমাম, ওলী ও শহীদকে সালাম দিতে পারবো না কেন? তাদেরকে সালাম দেয়া নিষেধ, এ ধরনের কোন প্রমাণ শরীয়তের ফিক্বাহতে নেই।
 
আর “রাদিআল্লাহু আনহু”-এর অর্থ হলো, আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হোক। এটা এক প্রকার দোয়া। আবার আলাইহিস সালাম-এর অর্থও এক প্রকার দোয়া। আলাইহিস সালাম বা আলাইহাস সালাম-এর অর্থ তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এই যে ভাগ, নবী ও রাসূলদেরকে আলাইহিস সালাম বলা হয় আর শেষ নবীর সম্মানিত সাহাবীদেরকে শুধু “রাদিআল্লাহু আনহু”-ই বলতে হবে-এ কথার পেছনে কোন কোরআনী বা হাদিসী দলীল নেই। আপনি তাদেরকে “রাদিআল্লাহু আনহু” বলেও দোয়া করতে পারেন আবার আলাইহিস সালাম বা আলাইহাস সালাম বলেও দোয়া করতে পারেন। এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের নামের পাশে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করা যাবে না-এর কোনকোরআনী বা হাদিসী দলীল নেই। যার যেরকম ইচ্ছা সে সেরকম দোয়া করতে পারে। আর মোট কথা হলো, এ বিতর্ক কোন উসুলী আলোচনা নয়। অর্থাৎ কেউ যদি আলাইহিস সালাম বা আলাইহাস সালাম-এর স্থলে “রাদিআল্লাহু আনহু বা আনহা(স্ত্রী লিঙ্গে র ক্ষেত্রে)” ব্যবহার করেন অথবা কেউ যদি “রাদিআল্লাহু আনহু বা আনহা (স্ত্রী লিঙ্গের ক্ষেত্রে)”-এর স্থলে আলাইহিস সালাম বা আলাইহাস সালাম ব্যবহার করেন তাহলে তার ঈমান চলে যাবে না। কেননা, এটা কোন শিকড়গত আলোচনা নয়। বরং এটা দ্বীনের একটা শাখা-প্রশাখার আলোচনা।]
 
“ওয়া মা আলাইনা ইল্লাল বালাগ্বুল মুবিন।”

Related Post

উপদেশ প্রার্থী এক ব্যক্তি

Posted by - August 31, 2019 0
🌹উপদেশ প্রার্থী এক ব্যক্তি🌹 ✍️[এক আরব বেদুঈন মদীনা শহরে এসে রাসূলে আকরাম (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আবেদন করলো, “হে আল্লাহর…

হাফেজ্জী হুজুরের শেষ ওসিয়ত

Posted by - August 23, 2019 0
গত কয়েক দশক ( সত্তর-নব্বই) ধরে বাংলাদেশের সকল সুন্নীপন্থি আলেমদের শিরমনি ছিলেন দেওবন্দী আলেম হযরত মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর। তিনি…

আল্লাহর উপর ভরসা

Posted by - August 14, 2019 0
🍃ছুরি হযরত ইসমাঈল 🌺🍃আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করতে পারেনি…   🌹আগুন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম-কে পোড়াতে পারেনি…   🌹হাঙ্গর হযরত ইউনুস…

অত্যাবশ্যকীয় আদব

Posted by - August 12, 2019 0
🌹ইমামিয়া পাক দরবার শরীফের সন্মানিত সকল ভক্ত, আশেকান, মুরিদান ও মুহিব্বিনে আহলু বাইতিন নাবী(সা.)-এর খেদমতে দরবার শরীফের অভ্যন্তরে পালনীয় কতিপয়…

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »