বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির এই দুনিয়াতে তাঁর প্রতিনিধি স্বরুপ মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে।দিয়েছেন প্রবল বুদ্ধিমত্তাসহ খোদায়ি সিফাত। বাতলে দিয়েছেন জীবন বিধানের সব রকম পাথেয়। তারপরও যুগে যুগে সে জীবন বিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন পূর্বক নিজ খেয়াল ও মানব সৃজিত কর্মপন্থায় ব্যাপৃত হয়ে ধর্মীয় আদেশ ও হুকুম আহকাম বলে চালিয়ে দিয়েছে ভ্রান্ত আকিদায়। যদিও পথভ্রষ্ঠ জাতিকে হেদায়েতের জন্য ঐশী প্রতিনিধি, আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি কওমে প্রেরন করেছেন। তারপরও হেদায়েতের দিশারীদের প্রকৃত অনুগত ও অনুসৃত অনুসারিদের সংখ্যা নেহায়েত কম হিসেবে দেখতে পাই। তার প্রকৃত কারন গুলোর মধ্যে তাদের পরিচিতি ও তাদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা পোষন একটি গুরুত্বপূর্ন কারন।
তাই অনেক গুরুত্বপূর্ন নবীরাসুল ও ইমামগনের প্রতি প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনায় বশবতী হয়েই তাঁদের প্রতি কিছু নেতিবাচক ও অমুলক ধারনা পোষন করেন। যা কোন সঠিক মানদন্ডের ভিত্তিতে বিচার করা যায় না।
সঠিক মানদন্ড বলতে কোরান, মুতাওয়াতির হাদিস ও আকলের ভি্ত্তিতে গড়ে উঠা মাপকাঠিকে বুঝাচ্ছি। আর এবার সেই মানদন্ডের আলোকে তা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
কোরান ও হাদিসের আলোকে সঠিক অর্থও ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে নবী ইব্রাহিম আঃ এর সঠিক পরিচয় তথা তাঁর প্রকৃত পিতা কে ছিলেন সেদিকে নজর দেই।
ইব্রাহিম আঃএর প্রকৃত পিতা কে?
“স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম পিতা আযরকে বললেনঃ তুমি কি প্রতিমা সমূহকে উপাস্য মনে কর? আমি দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি ও তোমার সম্প্রদায় প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট”। (সূরা আন’আমঃ৭৪)
“আর যখন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন তাদের কেউ কেউ বলে এ সূরা তোমাদের মধ্যেকার ঈমান কতটা বৃদ্ধি করলো? অতএব যারা ঈমানদার, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়েছে”। (সূরা তওবাঃ১২৪)
উপরের আয়াত, ‘আব’ শব্দটি আজরের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
যাহোক, ‘আব’ এর বিভিন্ন অর্থ রয়েছে কিন্তু “ওয়ালিদ” (জন্মদাতা পিতা) অর্থেই হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
নবী (সাঃ) বলেছেন, তাঁর অস্তিত্বের সত্তা সরাসরি তাঁর পবিত্র পিতামাতা এবং পবিত্রীকৃত বংশধরদের মাধ্যমে প্রেরিত হয়েছেন। ।
এখন আরবি ভাষায় ‘আব’ শব্দটি বাবা ও পূর্বপুরুষ অর্থেও হতে পারে। এমনকি চাচাও হয় যেমন ইয়াকুবের চাচা ইসমাইলকে নিম্নোক্ত কোরআনের আয়াতে ‘আব’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে…
“তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়? যখন সে সন্তানদের বললঃ আমার পর তোমরা কার এবাদত করবে? তারা বললো, আমরা তোমার পিতৃ-পুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্যের এবাদত করব। তিনি একক উপাস্য”। (সূরা বাকারাঃ১৩৩)
যেহেতু ইসমাঈল ইয়াকুবের পিতা ছিলেন না এবং কুরআনে ‘আব’ শব্দটি চাচা অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তাহলে ইহা ভাষাগত ভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, জন্মদাতা পিতা ছাড়াও ‘আব’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
চাচা, সৎপিতা, শ্বশুর এবং দানশীল ব্যক্তিদেরকে ‘পিতা’ হিসেবে ডাকা প্রথাগত ভাবে শুধুমাত্র আরবের মধ্যেই নয়, অন্যান্য জাতির মধ্যেও এরুপ ডাকার প্রচলন রয়েছে।
যারা অন্যদেরকে সাহায্য করে তাদেরকেও আমরা ‘বাবা’ ‘গরিবদের বাবা’ বা ‘কেবলা বাবা’ রূপক অর্থে বলে থাকি। বয়স্ক লোকদেরকে আমারা সম্মানার্থে ‘বাবা’ বলে ডেকে থাকি।
এটা জানা যায় যে, আমারা পুর্বের সম্মানি লোকদেরকেও এইরুপে ডেকে থাকি, যেমনঃ মা আয়েশা, মা ফাতেমা বা মা হাজেরা…। এর অর্থ এই নয় যে উনারা আমার জন্মদাতা মা বা বাবা। আমরা উনাদের সম্মান করে এই ভাবে ডাকি। আমরা বয়স্ক লোককে অনেক সময় ‘চাচা’ বয়স্ক মহিলাকে ‘চাচি’ বলে ডেকে থাকি, আত্মীয় সম্পর্কের না হয়েও।
রাসুলের জীবনী ও হাদিস সংকলনের মধ্যে সুপরিচিতঃ ১২বছর বয়সে নবী যখন চাচার সাথে বাণিজ্যের কাজে সিরিয়াতে ভ্রমণ করেন, তখন সেখানে তারা সন্ন্যাসী বহিরার সাথে সাক্ষাত হয়, সে এই শিশুকে নবী বলে স্বীকৃতি দেন।
তিনি আবু তালেবকে বললেনঃ এই ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক কি?
তিনি উত্তর দিলেন: সে আমার ছেলে।
বহিরা জবাব দিলেনঃ তঁর পিতা জীবিত থাকার কথা নয়।
তখন তিনি বললেনঃ আমার ভাতিজা।
এখানে দেখা যায় আবু তালিব তার ভাতিজাকে ‘আমার ছেলে’ বলে সম্বোধন করছেন।
তেমনিভাবে, নবী মুহাম্মদ তাকে তাঁর ‘বাবা’ তাকে বলে সম্বোধন করতেন।
“আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামে আছে”
উক্ত হাদিসটি মুসলিম শরিফে বর্নিত হয়েছে, যার ভুল বুঝার কারনে আমাদের ভুল হয়ে থাকে। একজন ব্যক্তি নবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন “আমার পিতা কোথায়”?
সুতরাং নবী উত্তর বললেনঃ “আগুনে।”
যখন লোকটি চলে যাচ্ছিলেন, নবী তাকে সান্ত্বনা দিতে যেয়ে তাকে বললেনঃ “আমার বাবা ও তোমার বাবা আগুনে পুড়তেছেন”।এখানে নবীর চাচা (আবু লাহাবের) উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকে আবু তালেবকেও অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। কিন্তু আবু তালেব কাফের ছিল এই ধারনা ভুল। উনার আলাপ করলে লেখার কলেবর বড় হবে, তাই বিস্তারিত জানতে ‘ইসলামে আবু তালেবের অবদান’ বইটি পড়তে পারেন।
ইমাম আল সুয়ুতি তাঁর কিতাবুদ-দারজ-ইল-মুনিফার বইয়ে দলিল সহকারে প্রমাণ করছেন যে, ‘আযর’ হযরত ইব্রাহিমের চাচা ছিলেন।
আহলে কিতাবদের বাইবেলেও ইব্রাহিম ‘তেরাহ’র পুত্র ছিলেন। জেনেসিস১১:২৬-২৭ এবং জেনেসিস ১১:৩১ উল্লেখ করা আছে।
সূরা মরিয়মে আমাদেরকে বলা হয়েছে, তিনি কিভাবে তার ‘পিতা’কে ধর্মের দিকে ডেকেছিলেন। “কিন্তু, পিতা বললঃ যে ইব্রাহীম, তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও।(৪৬) ইব্রাহীম বললেনঃ তোমার উপর শান্তি হোক, আমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি মেহেরবান”। (৪৭) (সূরা মরিয়ামঃ৪৬–৪৭)
বুখারি, নাসাই ও ইবনে মাজ্জার এ বর্নিত হয়েছেঃ ইবরাহীমের সাথে তার বাবা আযরের দেখা হবে হাশরের দিনে, তার চেহার ধুলো অবস্থায় থাকবে। ইবরাহীম তাকে বলবেঃ আমি কি তোমাকে বলিনি আমাকে অমান্য না করার জন্য?
তখন তার বাবা তাকে বলবেঃ “আজ আমি তোমাকে অমান্য করব না”।
অতএব ইব্রাহীম বলবেঃ “হে পালনকর্তা, তুমি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ, সেদিন আমাকে তুমি লাঞ্ছিত করবেনা, যখন সমস্ত মানুষ পুনরুত্থিত হবে। অতএব, আমার মর্যাদাহানি আমার দুরের পিতার চেয়ে আর বেশি কি হবে”?
তখন আল্লাহ বলবেনঃ “আমি কাফেরদের জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করেছি”।
এর ফলে ইবনে কাসীর সহ অনেকে বুঝতে পেরেছেন। আযরকে ইবরাহীমের পিতা মনে করা ভুল, ইবরাহীমের পিতা তারেখ ছাড়া অন্য কেউ নয়।
তারপর, ইবনে কাসীর লিখেছেন, তাঁর বাবাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন, কিন্তু যখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে তিনি আল্লাহর শত্রু। তখন তিনি তার কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করেছিলেন। যেমনটি কোরআনে উল্লেখ করেছেঃ
“আর ইব্রাহীম কর্তৃক স্বীয় পিতার মাগফেরাত কামনা ছিল কেবল সেই প্রতিশ্রুতির কারণে, যা তিনি তার সাথে করেছিলেন। অতঃপর যখন তাঁর কাছে একথা প্রকাশ পেল যে, সে আল্লাহর শত্রু তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিলেন। নিঃসন্দেহে ইব্রাহীম ছিলেন বড় কোমল হৃদয়, সহনশীল”। (১১৪) (সূরা তওবাঃ১১৪)
এছাড়াও হযরত ইব্রাহীম (আঃ)তাঁর জন্মদাতা পিতার (ওয়ালিদ) পাশাপাশি অন্যান্য মুমিনদের জন্য দোয়া করেন, যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে তার জন্মদাতা পিতা মুশরিক ছিলেন না। এটি নিম্নোক্ত কোরআনের আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়…
“হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে (ওয়ালিদাইয়া) এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে”(সূরা ইবরাহিমঃ৪১)
তবে যা বিস্ময়কর করার মত বিষয়, তা হল সত্যিকার অর্থে ইবরাহীমের পিতা ‘তারাখ’ ছিলেন ‘আযর’ নয়। এই দোয়ার দ্বারা বুঝা যায় শুধু পিতাই মুমিন ছিলেননা, মাতাও মুমিন ছিলেন।
ইবনে কাসীর তার ইতিহাসে লিখেছেন ইবরাহীম তারাখের পুত্র ছিলেন। তারাখের বয়স যখন ৭৫ বৎসর ছিল, তখন ইব্রাহিম জন্মগ্রহণ করেন। (সূত্রঃআল বিদায়া ওয়ান নিহায়া খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-১৩৯)
ইমাম তাবারী দ্বারাও ইহা নিশ্চিত করা হয়েছে, যেমন ইব্রাহিম (আঃ)এর পরিবারের বংশ বৃত্তান্ত উনার ইতিহাসে সংগ্রহ করেছেন। তাছাড়া, তার কুরআনের তফসিরে তিনি বলেছেন, ‘আযর’ ইব্রাহিমের (আঃ) পিতা ছিলেন না। সূত্রঃ
- তারিখেতাবারী, খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-১১৯
- তফসিরেতাবারী, ইবনেজারিরআল-তাবারীখণ্ড-৭,পৃষ্ঠা-১৫৮
হযরত ইব্রাহিম ২১৬০খৃষ্ট পুর্ব তে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তারীহ বিন নাহুর বিন সরোজ ইবনে রাআও বিন ফিলিয বিন আবার এর ছেলে। হযরত ইব্রাহীমের দুইজন ভাই ছিল, যাদের নাম নাহুর ও হারান ছিল। হযরত লুত, হারানের পুত্র ছিল।
নির্দিষ্ট আয়াত এবং হাদিস দ্বারা নিশ্চিত যে আমাদের নবী (সাঃ) এর সব পুর্ব পুরুষগন খাঁটি ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এর বিপরীত অর্থ করা হলে আয়াত ও হাদীসকে অস্বীকার করা হবে।
সূরা আত-তাওবার ২৪তম আয়াতটিতে বলা হয়েছে, মুশরিকরা অপবিত্র। বলা হয়েছে, আমাদের নবীর পুর্বপুরুষগন সবাই পবিত্র ছিলেন।
সূরা আশ-শুরাতে বর্ণিত হয়েছেঃ “ওয়া তাক্বাল্লুবাকা ফিসসাজিদিন”
এটাই হলো তাদের আন্দোলন যারা নিজেদেরকে সিজদাবনত রাখে। যখন আহলে সুন্নাহর আলেমরা উক্ত আয়াতটি ব্যাখ্যা করেছেন, তখন তারা বলেন তাঁর পিতা-মাতা মুমিন ছিলেন। হাদিসে তাঁর সমস্ত পূর্বপুরুষগন বিশুদ্ধ মুমিন ছিলেন বর্ননা করা হয়েছে। মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া বইয়ের শুরুতে এ কথা বলা হয়েছেঃ “ইবনে আব্বাস বলেছেনঃ আমি আপনাকে এক নবীর প্রজন্ম থেকে অন্য নবীর প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করেছি। যদি একজন বাবার দুই পুত্র থাকে, তাহলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবতীর্ন করা হবে, তাদের মধ্য থেকে যে নবুয়তপ্রাপ্ত ছিল”।
নিম্নলিখিত হাদিসে বর্ণিত হয়েছেঃ “আপনি প্রতি শতাব্দীর সেরা পুরুষদের থেকে অবতীর্ন হয়েছেন।” (বুখারী)
“আল্লাহ ইসমাইলের পুত্রদের মধ্যে কিনানাকে, কিনানার পুত্র মধ্যে কুরাইশকে, কুরাইশকে পুত্রদের মধ্যে হাশিমকে বেছে নিলেন এবং তাদের মধ্যে আমাকে মনোনীত করলেন” (মুসলিম)
“আমি শ্রেষ্ঠ মানুষ থেকে এসেছি। আমার পূর্বপুরুষরা সর্বোত্তম মানুষ ছিলেন” [তিরমিযি]
“আল্লাহ আমাকে আরবের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে মনোনীত করেছেন। আমি শ্রেষ্ঠ মানুষ থেকে অবতীর্ণ”। (তাবারানি)
“আমার পিতামাতা কুলের মধ্যে কেউই ব্যভিচার করেনি। আমি শ্রেষ্ঠ পিতামহদের কাছ থেকে এসেছি এবং পবিত্র মাতাকুল থেকে এসেছি। যদি আমার পিতামহদের কারো দুই পুত্র থাকে, তাহলে আমি উত্তম একজনের কাছ থেকে এসেছি”। (মাওয়াহিব)
“আমার পূর্বপুরুষ হযরত আদম থেকে শুরু করে সব দম্পতিরা বিবাহে আবদ্ধ ছিলেন।। আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ”(দায়লামি)
“আমি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। আমি গর্ব করার জন্য বলছি না”। (দায়লামি)
হাদীসগুলো সূরা আশ শূরার আয়াতটি ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের নবী (সাঃ)এর পিতৃকুল খাঁটি ঈমানদার ছিলেন।
যেহেতু কাফেররা অপবিত্র, তাই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর পিতা কাফের হওয়া অসম্ভব।
মোল্লা জা’মি বলেনঃ “হযরত আদমের (আঃ) কপালের ওপর একটি পবিত্র আলো উজ্জ্বলিত দেখা যেত, যেহেতু উনার মধ্যে মুহাম্মদের (সাঃ) কণিকা বা অংশ ছিলেন। সেই কণিকা মা হাওয়ার কাছে, তাঁর কাছ থেকে হযরত ‘সেত’ এর কাছে এরপরে পবিত্র মহিলা থেকে পবিত্র পুরুষের কাছে, তারপরে পবিত্র পুরুষ থেকে পবিত্র মহিলা কাছে স্থানান্তরিত হয়। সেই পবিত্র আলোটি স্থানান্তর হয় কণিকাটি সহ একজনের কপাল থেকে আরেকজনের কপালে” (শাওয়াহিদ)
এই পবিত্র আলো একজন অবিশ্বাসী বা একজন বিশ্বাসী যে ব্যভিচারে লিপ্ত তার প্রতি স্থানান্তর করা হয়নি।
অতএব ‘আযর’ হযরত ইবরাহীমের (আঃ) পিতা ছিলেন না। হযরত ইব্রাহিমের (আঃ)পিতার নাম ছিল তারুহ। ‘আযর’ চাচা এবং সৎ বাবা ছিল।
সূরা আল আন’আমের ৭৪নং আয়াতে নিম্নলিখিত বিবৃত করা হয় “যখন ইব্রাহীম পিতা আযরকে বললেন…”
ইহা তফসির আল বায়দাভীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে পিতা শব্দটি ‘আতফ আল-বায়ান’ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।(ব্যাখ্যা করার জন্য অতিরিক্ত শব্দ)। যখন কারো দুটি নাম থাকে এবং যখন উভয় নামই ব্যবহার করা হয় তাতে বোঝা যায় যে তাদের মধ্যে একটি বিখ্যাত ও অপরটি বিখ্যাত নয়।
দ্বিতীয়টিকে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে প্রথমটির অস্পষ্টতা নির্মল করা যায়, যা বিখ্যাত নয়। দ্বিতীয়টিকে ‘আতফ আল-বায়ান’ বলা হয়।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) দুজনকে পিতা বলে ডাকতেন। প্রথমজন তাঁর নিজের পিতা এবং দ্বিতীয়জন তাঁর সৎ পিতা, যিনি তাঁর চাচাও ছিলেন। স্বল্পবাক ব্যবহার, অলঙ্কারশাস্ত্র, এবং সাবলীলতা নিয়ম অনুসারে এই আয়াতের অর্থ হলঃ
ইব্রাহীম তাঁর পিতাকে বললেন, যার নাম আযর ছিলেন। যদি তাই না হয়, তাহলে তিনি এটা বললেই যথেষ্ট হত, “তিনি আযরকে বললেন” বা “তিনি তারঁ পিতাকে বললেন”।
যদি আযর তাঁর আসল পিতা হতো তাহলে “তার পিতা” শব্দটি অতিরিক্ত হয়েছে। আমরা কখনো বলিনা, ‘আমার বাবা আলী আসছে’ বরং ‘আমরা বলি আমার বাবা আসছে’। অর্থাৎ প্রকৃত পিতাকে নামসহ বাবা বলার যুক্তি খাটছে না।
উপসংহারঃ
উপরোক্ত কোরান ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের আলোকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে, ইব্রাহিম আঃ এর প্রকৃত পিতা আযর নয় বরং তারুখ ছিলেন যা একটি আক্বলসিদ্ধ দলীলও বটে। কারন হেদায়েতের কান্ডারীরা পবিত্র ঐশী প্রতিনিধি তথা খোদার প্রতিনিধি হিসেবে কোন মুশরিক বা কাফেরের রক্তজ ধারা থেকে হতে পারে না, যেটা কোরান সুন্নাহ ও আক্বলের পরিপন্থিরুপে পরিগনিত হয়ে যায়।
মুলতঃ ঐশী বিধানের বার্তাবাহকগন সর্বদাই পুতঃ পবিত্ররুপে পবিত্র রক্তজ ধারা থেকেই জন্ম নিয়ে সে গুরুত্ববহ মহান দ্বায়িত্ব পালন করে থাকেন। সামান্যতম ভুল ভ্রান্তিরও অনেক উর্দ্ধে থাকেন তাঁরা।
__এ, ওয়াই, এম জান্নাতুল নাঈম
আলোচনাকে আরও জোরালো করার জন্য, সূরার নাম ও হাদীসের কিতাবের নাম সহ আয়াত ও হাদীস নাম্বার উল্লেখ করলে ভালো হতো।